C/o- হেমন্ত : মণিদীপা সেন

১.

তুমি তোমার গল্প কতবার কাউকে বলেছ? তুমি কি আদৌ বুঝেছ কতবার তোমার গল্প বদলেছে? আমার বিশ্বাস — এক অবাস্তব বিশ্বাস – যদিও বিশ্বাস যতদূর অবাস্তব ততটাই খাঁটি ; যাই হোক, আমার বিশ্বাস যে, প্রতিটা হেমন্তের সাথে মানুষের খোলের আড়ালে অনেককিছু পালটে যায়। নতুন স্লেটের এপিঠ- ওপিঠ মুছে যায়। তার সাদা ছোপের ওপর কিছু নতুন হরফ ফুটতে শুরু করে।

হেমন্ত- ঠিক সময় নয়। সময়ের অনুবভ। এই সময়ে স্নায়ুরা কেমন অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। আশেপাশের গ্রাম, শহরের প্রতি পরত আমরা নতুন চোখে দেখি। হেমন্ত খানিক অবাক হওয়ার ঋতু। এক নরম যন্ত্রণার ঋতু। পড়তি বিকেলের একঝাঁক হঠাৎ হলুদের মতো অভাবনীয় সব যন্ত্রণা- যেখানে পৌঁছাতে হবে এমন আমরা কেউ আগে থেকে ভাবিনি হয়ত। এইসবের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে মানুষের পালকে আগুন লাগে। তার বিগত ডানারা পুড়তে যায়।

হেমন্তের শুরু শেষ বোঝা বড় দায়- মানুষের বদলে যাওয়ার মতোই। কবে যে প্রিয় রঙ, প্রিয় বন্ধু ইত্যাদির মাপকাঠি, গূঢ়তা বদলায়… কবে যে তার ব্যক্তিগত হেমন্ত ঠিকানা পালটে ভাড়া উঠে যায়, সে বুঝতে পারি কি?

২.

এবারেও সেরকম হেমন্ত এসে গেছে। গরম পাঁউরুটির সূক্ষ্ম ধোঁয়া টিউবের নিচে দেখা যাচ্ছে। তাদের লতিয়ে ওঠা শরীরে যতটা ডিমের গন্ধ সেটুকু বুক ভরে টেনে নিয়ে অর্ধেক পেট ভরে ফ্যালে আমার দেশ। আমাদের দেশ ধোঁয়ার উৎসে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু জুররত্ করছেনা।

হালকা, ভীষণ হালকা এক ফুলঝাড়ু — প্রায় ধুলোর মতোই হালকা বা ধুলোর চেয়ে একটু ভারি এক ফুলঝাড়ু, বাতাসে থিতিয়ে যাওয়া সাসপেন্ডেড পার্টিকেলস্ দের একটু গুলিয়ে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সমস্যার মতো। আর এটাই সেইরকম এক স্বচ্ছ অভিযান! আমরা ভাবছি এভাবেই পরিস্কার করা সম্ভব।

পচা কুমড়োর কাথ্বে একটু ট্যাঙ্গিনেস বা করমচার শিউরে যাওয়া টকে একটু মিষ্টি মিশিয়ে আমরা সবরকম লাল লাল জিনিস চালাচ্ছি। সবধরনের লালকে এভাবেই সন্দেহ হয়। তবু মন ভরানো এক আশ্চর্য খেলা। যতটুকু দেখা যাচ্ছে ততটুকুই আসল! বীজ পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই। ফল একরকম দেখতে লাগলেও বীজ বদলে গেছে, সেটুকু আমরা দেখব না। থুঃ থুঃ করে এমন জায়গায় ফেলব, যেখানে আবার এক মিথ্যে গাছ জন্মাবে।

হেমন্ত অবশেষে এসেই গেছে তবে। এখন চারপাশ অপেক্ষাকৃত নিঃশব্দ -আরও নিঃশব্দ। সমস্ত কৃত্রিম হাওয়া আদতে থেমে যাওয়ার সময় এটা। সূক্ষ্ম ধোঁয়া, কুয়াশার ফাঁকে জমতে থাকা ধুলো, সুন্দর চাউমিনের মিথ্যা সস ইত্যাদি সব এড়িয়ে যাওয়ারা বেশি করে ফুটে উঠেছে। তবু আমরা সেসব দেখছি কই? আমরা অপেক্ষা করছি -বাঁজা জমিতে বনভোজন করব, ভাঙা বোতলের কাচ পুঁতে আসব পরবর্তী রক্তপাতের উদ্দেশ্যে…

Facebook Comments

Leave a Reply