হেমন্তের গাড়ি অথবা ঝাড়ুদার: সোমনাথ ঘোষাল

ভোরবেলা যে মহিলাটি গতরাতের স্বপ্নগুলো ঝাঁট দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। নর্দমায় আর ঘুমন্ত কুকুরের গায়ে। তার কোনো স্বপ্ন ছিল না। হেমন্তকালে। সে শীতের অপেক্ষায় ছেলের জন্য উল বোনে প্রতি রাতে। ভোর ভাঙতে না ভাঙতেই কাকেরা মরা ইঁদুর আর ছুঁচোর খোঁজে। আমি তখন পাশ কাটিয়ে হেঁটে দ্রুত চলে যাচ্ছি। ঘাম ঝরাতে। মহিলার মুখে কাপড় বাঁধা। স্বপ্ন লেগে যেতে পারে শরীরে। সাবধানে বড় ঝাঁটা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। মানুষের ছালচামড়া। নাড়িভুঁড়ি, চোখ, আঙুল। কানা বেড়াল আনমনে একটা চোখ চাটছে। আমি আরও দ্রুত গলি পেরোতে থাকি। ধোঁয়াশায় সব আবছা। তোমাকে লেখা ভালোবাসার চিঠিগুলো হেমন্তকালে লিখেছিলাম। সেই রঙতুলির সময়। হলুদ খামে। তখনও হেমন্ত ছিল। রোজ সকালে গাড়ি করে আসতো। একটা সরু গলি দিয়ে। মামণিদির জন্য। একবার আদর করে বলেছিল কাউকে বলতে নেই! তখন আমি ছোট।

ভোরে পৌরসভার গাড়ি আসে। কুয়াশা কাটিয়ে। গতকালের যাবতীয় এঁটো বেঁচে থাকাগুলো কালো প্লাস্টিকে মুখ বেঁধে গাড়িতে ফেলে দেয়। বাপিদা তীব্রভাবে বাঁশি বাজিয়ে কড়া নাড়ে প্রতিটা ঘুমে। নর্দমা আর কুকুরের গা থেকে বাসি স্বপ্নগুলো তুলে ফেলে দেয়। পচা গন্ধে মুখ চাপা দিয়ে। মাসিকের রক্ত লাগা ন্যাপকিন চিবোতে থাকে কুকুরে। কার যেন ঋতু লেগেছে এই হেমন্তের গায়ে। তলপেটে ব্যথা নিয়ে হেমন্ত। চায়ের দোকানদার প্রথম চা ঢেলে দেয় আমাকে। অস্পষ্ট মুখ। এখনও ঠাণ্ডা পড়েনি। তবুও আবছায়ায় বুজে আছে সকাল।

ঠ্যালাওলার স্বপ্নের ভেতর ছেঁড়া ছেঁড়া তুলো ছিল। ওর বউয়ের গায়ে নাকি বালিশের গন্ধ! ঠ্যালাওলা মাটিতে চাদর পেতে শোয়। গায়ে তুলো ভর্তি। নেশা ফাটেনি। চায়ে চুমুক দিয়ে শীতের অপেক্ষা করে। রাতের কারবারিরা একে একে জড়ো হয়। বালি সিমেন্ট ইটের ভেতর রঙ করা স্বপ্ন। হেমন্ত দখল হয়ে গেছে বহুদিন! অট্টালিকায় জমে ওঠে আমাদের বিলাসিতা। গত যুগের আসামীরা প্লাটফর্ম ছেড়ে ফেটে গেছে। সকালের গায়ে শুধুই বিষণ্ণতা। এখানে পাখি ডাকলেও হেমন্ত নেই। হেমন্ত ভুলে গেছে গান শোনাতে…

Facebook Comments

Leave a Reply