ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী-র কবিতা

চারটি কবিতা

(১)

সূর্যের সেই দিনে, পৃথিবীর উপর থেকে সমস্ত অক্সিজেন সরে গেলে, শুধু থেকে যায় অণুজীবেরা। কিন্তু খাদ্য হিসেবে তারা বিশেষ কিছু খুঁজে পায়না। অবশেষে মাটির অনেক ভিতর থেকে তারা খুঁজে পায় মানুষের জমিয়ে রাখা ভালোবাসা। তারা বাঁচার আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। কিন্তু ভালবাসাকে মাটির থেকে বের করতেই তাদের সূর্য টেনে নিতে থাকে। ভালোবাসা জ্বলে ওঠে সূর্যের আলোয়। ভালবাসাকে ধরতে বহ্নি পতঙ্গের মত ঝাঁপিয়ে পরে অণুজীবেরা। পৃথিবী প্রাণশূন্য হয়।

(২)

হাজার হাজার বছর যুদ্ধ চলার পরে একটা সন্ধি হয়। পৃথিবীকে দু ভাগে ভাগ করা হয়। বলা হয় সংরক্ষণ শীলরা এক দিকে থাকবে আর উদারপন্থীরা অন্য দিকে থাকবে । তাতে সবচেয়ে সমস্যা হল গাছ ও পাখিদের। শিকড় সর্বস্ব বলে গাছেরা সংরক্ষণ শীল অংশে গিয়ে পরল। পাখিরা মুক্ত আকাশে উড়তে চায় বলে উদার অংশেই থেকে গেল। কিন্তু বাসায় ফিরতে পারল না। রাতে তাদের বাসার কথা মনে হতে লাগল। আর গাছেরা চুপচাপ নিস্তব্ধ ভোরে এক শূন্য় আকাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।

(৩)

মানুষ দের মধ্যে এক গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পাড়ায় এক ভিনদেশি লোকের আবির্ভাব হয়েছিল। নাম জিজ্ঞেস করাতে সে বলেছিল যে তার নাম বাজার। সে এসে মানুষদের মধ্যে কে কি করে তার ভিত্তিতে তাদের কত পয়সা দাম সেটা ঠিক করে দিয়ে গেছিল। সবার গলায় তার দাম অনুযায়ী পয়সার মেডেল দিয়ে গেছে। কারুর ৫ পয়সার, কারুর ১০ পয়সার আবার কারুর এক টাকার। এর ফলে শুরু হল কে বড় আর কে ছোট এই নিয়ে ঝগড়া। অবশেষে তারা পরামর্শ করে যে সমস্ত মেডেল গুলো তারা ফেলে দেবে। কিন্তু মেডেল গুলো এমন ভাবে শরীরে বসে গিয়েছিল যে তাদের কে আর গলার থেকে নামানো যাচ্ছিল না। তাই সবাই মিলে এখন ঠিক করল যে মেডেলে পয়সা আর টাকা লেখা জায়গাটা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেবে আর তার উপরে ভালো ভালো শব্দ লিখে দেবে। যেমন ভালোবাসা, আধ্যাত্মিকতা, যুক্তি, উপকারিতা ইত্যাদি। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটল না। এই শব্দেদের মধ্যে কে বড় সেটা মানুষরা ঠিক করে উঠতে পারল না।

(৪)

মেরুদণ্ড সোজা হতে হতে হটাৎ একদিন পাশের বাড়ির নারকেল গাছের মত বিরাট লম্বা আর সোজা হয়ে গেল। কোন ও ঝড় ঝাপটায় তাকে এক ইঞ্চি টলানো গেল না। সে ঋজু হয়ে দাড়িয়ে রইল। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকল। বিশেষত মাটির সাথে লেগে থাকা ঘাস গুলি যারা অল্প হওয়ায় বেঁকে যেত। হাওয়া দিলে বেঁকে যেত আর তখনই সোজা দাঁড়িয়ে থাকা মেরুদণ্ডকে দেখতে পেত। একে অপরকে প্রশ্ন করত অতো উপরে মেরুদণ্ডের মাথায় কি আছে। মেরুদন্ড যত উপরে উঠতে লাগল হাওয়া তত পাতলা হতে লাগল। অথচ নীচে তখন হাওয়ায় কাশফুল যে দুলছিল তা মেরুদণ্ড দেখতেই পেল না।

Facebook Comments

1 thought on “ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী-র কবিতা Leave a comment

Leave a Reply