বইমেলায় কী বই কিনবো : দেবরূপ সরকার

বইমেলায় ঠিক কি বই কিনবো, সেটা খুবই অনিশ্চিত একটা ব্যাপার। পকেটে ঠিক কতোটা মাল্লু আছে, ঠিক কোন বইগুলো ঝাড়তে পারলাম বা পারলাম না, নতুন কি কি বই চোখে পড়লো বা চোখ এড়িয়ে গ্যালো – এরকম নানাবিধ ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে আছে। সত্যি কথা বলতে, কখনোই আগে থেকে ওভাবে বইয়ের ফর্দ মাথায় নিয়ে মেলায় যাইনি এখনো পর্যন্ত। আগামী প্রেমিকার মতোই খুঁজে পেয়েছি, দেখেছি, ভালো লাগলে ছকেছি, আর সব ঠিকঠাক চললে তুলে নিয়েছি। তবুও বলবো, অপরজনের এই প্রস্তাবটা এক অর্থে চমৎকার – সকলে যদি পাঁচটা করে বইয়ের সম্পর্কে জানায়, চারপাশে কি কি বই বেরোচ্ছে, কেনা যায়, সে সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা জন্মায়। আমি আমার মতো করে পাঁচটা বইয়ের তালিয়ে সাঁটলাম—

ঘুম সম্পর্কিত একটি প্রাথমিক টেক্সট: কোয়ার্ক প্রকাশনী থেকে ২০২২-এর মেলায় বেরোচ্ছে অত্রি ভট্টাচার্যের ফর্মা দু’য়েকের গদ্যের বই। অত্রি বাংলা বিকল্প-সাহিত্যের তরুণতম প্রতিনিধিদের একজন। ভালো-খারাপের উর্ধ্বে আমাদের সামনে ঠেলে দিতেই হবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে, নিদারুণ সহজতায় রিলেটি তুলে দিতে হবে তাদেরই হাতে। ফলত বিকল্পহীন ভাবে আমি চাইবো বছর বাইশের এই তরুণ লেখকের স্পর্ধার ইস্তেহারটি সংগ্রহ করতে। পাওয়া যাবে কোয়ার্কের ৪৬৪ নং বাক্সে।

মলয় দাশের ‘রচনা সমগ্র’: এই বইটিও প্রকাশিত হচ্ছে কোয়ার্ক থেকে। মলয় দাশ অত্যন্ত স্বল্প-চর্চিত অথচ সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা একজন বাংলা লেখক। ‘মানুষের বাচ্চা’ পত্রিকায় তাঁর বেশকিছু কবিতা প্রকাশিত হয়। তাছাড়া আর কোনো পত্রিকায় তার লেখা খুব একটা চোখে পড়েনি কখনোই। সামাজিক, পারিবারিক বিবিধ অপদস্থতা, অসহযোগিতার বিরুদ্ধে এই মানুষটি কেবলই বেছে নিয়েছেন কবিতার ভাষা। সারা জীবনে তিনটি মাত্র ফিনফিনে চটি বই। গত বছরেই তিনি মারা গ্যাছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এই তিনটি বইয়েরই সংকলন প্রকাশ করছে কোয়ার্ক, পাওয়া যাবে ৪৬৪ নং বাক্সেই।

চিঠি/চার্লস বুকাওস্কি: পার্চমেন্ট থেকে সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত হয়েছে শুভঙ্কর দাশের এই অনুবাদের বইটি। পাওয়া যাবে পার্চমেন্টের ৫৪৩ নং বাক্সে। শুভঙ্কর দাশ তার অনুবাদে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকান কাউন্টার কালচারের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। রিচার্ড ব্রটিগান বা বুকাওস্কি আমি ও আমার মতো অনেকেই প্রথম পড়েছে শুভ দা’র অনুবাদেই। এবার প্রকাশিত হলো বুকাওস্কির চিঠির সংকলন – এ বই সংগ্রহ না করে কি আর থাকা যায়!

শাশ্বত অভিধান: ত্রিপুরার হারাকিরি বর্তমানে পত্রিকা থেকে প্রকাশনায় উন্নীত – যেখানে তাদের প্রকাশিত বইগুলির বিকল্প ভাবনা ও স্পর্ধা আমাকে বিস্মিত করে। শাশ্বত শিকদারের ‘শাশ্বত অভিধান’ বইটি হারাকিরির এই বছরের বই নয়, প্রকাশিত হয়েছিল ২০২১-এই। ৫১৬ পাতার এই বইটি বিকল্প বাংলা সাহিত্যের একটি বিকল্প বই – এখন এটাকে অভিধান বলবেন, নাকি কবিতা, না গদ্য, উপন্যাস, নাকি বলবেন অসংখ্য অ্যাফোরিজমের একটি জলজ্যান্ত সংগ্রহশালা – সে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে হাতে তুলে নিতে হবে বইটি।

Hidden Sound: এর আগে আমি গদ্য, কবিতা, অভিধান ও অনুবাদের একটি করে বইয়ের নাম দিলাম। অয়ন চৌধুরীর এই বইটি দৃশ্য শিল্প (ভিস্যুয়াল-আর্ট)-এর বই। শিল্পীর ডিজিটাল আর্টের এই সংগ্রহটি প্রকৃতই যেন খুঁড়ে বাড় করে আনছে নিহিত ও উহ্য শব্দগুলিকে। বইটি প্রকাশিত হচ্ছে বইমেলায় ‘নিনাদ’ প্রকাশনী থেকে। ছবিও যে কবিতা হয়ে ওঠে অবলীলায় চোখের পলকে – তা উপভোগ করতে হলে এই বইটি সংগ্রহ করতেই হবে।

*তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম বইদুটির প্রকাশনা যথাক্রমে হারাকিরি ও নিনাদ। যতদূর জানি এই প্রকাশনা দুটির নিজস্ব কোনো টেবিল বা স্টল থাকবে না বইমেলায়, তবে, এদের বইপত্তর পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবেই। আপনাকে একটু সচেতনভাবে ঘুরঘুর করতে হবে লিঃ ম্যাগঃ প্যাভিলিয়নের চারপাশে ও বিকল্প বইপত্রের ঠেকগুলিতে। আশা করি, প্রিয় বই খুঁজে নেওয়ার এটুকু পরিশ্রম করবো আমরা সকলেই। চিয়ার্স।

[লেখক – কবি, গল্পকার, পত্রিকা সম্পাদক ও প্রকাশক।]

Facebook Comments

Leave a Reply