বইমেলার নতুন বই : সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়

আমরা যারা কলকাতা শহরে থাকি আর নিয়মিত কলেজ স্ট্রিট চত্বর চষে বেড়াই তারা যে বইমেলার অপেক্ষায় বসে থাকি তা হয়তো নয় তবে বইমেলা এলে মেলা বইয়ের সঙ্গে মোলাকাত হওয়ার সম্ভাবনায় মন নেচে ওঠে। আর যদি দু’বছর পরে ফিরে আসে কলকাতা বইমেলা তবে আরও ভাললাগা জমা হয় মনের মধ্যে। খাতা পেন নিয়ে লিখতে (নাকি মোবাইলে টাইপ করতে?) বসি নতুন বইয়ের তালিকা। মনে হয় পছন্দের সব বইয়ের পরিচয় লিখে ফেলি কিন্তু এখানে সম্পাদকের নির্দেশ পাঁচটার বেশি বইয়ের কথা লেখা যাবে না। অগত্যা…

গত দু’বছরে আমরা বোধহয় সবচেয়ে বেশি বলেছি অসুখের কথা। আর অসুখের কথা বললেই আসে ডাক্তারের কথা। গুগলজ্যাঠার ডাক্তারি নয়, এই অতিমারির সময়ে ডাক্তারদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা বেড়ে গিয়েছে। সরাসরি কথা বলা না গেলে ফোন আর নানারকম মাধ্যমে কথা বলেছি আমরা। আশ্বাস পেয়েছি। আশ্রয় পেয়েছি। অন্যদিকে ডাক্তাররাও চেয়েছেন সংলাপ রচনা করতে। তৈরি হয়েছে ডক্টরস ডায়ালগ-এর মত উদ্যোগ, যেখানে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডাক্তাররা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, অসুখের সময় অভয় দিয়েছেন। সেই সাইটে প্রকাশিত ডাক্তারদের লেখার মধ্যে থেকে বাছাই করা পঞ্চাশটি লেখা নিয়ে বের হয়েছে ডক্টরস ডায়েরি দুই। এর আগের বছর এর প্রথম খণ্ড বেরিয়েছিল। ডাক্তার নয় এমন দু’একজনের লেখাও আছে। বইমেলায় এই বই অনেক স্টলেই মিলবে। প্রকাশকের নিজের স্টল না থাকলেও ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির স্টলে তো পাওয়া যাবেই এই বই।

স্বাস্থ্য নিয়ে এই ভাবনার মধ্যে জোর পড়েছে এর ইতিহাস খোঁজায়। হেলথ হ্যাজ এ হিস্ট্রি: রিভিজিটিং বেঙ্গল নামে একটা বই বেরিয়েছে কে পি বাগচী থেকে। শুভঙ্কর দের সম্পাদনায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসচর্চাকারী অধ্যাপক-গবেষকরা কলম ধরেছেন এই বইয়ে। বিষয়ের মধ্যে যেমন রয়েছে যক্ষ্মা, কুষ্ঠর মত রোগের ইতিহাস তেমনই উঠে এসেছে জলবায়ুগত অসুখ-বিসুখ, স্বাস্থ্য আন্দোলন এবং নারীস্বাস্থ্যের কথা।

শুধু স্বাস্থ্য কেন, নারীরা নানান ক্ষেত্রেই তো অবহেলিত। এমনকি যাবতীয় বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে যেসব নারী নিজ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন তাঁরা বৃহত্তর সমাজে অজ্ঞাতই থেকে যান। তাঁদের সম্পর্কে সহজে জানা যায় না। এটা বোধহয় আরও প্রযোজ্য বিজ্ঞানে সফল নারীদের প্রসঙ্গে। বাংলা ভাষায় যে সমস্ত নারী বিজ্ঞানী চরিতাভিধান আছে তাতে ভারতীয়দের সংখ্যা কম। ইংরেজিতে লীলাবতী’জ ডটার্স বই থাকলেও বাংলায় ভারতীয় নারী বিজ্ঞানীদের নিয়ে সেই ধরনের বই ছিল না। সেই অভাব মেটাতে বের হয়েছে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বিজ্ঞান বিশ্বে এদেশের মেয়েরা। প্যারালাল প্রেসের এই বই বইমেলায় মিলবে পি বি এস আর অনীকের স্টলে।

কখনও কখনও কোনও পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাই বই হয়ে ওঠে। শুধু আকারের কারণে নয়, কোনও একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে তার নানান দিক তুলে ধরতে প্রয়াসী হন দক্ষ সম্পাদকেরা। তেমনই একটি সংকলন বের হয়েছে শুভশ্রী পত্রিকার। ষাট বছরের শুভশ্রীর এবারের বিষয় “চীন : অচেনা অন্দরে”। চীনের ইতিহাস, ভূগোল, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির ঝলক তুলে ধরা হয়েছে শান্তনু সরকার সম্পাদিত শুভশ্রীর এই সুবিশাল সংখ্যায়।

ইতিহাস গবেষণার রকমফের বুঝতে দেখা যেতে পারে ইতিহাসচর্চা : সাম্প্রতিক গবেষণা। সমীর পাত্র, শেখর ভৌমিক আর অরিন্দম চক্রবর্তী সম্পাদিত আশাদীপের এই বইয়ের পাতা উল্টোলে বিশিষ্ট ইতিহাসকারদের আলোচনায় জানা যাবে বর্তমান কালের ইতিহাস গবেষণার হালহকিকৎ।

[লেখক – এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়।]

Facebook Comments

Leave a Reply