অপ্রকাশিত কবি

[বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, বহু প্রতিভাশালী কবিই অপ্রকাশিত অপ্রচারিত থাকেন – কখনও বা তাঁদের ভাষা আঙ্গিক শৈলীর বিশেষত্বের কারণে, কখনও জনসংযোগ করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ব’লে, আবার কখনও হয়ত কেবলমাত্র তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান বা পরিবেশের কারণে। এমন কত কারণই ঘুরে বেড়ায়। একজন প্রকৃত কবির কাজ লুকিয়ে থাকে অপ্রকাশের আড়ালে।

“অপ্রকাশিত কবি” – অপরজন পত্রিকার একটি প্রয়াস, এমন কবিদের কাজকে সামনে আনার, যাঁরা ব্যপকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত নন। যাঁদের লেখা হয় এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, অথবা কেবলমাত্র দু’ একটি পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। অথচ যাঁরা লেখার মাধ্যমে আমাদের দেখাতে পারেন ভবিষ্যত বাংলা কবিতার বাঁক।

বিভাগ সম্পাদনা করছেন, রাহেবুল।]

কৃষ্ণ দাস

জন্ম: ১৯৯৪

জন্মস্থান: আলিপুরদুয়ার জেলার তপসীখাতা বস্টারী নামের গ্রাম।

কবিতা লেখার উদ্দেশ্য-বিধেয়: লিখতে ভালোবাসি নিজের জন্য।

প্রথম প্রকাশ: উত্তর ভূমিকা।

কৃষ্ণের লেখা পড়ে সর্বাগ্রে দু’টো কথা মনে হয়— সৎ ও এনার্জেটিক। একেবারে টগবগে তারুণ্যে ভরা এই কবিতারা। প্রেম হোক বা রাজনীতি বা আরও কোনো অন্ধকার, বলার ক্ষেত্রে তীব্র ঝাঁজ, বিদ্রুপ। যদিও একটা নরম মন নিয়ত উঁকি দিচ্ছে। ‘অদ্রি’কে অবলম্বন করে মন ঘুরছে অতীতে, ইতিহাসে, বর্তমানেও। বলার কথারা খুব গতানুগতিক নয়, বলার ঢঙয়ে আছে সে কিছু। আপাতত যা ধর্তব্যে না নেওয়ার মতোই। পাঠক পড়ুন এই তরুণকে।

নিঃশর্ত

অদ্রি

আমি যে যুগে আছি,

ভালোলাগাগুলি ভীষণ ঠুনকো….

এই যে তোমাকে ভালোবাসি আজ!

যে কেনো দিন অতীত হতে পারে!

নিশ্চিন্ত পারাপার ভেব না!

মানুষ ফুঁ দিয়েই আগুন আনে…

ফুঁ দিয়েই আগুন নেভায়।

বাঁক, আমি তুমি …

১.

ঘরে ফিরছে অদ্রি …

ঘর হারা হচ্ছি …

কোনোদিন সে ভুগেনি হোম সিক-এ

আজ সে ও আমি হোম সিক-এ ভুগছি।

কতটা ভালোবাসা পেলে ঘর হয়

কতটা ভালোবাসায় মানুষ ঘর হারা হয়…

আজীবন…

তার সাথে

তোমার সাথে

আমার সাথে

ঘর ও বাহির সম্পর্ক!

ভালোবাসা পেলে মানুষ,

অকারণে নরম হয়…

অকারণে সব কিছু মেনে নেয়…

অকাতরে সব কিছু কেমন…

বিলিয়ে দেয়।

২.

আগামীকাল ধর্মঘট ডেকেছে জুকারবার্গ।

আজ ইন্দ্রাসনে বসেছে সহস্রলোচন ইন্দ্র…

নহুষ পড়ে আছে অষ্ট-পদ-যানে…

আচ্ছা!

মহর্ষি গৌতম কি আজও ভালোবাসে অহল্যাকে মনে-প্রাণে?

৩.

অদ্রির ঘুম ভেঙেছে,

অথবা নতুন করে ঘুমিয়ে পড়েছে…

আমার শোকের অথবা সুখের জন্মদিন।

ভালোবাসি বলে নির্লজ্জ হওয়া সাজে না।

শুধু ভালোবাসি বলেই…

সন্ন্যাস নেওয়া হল না…

নিষিদ্ধ যাপন ৩৫

পিশাচসিদ্ধ হয়ে

বরাভয় দেব তোমাকে…

লুন্ঠিত ঘাসের শেষ পরাগের বিন্দুতে যে অলস নাচ আর দুঃখ ভরা ইতিহাস আছে…

জলসা ঘরের বাইজির মতন।

তোমাকে নিয়ে দেখব।

অলেখার মত যত কিছু আছে,

এই পৃথিবীর যে কাব্য লেখা হবে না আর

সেই সব কাব্য রয়ে যাবে তুমি ডাকিনী হলে…

আমি পিশাচসিদ্ধ আর তুমি ডাকিনী হলেই।

এই ভাব, এই ভালোবাসা…

কবিতা হয়ে ঝরবে সোহাগ রাতের মতন।

অদ্রি মনে থাকবে তো?…

মাইন্ড করি না

৩.

এই ধরো আলোর ফাঁক গলে

জাম গাছের কচি লাল পাতার মত

এক ঝাঁক রঙিন মাছ ঝিলিক মেরে মেরে তোমাকে চকিত করে…

নতুন সন্ন্যাসী তুমি এবেলা ওবেলা ব্রত রেখে বোষ্টমী বিড়ালের মত খাবি খেয়ে ওঠো।

২.

….আমি ভাবছিলাম

কোন দূর এক শহরের পতিতার কথা

এই যে পথের মধ্যে বসে নেড়ি কুকুরীর মায়াময় ছলছল চোখ,

একশো বছর পুরোনো কিছু কুয়াশার ভীতর নিরাপদ আস্থানা মনে করিয়ে দেয়…

১.

এদিকে চুরুট শেষ হয়ে যাওয়ার মুখে,

ধোঁয়াটাকে শৈল্পিক অবয়বে ছেড়ে

দার্শনিক মুখ করে অদ্রি যখন বলতো…

“ব্রথেল ইস দ্যা ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ডেস্টিনেশন অব ম্যান…

আর সেখান থেকেই আজও মৃত্তিকা এনে পুজো করো তোমরা।”

আমি তখন মাইন্ড করি না।

পুনরাবৃত্তি…

প্রতিটা দিন, পেঁয়াজের খোলস।

প্রতিটি পুনরাবৃত্তির মুখে অভ্যাসের অসুখ লেগে থাকে।

বাঁচার জন্য তোমার দিকে হাত বাড়াই।

প্রতিটি পদক্ষেপে ছায়া ছোটো হতে থাকে,

আর দূরে চলে যাও তুমি।

আমি স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাই।

আমার দিকভ্রান্ত কলম…

তোমার রচিত ত্রিকোণমিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ।

বেরিয়ে আসার পথ ভুলেছে…

তুমি ভুলে যাও, আজ কাল পরশু,

মানুষের জীবনে তিনটিই দিন।

নিজেও ডুবে যাও অতলে…

আর, আর…

আমি পেঁয়াজের খোসা ছড়াই প্রতিদিন।

সার্কাস

১.

পিঁপড়েদের কবিসভায় দেখি

ভুরুচাঁছা কিছু কবিনীর পাশে!

হাঁড়িচাঁছা কিছু কবি বসে আছে!

২.

ঢেকুর তোলার পর সভাপতি,

সমাপনী ভাষণে বললেন—

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!

দুনিয়ার সর্বহারা এক হোক!

Facebook Comments

Leave a Reply