প্রদীপ চক্রবর্তী-র কবিতা
ভূপাখি নিয়ে খেলা করছি
এক.
আঁধার – আওটানো ডুবকোডিহি
টুকরো টুকরো করে বয়ে নিয়ে চলেছি
ব্রথেলে,
তার কাছে গেলে মধ্যনিবেশে খুলে যায়
অধরা কাঁপন
শরীরটাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ফেলে
আলগা হালকা নিষ্ঠ রূপসী হাঁসিনের বুক
আ চৈ চৈ আ চৈ চৈ আ চৈ চৈ আ চৈ চৈ
একবিনুনিভ্রষ্ট তাড়া খাওয়া তরুণীর ডাকে
লিলিফুল সমস্ত সাবলীল রঙের থেকে
একাগ্রস্তূপে জমে ওঠে,
অবঅতীত অভিভূত শিল্পীর ক্যানভাসে
প্রথম নৌকো ডুবলো
তারপর সূর্য ডুবলো,
দেখছি প্রবণতা অপলাপ বাগান,
টোল পড়ে বাগানের মালির মেয়েটির গালে …
দুই.
বনচারী গুল্মের উত্তরে বয়ে যাওয়া জীবাশ্ম,
সে সদ্যজাত
উপকরণহীন সারল্যে
ভাবনার ভাবহীন মুখের ফেলনা
হু হু করে কোথা থেকে বাতাস নামক বস্তু তৈরী হয়ে এসে তাকে আরও জীবিত দেখায়
জীবাশ্মের ছায়া ঘুরে ফিরে আসে …
প্রতিদিন কত কী সরাও, ফের রেখে দাও,
পাল্টে ফেলো খেলার নিয়মে,
চৈত্রে ঝরা উচ্ছন্ন পলাশ
শান্ত নীল ঢেউ তুলে জ্বলে ওঠে ক্রেয়ন কল্যাণ
শীতের পাতার মতো ঝরে যায় রোষ, দিনশেষে
ঘামের মতো বিন্দু বিন্দু রক্তে ভরে যায়
মানুষের খোলসে কোনও গিরগিটি
দমবন্ধ সর্বস্ব আদরে
এবার জীবাশ্ম ফুলে উঠে ফেটে যাবে …
তিন.
আমি শূন্যের ভঙ্গিমায় কুয়াশা সংকলন করছি সেকেলে তামাটে সবুজে | এখন আমার আসবাব গড়ার সময় , খিদের উপাসনার মতো ব্যবহৃত হয়েছি যবনিকা উঠলেই | অস্তবাহী শকটের রক্ত হাতে মেখে খাদের নীচে আশ্রয় নিতে হবে | ছিঁড়তে ছিঁড়তে তার মুখ আমি ধরে ফেলেছি | আমি বের করেছি ছুরি কাঁটার উন্মাদ জলতরঙ্গ … আলাদা একখানা মুকুট ঢলঢল করছে পাহাড়ের পক্ষীঅঞ্চলে , ভুষুন্ডি বুদ্বুদ দমবন্ধ লাগছে তোমার ?
ছিঁড়তে ছিঁড়তে তার অবলীন মনস্তাপ আমার গলায় বিবর্ণ হয়ে পড়ে আছে দ্বিধাগ্রস্ত
ব্যবধানে | প্রকাশ্য প্ররোচনায় হাতে চকচক করছে অস্ত্র | আমারই অখুঁত ছায়া ছিটকোচ্ছে , নখের ঘষায় টানছে উল্কার টান | বাগানে এসেছে কাঠের গাছ আর প্রাণীদের বহুরূপী | এই নববাবুবিলাস খুলে প্রসাধন ঢালা হবে
রক্তে | প্রশান্তে মাটির গর্ভাশয় কত তপ্ত , মায়ালেশহীন , সারাংশময় |
শতমারি রাক্ষসের গন্ধে ডুবে যায় চামড়া মাস , মটমট করে , অর্ধভাজ্য শরীরতরু , চার পাঁচটা ডাল | মহাঘুমে ঘুমিয়ে রগড় দেখছি | বর্ষণমুখর রাত্রি | রংছুট ঘরের মানুষ কী চায় , দু ‘ বেলা চড়ুইভাতি ? বিলাইতি দারু ? স্বদেশি যুগের গেঞ্জিকল ? ধুম্রনীল হাওয়া ছায়া রোদ মাঠের কাকতাড়ুয়া , মৃত টুকরোগুলো বেঁধে জড়িয়ে দেয় ফাঁস – আলগা আমারই মুখ …!
চার.
অবশতম ছায়া | নাম : বিনোদিনী কুটীর | দূরালাপে, হঠাৎগঞ্জ | মৃদুগানের নৌকো ছেড়ে দেবে কোথায় অজানা কোন রেল ইস্টিশন
পানে, এখনো নতুন বনের তরুণ সিংহীর মতো ঝড় জমছে, মিউটিনির পুরোনো শহরে | একদা অলীক গ্ৰুপ ফটোতে পাহাড়তলীর ছোট গাঁয়ে তোকেই দেখেছি প্রথম বর্ষায় | সেই গান দক্ষিণের জানলা ঠেলে মাথা তুলতে পারে বাতাস – বাজা বনে | মারীগুটিকার মতো ছত্রাকে লবণে লাভায়বিদ্ধ মনোধর্মগ্রস্থ প্রতিহারিণী কী
তার নিঃস্বতাকে রেখে যায় ক্ষণভঙ্গে রংবাহারি ত্রাণশিবিরে?
মধুপুর গিরিডি স্টেশনে এখনো আমি নামি, ভোর রাতে চায়ের কাপ হাতে, দূরের রেডিয়োয় মৃদু বেজে যাচ্ছে …
‘লাগ্ যা গলে কে ফির হাসি রাত হো না হো
শায়দ ফির ইস জনম সে
মুলাকাত হোনা হো
লাগ্ যা গলে – এ – এ’
কত চাঁদ গেছে, আর দেখা হলো না | সারারাত অন্ধকার ভোরে জানলা দিয়ে ছিটকে যাওয়া গ্রাম মফস্বল, ভোরের আলু – ফুলকপির ব্যাপারি , শান্ত চায়ের দোকান | খোলা জানলার পাশে পুরো জিভে শরীরের স্বাদ এনেছি | গান ভুলে চারদিকে বইছে হ্লাদিনী …!
Posted in: February 2022, POETRY