অপ্রকাশিত কবি

[বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, বহু প্রতিভাশালী কবিই অপ্রকাশিত অপ্রচারিত থাকেন – কখনও বা তাঁদের ভাষা আঙ্গিক শৈলীর বিশেষত্বের কারণে, কখনও জনসংযোগ করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ব’লে, আবার কখনও হয়ত কেবলমাত্র তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান বা পরিবেশের কারণে। এমন কত কারণই ঘুরে বেড়ায়। একজন প্রকৃত কবির কাজ লুকিয়ে থাকে অপ্রকাশের আড়ালে।

“অপ্রকাশিত কবি” – অপরজন পত্রিকার একটি প্রয়াস, এমন কবিদের কাজকে সামনে আনার, যাঁরা ব্যপকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত নন। যাঁদের লেখা হয় এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, অথবা কেবলমাত্র দু’ একটি পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। অথচ যাঁরা লেখার মাধ্যমে আমাদের দেখাতে পারেন ভবিষ্যত বাংলা কবিতার বাঁক।

বিভাগ সম্পাদনা করছেন, রাহেবুল।]

দেবরাজ দে

জন্ম: ৭ জানুয়ারি ১৯৮৮
জন্মস্থান: চকচকা, কোচবিহার
কবিতা লেখার উদ্দেশ্য-বিধেয়: অন্তর প্রকৃতিবোধ

প্রথম প্রকাশ: কবিতীর্থ পত্রিকা

কবিতা যে কত মতন, কত তার রকমফের। তার চলন বলন জনে জনে পালটায়। অবশ্য সেজনকে সেরকম কবি হতে হয়। কী রকম? কথা অল্পে ফুরাবে না। আর অত বকেই বা কী। কবিতার মানুষ, কবিতায় ডুবে মরাই ভালো। এ দফায় সঙ্গে আমাদের, দেবরাজ।

অসময়

রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিল
দুপুর ১২ টা, মধ্যবেলার রোদ
সময়ের রং দুধেল আকাশ আর আমি
দুর্নাম কুৎসা পাগলামি মাতাল
দুর্বল; ছোট জিনিসও বড় মনে হয়
তাহলে, কোথাও কিছু ঘটেনি
সবাই নিজের তালে।
মোমের আলোতে জড়িয়ে ছিল লেখা
এখন আর নেই, জীবন ছবি সময়
সময় তবে ছবি তুলে রাখে
সব কিছুর মূলে তবে সে
মদ্যপ স্মৃতি ব্যর্থ হুংকার চিৎকার
সব ভুলে যেতে পারবে কি?
একের পর এক সূচ স্মৃতি
শাস্তি দেবেই দেবেই বুঝি
ভালোলাগা অন্ধকারে যেমন।

অমান্য

রক্তকালি লেখে আকাশ বিন্দু যুক্ত রেখা
আকার হয় কালপুরুষ, জানালা ভেদে তা।
চলছে ঘড়ি কিন্তু ধরা যায়না
দ্রুত রেখা ধরে মানুষ চলছে
মনে হয় রেল পথের দুটো লাইন
এক হয়ে মিশেছে দূর দিগন্তে
এখানে আমরা তাকিয়ে আছি
আজ বুঝতে পারছি কেন পৃথক
কি যায় আসে, কিছু প্রতীক ভুলে যাবে
মলিন ছবি, যাব আমি
ছবিটা আগুনের রুপভেদ
জ্বলে ওঠে বুঝতে পারিনা এ আলো
সীমার বাইরে গোড়ালি জল
হাঁটতে ছাপ পরে পা এর
দিকে দিকে হাঁটা রেখা ধরে
গতিমান বাঁধা এক স্বপ্ন আবেশ
নব রুপ খেলা করে
কিন্তু
মানুষ তা মানেনি।

প্রকৃতি

শিশির বিন্দু ঘাসে গোড়ালি পা এর স্পর্শ
থামানো যায় না, ভিজে যায় বাধা পেলে
যা হওয়ার হয়েছে এবার
থেকে চেষ্টা করে যেতে হবে।
ওরা দেখতে পাবে না আমিও না
কেন? এর উত্তর ধোঁয়াশা
সকালবেলাকার উদ্দীপক খোঁজে
প্রতিফলিত হয় রাস্তার জমা জলে
বাইক চলল নষ্ট হয় ছবি।
সম্পর্কের অজুহাতে যদি যায়
যোগ চুম্বক একে একে লোহায়
যায় এক ফুল অজানা ফুটে
যোগ অর্থ ধীরে ধীরে বদলায়।
আজ আকাশটা হল ঘন নীল
এ থামেনা কোথা থেকে
এর জন্ম কখনই বা শেষ শুধু
এর স্পর্শে অবশ হয়ে যাই
এ ক্ষুধা আর সময় মনে হয়
মনে পরে আমি একা
কিশোরী বেঁধেছে কোনও অদৃশ্য
প্রতিশোধ নব নব একে নেই ধরতে
বলেছিলাম এও বিরোধী।
এবার সীমারেখার বাইরে আসতে
দেব না দেব না ওরা আসবেও না
হঠাৎ করে দেখি ফুটে আছে ভালো লাগা
ধীরে ধীরে ঝরে পড়ে
দানব অক্টোপাস তার শূর এসেছে
এবার বুঝি আমার পালা বলল
এবার যেতে হবে।

ভয়

আলোক রশ্মি ধীরে উন্মোচিত হয়
কোনও গোপন পান্থশালা
মাটিতে ছড়ানো অনেক সাদা বালি
কী আশ্বাস! রক্ত গুলে যায় গ্লাসে
তার লাল রং কাচে লেগে থাকে
`এ আমি ছাড়িসনা!’
সে কেন বলল `ভয়?’
আজ আর কিছুই নেই, আমিও।

ঢেউ উঠেছে, সময় এসেছে
কোনও নারকীয় বোধের জন্য
এ অদেখা কাঁটাতার ছিঁড়ে ফেল এ ভয়
কাল্পনিক কেন হয় এক জোট হয়।

আজ ঘাসের শিশিরে পা ভিজে যায়
কাছে আসে এক সংকট অতিকায়।

একাকী পথ পরে আছে, সময় চলে গেছে
এখন কী করব আমি কোথায় যাব!

আরও সময় চলে যায় দ্রুত
দিন থেকে দিনে, সূক্ষ্ম সময়
ধরতে পারিনি, অসংযোগ চেতনা
কাঁটার খোঁচা, চমকে উঠি।

চারটি সমান্তরাল ইলেকট্রিক তার
উপরটিতে বসে আছে একটা কাক
তার ডাক প্রচ্ছন্ন কান্না মনে হয় আজ।

ভয় ২

দেখা কাঁপতে থাকা তরঙ্গ ইচ্ছে হয়
পোশাকি প্রশ্ন উত্তর ঢেউ ওঠে
আয়নায় ছবি মৃদু আঁকা বাঁকা
ঠিক কতটা বিস্তার, একে অপরে
সৌর গোলক তীর্যক রোদ স্পর্শ ছুতেই জীবন
কুয়াশা কেটে তরঙ্গ জলে খেলে যে এমন
মনে হয় ভেঙে ঘুম, দেখা হবে আবার
জাল বুনে নিজের সাথে কথা
দিন তাস গড়িয়ে যায় বদলে ভয়
যায় না যত আশা তত।

Facebook Comments

Leave a Reply