অনুবাদে অর্ধেক আকাশ : মালিনী ভট্টাচার্য

[মালিনী ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় জনসংযোগে কর্মরত। কথাসাহিত্য, তথ্যভিত্তিক লেখালিখি ও অনুবাদের কাজ করছেন প্রায় এক দশক। সাহিত্যে ও শিল্পে নারীত্ব ও নারীর সত্ত্বায়ন বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী মালিনী।‘অনুবাদে অর্ধেক আকাশ’— এই ধারাবাহিক কলামে বিশ্বসাহিত্যের কয়েকটি উপন্যাসে নারীত্ব ও নারীর সত্ত্বায়ন প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য অংশের অনুবাদ করছেন মালিনী।]

[লিডিয়া ডেভিসের জন্ম ১৯৪৭-এ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে। ছোটগল্প, প্রবন্ধ লেখেন। এছাড়া অনুবাদ করেছেন প্রুস্ত, ফ্লবেয়ারের মতো ফরাসী সাহিত্যিকদের উপন্যাস। সমালোচকদের মতে তিনি নিজস্ব লেখার ঘরানা তৈরিতে সাফল্য পেয়েছেন। লিডিয়া ডেভিস ম্যান বুকার সহ অসংখ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত। নিচে রইল তাঁর পাঁচটি অনুগল্পের ভাষান্তর।]

বরের সঙ্গে

কথা বলতে বলতে বারবার ওদের উঠে বাথরুমে যেতে হচ্ছিল। দুজনেই নার্ভাস। একবার করে যায়, ফিরে এসে সিগারেট ধরায়। ওর বর টয়লেটের সীট নামাতে ভুলে যায়, ওকেই নামিয়ে নিতে হয় পেচ্ছাপ করার আগে। বিকেল হয়ে এসেছে। ডিভোর্সের কথাবার্তা ছেড়ে এবার মদ ঢেলেছে দুজনে। ও বিয়ার খাচ্ছে, ওর বর নিয়েছে হুইস্কি। এদিকে ওর ফেরার ট্রেন ধরার সময় হয়ে এসেছে। ওর বর অনেকটাই খেয়েছে, শেষ একবার বাথরুমে যায়। দরজা খোলা রেখেই।

বাইরে বেরোনোর জন্য ওরা তৈরি হচ্ছে। ও একটা গল্প আরম্ভ করে। কিভাবে ওর প্রেমিকের সঙ্গে ওর আলাপ, তারই বিবরণ। কথা বলতে বলতে ওকে থামতে হয়; ওর বর নিজের দামি গ্লাভস খুঁজে পাচ্ছে না। অতএব বিরক্ত, হয়ত কিছুটা বিভ্রান্তও। নিচে গিয়ে খানিকটা খোঁজাখুঁজি করে। ওর গল্প তখন মধ্যপথে। জিনিসটা পাওয়া গেল না। ওর কাহিনীতে ওর বরের আর তেমন মন নেই। তবে রাস্তা দিয়ে একসঙ্গে চলতে চলতে বেশ খুশি মনে বলল, প্রেমিকাকে সে একজোড়া জুতো কিনে দিয়েছে সম্প্রতি। দাম পঁচাশি ডলার। ভীষণ ভালোবাসে ও মেয়েটিকে, ভীষণ।

আবার এক হওয়া। তখন ওর মন পড়ে আছে ওর বরের সঙ্গের বাক্যালাপে। খুব দ্রুত চলতে চলতে স্টেশনে অচেনা লোকজনের সঙ্গে দুয়েকবার ধাক্কা খেল। এতো বিক্ষিপ্ত, যে তাদের দেখতেই পায়নি। প্রকৃতির কোনো পদার্থের মতোই তাদের ওপর আছড়ে পড়েছে। পড়তে পড়তে সোজা হওয়া। আশ্চর্য! এত লোক! গালাগালি দিচ্ছে! এরা ছিল কোথায়?

বাপের বাড়ি পৌঁছে ওর বাবার সঙ্গে আবার ডিভোর্স নিয়েই আলোচনা। ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছে না, তাই নিজের ওপর রাগ। একসময় দেখল ও একটা কমলালেবু খেতে আরম্ভ করেছে। কখন খোসা ছাড়িয়েছে, কখনই বা কিছু খাবে ঠিক করেছে তা আর ওর মনে নেই।

মা

মেয়েটা গল্প লিখেছিল। মা বললেন, “ইশ, একটা উপন্যাস লিখলে নয় বুঝতাম।” পুতুলদের খেলনা বাড়ি তৈরি করতে বললেন, “আসল বাড়ি হলে ভালো হতো।” বাবার জন্য মেয়েটা একটা ছোট বালিশ করেছিল। ওর মা বলে উঠলেন, “একটা রেজাই বানালে কাজে লাগত।” সে বাগানে একটা গর্ত খুঁড়ল। মা বললেন, “আরেকটু বড় করে খুঁড়লে পারতিস।” তখন ও গর্তের মুখ আরো গভীর করে খুঁড়ে সেখানেই ঘুমোতে গেলো। মা বললেন, “আহা! যদি চিরকাল এভাবে ঘুমিয়ে থাকতিস।”

টাকা

উপহার, গ্রিটিংস কার্ড, ফোন করে খোঁজখবর, পুরস্কার, জামাকাপড়, বন্ধুবান্ধব, চিঠিপত্র, বই, সুভেনির, পোষ্য, ম্যাগাজিন, জমি, ডিনারের নিমন্ত্রণ, মেশিন, বাড়ি, উৎসবের আনন্দ, সম্মান-স্বীকৃতি, সুখবর, গয়না, দীর্ঘ ছুটি, ফুল কি টেলিগ্রাম, কিচ্ছু দরকার নেই আমার। আমি কেবল টাকা চাই।

একা

কেউ আমাকে ফোন করে না। আনসারিং মেশিন দেখে লাভ নেই, এখানেই তো ছিলাম। যদি বেরোই.. তখন হয়তো কেউ করতে পারে। হাঁ, বেরব। ফিরে এসে আনসারিং মেশিন চেক করব।

অবরুদ্ধ

বাড়ি ঘিরে অবরোধ, বাড়ির ভিতর পুরুষ ও নারী রান্নাঘরের এককোণে জড়সড়। থেকে থেকে বিস্ফোরণ। নারী বলল, “হাওয়া।” পুরুষ বলল, “শিকারির দল।”

নারী: বৃষ্টি।

পুরুষ: সৈন্য!

নারীর ঘরে ফিরতে ইচ্ছে হল, কিন্তু ঘর যে এখানেই। বিরাট এই দেশে, এই ঘেরাও হওয়া বাড়িতে।

Facebook Comments

Leave a Reply