নষ্টোদ্ধার : বিশ্বজিৎ   সরকার

সূর্য ডুবতে এখনও খানিক বাকি।গোধূলি আলোর বিচ্ছুরিত ছটা অবশ্য আটকে আছে বড় বড় অট্টালিকার গায়ে, ফলে সন্ধা নামার আগেই কিছুটা আঁধার পরিবেশ নেমে এসেছে কলকাতার রাজপথে,।স্ট্রিট লাইট গুলো জ্বলেনি এখনও। আজ লক্ষী পুজোর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ভাসান । শারদীয় উৎসবের রেশ এখনও পুরোপুরি না কাটায় কলকাতা ঠিক জেগে ওঠেনি।এছাড়া বাসভাড়া নিয়ে মালিক ও সরকার পক্ষের টানাটানিতে পথেঘাটে বাস কম থাকায় কলকাতার ব্যস্ততার ছবি আপাতভাবে প্রগাড়তাহীন । কলকাতার অন্যতম রাজপথের লাগোয়া ফুটপাতের ওপর নানান ছোটখাট দোকানের পাশে ঘুপচি জায়গায় দণ্ডায়মান এক শনি মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে বিভাস। ফুটপাতের পাশেই বড় গির্জা ।বস্তুত গির্জার প্রবেশদ্বারের পাশেই এই মন্দিরের অবস্থান। কলকাতার রাস্তার মধ্যে এমন অনেক মন্দির গজিয়ে ওঠা বিভাসের নজরে এসেছে ।গির্জায় ঢুকতে গেলেই দর্শন মিলবে গ্রহরাজের।আবার গ্রহরাজ শনির দর্শন করতে গেলেই চোখে পরবে স্বয়ং খ্রিস্ট্রের অবস্থান। শনি দর্শন হয়ে গিয়েছে বিভাসের ,পাশে গির্জা দেখে সমতা রক্ষার ভাবনায় ইতস্তত করে তার মন, অবশেষে গির্জার দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ মিহি গলার সুরে তার পা আটকে যায় – তুমি একটু সরো না ,,একটু ‘

– আরে এখানে নেই তোর পয়সা রাস্তার দিকে গড়িয়ে গেছে কী না দেখ!

– তুমি উঠ না! চটের মধ্যে ঢুকে গেছে!

লোকটি উঠে তার বসার চটটা বেশ কয়েকবার ঝাড়তে থাকে,কিন্তু কোন পয়সা পাওয়া যায় না। বিরসমুখে তবুও কিশোর ছেলেটা খোঁজার চেষ্টা করে যায়। ছেলেটির একটি চোখ প্রায় বোজা,কপালের সাথে যেন সাঁটা। চোখের অসঙ্গতিটা এক লহমায় সকলের চোখে ধরা পড়ে। আর এই কারণেই গির্জা এবং শনি চত্বরের পুণ্যার্থীরা ১ টাকা ২ টাকা ছুড়ে দেয় তার দিকে । একটা ছোড়া কয়েনই গেছে তার হারিয়ে। কিশোর ভিখারীর বিশ্বাস ওই কয়েন পাশে বসা প্রতিবন্ধী জেঠু ভিখারির চটের ভিতর ঢুকে গেছে। কিন্তু জেঠুর চটের ভিতরে কোন কয়েন না পাওয়ায় ছেলেটি হতাশ হয়ে পড়ে।

‘- দেখতো এটা তোর পয়সা কিনা? না দেখেই ছেলেটি বলে, হুঁ। আপাতত সমস্যার সমাধান । সাঁঝ বিকেলের প্রথম কিস্তি শুরু বিভাসের। পকেট থেকে এভাবে পয়সা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে মুচকি হেসে ওঠে প্রৌঢ ভিখারি।এই হাসি ভিখারির মুখে মানায় না। তার হাসির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ধীর সুস্মিত ভাব। এই হাসির প্রতিটি কনায় বিজ্ঞ সজীব মস্তিস্কের ছটা ।বাচ্চাটির সাথে কথপোকথনের আগেই ধরা পড়েছিল প্রৌঢ ভিখারিটির ভদ্রজনিত আচরণ ,। তাই বিভাস তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়- কী করছেন?

-এই একটু আধুট সাহায্যের আশায়

– কিন্তু আপনার চোখ মুখ বলছে আপনি ভিখারি নন।একটু স্পষ্ট করে বলে বিভাস ।

– হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , স্থায়ী চাকুরি করতাম ম্যাকাললিভ কম্পানিতে। কম্পানি বন্ধ হয়ে যেতেই এই অবস্থা।দিনজনে দয়া করে দুটাকা -পাঁচ টাকা দিয়ে চলে যাবে প্রশ্নকর্তা , এমনই ভেবেছিল প্রৌঢ় ভিখারি , কিন্তু তা হল না,।

বিচিত্র স্বভাবের এই বিভাস। শনিবার বিকেলে খেলতে বেরিয়েছে, হরকিসিমের তার খেলা। মানুষ ধরা শিকার ও তার খেলা ।খেলিয়ে খেলিয়ে একেবারে তার মনের গহনে ঢোকা , তার জীবন কে অবলোকন করা। প্রত্যেক মানুষের জীবনের ভিতরে একটা গল্প আছে ,রহস্য আছে ।,তার মননে আছে প্রভিন্ন মানসিকতা, । চরিত্রের মুখ থেকে রসাস্বাদন করে নিজ মন রসসিক্ত করা ।কখনো কখনো আবার ডুবন্ত মানুষ কে বাঁচাতে তার সাথে জলে নামা । শনিবার হলেই তার মাথার ভিতরে এই ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, দুপুরে দুটোর ছুটির পর পর্যাপ্ত সময়,বিগত দুবছর শনিবারের বিকেলে ও এই খেলায় সম্পৃক্ত। পড়ায়ডু বছ্র ধরে এই নেশায় সে আক্রান্ত। প্রৌঢ়ের সাথে কথা বলে তার মনে হয় আজকের খেলায় উপযুক্ত সঙ্গী সে পেয়েই গেছে।

– তা বন্ধ হলো ,না কম্পানির লক আউট?

– কম্পানির লক আউট

-প্রভিডেন্ট পাওনি ?পরপর প্রশ্নে ভিখারি একটু বিব্রত, ভিখারির মুখে বিরক্তির ছটা লক্ষ্য করে বিভাস ,তাই বলে ওঠে, -‘চল একটু গল্প করা যাক তোমার সাথে , সামনে চায়ের দোকান আছে? চায়ের দোকান নেই শুনে বিভাস তার পায়ের জুতোটা খুলে হাঁটু মুড়ে বসে পরে ভিখারির সামনে।

বিভাসের এই অযাচিত ব্যবহারে কিছুটা ভড়কে যায় প্রৌঢ । বিরক্ত চেপে রাখে , তবে মনে মনে গজরায় ,ভাবে ,গেল সন্ধেটা মাটি। এই সময় তার রোজগারের মহেন্দ্রক্ষণ , কিন্তু এরকম একটা ধোপ দুরন্ত ভদ্রলোকের সাথে গল্পে মশগুল হয়ে উঠলে কে তাকে দয়া করবে! কিন্তু কিছু বলতে পারে না।

প্রশ্ন কর্তার মধ্যে আন্তরিক মায়াবি ভাবও তাকে টানে । অগত্যা কথায় কথা দেয় ভিখারি রাধারমণ। প্রভিডেণ্টের উত্তরে বলে –‘ প্রেভিডেন্ট ফাণ্ডে যেটুকু কেটে ছিল কিছুই পাইনি। কেননা মালিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে কিছু পয়সা জমা দেয়নি। একেবারে খালি হাতে ফিরতে হয়’

– তা কোন বিকল্প কাজের সন্ধান জুটিয়ে নাওনি কেন? মনে হচ্ছে তোমার পড়াশুনোও আছে।

– হ্যাঁ ১৯৭০ এর মেট্রিক

১৯৭০ র মেট্রিক , কম্পানিতে চাকুরী। হোক না লক আউট! তাই বলে এই বয়সে রাস্তায় ভিখারি । অঙ্ক মিলছেনা!

অতএব সঠিক খেলোয়াড়ই সে যে নির্বাচন করেছে নিশ্চিত হয় । এর সাথে খেলা যাবে অনেকক্ষণ।

– তা খুড়োর কি বিয়ে থা, ছেলেপুলে হয়নি?

– কেন হবে না দুই মেয়ে । বড় মেয়ে বিবাহিত ,স্বামী পুত্র নিয়ে দিব্বি সংসারে মেতে আছে , ছোট কলেজে পড়ছে।

বিভাস একটু ভিরমি খায় । রাধারমনের সহজ স্বচ্ছন্দ বলার গতিতে , তার অকপট বিস্ময়ঘন তথ্যে ঘোর লেগে যায় । বিপক্ষ খেলোয়াড়ের দ্রুত গতিতে সে পিছিয়ে পড়ে । কয়েক সেকেন্ডে নিশ্চুপ হয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে বলে “আচ্ছা ওরা তোমাকে এখানে বসতে বাধা দেয় না?”

দানটা ্যে ভালোই খেলেছে বুঝতে পারে বিভাস । এবার আর বিরক্তি চেপে রাখতে পারে না রাধারমন, বলে ওঠে –“‘ কি লাভ এসব আপনার জেনে । খামোকা সময় নষ্ট করেছেন। এই ভর সন্ধ্যেটা আমার মাটি করে দিলেন। এখন এটাই আমার উপার্জনের পিকটাইম। দেখেছেন তো আপনি আমার সাথে কথায় মজে থাকায় একটা পয়সাও কেউ দিল না “।

পাকা খেলুড়ে বিভাস এবারে বলে -‘ সবাই আপনাকে ভিক্ষা দেয় আর আমি দিচ্ছি পেয়ার । এটা তো ভাবা উচিত ।

ফিক করে হেসে রাধারমণ বলে -বিনা পয়সায় কি ভালোবাসা হয় ।গোঁফে গোঁফে হেসে বলে,কই দিন তো দেখি ৫০ টাকা । বিনাপয়সায় ভালোবাসা হয় না। আবার পয়সা দিয়েও ভালোবাসা যায় না ,এটা জানে বিভাস ।তবু রাধারমণের কথায় সে পকেট থেকে একটা ২০০ টাকার নোট বের করে বলে,রাখুন এটা ।।রাধারমন কিছুটা ইতস্তত করে, বিভাস বলে- আরে নিন নিন , পেয়ারার পয়সা ।বিভাসের হাত থেকে টাকাটা নিয়ে সর্ন্তপনে পাশে রাখা একটা ময়লা ব্যাগ এর মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে । কাজ সমাপ্ত করে ধীরে মোলাযেমসুরে বলে;-’ও বুঝেছি ,বাবু বোধ হয় লেখেন টেখেন, গল্পের গোড়া খুঁজতে বেরিয়েছেন।

এমন প্রশ্ন কখনও শোনেনি বিভাস । ভিখারি রাধারমণ অনেক কিছু খবর রাখে এটা বুঝতে পারে সে ।তার প্রশ্নকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বলে-,না না লেখাটেকা না ,আসলে গল্প করতে ভালো লাগে ,তারপর তোমার গল্প তো ইন্টারেস্টিং । মেয়েরা শিক্ষিত অথচ তুমি পথে দিন কাটাচ্ছ ,তাই ……..

‘শুনুন তাহলে ‘ – রাধারমন নেড়ে চড়ে ওঠে , আগ্রহ নিয়ে বলতে থাকে তার ইতিহাস-‘ চাকরিটা তো গেল, ঘরে অভাব অনটন ,বেহালার কাছে ভাড়াবাড়ি নিয়ে থাকি , সংসার চালানো দায়! বউ বলল বাপের বাড়ির যে বাড়িটা আছে তাতে তোমার ভাগটা বিক্রী করে দিয়ে ব‍্যবস‍্যায় লাগাও । মনে হল যুক্তিটা খারাপ নয়, অতএব দেশে গিয়ে ভাইয়ের সাথে একপ্রকার ঝগড়া করে আমার অংশটা বিক্রি করে দিলাম,পেলাম ২৮ হাজার টাকা ,১৯৯৪ সালে আঠাশ হাজার টাকা কম না , টাকা পেয়ে ব‍্যবস‍্যা ফাঁদব ভাবছি । বউ বলল নদীয়ার বাপের বাড়িতে থাকবো , , ছেলেমেয়েরা ওখান থেকেই পড়াশুনো করবে। বড় মেয়ের বয়স সাত । আমার মন গেল চটে , আমি বললাম ঘর জামাই থাকতে পারব না । ,আসলে আমি যাতে ঘরের সাথে যোগাযোগ না রাখি তাই পিতৃভিটে বিক্রি করার প্ল‍্যান দিয়েছিল ও ,আর আমি তাতে পা দিলাম। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে থেকে ব‍্যবস‍্যা করব না এই ব্যাপারে দৃঢ় থাকলাম । বউ জেদ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে গেল ওখানেই। বউ ও আর এক মেয়ে থাকে “।

-,এখন আপনার ওদের সাথে যোগাযোগ নেই প্রশ্ন করে বিভাস ‘

‘প্রথম প্রথম যোগাযোগ রাখত্‌, দশ বারো বছর হল যোগাযোগ নেই,। আমি খবর নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোন খবর দেয় না । আগে কাজ করতাম ,পয়সা জমিয়ে পাঠাতাম, কিন্তু কয়েকবার ফেরৎ দিয়েছে বাহকের হাতেই । আমিও যোগাযোগ বন্ধ করে দিই সেই রাগে । , আগে রোজগার করতাম ওদের জন‍্য , ওরাই যখন নেই তখন আর কিসের জন‍্য কাজ করব, জমা টাকা শেষ হতেই রাস্তায় বসে গেছি’।

কতই বা বয়স হবে ভিখারি রাধারমনের ! হয়ত চোষট্টি পঁষট্টি। জীবনতো এখান থেকে অনেকেই শুরু করছে এখন, আর জীবনের প্রতি মায়া মমতা সব তোয়াক্কা না করে পথেই জীবন সঁপে দিতে বসেছে সুস্থ চেতন সম্পন সংবেদী এক মানুষ । জীবনের এই অপচয়ে দীর্ণ হয় বিভাসের মন। ভিখারী রাধারমনের জীবনের উত্তাপ নিতে গিয়ে সে উপলব্ধি করে একটি জীবনের ক্রমশঃ অপমৃত‍্যু ।জীবনের বাকি দশ বিশটা বছর ও এইভাবেই ফুটপাতেই কাটবে । তারপর একদিন শীতের সকালে বেওয়ারিশ লাশ তুলে নিয়ে যাবে করপোরেশনের কর্মীরা ,ঘুনাক্ষরে জানতেও পারবে না তার মেয়ে বউ ! বিভাসের ক্ষ্যাপা মন চঞ্চল হয়ে ওঠে ।

সে রাগত স্বরে বলে ,-শোনো , কাল থেকে বাঁচতে শেখো , এভাবে ফুটপাতে কুকুরের মতো মরা নয়, মানুষের মত বাঁচো। সামনের সপ্তাহে তুমি যাবে ওখানে ,আমিও যাবো তবে তোমার আগেই” । খানিকটা ভড়কে যায় ,মেট্রিক পাশ রাধারমন , বোঝে এ চোখের ভাষা , সে উপলব্ধি করে এ ভঙ্গি কোন মেকি নয়। তাই বলে -শুধু শুধু কেন খামোকা কষ্ট করবেন বাবু , আমার কোন কষ্ট নেই , এই বেশ ভাল আছি”। রাধারমনের কথায় পাত্তা না দিয়ে বিভাস বলে চলে -“আমার ডিপার্টমেন্টের লোকেরা তোমার শ্বশুর বাড়িতে ঠিক পৌছে যাবে । ঠিকানা তো তুমি আগেই দিয়েছো আমায়। ওই ঠিকানাতেই যাবে। আর শোনো এখন থেকে পালানোর চেষ্টা করবে না ,ফল ভাল হবে না “ – বিভাসের গলাতে অন‍্য সুর। তোমাদের মত লোকেদের পূর্ণবাসন দেওয়া আমাদের কাজ।

দরদী বিভাসের মুখটা ক্রমশই একজন প্রশাসকের মত হয়ে ওঠে রাধারমনের কাছে । ঘন্টাখানেকের কাছের মানুষটি এখন তার কাছে যেন বিভীষিকা । এস্ত রাধারমনের চোখে মুখে অজানা আশঙ্কার ছায়া , কেননা সে ভাবে প্রশাসন খবর নেবে নদীয়ার গ্রামে , কিছুই পাবে না্‌ ,কেননা এতক্ষন মানুষটিকে যা, বলেছে তার প্রায় সবটাই মিথ‍্যে, নদীয়ার গ্রামে ওই নামের কেউ নেই । তার শঙ্কা হয় সরকারি লোক কে ধোঁকা দেওয়ার জন‍্য হয়ত নতুন বিপদ এসে দাঁড়াবে। রাধারমনের ভয় হয়,গলাটা শুকিয়ে যায় । বিভাসের দিকে কাচুমাচু করে বলে ‘ বাবু মাপ করবেন, ক্ষমা করবেন, বড় ভুল হয়ে গেছে।

-তার মানে – বিভাসের গলায় অবাক বিস্ময়

-বাবু মাপ করবেন , সরকারি লোককে কি করে মিথ‍্যে বলি?

মিথ‍্যে বলেছি, অনেকটাই গল্প ফেদেছি । আমার স্ত্রী মেয়ে বাপের বাড়ীতে নেই । চাকরীটা সত‍্যি, কারখানার লক আউটও সত‍্যি, এমনকি বাড়ি বিক্রির ঘটনাও সত‍্যি , কিন্তু তারপর সবই মিথ‍্যে” ।

বিভাস নড়ে চড়ে ফের বসে ,গম্ভীর ভাবে বলে, কি রকম?

রাধারমন বলে চলে , – “বাড়ি বিক্রি করে ব‍্যবস‍্যা করার কথা ভাবছি , এমন সময় সেই টাকা নিয়ে স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে চলে গেল এক পুরুষের সাথে । ভদ্রলোক পাশের বাড়িতে পড়াতে আসতেন। শুনেছি এখন অগাধ টাকার মালিক । ভদ্রলোক বিয়ে করেননি, আমার বউ ওর রক্ষিতা হিসেবেই থাকে , কেননা আমাদর ডিভোর্স হয়নি, ভদ্রলোকও ওকে বিয়ে করেননি। তবে সুখের কথা বড়মেয়ের বিয়ে ওখান থেকেই হয়েছে । আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখে না। আমি বা কোন লজ্জায় রাখি!বেহালার বাড়ি ছাড়ার পর কাজ করেছি সিকিউরিটি গার্ডের। কিন্তু অর্থ রোজগারের কোন উৎসাহ খুঁজে পেতাম না , কেননা আমার অর্থের জন‍্য কেউ প্রত‍্যাশী নয়। ছেড়ে দিলাম কাজটা। রাতে যে হোটেলে খেতে আসতাম রাতে থাকার জন্য সেখানে কাজ নিলাম।কিন্তু মালিকের খোঁচাখুচি , গাধার খাটুনি আর সহকর্মীদের নিত‍্য টিজিং তে বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলাম কাজটা। কুঁড়ে আমি নই,এখনও খাটার ক্ষমতা আছে, কিন্তু মন চায় না। খাটাখাটি, ভাড়াবাড়ি,থালাবাটি, উনুন হাঁড়ি, ভাল লাগে না একা একা। ভাবলাম এটাই ভাল । চলে যায় ভালই আমার “। রাধারমনের গলায় একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে।

ক্ষনিকের নিস্তব্ধতা নিয়ে সে আবার বলতে শুরু করে – আমার ভালোবাসাকে ও শেষ করেছে, আমার সন্তানদের কেড়ে নিয়েছে । আমার কিই বা করার আছে। , এর থেকে ফুটপাতে মরাই ভালো। এখন বলুন কিভাবে পুনর্বাসন দেবেন, মরা মনে প্রানের সঞ্চার কিভাবে ঘটাবেন?

দুবছর আগে বউ ছেড়ে গেছে বিভাসের । বিয়ের একবছরের মাথায় ডির্ভোস চেয়েছিল স্ত্রী সুমনা। সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বিধ্বস্ত হতে চায়নি বিভাস। যদিও বিভাসের দিক দিয়ে ভালোবাসার কোন খাদ ছিল না, খুব ভালবেসে ফেলেছিল সুমনাকে ,কিন্তু সুমনা ভুলতে পারে নি তার পুরনো প্রেমিককে । সুমনার সাথে ছাড়াছাড়ি পর তার বোহেমিয়ানি বেড়েছে, জীবন অন্য খাতে বইতে শুরু করেছে , মন বিবাগী জীবন তাই হতাশা থেকে শনিবারে ক্ষ্যাপার মত বেড়িয়ে পড়ে , খুজতে বেরোয় কি তা সে নিজেই জানে না । আজ সে রাধারমনের কাছে খুজে পায় জীবনের এক অনন‍্য ব‍্যঞ্জনা । রাধারমন ভালোবেসে সত‍্যি ভিখারি হয়েছে , তাকে ফেরানোর পথ নেই , সে রাধারমনের থেকে শিক্ষা নিতে পারে , -ভালোবেসে ভিখারি হতে নেই । সে স্পষ্ট বুঝতে পারে রাধারমন তাকে খুব বাঁচিয়ে দিয়েছে , একেবারে ডুবন্ত অবস্থায় জল থেকে তুলেছে তাকে।

Facebook Comments

Posted in: May 2022, STORY

Tagged as: ,

Leave a Reply