চিরন্তন গল্পমালা: যশোধরা রায়চৌধুরী
[বাঙালী পাঠকের কাছে কবি যশোধারা রায়চৌধুরী খুবই পরিচিত নাম। ৯০ দশকের এই কবির ধারাবাহিক স্মৃতিগদ্য – নয়ের দশক থেকে কুড়ি-একুশ অব্দি কবিতার পথচলা, জীবনের পথচলা, কবিদের সঙ্গ – চিরন্তন গল্পমালা – ধারাবাহিক রূপে ‘অপরজন’-এর পাঠকের জন্য।]
পর্ব – ২
এ মার্কা গল্প, একা ও কয়েকজন
আমরা বড় হয়ে উঠছিলাম তখন। আশির দশক। যেহেতু ষাটের দশকের একেবারে মধ্যবিন্দুর জাতক আমি। তাই আশির মধ্যবিন্দুতে কলেজে। ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার । পৃথিবীকে ‘এ মার্কা’ চশমায় প্রথম প্রথম দেখতে শুরু করেছি।
ভারতীয় সমাজও এই সময় বড় হচ্ছে। হাঁটি হাঁটি মূল্যবোধ হঠাৎ ছটফটে অ্যাডোলেসেন্ট হয়ে উঠছে। মনমোহনমিক্সের পাল্লায় পড়তে আর দেরি নেই। মুক্ত উদার অর্থনীতি তার ডানায় টার্বো বুস্টার লাগিয়ে দেবে এবার।
তখন, কমপ্ল্যানের বিজ্ঞাপনের মিত্তি মিত্তি ছেলেমেয়েরা বলছে , দ্যাখো আমি বাড়ছি মাম্মি! বিজ্ঞাপনগুলো তখন সিনেমার চেয়েও মিষ্টি, আকর্ষক। আমি টিভি খুলে কেবলি দেখি বিজ্ঞাপন শুধু। সিনেমা দেখিনা প্রায়। সেই একটা মিত্তি বাচ্চাই, কমপ্ল্যানের, বড় হয়ে শহিদ কাপুর নামের হিরোটা হবে। সেসময় জাস্ট বাচ্চা। নামহীন। কিন্তু বাড়ছে। যেমন বাড়ছে খোলাবাজার। বাড়ছে লোলুপতা আমাদের , নতুন প্রডাক্ট ও নতুন অর্থনীতির জন্য।
আমার বিলেতে বড় হওয়া মাসতুতো ভাই দশবছর বয়সে আমাদের গোটা মধ্যবিত্তপন্থী, অতি ডেটলে ধোয়া ও ফিনাইলে চোবানো ব্রাহ্মমার্কা হিন্দু আলোকপ্রাপ্ত শিক্ষিত ( পড়ুন ভিক্টোরিয় মূল্যবোধে জারিত ) পরিবারকে স্তম্ভিত করে হঠাৎ ম্যাডোনার গান গেয়ে উঠল ।
I am a material girl from a material world.
ম্যাডোনা তখন হিট। মুখে মেরিলিন মনরো চিক্কণতা। তৈলপিচ্ছিল মর্মরের শ্বেতশুভ্রতা , সোনালি চুল। পোশাক অল্পসল্প।
এই ম্যাডোনা আশির শেষ বা নব্বইয়ের শুরুতে তহেলকা মচাচ্ছেন। এর আগে যে বাড়িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ছিল শেষ কথা, হিন্দি সিনেমার গানকে বা বিবিধভারতীর টিং টং কে যারা পাড়ার মোড়ের বেনারসি পানওয়ালার রেডিওর থেকে ভেসে আসা গান বলে চিহ্নিত করত,দূরের বাড়ি থেকে ভেসে আসা ছাড়া যে গান শোনার কোন লাইসেন্স নিজের বাড়িতে বসে পাওয়া যেত না, বিজ্ঞাপনদাতা আয়োজিত অনুষ্ঠান শুনেই কান ধুয়ে ফেলত আবার – তারাই ম্যাডোনার মেটিরিয়াল গান শুনল, সঙ্গে ছোট ভাইটির নানা অঙ্গভঙ্গি দেখল । দেখে হতবাক হয়ে গেল।
১৯৯১ -৯২ এরপর দেখা দেবে নূতনের বেশে। সুস্মিতা সেন ঐশ্বর্য রাই-এর হাত ধরে ভারত পা রাখবে সেই সোনালি স্বদেশে। দেশ জাতে উঠবে, মিস ইউনিভার্স মিস ওয়ার্ল্ডে ভারত প্রথম আসন লবে। আরো ক বছর পর, ক্যাটরিনা কাইফের ঝুলনে দুলতে দুলতে গান শোনা যাবে –
আই অ্যাম টু সেক্সি ফর ইউ
ম্যায়ঁ কিসি কে হাত না আনি।
মাই নেম ইজ শীলা
শীলা কি জওয়ানি।
ছি ছি ছ্যা ছ্যা শব্দে যত কান পাতা যেত না এসব একেক বিস্ফোরণে, তত বোঝা যেত, আমাদের চারিপাশ অ্যাডাল্ট হয়ে উঠছে।
আমি চুরাশি সালে ছিলাম ব্রেবোর্ণের ইলেভেন টুয়েল্ভে পড়া রীতিমত গুড গার্ল। প্রেসিডেন্সিতে ঢুকে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার আগেই হাত ধরে নিয়েছিলাম পাঠভবন থেকে আসা রুবি আর কনীনিকার। সবার একটা যোগসূত্র ছিল। সবাই দক্ষিণ কলকাতা, সবাই টু বি বাসে চেপে আসি।
কলেজ স্ট্রিট দিয়ে যায় দোতলা লাল রঙা টু বি বাস। দোতলা বাস, লন্ডনের আর কলকাতার যোগসূত্রও আবার। কথিত আছে, সে বাসের দোতলায় চড়ে কলকাতা সফর করতেন সুনীল স্বাতীরা, শক্তি মীণাক্ষীরা। আমরা একতলায় ঠেলেঠুলে উঠি। আমাদের ভিড়বাসে চাপা অভ্যাস হয়েছে। শাড়িই পরি । লম্বা আঁচল কোমরে জড়াই। বিশাল বইভর্তি ঝোলাব্যাগ দিয়ে এক রামধাক্কা দিই দুষ্ট পুং-দের, যারা ভিড় বাসে আমাদের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হাত রাখতে চায়।
আমরা জুতো দিয়ে পা মাড়িয়ে দিই তাদের, ভিড়ের মধ্যে কলেজের কোন সিনিয়ার কে দেখতে পেলেই “সুরজিৎদা আ আ আ টিকিট কাটোও ও ও” বলি। কারণ সিনিয়াররা জুনিয়রদের টিকিট কাটবে এটা অলিখিত এক নিয়ম।
কলেজের গেট থেকে উল্টো ফুটপাতে দৌড়ে আসি টু বি বাস আসছে দেখলে, পথে হাত তুলে স্তম্ভিত করে দিই যাবতীয় ট্যাক্সি-রিক্সা-অটো-সাইকেল-বাইক-কে। রিক্সা তখনো নিষিদ্ধ হয়নি। অটো তখনো লাইনের হয়নি। সম্ভবত। মনে নেই।
রুবির নামই হয়ে গেল এই করে করে। টুবি আর রুবির প্রেম। টুবি দেখলে রুবি বাহ্যজ্ঞানহীনের মত দৌড়ায়। টুবি ঘন্টায় একটা । তাই। “রুবি আর টুবি”।
কলেজ কালে আমি পুরনো কোন বছরের ডায়েরিতে ডায়েরি লিখতাম, আর মাদুর দিয়ে মোড়া একটা ফ্যান্সি দেখতে পুরনো ডায়েরিতে কবিতা। কবিতাগুলো পরে বিখ্যাত কবি একজনকে পড়িয়েছিলাম, আরো দশ বছর অপেক্ষা করতে হবে সেজন্য। সেই গল্পটা তখন আসবে। দুর্জনে বলে আমার ছন্দ ভুল হত না। শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে ভীষণ কপি করেছি এখন বুঝি। তখন , আসলে আশিতে, শক্তির ছায়া ছেড়ে আমরা বেরুই নি কেউই। আর হ্যাঁ , অবশ্যই শঙ্খ ঘোষ। শঙ্খ ঘোষের বই হাতে হাতে ফেরে তখন। টেবিল বাজিয়ে আবৃত্তি হয় মিত্র বাবুমশাই।
আমাদের থার্ড ইয়ারে বা এম এ পড়তে চলে আসার সময়ে, কলেজ ক্যান্টিনে জনৈক ব্রাত্য বসুর আগমন ঘটত, আমরা “জ্ঞানী ছেলে , পড়ুয়া ছেলে” বলে জানতাম। সে ছিল ইতিহাস পড়তে ভর্তি হয়ে এক বছর পর ছেড়ে দিয়ে বাংলা পড়া অচ্যুত মন্ডলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। সেইসময়ে তাদেরই বন্ধু হিসেবে, একবার জয় গোস্বামী এসেছিলেন ক্যান্টিনে। তখন তাঁর ‘উন্মাদের পাঠক্রম’ ফেটে গেছে। প্রচন্ড কেঁপে গেছি আমরা। সোমক দাস এসেছিলেন কখনো একটা। বা তাঁর বই থেকে পড়ে শোনাচ্ছিল কেউ । সুবিমল মিশ্রর বই ও তখন হাতে হাতে। অ্যান্টি এস্টাবলিশমেন্ট গদ্য। অচ্যুতের মন্ডলীর আর আর নক্ষত্রেরা হলেন অদ্রীশ বিশ্বাস । বাবলা বা রজত রায়চৌধুরী যিনি পরে দৃশ্য শ্রাব্য মাধ্যমের খবরের চ্যানেল দাপাবেন।
আমাদের সময়ে, অধুনা প্রয়াত, অকালপ্রয়াত জিনিয়াস, উত্তরবঙ্গ থেকে আগত অচ্যুত মন্ডলের অজস্র বিখ্যাত কাহিনি তৈরি হয়ে উঠছিল। ক্যান্টিনে গড় গড় করে বড় বড় বই থেকে সে মুখস্ত বলত। কবিতা ত বলতই, গল্প উপন্যাসও মুখস্ত বলত। রাত জেগে বাওয়ালি করত হিন্দু হস্টেলে। আমাদের থেকে ” চার আনা দাও, যশোদি, সকাল থেকে কিছু খাইনি ” বলে নিত, তারপর প্রমোদের ক্যান্টিনেই, সিগারেট কিনে খেত। নিজেকে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে দেখত সহ্য করতে পারছে কিনা।
কলেজে, সে একটা সাহিত্য সভার আয়োজন করেছিল। এসেছিলেন সুনীল গংগোপাধ্যায় শ্যামল গংগোপাধ্যায় আর সুবিমল মিশ্র। সেই সুবিমল মিশ্র, ‘আসলে এটি রামায়ণ চামারের গল্প হয়ে উঠতে পারত’-খ্যাত! সেই আলোচনাসভার বিষয় রাখা হয়েছিল, মানে অচ্যুত রেখেছিল, ‘সাহিত্যে প্রাতিষ্ঠানিকতা’ নিয়ে। পুরো আশির দশক এই বিষয় নিয়ে ফাটাফাটি লড়াই হত। প্রতিষ্ঠান মানে কমার্শিয়াল কাগজ, আসলে মূলত আনন্দবাজার গোষ্ঠীর নাম না করে আক্রমণ। অপ্রতিষ্ঠান মানে লিটল ম্যাগাজিন যাঁরা করেন, যাঁরা তাতে লেখেন, তাছাড়া যাঁরা আবাপ গোষ্ঠীর ডাক পান নি। তখন সর্বত্র অপ্রাতিষ্ঠানিকদের আলাদা জেল্লা ছিল। মনমোহনমিক্স এসে সব র্যাঁদা ঘষে সমান করার আগে। আর রাজ্য সরকারের হেফাজতে পুরো মেলা-ময়দান-কবিতা উৎসব চলে যাবার আগে। রাজ্য সরকারের ছাতা এসে পরে প্রতিষ্ঠান অপ্রতিষ্ঠানের তরজাটা একেবারে থেঁতো করে বড় ছাতার ছায়ায় সবাইকে এনে দেবে। তারপর ত সিপিএম -তৃণমূল তরজাটা আমরা চোখের ওপর দেখব , এ স্মৃতিকথার অনেক পরের কোন পর্বে আসবে সেসব। আপাতত কলেজ লাইফের সেই বিখ্যাত আলোচনা সভা।
এইদিনের গল্পটা এখনকার প্রেসিডেন্সিয়ানদেরও মুখে মুখে ফেরে। এটা মিথের মত ছড়িয়ে আছে। আমি ভাগ্যবান যে এ ঘটনার আমি সাক্ষী।
অধুনা নোবেলখ্যাত অভিজিৎ বিনায়কের পিতৃদেব, অর্থনীতির অধ্যাপক ও হেড অফ ডিপার্টমেন্ট ডি বি, দীপক ব্যানার্জি, সেই অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করেছিলেন। ডিবির রসবোধের অসামান্য পরিচয় পেয়েছিলাম সেদিন। “প্রাতিষ্ঠানিকতা” বিষয় রাখা নিয়ে বলেছিলেন, আমাদের গাঁয়ের পুকুর পাড়ে দুই বউ গল্প করছে। এক বউ আরেকজনকে বলছে, সারাটা জীবন ভাশুরের ঘর করলাম, কিন্তু আজো পরপুরুষের নাম শুনলে ডরাই রে!
খুবই অ্যাডাল্ট গল্প। প্রাতিষ্ঠানিকতা বস্তুটা আদতে কী, তা নিয়ে অত্যন্ত নির্মোহ গল্পও বটে। অচ্যুত মন্ডল এর পর আবার সেই স্টেজেই গড়গড় করে মুখস্ত বলে গেল সুনীলদার লেখা থেকে। সুনীলদা বলতে উঠলেন, প্রথমেই বললেন “এই ছেলেটা দেখছি আমার লেখা খুব ভাল করে পড়েছে”। তারপর অচ্যুতের প্রচন্ড চোখা চোখা প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত হলেন। স্পষ্ট দেখলাম ফিজিক্স গ্যালারির সম্মুখে উপবিষ্ট অত অত ছাত্র, অচ্যুতের বাঘা প্রশ্ন, সব মিলিয়ে সুনীলদার হাঁটু কাঁপল।
সুনীলদারও হাঁটু কাঁপতে দেখা, এ সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগে। কিন্তু ওঁকে রেস্কিউ করতে তারপর উঠলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। খুব রেগে গেছেন। বললেন প্রেসিডেন্সিতে ডেকে এনে আমাদের এইসব আলোচনার মধ্যে কেন টেনে আনা। অচ্যুত ততক্ষণে শ্যামল ভার্সাস সুনীল লড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন নিঃসন্দেহে। শ্যামলদাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সুনীলদাকে সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক বলে দাগিয়ে দিয়ে। সেসব এড়িয়ে গিয়ে শ্যামলদা বললেন, এর চেয়ে সবাই মিলে গান হোক, নাচ হোক, ঘুঙুর কই, ঘুঙুর আনো দেখি!
অচ্যুত লিখত, ভাল শুধু না…দেশে ছাপাও হত । তখন আমি, আমার দূরতম স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা দেশে কবিতা ছাপা হতে পারে। সালটা তখন সাতাশি বা আটাশি।
অচ্যুতের একটা কবিতা-
সমস্ত স্বপ্নের মধ্যে তাকে দেখি, কেঁপে ওঠে শিরা
অলৌকিক ক্লাসরুমে কারা যেন কীসব পড়ায়
স্তব্ধ ঘুলঘুলির ঘরে পায়রাদের গলায় গম্ভীরা
রোদ রাখে গোড়ালিতে, দুপুরের দৈর্ঘ্য কমে যায়।
অচেনা হলুদ দুঃখ, চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে
বন্ধুভাবাপন্ন হাওয়া আঁচল ওড়ায় বার বার
যেন মূর্ত মোনালিসা, রহস্য বিঘ্নিত হাসি ঠোঁটে
যেন ছাত্রী নয়, যেন অহংকারী ওষ্ঠ শিক্ষিকার।
এই মুগ্ধ বসে থাকা অকথিত অলীক সঙ্গমে
যৌনকাতরের এই প্লেটোনিক মৃদু ফেরেব্বাজি
বিশ্ববিদ্যালয়কৃত হাস্যকর এই পাঠক্রমে
সহপাঠিনীর জন্য, আজীবন ছাত্র হতে রাজি!
মৃত সব কবিদের মাংস কৃমি খুঁটে – তবু ওম্
পেতে তুমি মহাকবি – চালু থাকলে সহপাঠক্রম।
অচ্যুতের অনেক কবিতা আছে মিলনসাগরে। খুঁজে নিয়ে পড়া যেতেই পারে। আটষট্টিতে জন্মেছিল অচ্যুত, আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট। অ্যাকাডেমিক্সে দু বছরের জুনিয়র। চলে গেছে ২০০৯ সালে। একেবারে অকালে। দিল্লিতে অধ্যাপনাকালে। ওর ছায়া দেখি এদিকে ওদিকে। ব্রাত্য বসু অভিনীত অসমাপ্ত ( 2016) ছায়াছবিতে হুবহু অচ্যুতের মত করে স্বরক্ষেপণ করলেন ব্রাত্য। মনে পড়ে গেল তাকে। জানালাম ব্রাত্যকে, অচ্যুতের কথা মনে পড়ে গেল… ব্রাত্য কনফার্ম করেছিলেন ওই অভিনয় অচ্যুতের কথা ভেবেই করা। সেই আপোসহীন, অপ্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র। গোটা চরিত্রটাই অধুনা অবলুপ্ত এক প্রজাতির।
বয়স অনুসারে আমার আশির কবি হবার কথা। আমাদের সমসময়ের আঁতেল পুরুষ কবিরা আসলে এতটাই প্রবলপরাক্রমী, যে কলেজ জীবনে কবিতা নিয়ে খাপ খুলতে পারি নি। দর্শন পড়া নিয়ে অল্পবিস্তর খাপ খুলেছি আর ব্যাগ ভর্তি করে সার্ত্র, হাইডেগার, কাম্যু বয়ে বয়ে বেড়িয়েছি। এক দিকে হেলে থাকতাম ভারি ঝোলাব্যাগের কারণে। গোপন ডায়েরিতেই কবিতা লিখি তখন শুধু। কলেজ ম্যাগাজিনে একবার কবিতা রিজেক্ট ও হয়ে গেল। সুকান্ত চৌধুরী, ইংরেজির ডাকসাইটে অধ্যাপক, আমার কবিযশোপ্রার্থনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিচ্ছিলেন আরেকটু হলেই!
কবিতায় তখন দাপাচ্ছে সৌম্য দাশগুপ্ত , আমাদের তথা, যে নাকি আবার আমাদের বাংলার অধ্যাপক অতীব সুদর্শন প্রশান্তকুমার দাশগুপ্তের বা পিকেডির পুত্র। ওইদিকে অদ্রীশ বিশ্বাস। তবে আগে বলি আমার সমসাময়িকদের নিয়ে। বাংলার অঞ্জন ব্যানার্জি আর অদিতি , যাদের একটাই পরিচয়, তারা লাইব্রেরির সামনের থামের পাশে বসে প্রেম করে। আমার ব্যাচমেট অপূর্ব সাহা, বাংলা নিয়ে পড়ে। প্রচুর লিখত। পড়ে শোনাত। আমার ব্যাচমেট কৃত্তিবাস রায়, প্রথম দিন থেকে তারাপদ রায়ের পুত্র হিসেবে সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস তার। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র। ওর গল্পগুলো পরের সংখ্যার জন্য তোলা থাকুক।
Posted in: January 2022 - Serial, PROSE