অনুবাদে অর্ধেক আকাশ : মালিনী ভট্টাচার্য
[মালিনী ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় জনসংযোগে কর্মরত। কথাসাহিত্য, তথ্যভিত্তিক লেখালিখি ও অনুবাদের কাজ করছেন প্রায় এক দশক। সাহিত্যে ও শিল্পে নারীত্ব ও নারীর সত্ত্বায়ন বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী মালিনী।‘অনুবাদে অর্ধেক আকাশ’— এই ধারাবাহিক কলামে বিশ্বসাহিত্যের কয়েকটি উপন্যাসে নারীত্ব ও নারীর সত্ত্বায়ন প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য অংশের অনুবাদ করবেন মালিনী।]
জ্যামাইকা কিনকেড-এর জন্ম ১৯৪৯-এ, আন্টিগুয়ার সেন্ট জন’স শহরে। অর্থকষ্টে ছোটবেলা কেটেছে। সতের বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে বাচ্চাদের দেখাশুনো কাজ নেন, সঙ্গে কলেজে পড়াশুনো শুরু করেন। নিউ ইউর্কের বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন, ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রে দুই দশক সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস ও অসংখ্য ছোটগল্প। বলেন, লেখার রসদ পান ব্যক্তিজীবন থেকেই। উত্তর-ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতা এবং লিঙ্গ এবং যৌনতা রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখেছেন, লেখালিখি করেছেন। পাঠক-সমালোচক উভয়ের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা পেয়েছেন।
সাদা কাপড়চোপড় সোমবার করে কাচবি, পাথরের ঢিবিতে মেলে শুকিয়ে নিবি। মঙ্গলবার রঙীনগুলো ধুয়ে দড়িতে টাঙিয়ে দিবি।
এই প্রচণ্ড রোদে বাইরে বেরোবি না বেশি।
কুমড়োফুলের বড়া ভাজবি ধোঁয়া-ওঠা তেলে, অল্প মিষ্টি দিয়ে।
মাসিকের ন্যাকড়াকানি ব্যবহার করেই জলে ভিজিয়ে রাখা ভালো।
এক-আধটা সুতির ভালো ব্লাউজ লাগে; কাপড় যখন কিনবি দেখে নিবি যেন খাপি হয়, দাগছোপ না থাকে, নইলে খারাপ হয়ে যাবে কদিনেই।
শুঁটকি রাঁধলে আগের রাতে ভিজিয়ে, ঢাকা দিয়ে রাখিস।
তোরা চার্চে ক্যালিপসো গান করিস?
পরিষ্কার করে খাবি, তোর খাওয়া দেখে আর কারুর যেন ঘেন্না না হয়। ভদ্রভাবে হাঁটাচলা করবি, ভদ্রবাড়ির মেয়েদের মত। তোর চলন দেখলে মনে হয়ে বেশ্যা, পেছন দোলানো কি! ওই গানগুলো আর গাওয়ার দরকার নেই। বস্তির ছেলেগুলোর সঙ্গে একটাও কথা বলবি না। না, রাস্তা চিনিয়ে দেয়ার দরকার নেই।
ফুটপাথ থেকে কাটা ফল কিনে খাবি না, মাছিগুলো গন্ধ পায়, বাড়ি অবধি তাড়া করে আসবে, তখন দূর করা মুশকিল হবে।
(আমি তো চার্চে ক্যালিপসো করিনি! রবিবার আমি গান গাইনা কখনও…)
এই দেখ, এইভাবে ছেঁড়া বোতাম লাগাতে হয়। এবার – এই যে – এভাবে বোতামের ঘর করবি। জামার নিচটা মুড়-সেলাই দিবি। অল্প ছিঁড়লেই সমান করে সেলাই করে নিতে হবে, নইলে অসভ্য, অশ্লীল লাগবে। রেন্ডিদের মত। খুব শখ না রেন্ডি হওয়ার?
বাবার খাকি শার্টটা ভালো করে ইস্তিরি কর, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। তারপর প্যান্টটা করবি। ভাঁজ না থাকে।
ঢ্যাঁড়স গাছ করবি? বাড়ি থেকে তফাতে লাগাস, বড্ড লালপিঁপড়ে হয়। কচুতে প্রচুর জল লাগে। জল কম পড়লেই গলা চুলকোবে।
দেখ, ঘরের কোনগুলো এভাবে ঝাঁট দিবি। এরকম করে। বাড়িঘর ধুয়ে মুছে রাখবি। উঠোনটাও।
হাসতে হবেই। যাদের বিশেষ পছন্দ না তাদের সাথে চোখাচোখি হলে – এভাবে। দু’একজন থাকবে যাদের দেখে হাসতে ইচ্ছেই করবে না। তবু, হাসবি। ঠিক এমন করে। আর যাদের ভালো লাগে, তাদের জন্য হাসিটা এরকম হবে, ঠিক এরকম।
চায়ের টেবিল এভাবে সাজাতে হয়, দেখে নে। ডিনার আরেকরকম । সকালে যখন ব্রেকফাস্ট খেতে দিবি, এই দেখ, এভাবে বাসন থাকবে, চায়ের কাপ, চামচ-গ্লাস।
অচেনা কেউ থাকলে, অচেনা পুরুষ আশেপাশে থাকলে, সামলে চলবি, বুঝেশুনে। কেউ না ভেবে বসে তুই আদপেই রেন্ডি একটা। কতবার তোকে বলেছি, সাবধানে থাক, নইলে বিপদ।
চান করে পরিষ্কার হয়ে নিবি রোজ, একদিনও বাদ না যায়। জল না এলে নিজের থুতু দিয়েই। অমন পা-ফাঁক করে বসে খেলতে হবে না আর। তুই কি ছেলে?
যারতার গাছ থেকে ফুল তুলবি না খবরদার, কি জানি কিসের ছোঁয়াচ লাগবে, আবার শরীর খারাপ হবে। পাখি দেখলেই ঢিল ছোঁড়া আর নয়। যদি অন্য কারুর গায়ে লাগে?
রান্নাবান্না শেখ এবার। ব্রেড পুডিং খুব সহজ। আর ডুকোনা, মশলা ভাত, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
ঠান্ডা লাগলে এই ওষুধটা ঘরেই তৈরী করে নিবি। আর পেটে একটা এলে – এই ওষুধে বাচ্চাটা শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।
মাছ ধরতে শিখিয়েছি তোকে। ভালো মাছ না হলে সটান ফেলে দিবি জলে।
মরদগুলোকে বেশি জায়গা ছাড়বি না। ওদের ভয় পেলেই ওরা ভয় দেখাবে আমাদের। ঘরের লোকটাকে আদরযত্ন করবি, দরকারে তোষামোদ, মানিয়ে চলা । কাজ না হলে অন্য উপায় আছে। তাতেও লাভ না হলে হার মানতে হবে, পিছিয়ে আসতে হবে। কষ্ট পাস না।
দুনিয়াকে থুতু দিবি? আকাশে থুতুর দলাটা ছুড়ে দিয়েই চট করে সরে আসতে হবে।
সংসার চালাতে কষ্ট হবে মাঝেমধ্যে। কত খরচ থাকে। টেনে চলবি। আমি বুঝিয়ে দেব।
রুটি কেনার সময় টিপেটুপে দেখে নিবি, টাটকা আছে কিনা।
(দোকানদার যদি ছুঁতে না দেয়?)
কি বলছিস তুই! দেবে না মানে? তুই কি তেমন মেয়ে, যাকে রুটি হাতে নিতে দেবে না?
Posted in: November 2021 - Serial, TRANSLATION
খুব ভালো কাজ। তরতর করে লেখা এগোচ্ছে। সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলছে পাঠককে। একনিঃশ্বাসে চেটেপুটে পড়ে ফেললাম। এখন অপেক্ষা পরের কিস্তির জন্য।