লড়াইয়ের মুখোমুখি বাংলার চটকল শ্রমিক : দেবাশিস দত্ত

ভূমিকা

প্রশ্নটা ঘুরে ফিরেই আসছে ‘পাটশিল্প কি অস্তাচলে?’ প্রশ্নটা জোর পায়, সন্দেহটা বাড়ে যখন দেখা যায় যে অনেক শিল্প পরিবর্তনের সাথে তাল রাখতে না পেরে, সরকারী নীতিহীনতা, মালিকের অতি মুনাফা লোলুপতা এবং সামন্ত মানসিকতার জেরে তার পুরনো গরিমা হারিয়েছে। দেশের শিল্প চিত্র আজ অনেকটাই বিবর্ণ, সঙ্কুচিত হয়ে টিমটিম জ্বলছে, নয়তো একেবারেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। আমাদের রাজ্য বাংলা তার বড় নজির। উদাহরণ হিসেবে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন টেক্সটাইলস ইন্ডাস্ট্রির কথা বলা যায়। টেক্সটাইলসের মধ্যে সুতো (কটন) এবং পাট (জুট) দুটোই পড়ে। বাংলায় যেসব সুতোকল ছিল তার প্রায় অধিকাংশই উঠে গেছে, খালি জমিতে রমরমা চলছে রিয়েল এস্টেট এর কারবার, সেও হয়ে গেল অনেক বছর। দেশীয় শিল্পের তেমন দেখা না পাওয়া গেলেও মালিকের দাপট পাটশিল্পে অব্যাহত। আর শ্রমিকদের সামনে রয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বড় মাপের লড়াইয়ের ইশারা।

শিল্পের পত্তন

সুতো (কটন) ও পাট (জুট) অন্যতম অর্থকরী ফসল। তাকে ভিত্তি করে এই দুই শিল্পের প্রথম পত্তন এই বাংলায়। প্রথম সুতো কল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৮ সালে কলকাতার অদূরে হাওড়ায় – ফোর্ট গ্লস্টার (কটন মিল), বাণিজ্যিকভাবে অসফল (কারণ কি এই যে ডেকান বা দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে অর্থকরী ফসল তুলো চাষ ছিল প্রধান এবং পরিবহণ খরচ বেশি!) হবার কিছুকাল পরে ১৮৫৪ সালে দ্বিতীয় সুতো কল ‘বোম্বাই স্পিনিং অ্যান্ড উইভিং’ গড়ে ওঠে। আর ঠিক ঐ বছরেই (১৮৫৪) অবিভক্ত নদীমাতৃক বাংলার অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট সুবাদে হুগলী জেলার রিষড়ায় গড়ে ওঠে প্রথম চটকল ‘ওয়েলিংটন জুট (স্পিনিং) মিল’। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের জেরে এবং জোয়ারে ব্রিটিশ আমলে বানিয়াদের অনুপ্রেরণায় এবং একমাত্র মুনাফার তাড়নায় হুগলী নদীর দু’কুলে একের পর এক পাটসহ অনেক শিল্প গড়ে ওঠে। অবিভক্ত বাংলার কাঁচা পাট আর বিহার, ইউপি, অন্ধ্র, উড়িষ্যার সস্তা শ্রমের অঢেল যোগানে একদিকে বিপুল মাত্রায় উৎপাদন অপরদিকে দুনিয়াজোড়া রমরমা ব্যবসায় মুনাফার কোন হিসেব নেই। খেদ করে লাভ নেই। মুনাফার তাড়নায় কোন কিছু বরাবর একরকম থাকে না। লুণ্ঠনের জেরে দেশ-দুনিয়া বদলায়, শাসক বদলায়, নীতি বদলায়। অন্য শিল্পের মত পাটশিল্প একইভাবে বদলেছে। সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী বদল এক জিনিষ কিন্তু সোনার ডিম পেতে হাঁসের পেট চিরে ফেলা অন্য জিনিষ যা ঘটেছে, ঘটে চলেছে পাটশিল্পের ক্ষেত্রে। এই খেদ সঙ্গত। সেজন্যেই শিল্প মালিকদের উত্থাপিত প্রশ্ন ‘পাটশিল্প অস্তাচলে’র শিল্প এই প্রচারের উত্তরে গত শতাব্দীর ন’য়ের দশকে এআইটিইউসি অনুমোদিত ফেডারেশন অব চটকল মজদুর ইউনিয়নের উদ্যোগে রাজ্যের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিক ও মালিক সংগঠন এবং ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি সমন্বয়ে সংগঠিত আলোচনা সভার দৃঢ় মত ছিল ‘চটশিল্পের সামনে রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা, তবে সমস্যাও কিছু আছে যা সমাধানের অতীত নয়।’ এই মতকে ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘সুসংহত জাতীয় পাটশিল্প নীতি’ (গবেষণা থেকে শুরু করে পাটসংক্রান্ত সমস্ত সরকারী বেসরকারি সমস্ত অ্যাক্টিভিটিজ, উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডকে একটা ছাতার তলায় যুক্ত করে নীতি) প্রণয়নের জন্য স্মারকলিপি পেশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও সহমত হয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও আমলাতন্ত্রের কোপে, সম্ভবতঃ লবির চাপে পড়ে, বিষয়টি দিকভ্রষ্ট হয়। আসলে ‘বাজার নেই, মুনাফা নেই, লোকসান’ ইত্যাদি প্রচার ছিল মালিকদের কৌশল। এই কৌশল অবলম্বন করেই মালিকরা সরকারের সহযোগিতায় পাটচাষি, পাট শ্রমিককে ঠকিয়ে মুনাফা বহুগুণ বাড়িয়েছে, শিল্পকে, শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পাটচাষি ও শ্রমিককে শুষে নিয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। কোরিয়া এবং বাংলাদেশের যুদ্ধ ছাড়া শিল্প মালিকরা লাভের কথা কখনও স্বীকার করে নি।

শ্রমিকদের লড়াই ও চুক্তি

পাটশিল্পে অনেক লড়াই হয়েছে, অনেক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখানে প্রসঙ্গত ২০০৮ সালের চুক্তির কথা উল্লেখ করছি। সেবার পাটশিল্পে যে ধর্মঘট হয় তার মীমাংসা কলকাতায় হয়নি। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী অস্কার ফার্নান্ডেজ হস্তক্ষেপ ও তাঁর উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছিল: “A Tripartite Committee comprising experts, representatitves of Government of India, Government of West Bengal, representatives of workers and employers shall be constituted by Govt. of India immediately to study all outstanding issues and various facets of the working of jute industry including pricing, productivity and wage structure. This Committee will submit its recommendations to Ministry of Labour, Govt. of India within 8 weeks.” [Clause 1 of the Tripartite Agreement signed at New Delhi in presence of Shri Oscar Fanandes, Hon’ble MOS (IC), Labour & Employemnt on 18.12.2008]

পাটকল শ্রমিকদের দুর্গতির হাল ফেরাতে এই চুক্তি একটা বড় পদক্ষেপ ছিল। এই চুক্তি অনুসারে অ্যাড হক হিসেবে শ্রমিকদের মাসিক ৫০০ টাকা বেতন বৃদ্ধি ঘটে এবং একটি কমিটি গঠিত হয়। শ্রীমতী সুধা পিল্লাই, আইএএস, সেক্রেটারি, লেবার অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট এর নেতৃত্বে সেই কমিটি অনুসন্ধানে আসার পর মালিক পক্ষ (আইজেএমএ) তার সাথে অসহযোগিতা করে। কমিটি ‘নিজস্ব’ সূত্রে ২০০৩-০৪ থেকে ২০০৭-০৮ পর্বের অনুসন্ধান করে নানা তথ্য তুলে আনতে সক্ষম হয় এবং তা বিভিন্ন সারণিসহ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়: ক) লোকসানে চলা মিলের সংখ্যা কমেছে, নগদে লাভে চলা মিলের সংখ্যা বেড়েছে। খ) ঐ কাল পর্বে পাটশিল্পে মোট সম্পদ ১৩৯% বেড়েছে। গ) উপকরণের খরচ বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকদের বেতন সুবিধা বাবদ খরচ কমেছে। বলা হয়েছে: “Average labour cost was the least (24.62%) in the year 2006-07 and highest (33.33%) during the year 2003-04. The average labour cost as a percentage had shown decreasing trend during the period from 2003-04 to 2006-07.” [Source: Clause 8.13.3 of the Report of the Sub-Committee/page 28] গ) সাব-কমিটি ‘Employment and Emoluments’ শীর্ষক একটি প্রোফর্মা তৈরি করেছিল, তার মধ্যে রেগুলার, টেম্পোরারি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্ট লেবারসহ সমস্ত ক্যাটেগরি শ্রমিকের কোন বছরে কত বেতন ছিল তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে জুট কমিশনারকে (ভারত সরকারের কাছে দায়বদ্ধ সংস্থা) আইজেএমএ-এর সাথে যোগাযোগ করে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল। জুট কমিশনার কেবলমাত্র রেগুলার শ্রমিকদের ৯ মাসের তথ্য (ফর্ম ২) জমা দেয়। (সূত্র: ঐ রিপোর্ট ৯.২/ পৃষ্ঠা ২৯) [‘চটশিল্পে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি / ‘কেন এফসিএমইউ সই করে নি?’ শীর্ষক পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত]

সুতরাং মালিকদের উদ্দেশ বুঝতে অসুবিধে হয় না, হবার কোন কারণ নেই। মালিকরা বরাবর পাটচাষি-পাট শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের মোটা মুনাফা অক্ষত রেখেছে, অন্যত্র সরিয়েছে। এই অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শিল্প আধুনিকীকরণে লগ্নী করা হয় নি। ‘Indian Jute Manufactures: adaptation and survival in a ‘sunset’ indutry’ প্রবন্ধে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমিয় কুমার বাগচি এবং পঞ্চানন সাহা লিখেছেন “The real capital growth was extremely low; both fixed and working capital even declined during the 1970s (Sen 1983). This trend followed the general recessionary trend that started in Indian industries in the mid-1960s. However, productivity and profitability increased substantially, in spite of systematic erosion of capital stock. Since the late 1970s, however, fixed capital in the jute industry grew at a substantial rate and structural changes took place in favour capital. While productivity and and efficiency declined in the 1980s they increased in the 1990s and afterwards. The industry’s capital stock is made up of machines of different ages with different productive potentials. Many of the machines dated back more than 50 years; new investment took place, propelled by growth in domestic use of jute products, but this incremental production took place without using machines of the latest type. Workers were displaced in the process of structural change, but technological diffusion in the form of use of more recent technologies did not occur by. The contribution of labour to output growth was significantly higher than that of capital. This was achieved partly by increasing the workload of the ordinary workers without technological up-gradation of machinery.” (Source: Internatioal Journal of Management Concepts and Philosophy/Jan 2014/Page 194) ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

মালিকরা ‘অস্তাচলের শিল্প’ বলে অভিহিত করতে ‘শিল্পে মন্দা’ বা ‘বাজার বা ‘লাভ নেই তথা লোকসান’ এর গপ্পো ফেঁদেছে। এবং তারই আড়ালে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি বাবদ অর্জিত শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে, শিল্পের বুনিয়াদী কাঠামো, নিয়ম শৃঙ্খলা ভেঙে তছনছ করে শিল্পকে আখ মাড়াইয়ের কলে পরিণত করে ‘মুনাফা’ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে রুগ্নতাকে হাতিয়ার করে মালিকানার ধরণ পর্যন্ত পাল্টে দিয়েছে। লীজ মালিকানার আবির্ভাব ঘটেছে। সরকার এই লুণ্ঠন ব্যবস্থায় সীলমোহর দিয়েছে, এমনকি জবরদস্তি ‘স্বেচ্ছাবসর’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার ‘রাষ্ট্রায়ত্ত’ উদ্যোগ এনজেএমসি পর্যন্ত বেআইনিভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। পুঁজিবাদের নিয়তি, অন্যান্য ক্ষেত্রের মত, আর্থিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক অসাম্য বৈষম্য, পাটশিল্পে প্রকট হয়ে উঠেছে।

এই মুহূর্তে পাট শিল্পের অবস্থা

২০০৮ সালের পর চোদ্দ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই চোদ্দ বছর পর ঠিক এই মুহূর্তে (২০২২) অবস্থাটা কি সেটা খুবই সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সালে বামফ্রন্টের আমলে পাটশিল্পে শেষ ধর্মঘট এবং ধর্মঘট শেষে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলেও সেই চুক্তিতে ৬টি ইউনিয়ন স্বাক্ষর করেনি। ছ’টি ইউনিয়ন যুক্তভাবে শ্রমমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি (২৪-০২-২০১০) পেশ করে পরিষ্কার বলেছে “ … A tripartite agreement was, however, arrived on the 61st day of the strike i.e on 12th February, 2010 and the undersigned unions/Federations could not approve certain terms of the agreement for resons stated below and therefore did not sign the agreement which you may please note.
5. 1) We preferred payment of current DA arrear of 627 points in two instalments (500 + 127) points to be completed this year (2010) while the spreadover has been done in 6 installments in 3 years.
5. 4) ‘Entry level minimum; wage (herein referred to as ‘payment’) was settled at Rs. 100/- per day in the Agreement 2002 having DA pegged at 2427 (points) which normally comes to Rs. 220/- per day as on 1st February, 2010 but the ‘agreement’ reduced it to Rs. 157/- per day beyond any principle established by law. This means cut of minismum wages by Rs. 63/- per day. In the last occasion the same was reduced by Rs. 53/- per day… ” এ ছাড়াও আরও কিছু কারণ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। [সূত্র: ৬ ইউনিয়ন স্বাক্ষরিত চিঠি তাং ২৪.০২.২০১০। এফসিএমইউ প্রকাশিত ‘কেন এফসিএমইউ সই করে নি?’ শীর্ষক পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত]

২০১০ সালের পর ২০১১ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটে। গত ১০/১১ বছরে যথারীতি ‘দাবিসনদ’ পেশ হয়েছে এবং কোন ধর্মঘট ছাড়াই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে ২০১৯ ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে সিটু, এআইটিইউসি, ইউটিইউসি, টিইউসিসি, এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত ৭ টি ইউনিয়ন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নি। যেদিন ধর্মঘট শুরু হবার কথা ছিল সেদিন এই ইউনিয়নগুলোর ডাকে প্রতিবাদ ধর্মঘট পালিত হয়েছে।

এখন এই রাজ্যে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ। এই বন্ধ তালিকার মধ্যে ভারতের প্রথম পাটকল রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিল (১৮৫৪) ছাড়াও রয়েছে হুগলী জেলায় ইন্ডিয়া, নর্থ ব্রুক, শ্যামনগর নর্থ, গোন্দলপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, ওয়েভারলি, রিলায়েন্স, টিটাগড় এবং হাওড়া জেলায় হনুমান, হাওড়া জুট মিলে ‘ওয়ার্ক সাসপেনশন’ চলছে। অনেক কারখানা কেবল খোলা রয়েছে কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো হচ্ছে না ফলে নামমাত্র উৎপাদন হচ্ছে। প্রত্যক্ষ বেকার প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে গোন্দলপাড়া এবং ইন্ডিয়া জুট (একই মালিকানাধীন) কমবেশি ৩ বছর বন্ধ রাখার পর খোলে। কিন্তু কিছুদিন চালাবার পর আবার বন্ধ হয়েছে। অপর কারখানা হেস্টিংস জুট মিল চালু রয়েছে। যে কারণে মিলগুলো বন্ধ করা হয়েছে তার প্রধান কারণ হিসেব বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে, যেমন ওয়েলিংটন জুট মিল কর্তৃপক্ষ ‘financial crisis’ কথা স্বীকার করেছে, যার পেছনে শ্রমিকদের কোন হাত নেই। রয়েছে মালিকদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ম্যানেজমেন্টের অপদার্থতা, অদক্ষতা।

রিলায়েন্স জুট মিল কর্তৃপক্ষ তাদের নোটিশ নং ২০২২/৪ তারিখ ২৭-০১-২২ মারফত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ‘উদ্বেগের’ সঙ্গে জানিয়েছে যে “that Jute Industry is passing through a very critical situation, where the prices of raw jute have gone very high and even then there is unavailability in the market. A number of Jute Mills have reduced their working days or shifts and some are closed and a few others are on the verge of closing. We are also suffering hugely in the scenario.

The workmen must be well aware that the Office of the Jute Commissioner, Ministry of Textile had on 30.09.2021 fixed the ceiling price of raw jute TD5 variety at Rs 6500/- per quintal, and any trading or buying/sailing above the price was unauthorised. Despite this fact, since then the prices of raw jute have continuously been much higher and even then there is hardly any availability. This is one of the majorfactors leading to the current crisis.

Further, the matter has been aggravated exponentially because the prices of Jute Bags fixed by the Jute Commissioner’s Office for supply to the Govt of India is calculated based on the ceiling price for raw jute of Rs. 6,500/- per quintal. Market price of the raw jute is prevailing above Rs. 7,300/- per quintal and jute mills are incurring huge financial loses and facing severe financial contraints. The Indian Jute Mill Association has represented and requested the Govt. of India to rectify this order many times so that the situation comes under control. However till yet the Govt of India has not responded favourably to the problem being faced by the Jute Industry.

The management, despite facing huge financial loses, has been trying since October, 2021 to keep the mill running under these very adverse circumstances hoping the situation will be rectified and resolved. Unfortunately, till yet thereis no resolution to the above.

Under the circumstances and having no other alternative, the Management is forced to declare ‘TEMPORARY SUSPENSION OF WORK” from 6:00 A.M of 27. 01. 2022 till further notice.

Further, it is to be noted that no wages/allowances whatsover will be paid to the workmen till ‘TEMPORARY SUSPENSION OF WORK” continues in the mill except undernoted essential Departments/Sections will not come under the purview of “SUSPENSION OF WORK”. …

ইতিমধ্যে Shaktigarh Textile And Industries Limited, Unit: Gondalpara Mill কর্তৃপক্ষ ১ জানুয়ারি ‘২২ থেকে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক ঘোষণা করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ’২২ ডেপুটি লেবার কমিশনারের চিঠির (Memo No. 219/2022/DLC/CNR dated 10.02.22) উত্তরে মিল কর্তৃপক্ষ জানান “Gondolpara Jute is under a Temporary Suspension of Work from 01.01.2022. The unit was closed for 29 months from May ’18 because of lack of financial viability. Despite Covid conditions the Management signed a tripartite (agreement) on 14th October 2020and reopened the Unit from 1st November 2020. The management was once again forced to suspend operations on 5th July, 2021 because of labour hostility.
At present, Gondalpara jute is completely beset with financial trouble and a lack of normalcy in production. Unfair and wasteful practice has destabilized the unit to a large extent. The mill is plagued with commercial and financial non-viability.”

এর পরে গোন্দলপাড়া জুট মিল কর্তৃপক্ষ যথারীতি রিলায়েন্স জুট মিল বা অন্যান্য বন্ধ মিলের মতই কাঁচা পাটের যোগানে অভাব, উচ্চ দর ইত্যাদি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছে যে ইউনিটটি চালু করতে কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রকারে চেষ্টা করেছে এবং একটি প্রকল্প জমার কথা উল্লেখ করে ঐ চিঠিতে লিখেছে “… The management’s revival plan submitted to the banks is pending for a long time as the state government (i.e the state and land revenue department is yet to clear the land title of the unit. We are facing a similar condition at our unit India Jute Mill at Serampore.” শেষতঃ ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে: “At this moment, the chance of reopening or running the unit is virtually impossible without bank funds and clear land title from the state land department.” [দ্রষ্টব্য: ঐ চিঠি/জোর লেখকের]। অবশেষে বেড়ালটা ঝুলি থেকে বেড়িয়েই পড়ল!!

উপরোক্ত চিঠি অনুসারে দেখা যায় পাটশিল্পের মালিকদের একাংশ মিল বন্ধের কারণ হিসেবে কাঁচা পাটের যোগান ও জুট কমিশনারের দামের ঊর্ধ্বসীমা কুইন্টাল প্রতি ৬,৫০০ বেঁধে দেওয়া সম্পর্কে জুট কমিশনারের নির্দেশের বিরুদ্ধে কোলকাতা হাইকোর্টে যায় মালিক পক্ষ (ইজমা)। হাইকোর্ট “অন্তর্বর্তী নির্দেশে সেই সীমা খারিজ করল না আদালত। তবে তার থেকে বেশি টাকায় যাতে চটকলগুলিকে পাট কিনতে না হয় জুট কমিশনারকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে তারা। যারা (ব্যক্তি, সংস্থা, বা এজেন্সি) বেঁধে দেওয়া দামের থেকে বেশি হাঁকবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থাও নিতে বলেছে। আর রাজ্য এবং জুট কমিশনারের দফতরকে যেন সব রকম সাহায্য করে তারা।” (আনন্দবাজার/২৪ ফেব্রুয়ারি ’২২)। আসলে এটা মালিকদের একটা অজুহাত। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও পাট শিল্পের একটা ট্র্যাডিশন হল সাধারণভাবে যখন পাট বোনা হয় তখন পাটকল রমরমিয়ে চলে। চাষিরা ভাল দাম পাবে মনে করে পাট চাষে প্রলুব্ধ হয়। আবার যখন কাঁচা পাট বাজারে আসে তখন ঝুপ ঝুপ করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পাটের দাম যায় পড়ে। চাষিরা পাট ধরে রাখা ও গ্রেডেশন করতে না পারার ফলে মালিক-ফড়ে-এজেন্ট চক্র খুবই সক্রিয় থাকে। কাঁচা পাটের এই কারবারে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রায় একচেটিয়া হবার ফলে চাষিরা কম দামে, এমন কি অভাবী দামে, কাঁচা পাট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। মালিকরা সেই পাট নিজ মিলে এবং অন্যত্র বেশি দামে বিক্রি করে ‘মুনাফা’ আত্মসাৎ করে নেয়। কাঁচা পাট ব্যবসায় কৃষকদের এই দুর্গতির সুরাহা করতে অনেক আন্দোলনের পরে মিনিমাম পাটের মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি), জেসিআই গঠন এবং তার মাধ্যমে পাট কেনা, আবশ্যিক জুট প্যাকেজিং আইন ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়। মুশকিল হল নির্ধারিত এমএসপি’র নিচে দাম পড়ে গেলে তবেই জেসিআই ক্রয় করার নীতি গ্রহণ করায় অনেক সময়েই চাষিদের সুরাহা মেলে না। রাজ্য শ্রমমন্ত্রী এক সভায় নিজেই বলেছেন যে বেলার্স অ্যাসোসিয়েশন (Balers’ Association) অভিযোগ করেছে যে ইজমাভুক্ত মিলের কাছে তাদের পাওনা ৫০০ কোটি টাকা। সেই টাকা তারা আত্মসাৎ করতে চায়! মালিকদের অনেকের গো ডাউনেই প্রচুর মজুত আছে। কাঁচা পাটের যোগান নেই এবং দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া মালিকদের একটা অজুহাত মাত্র। অথচ এই মালিকরা পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি ৭০০০-৭২০০ টাকা বেঁধে দেবার যে দাবি তুলেছে তা হল মিল না চালিয়ে কেবল ফাটকার মাধ্যমে গুদামজাত পাটের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মূল্য আত্মসাৎ করা। জুট কর্পোরেশন জানে পাটের মোট উৎপাদন কত, কত পাট কোথায় মজুত রয়েছে, অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকার মিলে যখন মজুত উদ্ধার করতে পারে না, পাটের অভাব জনিত সমস্যা জিইয়ে থাকে তখন সদিচ্ছা সম্পর্কেই সন্দেহ জাগে। গোন্দলপাড়া ও ইন্ডিয়ান জুট মিল খোলার শর্ত হিসেবে কর্তৃপক্ষ ব্যাংক ঋণ ও জমির মালিকানা প্রসঙ্গ যুক্ত করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই মনে করেন জুট মিল চালানো নয়, মিলের বিশাল পরিমাণ জমির মালিকানা হস্তগত করে জমিয়ে রিয়েল এস্টেটের কারবার করার উদ্দেশ্যে থেকেই কর্তৃপক্ষ একটা বাড়তি চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। পরতে পরতে সরকারের দুর্বলতা, লোক দেখানো পদক্ষেপ মুষ্টিমেয় হাতে গোণা মালিকদের ইচ্ছা ও মুনাফালোলুপতাকেই মান্যতা দেয়, শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়।

সমস্যা নিরাময়ে সরকারের কমিটি

সমস্যা পেকে ওঠার অবস্থা হলেই কমিটি গঠনের কথা ওঠে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২২.০২.১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ধারা ৫ অনুসারে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তিতে বলা হয়: “It is agreed that a Committee with independent member/members will be constituted by Government in consultation with the parties for examination and making suitable recommendations within six months of its formation. After receipt of recmmendations, copy will be furnished to both the parties. The labour Minister, thereafter, will finalise the grades and scales of pay in consultation with the … The Committee will take into consideration all relavent factors including merger of different components of wages and restructuring of the existing piece-rate sustem with provisions for fall back wages.” বিশিষ্ট অর্থনীতি ও পরিসংখ্যানবিদ শ্রী সন্তোষ ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠিত হয় [Vide Labour Deptt Resolution No. 4311-I.R. dated 21.09.1979]। গ্রেড স্কেল সম্পর্কিত প্রশ্নে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী কৃষ্ণপদ ঘোষ ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা করে ০২-০৪-১৯৮১ তারিখে এক সার্কুলার মারফৎ টাইম-রেটেড শ্রমিকদের জন্য নিম্নোক্ত ৭ টি গ্রেড ও স্কেল নির্ধারণ করেছেন।

এক) ২১১ – ৪ – ২৫১ দুই) ২১৬ – ৫ – ২৬৬ তিন) ২২০ – ৬ – ২৮০ চার) ২৩০ – ৭ – ৩০০ পাঁচ) ২৪৫ – ৮ – ৩২৫ ছয়) ২৬৫ – ৯ – ৩৫৫ সাত) ৩২০ – ১০ -৪২০

এ ছাড়াও যে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল ক) ১ মার্চ ১৯৮০ থেকে ১ টি ইনক্রিমেন্ট প্রদান; খ) ফুরন শ্রমিকদের বেতন হার নির্মাণ (রিস্ট্রাকচারিং) মিলে আলোচনার ভিত্তিতে করা; গ) বেতনের বিভিন্ন অংশ একত্রিত (কনসোলিডেশন) করা; ঘ) শ্রমিক দায়ী নয় এমন নষ্ট সময়ের মজুরি (ফল-ব্যাক) প্রদান; ঙ) মাসিক বেতনভুক সমস্ত কর্মচারীদের বেতন-ক্রম নির্দিষ্ট করার পরে যদি কাউকে যথার্থভাবে ‘ফিট-ইন’ করা সম্ভব না হয় তবে একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দান; চ) বদলী শ্রমিক এক বছর লাগাতার কাজের জন্য ইনক্রিমেন্ট* দান। এই পদক্ষেপ যুগান্তকারী কারণ ইতিপূর্বে একমাত্র মাসিক বেতনভুক ছাড়া কোন শ্রমিকের গ্রেড স্কেল ছিল না। *উল্লেখ্য যে ১৯৭৬ সালে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিলে একটি লড়াইতে বদলী শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দাবি আদায় সম্ভব হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার জুট ওয়েজ বোর্ড গঠন করে। কিন্তু তার কোন সুপারিশ আজ পর্যন্ত বেরোয় নি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ৯০% স্থায়ী ২০% স্পেশাল বদলী রাখার শর্ত পুরোপুরিভাবে মালিক পক্ষ ভেঙে তছনছ করে দেবার পর আবার একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাজ্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে কারণ দেখা যায় কোন মিলেই ৯০% স্থায়ী ও ২০% স্পেশাল বদলী রাখার ধারাবাহিকতা কোন মিলেই রক্ষা করা হয় নি।

বিগত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির শর্ত অনুসারে সরকার, মালিক ও শ্রমিক তিন পক্ষের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১০ সদস্যকে নিয়ে একটি ‘এক্সপার্ট কমিটি’ গঠন করা হয়েছে (Notification vide Labr/01/(LC-WB)/MW dated 03-01-2022)। লক্ষ্য করার বিষয় যে সেই কমিটিতে কয়েকটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি রাখা হলেও সবাইকে রাখা হয় নি। কমিটির প্রধান বিচার্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ‘i) Improvement of wage structure i.e revision of existing wage structure to make it at par with the rate of wage in the market; ii) Categorization of jute mill workmen; iii) Improvement of working environment that includes providing of standard living condition with modern infrastructure, health, hygiene, security etc; iv) Any other issue which the Committee may deem fit and proper for the betterment of jute industry.’ সেই ২০০৮ সালে চুক্তি মোতাবেক কমিটির প্রতিধ্বনি! এই কমিটি এখন কাজ করছে। তাই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ইতিমধ্যে এই কাজের জন্য একটি ‘দক্ষ নিরপেক্ষ পেশাদারি সংস্থা’কে নিয়োগ করেছে এবং সহমতে প্রস্তুত একটি প্রশ্নমালার ভিত্তিতে ৪ জেলায় ৪ দিনে ১৫ টি মিলে তথ্য অনুসন্ধানের কাজ শেষ করেছে। অনুসন্ধানের সময়ে কমিটির সদস্য/প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। একেবারে শেষ দিনে জনৈক মিল মালিক, কমিটিতে মালিক সংগঠন ইজমা’র প্রতিনিধি, আলাদাভাবে সদস্যদের সঙ্গে তাঁর চেম্বারে মিলিত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই সভায় তিনি পাটশিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের সুস্থিতি তথা উন্নত জীবন ও যাপনের জন্য অর্থ মজুরি হিসেবে পেতে অকপটে কয়েকটি ব্যবস্থার সুপারিশ করেন। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: ক) প্রত্যেক শ্রমিকের লাগাতার ৮ ঘণ্টা কাজ (এখন ব্রেক ডিউটি চালু আছে); খ) আট ঘনটার পরে ৪ ঘণ্টার আবশ্যিক ওভারটাইম; গ) ১২ ঘণ্টা কাজ শেষ হবার পর নগদে দৈনিক মজুরি তাৎক্ষণিক এবং বিনিময়ে ঘ) সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে যে সব ব্যবস্থা রয়েছে যেমন প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন, গ্রাচ্যুইটি, ইএসআই ইত্যাদি সমস্ত ব্যবস্থার বিলোপ। অর্থাৎ সোজা কথায় ‘ফেল কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর’? কর্পোরেট মালিকরা তাদেরই সৃষ্ট আর্থিক সঙ্কটের জেরে যখন হালে পানি পাচ্ছে না, সঙ্কট থেকে ‘পরিত্রাণের’ জন্য হাঁসফাঁশ করছে এবং যে তাস বেশ কিছুকাল বুকের খুব কাছাকাছি রেখে খেলেছে, তাদের যে কথাগুলো ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার একটু ইনিয়ে বিনিয়ে ৪ শ্রম কোড এবং নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বলার চেষ্টা করছে – সেই কথাগুলো সরাসরি ‘সোনারের টুকটাক হাতুড়ির এক ঘা’র মতই মালিক প্রতিনিধি বেসরকারিভাবে উপস্থাপন করলেন। উল্লেখ্য সেই সভায় ‘দক্ষ নিরপেক্ষ পেশাদারি সংস্থা’র প্রতিনিধিও উপস্থিতি ছিলেন। তিনিও বার্তা পেয়ে গেলেন। এখন রিপোর্টের অপেক্ষা!

কেবল অপেক্ষা প্রত্যক্ষ লড়াই সংগ্রামের

পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং অগ্নিগর্ভ। সারা দেশের অবস্থাই তাই। কোন সরকার, রাজ্য অথবা কেন্দ্র বা তাদের নিযুক্ত কোন ‘এক্সপার্ট কমিটি’ চটশিল্প, শিল্পের মালিকানা এবং শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পাটচাষি এবং ও শ্রমিকদের সমস্যার সুরাহা করবে এমনটা কেউ আশা করে না। কোন কালে তা হয় নি। চটকল শ্রমিকরা যা যতটুকু পেয়েছে লড়াই করেই পেয়েছে। আবার লড়াই বিনে অনেক কিছুই হারিয়েছে। এটাই তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। অনেক লড়াইয়ের পরেও শ্রমিক আন্দোলনে নানা ধরণের ত্রুটি বিচ্যুতি দুর্বলতা অনৈক্য আছে, শ্রেণি সচেতনতা তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। স্বাভাবিকভাবে মালিক ও সরকার শ্রমিকদের ত্রুটি দুর্বলতা অনৈক্য’র সুযোগ গ্রহণ করেছে, আরও দুর্বল করার চেষ্টা করে গেছে। মালিকরা মুনাফার জন্যে যখন শিল্পকে ধ্বংস ও শ্রমিকদের দাস-মজুরে পরিণত করতে উদ্যত তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাটচাষি ও পাটশ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের উন্নত জীবন যাপন, অর্জিত অধিকার তথা সামাজিক সুরক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থে শিল্পকে রক্ষা ও মালিকানা বদলের আন্দোলন প্রাথমিকতা দাবি করে। এছাড়া কোন পথ নেই, যেমন ছিল না পাঞ্জাবের কৃষকদের। অবশ্যই এটা একটা অসম লড়াই। পঞ্জাবের কৃষক আন্দোলনও ছিল একই রকমের অসম। সেই অসম লড়াইতে কৃষকরা জিতেছে, স্বাধীন ভারতে এই প্রথম ‘ক্ষমতা’ নতজানু হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা যখন সামনে রয়েছে তখন লড়াকু চটকল শ্রমিকরাই বা মালিক ও সরকারের মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারবে না কেন?

[লেখক – সাধারণ সম্পাদক, ফেডারেল চটকল মজদুর ইউনিয়ন (এআইটিইউসি)।]

Facebook Comments

Leave a Reply