প্রীতম বসাক-এর কবিতা

তোমার দুঃখের পাশে আমাকে বেশ মানাবে

১.

এসো মানুষ শিখি। যথেষ্ট হাল্কা হতে হলে হাঁটার ভেতর নিয়মিত জল ঢালা দরকার। যখন ফসল কাটার সময় তোমার মুখ যেন রোদ ঝলমলে থাকে। জেনো গান তার শিয়রে জ্বর নামানোর স্বরলিপি রেখে দেয়। তুমি হাত ধরে সুরটুকু পাড় করে দিও। আমি নম্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকবো যতক্ষণ না সে ঘরে ফিরে দুঃখের পাশে এসে বসে। থিতু হয় বিশ্বাসে। মানুষের রচনায়!

২.

দৃশ্যমানতা সেলাই করি তবে! তোমার ভিতর নেমে তুলে আনি স্তব আর স্মৃতি। মানুষ খুব প্রাচীন পুঁথি। খানিক আলো বাড়িয়ে দাও। আমি তার ক্ষয়ক্ষতির গায়ে কুঞ্জফুল রাখি। বৃষ্টির হাতদুটো কেন এত শুকনো! এ-কথা ভাবতে ভাবতে একটি সরাইখানা খুঁজছিলাম, যার পাশেই প্রসন্ন সুফি তাঁর ঈশ্বর দেখাবেন। বায়ুর স্বাদ জানাবেন। কিংবা একপ্রকার জলাশয় যার জীববৈচিত্র্য এখনো কারো স্পর্শে ভেঙে যায়নি! যেন তখনও আপেল পাকার কথা পাঁচকান করেনি কেউ!

৩.

তুমি তার পবিত্রটুকু দেখো। লেখার ভেতর মেধা যেভাবে মুখ ঢেকে রাখে ওর সামনে নিঃশব্দ হও। মানুষ প্রধানত সংখ্যালঘু। নিজের ভেতরের চুপগুলো নিয়ে তার হওয়া। আমি উহার একক ঘুম প্রার্থনা করি। যেন অপমান থেকে শিউলি ঝরে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে তুমি তার গানের বাসনাখানি মেখো। স্নান হইও। মায়ের থেকে দূরে এসে তুমি জেনেছ কীভাবে জানালার ধারে নিবিড় এসে বসে থাকে। দুঃখ ভাঙার শব্দে সে একদা নিভে যায়।

৪.

একটানা জীবন পড়ি। আল কেটে সচল করি দৃষ্টি। দারিদ্র্য বাঁধানো সংসার। অলক্ত ধুয়ে পরিয়ে দিই লতাপাতা। তুমি জানো মৃতদেহ কেমন করুণ হয়ে যায়! তাকে ছুঁয়ে থাকার আয়োজন থাকে। তখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় নিরঞ্জন। শেষবারের মত সিঁদুর হয়। কান্না হয়। শব চলে গেলে আমরা মানুষ নিয়ে বসি। অন্ধকার থেকে আলো বাছি। মা জল ঢেলে দেন শোকে। নমস্কার শেষ হয়। পাশেই শিশুটি হাসি নাচায়। দুলে উঠে।

৫.

এই তার প্রিয় পোশাক। একা রঙের আলো। সে শুধু তোমার জন্যই তুলে আনে রাঙামাটি। আর উঠোনে এঁকে দেয় স্মৃতিচিহ্ন। দুঃখের আকর্ষে বেঁধে রাখে সজীব মেরুদণ্ড। মাঠের পথে শাড়িতে লেগেছিল জটিলতা। সে খরজলে ধুয়ে দেয় মুখ। লাবণ্য ঢালে রন্ধনে। তুমি খাও বাৎসল্য। সে চাখে ওষ্ঠে লেগে থাকা প্রিয়। দুঃখের দুই পাশে দুটি আনন্দ ফুটে থাকে। ঝরে জলে অভাবে অমিলন।

৬.

তোমার শ্রমের পাশে আমাকে খুব মানাবে দেখো। যেন অপরূপ! যেন দুধের ওপর জমে থাকা পরিপাটি। জানি পৃথিবীতে আছে যাতনা বহুবিধ। যেমন দিঘিটি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ব্যাথা। যেমত মায়ের শাড়ি উড়ে যায় দিনান্তের দিকে। শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বালক জানে আলো বানানো কাকে বলে। তোমার জন্য আমি ফুঁ কিনে আনবো কখনো। ঘাম থেকে বানাবো শয়নযান। তোমাকে আমি ঘুম দিয়ে ঢেকে দিবো। আগুনে গলাবো একদিন।

Facebook Comments

Posted in: January 2022, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply