মহাকাশ, মহাবিশ্ব : শংকর লাহিড়ী
[বিস্ময় আর খোঁজ মানুষের এই দুটো গুণই ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছে মানব সভ্যতার। নিজের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ও তারই মাঝে নিজের আপাত অবস্থানকে চিনে নিতে চেয়েছে সে চিরকাল। ধীরে ধীরে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের পৃথিবীকে, তারপর পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশ, মহাবিশ্ব। কত অজানা খবর, কত আবিষ্কার ঘটে চলেছে দিনের পর দিন। সেই সমস্ত কথা নিয়েই এবার কলম ধরলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, চিত্র-পরিচালক ও প্রকৌশলী শংকর লাহিড়ী। কসমোলজি নিয়ে তাঁর গভীর আগ্রহ ও জ্ঞানের কথা অনেকেই জানেন। যে দক্ষ শৈল্পিক ভঙ্গিতে তিনি এই সমস্ত জটিল তত্ত্ব ও আবিষ্কারের কথা লেখেন তার সাথে ইতিমধ্যেই অনেক পাঠক পরিচিত। অপরজনের ধারাবাহিক বিভাগ – “মহাকাশ মহাবিশ্ব”।]
১৫
অসীম শূন্যতা, নাকি অসীম পূর্ণতা?
পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন প্রায় ৭৯০ কোটি (নভেম্বর ২০২১) । সারা পৃথিবীজুড়ে এইসব মানুষ কি ছড়িয়ে আছে সবদিকে, মোটামুটি সমান ভাবে? কক্ষনো নয়। বরং তারা আছে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে, সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে। কত অঞ্চলই তো আছে— অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি— যা জনমানবহীন। যদি আজকের পৃথিবীর ৭৯০ কোটি মানুষের সকলের দেহের আয়তন যোগ করা যায়, তবে কত হতে পারে সেই সমগ্র ‘হিউম্যান কিউব’-এর পরিমাপ?
বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন, যদি সানফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের কাছে এমন একটা কল্পিত বিশাল কিউবিক বাড়ী বানানো যায়, যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা প্রতিদিকে এক কিলোমিটার, তবে সেই বাড়িটার আয়তনের মাত্র অর্ধেক হবে আজকের পৃথিবীর সব মানুষের শরীরের সম্মিলিত আয়তন। অর্থাৎ সবাই মিলে ওই বাড়িটার আয়তনের অর্ধেকও ভরবে না। অথচ ওই বাড়িটার বাইরে সারা পৃথিবীর সমস্ত দেশ, মহাদেশ, রাজ্য, শহর, গ্রাম—সবই তখন জনশূন্য হয়ে যাবে। এর থেকে কী প্রমাণ হচ্ছে ? -কিছুই না। এটা একটা থট এক্সপেরিমেন্ট, যা অবাস্তব হলেও বিস্ময়কর।
পৃথিবীতে আজকের জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হ’ল কীটপতঙ্গের সংখ্যা। এবং তার চেয়ে আরও অনেক বেশী হ’ল জলজ প্রাণীর সংখ্যা, যাদের বাস নদী, হ্রদ ও সমুদ্রের গভীরে। মানুষ তাহলে সংখ্যালঘু। –আশ্চর্য লাগছে ভেবে যে, ওইরকম একটা বাড়ির আয়তনের মানুষরা মিলে সারা পৃথিবীটাকে আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, শুধু স্বার্থে আর লোভে। সম্পূর্ণ পৃথিবীর দখল নিতে চায় ওই এক কিউবিক কিলোমিটারে এঁটে যাওয়া মানুষ !
[ ছবিঃ কল্পিত সেই বাড়িটা]
বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নাকি আশিভাগই শূন্য, যেখানে প্রায় কিচ্ছু নেই। যা কিছু আছে, তা আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এই যে আকাশভরা এত কোটি কোটি গ্রহ-তারা-রবি, নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকা, গ্যালাক্সি, নেবুলা, পালসার, কোয়াজার—তারা কি সবদিকে, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমানভাবে, যেমনটা কোপার্নিকাস ভেবেছিলেন?
বিপুল তড়িৎচুম্বকীয় তেজভান্ডার, তীব্র বিকিরণ শক্তি, এবং বিপুল পরিমাণ মেঘবাস্প, বস্তুকণা, বস্তুপিন্ড, ছড়িয়ে আছে ব্রহ্মান্ড জুড়ে, যা দিয়ে নির্মিত এই দৃশ্যজগত। এছাড়াও বিপুল পরিমাণে আছে নাকি অদৃশ্য শক্তি আর অদৃশ্য পদার্থ, যাদের চোখে দেখা যায় না, তবে অংক কষে বোঝা যায় যে আছে। তারা অদৃশ্য হাতে ধরে রেখেছে এই দৃশ্যজগৎকে, নইলে ব্রহ্মান্ড নাকি বিশৃঙ্খল হয়ে, সন্তুলান হারিয়ে, তছনছ হয়ে যেত। আজও বিজ্ঞানীদের একটা অংশ তেমনই ভেবে চলেছেন।
আরেক দল মনে করেন, এইরকম ভাবায় অসঙ্গতি আছে, অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জী ব্যাপারটার হয়তো অস্তিত্বই নেই, সবটাই কিছু অঙ্ক মেলানোর জন্য, সবটাই কল্পনাপ্রসুত। এইসব মতান্তরের একটা কারণ হোল, এতদিন যেসব অঙ্কের সুত্র দিয়ে বিজ্ঞানীরা ব্রহ্মান্ডের চালচলনকে ব্যাখ্যা করছিলেন, তার সাথে উন্নত প্রযুক্তির নানা টেলিস্কোপ দিয়ে আজকাল যা কিছু জানা বোঝা ও পরিমাপ করা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে বিসঙ্গতি। অর্থাৎ থিয়োরী ও প্র্যাক্টিকালের মধ্যে সঙ্ঘাত। কোপার্নিকাস যে মনে করেছিলেন ব্রহ্মান্ডের সর্বত্র শক্তি ও পদার্থরা ছড়িয়ে আছে প্রায় সমান ভাবে, তার বদলে এখন জানা যাচ্ছে, সর্বত্র সমান নয় এই বিশ্ব। বরং পদার্থরা কোথাও কোথাও ছড়িয়ে রয়েছে দলা দলা ভাবে, কোথাও আবার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শুধুই শূন্যতা, কিছুই নেই সেইসব অঞ্চলে।
আমাদের এই দৃশ্যজগৎকে যদি একটা বিশাল গোলক মনে করি, যার কেন্দ্রে আমরা, পৃথিবীর মানুষরা, টেলিস্কোপে চোখ রেখে বসে আছি, তবে আমাদের চারপাশে সেই দৃশ্য জগতের বিস্তার প্রায় ৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষ। এটাই ওই বিশাল গোলকের ব্যাসার্ধ। অর্থাৎ, এই ব্রহ্মান্ডের যতদূর অব্দি এখন আমাদের যন্ত্রপাতির চোখ যায়, সেই গোলকের ব্যাস হচ্ছে ৯২০০ কোটি অথবা, ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। এবং এর প্রায় ৮০% অংশ জুড়েই নাকি কিছু নেই, শূন্য। শব্দহীন, তাপহীন, আলোহীন, নিকষ কালো অন্ধকার ! কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব্যাপী মহান শূন্যতা, the Great Nothing !!
ব্রহ্মান্ডের এইসব অংশকে বলা হয় ‘কসমিক ভয়েড’ অর্থাৎ, মহাজাগতিক শূন্য। সামান্য দুয়েকটা গ্যালাক্সি হয়তো আছে সেই ব্যাপ্ত, বিস্তৃত অঞ্চলে। কিন্তু সেটা যেন একটা গোটা ভারতবর্ষজুড়ে মাত্র তিনটি বাড়িতে বাস করে মাত্র তিনটি পরিবার, আর কোথাও কোনও জনপ্রাণী নেই, সেরকম ধু-ধু শূন্যতা !
[ ছবি : ব্রহ্মান্ডের গঠন অনেকটা স্পঞ্জ অথবা পাউরুটির মত ]
এই ব্রহ্মান্ডের মধ্যের এমন অনেক খন্ড খন্ড শূন্যতার জন্য, তার স্ট্রাকচার বা গঠন যেন একটা বিরাট সাইজের স্পঞ্জ, অথবা একটা পাউরুটির মতো, যার মধ্যে রয়েছে ছোট বড় অজস্র শূন্যস্থান। এরকমই একটি সুবিশাল শূন্য অঞ্চলের নাম ‘বোওটীজ ভয়েড’ (Bootes Void), যার ব্যাস প্রায় ৩৩ কোটি আলোকবর্ষ। ১৯৮১ সালে একে চিহ্নিত করেন আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট কার্শনার (Robert Kirshnar)। এই বিশাল অঞ্চলে কয়েক লক্ষ গ্যালাক্সির বদলে আছে মাত্র ৫০-৬০টি গ্যালাক্সি। এটাই নাকি ব্রহ্মান্ডের আরও অনেক ভয়েডের মধ্যে একটি ‘সুপার ভয়েড’।
কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব্যাপী এই সেই মহান শূন্যতা ! আমাদের পৃথিবী থেকে এর কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৭০ কোটি আলোকবর্ষ।
[ ‘বোওটীজ ভয়েড’ : তেত্রিশ কোটি আলোকবর্ষ ব্যাপী মহান শূন্যতা ]
এই শূন্যস্থানগুলোর চারপাশ ঘিরে আছে যেন একটা সরু দেওয়াল। আর একটা ভয়েড থেকে আরেকটা ভয়েডের মধ্যের দেওয়ালকে যেন যুক্ত করে আছে সূক্ষ্ম আঁশের মতো তন্তু বা ফিলামেন্ট। এইসব ভয়েড, ওয়াল, আর ফিলামেন্ট দিয়ে গঠিত আমাদের ব্রহ্মান্ডের শরীর। ওই ওয়াল আর ফিলামেন্টগুলো আসলে সারি সারি নক্ষত্রপুঞ্জ বা, গ্যালাক্সি। কোথাও তারা দলবদ্ধ বা, ক্লাস্টার। ঘনসন্নিবদ্ধ বা, সুপার ক্লাস্টার। যেমন আছে, ভার্গো সুপার ক্লাস্টার, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যার অন্তর্ভুক্ত। আমাদের এই স্পাইরাল বা চক্রাকার মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি বাহুর নাম ‘ওরিয়ন আর্ম’। এই ওরিয়ন আর্ম-এর মধ্যে অবস্থান করছে আমাদের সমগ্র সৌর মন্ডল।
[ ব্রহ্মান্ডের গঠনে আছে অজস্র শূন্যস্থান এবং তাদের সংযোগকারী ফিলামেন্টস ]
ভার্গোর মতোই এমন অনেক ক্লাস্টার বা গ্যালাক্সিমন্ডল নিয়ে গঠিত যে সুবিশাল মহামন্ডল, যার ব্যাস প্রায় ৫০ কোটি আলোকবর্ষ, যার মধ্যে আছে প্রায় দেড় লক্ষ গ্যাল্কাসি, তার নাম ‘ল্যানিয়াকিয়া’ (Laniakea)। আমরা রয়েছি এই ‘ল্যানিয়াকিয়া’ মহামন্ডলের মধ্যে ভার্গো সুপারক্লাস্টারের অন্তর্বর্তী কয়েকটি ভয়েডের মাঝে যোগসুত্রের মতো যে অজস্র ফিলামেন্ট, তারই একটিতে অবস্থানকারী মিল্কিওয়ে নামক নক্ষত্রপুঞ্জের একটি বাহুতে।
[ দেড় লক্ষাধিক গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত ‘ল্যানিয়াকিয়া’ মহা মন্ডল, যার মধ্যে আছে আমাদের মিল্কিওয়ে ]
ব্রহ্মান্ড জুড়ে এইসব ফিলামেন্ট ধরে চলাচল করছে কোটি কোটি গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুঞ্জগুলো। কে কোন দিকে ছুটে চলেছে, তাও লক্ষ্য ক’রে কম্পিউটার মডেল তৈরী করে ফেলেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। যেমন ঢালু জমিতে বৃষ্টির জল নানা খাতে প্রবাহিত হ’য়ে একটা নির্দিষ্ট দিকে নেমে যায়, তেমনই একেকটা অঞ্চলের গ্যালাক্সিরা এইসব ফিলামেন্ট বাহিত হয়ে যেন বিশেষ একদিকে ছুটে চলেছে, বিচিত্র কোনও আকর্ষণে। এইরকম অদ্ভুত আকর্ষণ-বিন্দুকে বলা হয় ‘দা গ্রেট অ্যাট্রাক্টার’।
[ ল্যানিয়াকিয়া মহামন্ডলের গ্যালাক্সিরা ছুটে চলেছে ‘গ্রেট অ্যাট্রাক্টার’-এর দিকে ]
এই মানবজীবনে, কিসের আকর্ষণে যে আমরা সবাই ছুটে চলেছি,কেউ জানি না। এমনটাই তবে হয়ে চলেছে বিশ্বসংসারেও? আমাদের মিল্কিওয়ে সহ সমগ্র ভার্গো সুপার ক্লাস্টারও নাকি আরো অনেকের সাথে দলে ভিড়ে, এমনই এক অজানা আকর্ষণে, এক স্ট্রেঞ্জ অ্যাট্রাক্টারের দিকে ছুটে চলেছে। এর অবস্থান ল্যানিয়াকিয়া মহামন্ডলের প্রায় মাঝখানে, আমাদের সৌরমন্ডল থেকে বাইশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে, যেখানে রয়েছে একদল গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত ‘নর্মা ক্লাস্টার’ (Norma Cluster) নামের একটি অঞ্চল।
[ ছবি : বৃত্তাকার ভয়েডস, এবং সুপার ক্লাস্টারস ]
দৃশ্য জগতের মধ্যে এভাবেই রয়েছে (ওপরে ছবি) ছোটবড় জোটবদ্ধ অনেক নক্ষত্রমন্ডলী– ক্লাস্টার, এবং সুপারক্লাস্টারও। যেমন আছে ভার্গো সুপার ক্লাস্টার ; আছে লিও, হাইড্রা, হারকিউলিস, শ্যাপলি, কোমা, আর্সা মেজর, প্রভৃতি। এইসব ক্লাস্টারের প্রত্যেকের মধ্যে আছে অসংখ্য গ্যালাক্সি, আর প্রত্যেক গ্যালাক্সির মধ্যে আছে আমাদের সূর্যের মতো দশ-বারো হাজার কোটি নক্ষত্র। এছাড়াও প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে কত বিশাল সব শূন্যতা, কসমিক ভয়েডস ; যেমন ক্যানিস মেজর, স্কাল্পটার, করোনা বোরিওলিস, বোওটীজ, প্রভৃতি।
আমাদের দৃশ্য জগতের মধ্যেই এই যে ‘ল্যানিয়াকিয়া’ মহামন্ডলের অন্তর্গত ‘ভার্গো’ সুপারক্লাস্টারে আমাদের ছায়াপথের অবস্থান, সেই ল্যানিয়াকিয়ার মতো বিশাল মহামন্ডল আর নেই নাকি? আছে, তার নাম ‘পারসিয়াজ-পাইসিজ’ সুপারক্লাস্টার। তাদের ফিলামেন্টগুলোকে অনুসরণ করে কম্পিউটারে তাদের ছবি তৈরী করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবিতে লাল আর কালো, দুটো ভিন্ন রঙে দেখানো হয়েছে তাদের।
আগামী ৩০-ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ফ্রেঞ্চ গিয়ানা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে সর্বাধুনিক ও সর্ববৃহৎ ‘জেমস ওয়েব’ টেলিস্কোপকে। সূর্য-পৃথিবীর ‘লা গ্রাঞ্জ পয়েন্ট-২’ থেকে সে চোখ রাখবে ব্রহ্মান্ডের গভীরে। বিজ্ঞানীরা ক্রমে জানতে পারবেন অনেক নতুন তথ্য, হয়তো ভাঙবে তাঁদের অনেক পুরোনো ধারণাও। অনেকে মনে করেন, বোওটীজ ভয়েডের থেকেও আরও বিশাল এক মহান শূন্য বা সুপারভয়েড আছে, তার নাম ‘কেবিসি ভয়েড’। ২০১৩ সালে তিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী Keenan, Barger এবং Cowie আবিস্কার করেছিলেন একে। এঁদের তিনজনের নামের আদ্যক্ষর দিয়েই নামকরণ হয়েছে ‘KBC Void’.
এর মধ্যে বাস করছে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং ল্যানিয়াকিয়া সুপার ক্লাস্টারের কিছু অংশ ; বাকিটা নিঝুম শূন্যতা। এই গোলকাকৃতি ভয়েডের ব্যাস হচ্ছে ২০০ কোটি আলোকবর্ষ !! আমরা বাস করি এই বিপুল শূন্যতা-বুদ্বুদের কেন্দ্রস্থলের কাছেই। হয়তো একদিন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আমাদের জানাবে এর আরও অনেক রহস্য।
আমাদের এই মানবশরীরের মধ্যে যা কিছু পদার্থ আছে, একদম পরমাণু স্তরে গিয়ে দেখলে, শরীরের আয়তনের প্রায় সবটাই তো শূন্যতা। মানবশরীরে এই শূন্যতার মাপ হ’ল ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯%, অর্থাৎ নিজের শরীরের মধ্যে এক বিপুল শূন্যতার মধ্যে হাত ধরাধরি করে বিন্যস্ত হয়ে আছে বস্তুকণিকারা, যা দিয়ে গঠিত হয়েছে শরীর।
তাহলে মহাবিশ্বের ওই বিপুল শূন্যতার মধ্যে মানুষ, এবং তার এই প্রায়-শূন্য সূক্ষ্ম শরীর। মহাজাগতিক সর্বব্যাপী শূন্যতার মাঝে কিছু ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রিনো। এই নিয়েই কত বিপুল জীবনতরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে, প্রবাহিত হয়ে চলেছে কালচক্র জুড়ে। কত হাসি-কান্না, গান, চিত্রকলা, শিল্প, কবিতা!! কেমনে, কীভাবে? –আমরা কি এর কণামাত্র জানি? হায়, এই জানা আমাদের ফুরোবে না কখনো।
[ক্রমশঃ]
Posted in: November 2021 - Serial, PROSE