কবি ও বুলডোজার : অর্ঘ্য দত্ত বক্‌সী

কবি ও বুলডোজার-

শেষ লেখা আত্মজৈবনিক
শেষ লেখা আত্ম-পরিহাস
শেষ লেখা স্ব-ষড়যন্ত্র
শেষ কথা(চুরি)সাহিত্য!

যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস না কিছু…
কালকে প্রেমে আসবে নেমে, করবে সে তার মাথা নিচু…
অথবা
আমার বেদনার কাছে তোমাদের সবাইকে নতজানু হতে হবে…

আমি কোথায়?
লকআপে।
কেন?
তুমি বুলডোজার দিয়ে কন্সট্রাকশান ভেঙেছ।
আমি বুলডোজার চালাই! এই শরীর নিয়ে!
হুম।
আমার নাম কী?
যা খুশি একটা নাম দে নিজের।
মানে? আমার নাম আমাকেই… আমার বাড়ি কোথায়?
আপাতত তোর কোনো পারমানেন্ট অ্যাড্রেস নেই।
আমার বাড়ির লোক?
তোর কেউ নেই। কেউ সম্পর্ক রাখে না তোর সঙ্গে…
কেন?
তুই স্পেশাল তো তাই…
সিগারেট খাবো…
তুই সিগারেট খাস না।
খুব যে ইচ্ছা করছে তবে!
তোকে দেওয়া বারণ।
কার বারণ?
সমাজের… সমাজ তোর থেকে দূরত্ব রেখে চলে… বোকাচ্চোদা-হরিজন
সে আবার কী… কতদিন ধরে আছি এখানে আমি? কবে ছাড়া পাব?
পাবি না।
যাবৎজীবন?
অত বড় হুব্বাও হওনি…
আরে কী বলছ একটা কিছু ঠিক করে বল…
বাইরের জগতটা এখনই নিতে পারবি না। থাক না কিছুদিন এখানে। শিগগিরি ছেড়ে দেবে।
কেন বাইরের জগতে কী এমন জুজু আছে?
জুতিয়ে খাল খেঁচে নেব। পুলিসকে রিয়ালিটি চেনাচ্ছিস? দিব্বি শুয়ে বসে খাবার পাচ্ছিস, আর কী চাই রে?
কেন আমি কী নিজেকে চালাতে পারি না! আমি কোথায় চাকরি করি? আমার ফ্যামিলি কোথায়? আমার কী কোন অতীত নেই?
না। কারণ তুই যা করিস তাতে কারো দরকার নেই।
আরে আমার তো একটা মানুষীসত্তা আছে নাকি… সবার তো একটা পরিচিতি আছে…
তোর পরিচিতি গোটা বাংলা জানে…
শুধু আমি নিজেই জানি না! আমার অতীত বিষয়ে বল…
কী হবে এত অতীত দিয়ে! সে আর শোধরানো তো যায় না… ছাড়া পেয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবিস।
অতীত আর বর্তমান পরিচিতি ছাড়া মানুষ হয় নাকি?
শুধু অতীত নিয়ে বাঁচাও যায় নাকি? আর তুই তোর পরিচিতির বোঝা বইতে পারবি না।
সিগারেট খাব।
কী ব্রাণ্ড?
তা তো মনে করতে পারছি না… পেলেই হল… না হয় একটা বিড়িই দাও
হুম, ছাড়া পেয়ে খাস… পোড়া একটা দেব?
এত নিষ্ঠুর!
তুই স্বর্গে আছিস…
বাইরে মাইকে একটা গান শুনছি… এখন কি পুজো?
হুম।
খুব চেনা চেনা সুর… পলাশ কাফি?
লিমিট থাকে বুঝলি… এসব আর একবার বললে রুল ঢুকিয়ে দেব…
বাবা রে, কী অপরাধ করে ফেললাম?
হ্যাঁ, এটাই, জানিসই না যে কী অপরাধ করেছিস এতদিন…
এত দাড়ি হয়েছে কেন? চুলকোচ্ছে, দাড়ি কাটব।
ওরে তোর দাড়িই তোর পরিচিতি…
একমুখ দাড়ি গোঁফ তো পাগলের থাকে…
আরো কিছু বিরল প্রাণীর প্রজাতিদের থাকে… চিন্তা করিস না, কেটে দিয়ে ছুন্নত করেই ছাড়া হবে।
ঝাঁট জ্বালিয়ো না… শুধু অপমান করে যাচ্ছো কেন? পুলিস বলে কি যা খুশি করে যাবে?
তোর ঝাঁট আছে?
আমায় একটা আয়না দাও। আমাকে কেমন দেখতে?
আয়নায় এখন মুখ দেখা বারণ।
কেন?
কোন এস.আর.কে তুমি? আমার স্কিন তোর চেয়ে ভালো… আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারবি আই লাভ ইউ! জানবি যা করা হচ্ছে তোর ভালোর জন্যই করা হচ্ছে।
হ্যাঁ গো, আমার যে খুব খিদে পেয়েছে।
নিজে রান্না করে নে।
আমি তো রাঁধতে জানি না… জানি?
মুড়ি খাবি? চপ?
এত খিদেয় চপ মুড়ি?
চা- সিগারেট?
ইয়ার্কি মেরো না… সত্যিই খুউউউব খিদে…
তাই তোরা খাস। তোর মতো বুলডোজারের ড্রাইভার কি বিরিয়ানি খাবে?
আমি মোটেও লেবার নই, হতে পারি না…
হ্যাঁ, তুই শ্রমিকতাত্ত্বিক শ্রমজীবী লেখক…
বাইরে দিন না রাত্রি গো? কোন মাস এটা? কত তারিখ?
সেসব আর কোনোদিনও তোকে জানতে দেওয়া হবে না।
আমি তো ট্রাপ্‌ড…
হাতেখড়ি থেকে…
পুজো চলছে না?
কিসের দরকার? শারদ সংখ্যায় লিখবি?
হ্যাঁ, কেমন কেমন যেন মনে হচ্ছে বারবার। আমি কি লিখি? কি লিখি আমি? লিখি কি আমি?
লাইট অফ করে দে তারক। আর মালটা আর একটা কথা বললে পোঁদ মেরে দিবি…

(২)

এই নে তোর মোবাইল। তোর ঝোলাব্যাগ। পাঞ্জাবি পাজামা। যদিও তোদের তো পাছার কাপড় খোলাই থাকে। এবার ফোটো ভাই কাগুজে বাঘ। অনেক সরকারের অন্ন ধবংস করেছ। কাউন্টার কালচার… নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতিবাদ করে… দয়া করে পৃথিবীর নাগরিকত্ব ছাড়… তাতে বোঝা কিছু কমবে। স্যার, তাহলে পাপ বিদেয় করে দিচ্ছি। আর শোন, মাল খেয়ে আবার যদি মন্থনে বুলডোজার চালাতে আসিস তো এবার ফাঁসি। শুধু পাগলা বলে এবার বেঁচে গেলি রে। পাগলামির এত এত প্রমাণও কেউ রাখতে পারে ভাই তোকে দেখে শেখার আছে। অনেক কষ্টে বাঁচিয়েছি। আর করলে এবার কিন্তু গণধোলাই।
আমায় কেউ নিতে আসেনি?
এলিয়েনরা আসবে নাকি তোর জন্য? জীবনে কারোর কোনো উপকার করার যোগ্যতা ছিল যে মনে রেখে আসবে? বন্ধু কী সম্পর্ক কী এসব বুঝেছিস কোনোদিন? তোর মতো নির্লজ্জ স্বার্থপর খুব একটা দেখা যায় না রে… আর একটা কথা বলে দিই ভাই, তোকে একবার ভেঙে গড়ে নেওয়া হল, মানুষের কাছে এতটা সুযোগ আসে না। তুই লাকি… পেন আর স্টিয়ারিং থেকে দূরে থাকবি… ভালো থাকবি
মোবাইল লকটা খুলে দাও। আরেশ্লা ওয়ালপেপার ঋত্বিক ঘটকের! আচ্ছা আমি এখনও বুঝতে পারছি না এই বুলডোজার আর পাঞ্জাবির মধ্যে যোগসূত্রটা কীভাবে ঘটছে মানে সন্দর্ভটা…
তারক ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে থানা থেকে।
( বেরিয়ে এসে )
আঁচ করেছিলাম। সেটিংস থানা!
খানিক হেঁটে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে…
দাদা এক ভাঁড় চা দিন।
পালিয়ে যা, পালিয়ে যা… (অনেকেই হন্তদন্ত হয়ে সরে যায়)
আরে আরে দাদা দাদা দাঁড়ান… আরে কিছু ভুল হচ্ছে নাকি! আমি তো শুধু চা চাইলাম…!
আপনার কাছে মেশিন টেশিন নেই তো?
আরে কী হবে তা দিয়ে…! খামকা মেশিন থাকতে যাবে কেন? ভয় পাচ্ছেন কেন? কী হয়েছে?
আপনি জানেন না আপনি কী করেছেন?
কই না তো! কী করেছি? একটু চা দিন না। গলাটা শুকিয়েছে। সিগ্রেট দিন একটা।
সমুদয় চা-জনতার আলোচনা (অতি চাপা কণ্ঠে) – তবে কাগজে যা বেরিয়েছিল তাই ঠিক বুঝলি, আসলে পাগল…। দেখে তো একেবারেই হার্মলেস মনে হচ্ছে। পাতাখোর ছিল নাকি? তুই যা না, কথা বল, আমরা চারপাশে আছি তো… সেরম হলে এখনই থানায়… এরা কীসব উড়তে টুড়তে পারে না কীসব মন্ত্র টন্ত্র জানে না এসব কীসব পড়ে… বলা তো যায় না… আরে দেখিই না কেমন তারকাটা…
( চায়ের দোকানি ) – আপনার নাম কী দাদা?
কি জানি মনে পড়ছে না… খুব খিদে পেয়েছে। কাছাকাছি কোথাও ফিশচপ পাওয়া যায় না?
( সকলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে) – চা দেব?
হ্যাঁ, ভাঁড়ে, আর সিগারেট দিন।
কোথায় থাকেন?
মনে করতে পারছি না… সিগারেট…
আপনি মন্থনে খুব যান না?
তা তো বলতে পারব না… কেন হঠাৎ?
আপনি কী করেন?
বললাম তো মনে পড়ছে না… শুনেছি বুলডোজার চালাই… এত প্রশ্ন কীসের? আপনারা এরকম করছেন কেন? পাগলের মতো? সিগারেট…
হ্যাঁ আমরা পাগল – না… সিগারেট পোঁদে গুঁজে দেব আয়… শালা আঁত্‌লা বোকাচোদা… ফোট ফোট… ( সকলে রে রে করে তেড়ে আসে )
( ভয়ে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে আসে দোকান থেকে )
(স্বগতোক্তি) কেসটা কী বোঝাই যাচ্ছে না! এ কী বিপদ! কোথায় যাব এখন! খুব যে খিদে পেয়েছে… ( মোবাইলটা ঘেঁটে দেখতে থাকে… )
কী দাদা, লক খুলতে পারছেন না? চোরাই মাল?
ধুর, চোর হতে যাব কেন? বলে থানা থেকে দিয়েছে…
ও ( দূরে দাঁড়িয়ে আর একটা ছোটখাটো ভিড় হয়, তারাও তাকে উৎসুক দৃষ্টিতে দেখে ও হাসতে থাকে )
( স্বগতোক্তি ) লোকে এরকম করছে কেন? আমার সমস্যাটা কোথায়? লোকে কী সবসময়ই আমার সঙ্গে এরকম করে না কোন কারণ আছে যে সবাই চেপে যাচ্ছে! এত লোক আমায় চিনছে কীকরে! একেবারে সেলিব্রিটির মতো!
আরে, পথিকদা তুমি এখানে? ( ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায় )
তুমি আমাকে চেন ভাই! আমার নাম পথিক?
না, ওটা তো তোমার ছদ্মনাম।
ছদ্মনাম তো কবিদের হয় শুনেছি… তাহলে কী আমি কবি? সবাই যে বলছে বুলডোজার চালাই…
তোমার কী কিছুই মনে নেই? তাড়াতাড়ি উঠে এস। নাহলে লোকে তোমাকে গণধোলাই দেবে।
( ট্যাক্সিতে উঠে )
আমার পুরো নামটা কী ভাই?
তোমার না তোমার ছদ্মনামের?
দুটোই বলো না…
তোমার ভালো নাম তো সযত্নে লুকিয়ে রেখেছ। পুরো ছদ্মনাম পথিক মজুমদার।
আমার আসল নাম কী তাহলে?
জানি না। সেই ঘটনার পর এতদিন কোথায় ছিলে?
কোন ঘটনা? ভাই একটা সিগারেট…
তুমি বুলডোজার চালানো কীভাবে শিখলে?
আরে তুমিই তো বলছ আমি কবি, তাহলে খামোকা বুলডোজার চালাতে যাব কেন? সবাই একই কথা বলে যাচ্ছে তো বলেই যাচ্ছে…
( স্বগতোক্তি ) পুরো তার কেটে চাঁদ হয়ে গেছে রে…
আর একটা কথা… আমি কতদিন এভাবে আছি?
তা মাস চারেক তুমি বেপাত্তা। এ কয়দিন তুমি পাভলভে ছিলে। পুলিশের এত বড় ব্যর্থতার জন্য ঘটনাটা চেপে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বাট লিক-আউট করে গেছে কোনোভাবে। তোমাকে বোধহয় শক দিয়ে দিয়ে সব ভুলিয়ে দিয়েছে। ঘটনাটার পর তোমার নামে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে জানো তো… লোকে বলছে ‘revolution have broken out’… তোমার কাজের পক্ষে আর বিপক্ষে এখন আগুন জ্বলছে গোটা বাংলায়…
কী সব বলছিস ভাই… কী ঘটিয়েছি আমি?
সত্যি কথা, তুমি যে এরকম করবে তা কেউ সুদূর কল্পনাতেও ভাবতে পারবে না… উঁচু দরের সায়েন্স ফিকশন মাইরি… কেন করলে? আর কোনোদিনও তুমি সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে পারবে না। কোন দল কোন বন্ধু কোন পরিজন কেউ দাঁড়াবে না তোমার পাশে। তোমার ডি এন্ড…
আরে ভাই করেছিটা কী?
তুমি লকডাউনের সময় রাত ৩টেয় বুলডোজার চালিয়ে মন্থন ভাঙতে চেষ্টা করেছিলে…
সে কী রে ভাই… তুই বলিস কী? আমি তো ভাবতেই পারছি না… কোন ভুল হচ্ছে কী… কোন ষড়যন্ত্র চলছে আমাকে নিয়ে…
তুমি তো কোনোদিনও রাজনীতি করতে না! নাকি শেষের দিকে মাওবাদীফাদীতে জড়িয়ে দিয়েছিল কেউ? তুমি কী শেষের দিকে পাতা ফাতা খাওয়া ধরেছিলে নাকি? আসলে তুমি তো– তাই কিছুই প্রেডিক্ট করা যায় না। তোমার খিদে খুব বেশি জানা ছিল কিন্তু পাবলিসিটির এত লোভ কারো হতে পারে ভাবা যায় না। তোমাকে সবাই ঘেন্না করছে।
আমি বাড়ি যাব… পাগল নাকি তুমি ভাই…
হ্যাঁ, দাঁড়াও, একটা সেলফি তুলি… তোমার বাড়ি এসে গেছে… এই গলি দিয়ে সেকেন্ড বাড়িটা… এ রাস্তাটা পরে পথিক মজুমদার সরণি হয়ে যাবে(হাসি)… সত্যি পথিকদা বইমেলায় আগুন লাগানোর পর সাংস্কৃতিক জগতে এত বড় আলোড়ন করে ফেলা ঘটনা আর হয়নি… প্রায় কালচারাল রিভলিউশন করে ফেলেছ… নামো। জুতসই করে যদি ২২ বা ২৪ দফা কারণ সাজাতে পারো তো গুরু অমর হয়ে যাবে। তাবলে মন্থন কেন সংস্কৃতির এক ও একমাত্র কেন্দ্র হয়ে থাকবে- কেন্দ্রকে ভাঙা দরকার- প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা- এসব আবোলতাবোল বোলো না কিন্তু। খাবে না। নিজে যদি না পারো তো বোলো, আমরা লিখে দেবো! আর শোনো, পালিয়ে যেও কোথাও। বাংলায় আর বছর খানেক ফিরো না। নামো। তোমায় একবার পেলে কিন্তু একান্ন পীঠ করে দেবে। খুদা হাপিস।

(৩)

ঘরে যায়… দরজা খোলা… সব লণ্ডভণ্ড… সুস্থ মালিকের পক্ষেও এ বাড়ির ইন্টেরিয়ার রেস্টোর করা মুশকিল… স্তূপ থেকে সবার আগে তার বাড়িতে কী কী বই আছে তা খুঁজতে থাকে।
দেখে গাদা গুচ্ছের ইঞ্জিনিয়ারিং আর রামায়ণ মহাভারত পুরাণের উপর বই। প্রচুর জাভার বই আর প্রচুর ইতিহাসের উপর বই। প্রচুর সাইকোলজির উপর বই আর অনেক বাউলের উপর বই। রবীন্দ্রনাথ ও মার্ক্সবাদের উপর বই। প্রচুর সুনীল আর প্রচুর সুবিমল মিশ্র। হাঁস আর শজারুর উপর বই। এভাবে কোনো টেস্ট বোঝা যায় না। সে এবার ল্যাপটপটা খুঁজে পায় এবং তাকে আশ্চর্য করে সেটি ওপেনও হয়। ফিল্ম… সে দেখে কাশ্যপ থেকে শান্তি ওম, পানাহি থেকে পাইরেট্‌স… এভাবেও বোঝা যায় না। মিউজিক রবীন্দ্র-ফোক গান্‌স অ্যান্ড রোজেস-বাউল-ইন্ডিয়ান বা ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল দুটোই প্রায় সমান জিবির, খিঁচ মেরি ফটোর সঙ্গে এস.ডি.বর্মণ, জগজিৎ আর অরিজিৎ, ফসিল্‌স আর আব্বাসুদ্দিন আহমেদ… এভাবে কোনো মানুষের ট্রেট বোঝা যায় না। অরণ্যের দিনরাত্রি আর হরনাথ চক্রবর্তী একসঙ্গে থাকে কী? জানে না সে। বোঝে না সে বোঝে না। আমি তো মানুষ… মনুষ্যত্বটা আগে না মাৎসর্যরিপু – রুচি বোধ শিল্পচেতনা না ইমেজ – আইডেন্টিটি কাকে বলে? যে বাস্তবে আর যে বিচ্ছিন্ন তারা দুজনেই যে যাতনা তাহারে বলে…
( স্বগতোক্তি ) সবার আগে জানতে হবে আমার আসল নাম কী? আমি কেমন লিখি? আর কে আমার পাঠক? গুগলেই সার্চ করে দেখি।
দেখা যায় অন্তত পঞ্চাশটা নাম খুলছে পথিক মজুমদার নামে। ফেসবুকেও তাই। নিজেকেও এত দাড়ি গোঁফে চেনা যাচ্ছে না আয়নায়। জাস্ট ক্ল্যারিটি নষ্ট হয়ে গেছে। অথবা মোবাইল ল্যাপটপগুলো তো ইচ্ছাকৃতভাবে এলোমেলো করে দেওয়া হতে পারে যাতে নিজেকে চেনা না যায়। এবং কী মুশকিল এই ছদ্মনামে…
নেমসেকে বিশেষত ফেসবুকে প্রচুর ঘাপ্‌লা। যদি তা কোনো ইউনিক নাম হয়। ধরা যাক মেহেদি আহমেদ নামে দুজন একই মেলার মাঠে ঘুরছে, তাদের পিতৃদত্ত নাম না বলে তারা বাস্তবেই আত্মপরিচয় দিচ্ছে যে আমি মেহেদি আহমেদ, বলুন! তাদের আসল নাম কেউ জানে না। এফবিতে তাদের কোনো প্রোফাইল পিকচার নেই। কোনো কংক্রিট অ্যাবাউট মি নেই। ফেক এই প্রোফাইলটাকে আইডেন্টিটি করে চালানোর মধ্যে কতটা হিপোক্রেসি কতটা ‘দুর্নীতি’… এই গোপনীয়তা যার পাছার কাপড় খোলা।
তাদের আলাদা করব কিকরে?
কেন তাদের সৃষ্টি থেকে!
শিল্পী ধরা যাক আঁকিয়ে, অ্যামেচার, যিনি তার বিখ্যাত ‘সিগনেচার’ এখনও বানাননি। আলাদা করা যাবে কার অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি কোনটা? অ্যামেচার দুই কবি… আগে তাদের লেখা বেশি কেউ পড়েনি, আলাদা করা যায় না, ইমেজ আইডেন্টিটি ইচ্ছা করে গোলানো অন্যরকম প্রজেকশন করানো অপরাধ। কবির লেখা বদলায় না? তার পর্যায় আসে না? লেখা কেউই পড়ে না। কেউ কেউ নিজের লেখাটাও পড়ে না, জাস্ট চোখ বুলোয় হয়ত। কবিদের কবিতুতো দাদা ভাই থাকে কিন্তু আইডেন্টিটি কার্ড থাকে না। আর তা ম্যাটারও করে না, শুধু ইমেজ… পাতি অধুনান্তিক না মারিয়ে এই ইমেজই সব। নিজে সে নিজেকে হারিয়ে ফেললেও তার ইমেজই সব…তার বিষয় তার ফর্ম তার টেস্ট তার পড়াশুনার হিসাব না রেখে ইমেজ যত হারে তত বাড়ে। অ্যাসিড বাল্ব তো মেয়েদের শুধু একবার মারা হয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তার ইমেজের মুখে অ্যাসিড বাল্ব মেরে চলেছে বাস্তব… তাও সে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারে। বলতে পারে লাভিয়ু!
সমস্যা এখানেই। পথিক মজুমদার কার বই পড়ে জানবে যে সে কেমন যখন সে হারিয়েছে বা হারিয়ে দেওয়া
হয়েছে যন্তরমন্তর করে তার সকল আইডেন্টিটি? তার নেমসেকের বই পড়ে নিজেকে চিনতে গেলে তো
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন! এসবের রিল্যায়েবিলিটি ভ্যালিডিটি কোনোদিনও ছিল না। এসব থেকে কোনোদিনও কিছুই প্রমাণ হয়নি। লিটিল ম্যাগাজিন এখন ডাইনোসর। একটা কথা বোঝা দরকার যে টাকা আর মাদক ছাড়া শিল্পের কারো প্রয়োজন নেই। নীতি আর মূল্যবোধ শব্দদুটো শুধুই লোক হাসায়। ‘ঈশ্বর’ ব্রহ্মচারী মেরুদণ্ডী মানুষ তৈরি করা স্বাধীনতার পর থেকে ছেড়ে দিয়ে শুধু পোঁদবাজ বানান এখন রামের ইচ্ছায়, তাতে তারও খাটুনি কমে, ‘হরপ্রসাদ’এরও।

[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য।]

Facebook Comments

Leave a Reply