লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর কবিতা

রঙিন

নয়নতারার ছোপগুলি আকাশ নিয়ে আসছে উঠোনে ; আয়না ভিজে যায়

তারপর থেকে আমার আর ভাগ্য নেই , সবেমাত্র চাষাবাদের জন্য পাণ্ডুলিপি খুলে ধরেছেন সূর্যদেব , গাঙ্গেয় শরীর থেকে ভেসে আসছে সবুজ ঢেউয়ের প্রার্থনা

ক্রমশ এই বাতাসে আঁধার মৌন – পাখি সীমানার কতদূর গেলে তাকে দিগন্ত বলা যায় ?

বেসুরো তালের মাঝে পুঁইবীজের রং লাগা লকেট – ঝুলছে বিভাজিকায় – তার নিসর্গে সান্দ্রতা , এই নিবিড় দুরত্ব নিয়ে ঝরা বাঁশপাতা ছুরি হয়ে যায়

কচুপাতায় বিন্দু বিন্দু আস্বাদ নির্বাক ; স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধের রংচটা দেয়ালের ত্বক , ঘামের উড়ে যায় পুকুরের দিকে

টোপ টানে মাছের মাঝে ভেসে থাকে হাঁসগুলি

অবোধ

নীরবের কাছে যে একটুকরো বনবাস রাখা আছে — সে দোল খায় অস্থিরতায় , আমার কোন ইচ্ছে নেই বনবাসী হওয়ার ; তবুও ওই চোখ — ওই বুকের সুগন্ধি মায়া ; কত সে উৎরাই , সত্যের এপিঠে সৃষ্টি ওপিঠে প্রলয়

আলপথের ধারে বিক্ষিপ্ত ছাইয়ের স্তুপ , শাড়ির রতি দাগে কেহই চাইতে চায় না গদ্যের প্রহর ; সূর্য পিঠে নেমে আসছে শিবচক পশ্চিম পাড়া — কালপেঁচার কোটর লেখা জাম ডালে সন্ধ্যা জমে

ঘামের দুর্বলতা পড়ে থাকে পতিত খাসজমিতে , রাস্তা দাগের বোধগুলি কর্পূর হওয়ার পূর্বেই আগাছা কেটে ধানের জমি বানাবো পৃথিবীতে

বিস্রস্ত চুল , ভুরুতে ঘাম , নিজেকে পুড়িয়ে এবার ভবিষ্যৎ বানাই

তিথি

দিগন্ত চুইয়ে আসে আলো — আমি ভেজা গায়ে স্রোতের ধারে বসতেই আমায় জড়িয়ে ধরে ছায়া, সেই ভরাট রাজবংশী রমনীটি নদীতে নেমে যাওয়ার ঢালে উদ্ভিদের আলপনা আঁকে — সেখানে ভাসতে থাকে পরাজন্ম

দূর জ্যোৎস্নার নদী থেকে একাকী বুকে অমীমাংসিত কান্না — কালো কালো পোকাদের তীক্ষ্ণ দাঁত কামড়ে ধরে অশ্বের লেজ , তাই ঝিঁঝিঁর ভাষা লিখতে পারি
আমার সামর্থ বড় জোর দশ কিমি সাইকেল রাস্তা,

মাঝামাঝি দুটি প্রান্তিক নদীর সঙ্গম , সন্ধ্যার আকাশে জমতে থাকে পদাতিক

সেই পদশব্দের খিদে নিয়ে খণ্ডণ আমার , বাতাসের শিকার যাত্রাকে তুচ্ছ করে এখনো কুঁকড়ে যাই ; জীবনের অসীম ব্যাসার্ধ ঘিরে পিতামহ

তুমি জেগে থাকো অনন্তের ভেতর

পাঁজর

ঝাঁ চকচকে রাতের বুকে টর্চের আলো পড়লে পোকা মাকড়েরা ভয় পায় না আর — বরং লাফাতে লাফাতে ভিড় করে বেশ্যা ও গাঁজার আসর , লিভটুগেদারে রাতের আলোটি নীলসাদা — কতগুলি কুঁজো লোক বসেছে খালের ধারে — সেকচকের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় পানপাত্র ও সন্ধ্যারাগ

হামা দেয় স্যাঁতসেঁতে নিউমোনিয়া — তাদের কোনো চাঁদহীনতা নেই , চাপাপড়া পাতার নিচে ক্যালভার্টের মানচিত্র ; এরই সামনে ভাঙা হাড় — থ্যাতলানো দেহের ভিতর রক্ত কফ থুতু বীর্য , দ্রাঘিমায় ভাঁটফুল ছাপ জামাকাপড় , নগ্নতার তাপ থেকে বেরিয়ে আসে নিঃস্ব ছায়া

অথচ তার ঘরের সামনে পরিস্কার উঠোন — নিভতে থাকা প্রদীপের ধোঁয়ায় সলতে পাকানো সংগ্রাম — না বাতাস না শিলাঝড়
সবই গোপন উজ্জ্বল — গ্রীষ্মদিনের পাঁজর থেকে যুদ্ধ খুঁজে নেওয়া সেই কবেকার মিছিলের মতো চলছে চলবে

বি পি এল লিস্টটা বদলাতে বদলাতে ডিজিটাল হয়ে যায়

রোদসুর

ভাঙা আরোগ্যের গায়ে হলুদ রং বসে থাকে চুপচাপ
দীঘলবাঁকের আবাড় থেকে উঠে আসে নিঃস্বতম ক্রোধ , যার নাম নীল রাজহাঁস : সাঁতারের পদ্ধতিতে শীতল জল আর স্পষ্ট অ্যানিমিয়া , ছড়িয়ে পড়েছে সুখময়ীর গাঁ — মনোটোনিক পাখির সম্পর্ক খোঁজে

কেউ আছো ? কুড়িয়ে আনো ধুতরার বীজ , দুপুরের তাপ বাড়ে , সকল সর্বনাশ ভেঙে গড়িয়ে নামে চাষাবাদের পথ

কেউ বাড়ি আসে না এখন – কেউ কারও বাড়ি যায় না আর – তবুও প্রতীক্ষার শেষ নেই – দেয়ালে লেগে আছে চুম্বনের হিম : সেরিব্রাল পিপাসায় রাত জাগে কেতকী

মরশুমি শেওলারা আর কতদিন – বিষণ্ন মর্মরে ঝিরিঝিরি হাওয়া শরীর ছুঁয়ে গেলে কেন যে পাতার কথা মনে পড়ে আজ — এও তো হলুদ ফুল — কোন দিন ক্লান্তি শেষে বেড়ে ওঠে রাধাচূড়া — তুই বুঝিস না মানিক কাবারি

Facebook Comments

1 thought on “লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর কবিতা Leave a comment

  1. দিনলিপি কাব্যের প্রতিরূপে আসুক না কেন, কবি তাকে কখনই করে না অনাস্বাদিত যেন।

Leave a Reply