অপ্রকাশিত কবি

[বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, বহু প্রতিভাশালী কবিই অপ্রকাশিত অপ্রচারিত থাকেন – কখনও বা তাঁদের ভাষা আঙ্গিক শৈলীর বিশেষত্বের কারণে, কখনও জনসংযোগ করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ব’লে, আবার কখনও হয়ত কেবলমাত্র তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান বা পরিবেশের কারণে। এমন কত কারণই ঘুরে বেড়ায়। একজন প্রকৃত কবির কাজ লুকিয়ে থাকে অপ্রকাশের আড়ালে।

“অপ্রকাশিত কবি” – অপরজন পত্রিকার একটি প্রয়াস, এমন কবিদের কাজকে সামনে আনার, যাঁরা ব্যপকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত নন। যাঁদের লেখা হয় এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, অথবা কেবলমাত্র দু’ একটি পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। অথচ যাঁরা লেখার মাধ্যমে আমাদের দেখাতে পারেন ভবিষ্যত বাংলা কবিতার বাঁক।

বিভাগ সম্পাদনা করছেন, রাহেবুল।]

দেবকুমার দাস

জন্ম: ১৯৭৩

জন্মস্থান: কলকাতা

কবিতা লেখার উদ্দেশ্য-বিধেয়: কবিতা প্রকৃত প্রস্তাবে একটি জাদুবিদ্যা। শব্দ নিঃসৃত ওং থেকে নির্মিত ঘর দালানে যিনি থাকেন তিনি আঙুলের নাড়াচাড়ায় নির্মাণ করেন রেলগাড়ি কিংবা বসন্তকাল। তার মনেহয় আমিও ভালো বেসেছি রেলগাড়ি…বুঝিয়ে বলার বসন্ত আসেনি। এই বোঝা না বোঝার ভিতর গড়ে ওঠে দিগন্ত পারের এক মায়া স্টেশান। যেখান থেকে শুরু হয় এক ম্যাজিক যাত্রা, সিরিজের পর সিরিজ কিংবা লেভেল ক্রসিং।

পাঠকও এক ধরনের কবি। কবি নাহলে কাব্য নির্মাণ কীকরে বুঝবেন। যিনি পাঠক তিনিই কবি। কবি পাঠকের এক যৌথ প্রয়াস একটি অপ্রকাশিত কিংবা গোপন কবিতা সিরিজ।

প্রথম প্রকাশ: ‘গদ্যে পদ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে’ পত্রিকা

কবির সঙ্গে মোলাকাত ফেসবুকে। তীব্র গতির ফেসবুকে। যেখানে চোখ পড়তে না পড়তে টপিক পাল্টায়, লোকের টাইমলাইন ভাসে আর তলায়। ভিড় বাড়ে। কমে। দ্রুত। কেউ কেউ পাঠকের অভাবে তাতেও মাছি তাড়ায়, এমন দু’একজন আমরা আছি। হয়তো ফেসবুকের বাইরেও এমনই আমাদের। তো কবি দেবকুমার দাস বয়সে প্রবীণ অনেকটাই, কিন্তু তাঁর লেখা আগে পড়া হয়নি। ফেসবুকে পড়া হল বেশ কিছু লেখা যেখানে হামলে পড়ার মতন পাঠক নেই তাঁর একেবারেই কিন্তু লেখায় আছে সেই অগতানুগতিক। সাত-পাঁচ ভেবে তাই তাঁর কবিতাই থাকল এ দফায়, একটি সিরিজ কবিতা। আশা করি পাঠক অতৃপ্ত হবেন না।

ভাঙা রোদ ও টাইপ করা শব্দের সিরিজ

১.

মনের বাঁধন খুলে খুলে গেলে আবার আঁট করে নাও
জলবায়ু নৃত্যে ঘুঙুর পর। সবুজ রুমালটি ভাজ করে রাখ পকেটে।

আবহাওয়াবিদরা চিন্তিত হয়ে দেখেন শীতকাল মাঝ পথে বাস থেকে নেমে যাচ্ছে বিষন্ন হয়ে
মৃত্যুকে বসে থাকতে দেখা যায় পাগলি সেজে…

প্রেমের অন্তিম পর্যায়ে কামনা কর ছিমছাম চুম্বন
কফি খাও। হৃদস্পন্দনে কান পাত ধীরে।

নদী ধৌত পললে বিবাহ রঙ লাগে
প্রকৃত প্রস্তাবে কিশোরী মেয়েটির লজ্জা ধান মাঠ হয়ে যায়

পুরোনো ছাতায় মায়ের খোঁজখবর নাও
চুল আঁচড়াও আয়নার সামনে

ময়ূর নাচের আসরে উড়ে আসছে ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ এবং ঈশ্বর
মানা না মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার

২.

এদিকে পোস্ট অফিস নিয়ে এল নতুন দুর্দান্ত স্কিম
বর্ষা বাদল পেরিয়ে আমাদের গন্তব্য, বাঁশের সাঁকো

ভাগ্যের চাকা তো ঘুরছেই দাদা…
পিকক্‌ লটারি!

চটি ছাতা সাইকেল নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি
সমস্যা আমার ভাগ্যের!

৩.

পথনাটকের দেশে যাব
নদী প্রসঙ্গে খোলা চিঠি দিয়ে রেখেছি হাতে হাতে
নদী ও সংসারের চোরা স্রোত নিয়ে গান

বিষয়বস্তুর ভিতর পাখিদের সঙ্গম ঋতু ও শীত সংলাপ
আর দৃশ্য গড়ে ওঠে
আপেলের মসৃণ রূপ নিয়ে আমাদের প্রথম কবিতা
দ্বিতীয় দৃশ্যে ছুরির মার্জিত প্রেম ইতিহাস

ভিড় জমে ওঠে। পাখি প্রজন্মের হাতে ফিতে বাঁধা নদী।
পাখিদের অভিনয় নিয়ে কথা ওঠে। শহরের গুজবে
ঢুকে পড়ে প্রতারক প্রেমিকার হাসি

৪.

মনে মনে পান্ডুলিপির কথা ভাবি
সবচেয়ে নিকটবর্তী যে ঝর্ণা তার মুকুটে মাছরাঙা বসে আছে
মোম জ্বেলে জ্বেলে খুঁজি গুলিবিদ্ধ জ্যাকেট

আর ঘুমের ভিতর বিধবা মেয়েটি সেজে ওঠে নার্স

বই বাজারের দিকে যাই। কবির মৃত্যু সংবাদ শুনি।
লিখিত শীলাখণ্ড ও ফাটল

সম্পর্কের ভিতর শুনশান মাঠ সাদা কালো

৫.

ভাঙা ফুলদানি পড়ে আছে শীত ঋতুর নীরবতায়
ড্রেসিংটেবিল থেকে পড়ে যায় দুঃখবোধ…চূর্ণবিচূর্ণ

ছড়িয়ে পড়েছে কাল হিমেল মন মৌমাছি জ্বালা…

বৌ ঘর ঝাড় দিতে শুরু করেছে…

Facebook Comments

Leave a Reply