অভিষেক চক্রবর্তী-র কবিতা
কথা
১.
মাটি ভিজছে , ঘাস পাতা ফুল বৃক্ষ
নদীর মতো জল থই থই ̶ প্রথমে এক হাঁটু
তারপর এক কোমর
বুক পর্যন্ত হয়ে থামলো
বৃষ্টি। তারপরও টিপটিপ করে পড়ছে
ফোঁটা ফোঁটা হয়ে জল সমান গোলাকার
নিচ্ছে ̶ বড় ছোট, কোনোটি হয়তো হচ্ছেই না।
এসব কি শোনাচ্ছ ?
এতো আমিও জানি,
তুমি তো কথাই শুনতে চেয়েছিলে , তাই
কোথায় বলছি অনর্গল ̶ উল্টোপাল্টা,
সোজা সাপ্টা।
বৃষ্টি তো শেষ হয়েছে
আকাশ ও পরিষ্কার
হ্যাঁ, তাই তো দেখছি তোমার চোখ ও মুখ
এতো উজ্বল !
গ্রীবা থেকে তোমার ফোঁটা ফোঁটা জল
̶ তাতে আলোর ছটা ̶ যেন হীরের গয়না
আমি চেয়ে আছি জগৎ বিভোর
তোমার প্রিয় অপ্রিয় পোশাকে, যেটা
এখনো ভিজে
আচ্ছা হঠাৎ ঢেউ লক্ষ্য করেছো জমা জলে !
২.
আমি দু হাতে ধরেছি অন্ধকার
আমি দু চোখে নিয়েছি যত অন্তরাল
আমি বলেছি হাজার কোটি কথা
আমি তোমায় ক’খন বেসেছি ভালো
আমার সখহীন সৌকুমার্যে তোমায় চাই
তোমায় বলেছি অকথা কুকথা যতবার
ততবারই তুমি এসেছো আরো কাছে
গোপন জোনাকির মতো মিশকালো আঁধারে
যেন উত্তরণের দূত !
তোমার খেলাভেলা আলো জলা আলো নেভা
সিক্ত করতল রয়েছে এ হাতের ওপর
তুমি বললে এতদিনে আসার সময় হলো ?
আমি বললাম তবু তো এসেছি
বসেছি দুদণ্ড !
ভেবেছিলাম আর পাবো না তোমায়
ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো বহুদূরে
‘এখন কি দেখছো ?’
‘দেখছি তুমি চিরকাল এখানেই
মাঝখানে আমিই চলে গেছিলাম বিপথে
অজান্তে’ ।।
৩,
সারা আকাশে ছিল বৃষ্টি,
সারা বনে জোনাকি
রাতে চাঁদ, ও সামনে তুমি
মিট্মিটে তারা যখন বৃষ্টি থেমেছে,
যখন ব্যাঙ ডাকা শুরু,
সামনে খোলা পাতার পর পাতায়
অবুঝ অক্ষর, তখন তুমি বাদ সাধলে
বললে “কথা বলো এখন,
অনেক হয়েছে কাব্যচারণ।”
আবার বৃষ্টি শুরু
ব্যাঙ ডাকছে সজোরে আজ
চাঁদ আর উঠবে না।
আর ওদিকে ছাদ থেকে জল ছাপিয়ে
দালানে, সেখান থেকে রাস্তায় ̶
ঘরের ভিতর, অবুঝ অক্ষর
ঘরের ভিতর, অঘোর অমাবস্যা
শব্দহীন শীতলতা…
৪.
এখনো বসে আছি জেগে
স্বপ্ন ঘুমে আসে তাইতো জানি ।
জেগেও স্বপ্ন দেখি কখনো।
তুমিও তাই ই বললে, তোমার ও
নাকি এরকমটাই হয়।
তাহলে দুজনেই আমরা ঠিক দিকেই হাঁটছি …
কিন্তু স্বপ্ন যে বাস্তব হতেও চায় !
সে বলতে চায়
নাচতে চায়
গাইতে চায়
তবে এই স্বপ্ন ঘুমোতে দেয় না
এ ঘুম ভাঙতেও জানে না
ঘুমন্ত ওঠাবসা, হাঁটাচলা, কাজকম্মো,
অফিস-কাছারি, বাস-ট্রাম
তুমিও কি গভীর ঘুমে আমারি মতো ?
দেখি তোমার চোখ দুটো
আমার ই মতো লাল কিনা…
আমি নিশাচর হয়েছি
বকবক থামিয়ে তুমিও হয়েছে সঙ্গী আমার।
কবিতা থেকে ছন্দ নিয়ে অন্য মাত্রায়
বেঁধে বলেছি “তোমার রূপে অরূপে আমি আজও
অক্ষর কে সাক্ষী করি না; করি তোমায়”
সে কোথায় একটু হাসো
সে হাসির উপহার স্বরূপ
আরও লিখেছি, বানান ভুলের মাত্রাও কমেছে,
কমেছে তোমার ঠিক বানান লেখার কাজ।
এখন রাত্রিকে সঙ্গী করলাম; কারণ
তুমি শুয়ে পড়েছো একাকিত্বে –
তুমি ওপাশ ফিরেছো বিভক্ত হয়ে
আমি জেগে, সাথে
রাত ও জেগে …
৫.
এক একদিন কেমন যেন মন খারাপ কে
আশ্রয় করি। ছন্দ বিপর্যয় হলে হোক তবু
নিরন্তর যাতনার মতন প্রচুর হয়তো
মন খারাপ চাই
মন খারাপ ‒ যার দিক-দস্তুর নেই
যার গতিহীন গতিস্রোতের মন্তব্য একটাই
…একটু মন খারাপ।
আমি দরজা ঠেলে ব্যালকনি তে দাঁড়াতে গেলে
দেখি সেখানে অজানা শূন্যতা। পরে যেতেই পারতাম
যে-কোনো সময়। পারিনি। তাও সাবধান হয়েছি
প্রতিবার দরজা খোলার সময়
উদাসীন বুঝি ! কে জানে হবে হয়তো…
সাধকের সম্মোহনের মতো শুধুই ভেবে যাই
নানান সাতপাঁচ কথা.
নানান গোপনতা যখন নগ্ন শরীরের
ইঞ্চিগজ মাপতেই ভালো লাগে
আয়নার সামনে দ্বিতীয় একটা মানুষ,
আয়নার ভিতর আর এক জন
তখনও ধিকি ধিকি মনে উরুতে বাহুতে হাত
রেখে মনে মনে চেয়েছি আর একটা শরীর
এসব লিখেতে পারছি কারণ
মন খারাপ চাই মন থেকে ‒
যদি বলা যায় প্রলাপ, তবে তাই
তবু সুনীল গাঙ্গুলির কবিতার থেকে অনেক…অনেক
আলাদা।
সদ্য আবার পড়লাম কিনা ! ‘যে হাত ছুঁয়েছে তোমার মুখ ‘
তাঁর তো নীরা ছিল ‒ স্বপ্নে, চলায়, বিছানায়, কাব্যে
আমারও তো তুমি আছো। তুমি ‒ যার নাম জানি না।
কেন বলতো এতো মন খারাপ পুষতে ইচ্ছে হয় ?
ট্র্যাজিক হিরো বলা যায় যাতে !
ক’ই না তো,
মন খারাপ চাই কিছু নিয়ম ভাঙার
জন্য, কিছু সত্যি কথা বলার জন্য
(এর মানে এই নয় যে অন্য সময়
অসত্যিই বলি !)
তবু মনে হচ্ছে মন খারাপ চাই কিছুটা।।