ভালোলাগা পাঁচটি সৃজনখণ্ড : প্রণব চক্রবর্তী
দেবাঞ্জনের আমন্ত্রণ পাবার পর থেকেই পাঁচটি বই নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনীতে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রায় হিমশিম অবস্থা। অবশেষে দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন কারণে পাঁচটি পুস্তক বেছে নিলাম খুব অন্তর্গত এক দায়বদ্ধতায়। সৃজনশীল গদ্য কবিতার বাইরেও বিষয়মুখী বইও থাকলো এই তালিকায়। বাণিজ্য জগতের বাইরে বাংলাভাষায় কত যে প্রতিভা নিরন্তর সাহিত্য সাধনার আগুনে পুড়ছে দাউদাউ, এটুকু বোঝাই যাবে।
প্রথমেই এই অতিক্রান্ত সময়কে বোঝবার প্রয়োজনে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি থেকে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত একটি পুস্তক এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত না কোরে পারলাম না। বইটির নাম “বিশ্বায়নের বনভোজন”, লেখক দেবু দত্তগুপ্ত। পাঠকের সামনে এই বইটি পাঠে অনেক কঠিন গোলকধাঁধাঁ সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় কেমন ছবির মত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের এই বইটির পাঠ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
দ্বিতীয় বইটি, পেশাগত ভাবে বিজ্ঞানী হওয়া সত্বেও সাম্প্রতিক সময়ের দেশ-বিদেশের কবিতা চর্চার সাথে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখা এবং নিজস্ব গল্প-কবিতা লেখালিখির পাশাপাশি বাঙালী কবি ও কবিতার প্রতি গভীর মমত্বে নিরলস বিভিন্ন প্রবন্ধ বাংলা ইংরিজী ভাষায় যিনি রচনা করে চলেছেন, তিনি রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই লেখিকার সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পুস্তক “ধীমানের আলোকিত অন্ধকার” তালিকাভুক্ত করতেই হলো। শিক্ষিত ও সহৃদয় পাঠে একজন কবিকে বোঝবার এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রণোদিত করবে যেকোন সৃজনশীল ব্যক্তিত্বকেই। কবি হিসেবে ধীমান চক্রবর্তী-র সম্পর্কে আমার বেশি কথা না বলাই বাঞ্ছণীয়। বইটির প্রকাশক ত্রিষ্টুপ প্রকাশনী। পরিবেশক তথাগত, কলেজ স্ট্রীট এবং অক্ষর প্রকাশনা, আগরতলা।
তৃতীয় নির্বাচন, গদ্য কবিতার এক একচ্ছত্র সম্রাট লুৎফর রহমান। যার সম্পর্কে লিখতে পেরে আমি শিহরিত হচ্ছি। কারণ লুৎফরের গদ্য হোক বা কবিতা, শহর থেকে দূরে এক অজানা বাংলার প্রান্তিক মানুষের, গ্রামীন মানুষের প্রেম, স্বপ্ন, বঞ্চনা ও সর্বনাশ ভাষার এক মোহময় যাদুতে কী তীব্র হয়ে ওঠে, পেলব কোন ছুরির তীক্ষ্ণ ফলার মতো বিঁধে যায় পাঠক আত্মায়। রোম্যান্টিক এক বাংলাভাষা তথাপি কি অবধারিত তার পেনিট্রেশন! তার দুটি গ্রন্থ পাঠক অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন, “হাতেম ছৈয়াল” প্রকাশক ভাষালিপি এবং “আন মানুষ” প্রকাশক তবুও প্রয়াস।
চতুর্থ একটি কাব্যগ্রন্থ “অথৈ”। কবি অনুপ সেনগুপ্ত। নিজেকে নিরবচ্ছিন্ন অনুসন্ধান কবির কখনও শেষ হয় না। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাকে সহজ, সাবলীল ও স্বল্প শব্দে অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে অল্প কয়েকজন কবিই। অনুপ সেই অল্প কয়েকজন কবির মধ্যে ব্যতিক্রমী একজন। বোর্হেস, অক্টাভিও পাজের পৃথিবী পেরিয়ে এসে, অনুপ এখন মগ্ন তার নিজের পৃথিবীর নিজস্ব ব্যাসার্ধেই। প্রকাশক সৃষ্টিসুখ।
পঞ্চম গ্রন্থটি “বালীলিওর গল্প”। লেখক সৌগত বালী। নগর জীবন ক্রমশই জটিল জটিলতম হয়ে ওঠার সাথেই বাংলাভাষার অভিব্যক্তিও ক্রমশ বদলে বদলে যাচ্ছে। কেউ কেউ চর্চা করে চলেছেন এই পরিবর্তনশীল বাংলাভাষার নতুন গদ্যমুখটি ধরতে। সৌগত বালী তাদেরই একজন। এক নিষ্ঠ ভাষাকর্মী, শুধু ভাষা নয় পরিচিত চরিত্রের মধ্যে যে অপিরিচিত হয়ে ওঠার প্রবণতা তৈরী হচ্ছে, বালীর নজরে আছে সেটাও। প্রকাশক নতুন শতক প্রকাশনী।
[লেখক – কবি, গদ্যকার, পত্রিকা সম্পাদক।]
Posted in: February 2022 - Cover Story, PROSE