অর্কপ্রভ ভট্টাচার্য-এর কবিতা

কয়েকটি অস্বস্তিকর কবিতা

(১)

আর যে দেখতে পাবো না বলে স্পষ্ট বুঝতে পারছি, যা করতে হবে, যা নকশা বানানোর, শিগগিরই ছুটে গিয়ে করে ফেলতে হবে। দার্জিলিং খুব প্রিয় কেননা যাওয়া হয়নি কোনোদিন। লাল পিঁপড়ের দল সারি বেঁধে আপাদমস্তক হেঁটে চলেছে। সুর নিয়ে যেটুকু জানি তা নিয়ে বানাতে স্বপ্নের যন্ত্রটুকু। ট্রেন আসবে কি আসবে না এই নিয়ে চাপানউতোর চলছে চলবে, টিকিটহীনতায় ভুগছে যাত্রীগণ, কালো কালো রোদচশমা সত্যিই কাজ দিয়েছে। আর কতটুকু দেখতে পাবো বা পাবো না সে নিয়ে পরে বলছি কথাবার্তা। সব ছবিই অন্ধকার, আমরা অহেতুক রঙ চাপাই। কী যেন কথায় আছে : অন্ধকারেই মুখ চেনা যায় , অন্ধকারেই যৌনতা হিংস্রতার সাপ বেরিয়ে আসে হিসহিস করে।

(২)

বাড়ির পাশের চারাগাছটির কথা ভেবে মায়া হচ্ছে। এতকিছু সম্ভাবনা নিয়েও লাশ পড়ে থাকে। বাড়ির পাশে নতুন দোকান খুলেছে; দোকানি বসতে দেয়। কেজি দরে সেদিন প্রেম কিনতে দেখে বেশ ঈর্ষাই হচ্ছিল। আলোচনা হয়, কোন কোন জিনিস বাজারে চলে। জানাচ্ছে , শোক ও স্বপ্ন বেস্টসেলার। ঠিক করেছি, এবার থেকে দু-তিন পিস্ কবিতাও রেখে আসব। দেখি না কী হয়…

(৩)

আপনাকে যে কথাটি বলেছিলাম , আপনি শুনতে পাননি জানি আমি
ফলত সে কথারা অনাথের মতন রাস্তায় রাস্তায় জিগ্যেস করে- আপনার নাম অহনা সরকার?
এবং না পৌঁছনোদের দলে তাস খেলে, গোপনে নীল ছবি দেখে। আর এই বেকারত্বের বাজারে চাকরি জোটাতে চায়।
এছাড়া রাস্তা দিয়ে অহনা সরকার গেল কিনা চেয়ে দেখে।
তারপর রাতে কোন দুঃস্বপ্ন এলে
আমাকে দু-চারটে খিস্তি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

(৪)

শোয়ার ঘরে, ডাইনিং টেবিলে জল ঢুকে গেছে।
এইসব দিনগুলি বড্ড চঞ্চল হতে হয়
বোকার মতন প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটা ছাড়া উপায় থাকে না।
এভাবে লাফাতে-লাফাতে, গাইতে-গাইতে পেরিয়ে আসতে হল বছরগুলোকে ,
অবশ্য খুব একটা নাটকীয়ভাবে বাঁচার কথা ভাবিনি,
যা আমাকে কাহিল করল
তা এই জল
কেন যে উঠল নদীর কথা, সমুদ্রের কথা
আমি তো ভুলতেই বসেছিলাম
শুধু শুধু জলস্তর আরও খানিক বেড়ে গেল ঘরে।

(৫)

একসময় কোনো ইশারা বুঝিনি বলে একের পর এক প্রেম হাতাছাড়া হয়েছে। সহপাঠী বন্ধু আঙুল দেখিয়ে বুঝিয়েছে – এই হলো ইশারা। এইভাবে কেউ কেউ চলে যায় ইশারা করে। তবু ইশারা বুঝিনি। এ-ও কি তবে সবুজ লাল সিগন্যালের মতন? সবুজ সিগন্যাল পেলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পরে। সবুজ আলো দেখেও হাঁদার মতন দাঁড়িয়ে থাকি । আর প্রতিবার কেউ তারপরে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যায় ইশারা। ইশারা চোখের, হাতের , মুখের , কথার । কিন্তু দুর্বোধ্য লাগে, কিছু না বলে, কিছু না দেখিয়ে যারা ইশারা করে গেছে দিনের পর দিন। এতদিন যা চলেছে ইশারায় ইশারায় চলেছে। এখন যা ঘটবে ইশারায় ঘটবে।

Facebook Comments

Leave a Reply