রামকিশোর ভট্টাচার্য-র কবিতা
খুঁজনপুরের যাত্রী
জোছনাধারায় ভিজতো তখন ঝাঁকড়া মায়ের চুল
এখন সে সব ঝাপসা ধূসর
পাশেই বসে চুপ অবসর
হারিয়ে গেছে কল্পনা সব, হিসেবটা নির্ভুল ৷
রূপকথা সব হারিয়ে গেছে কংক্রিটের ওই বনে
মুখ লুকালো শৈশবেরা
বুঝছি কঠিন আবার ফেরা
বাল্যকালের দিনগুলি সব ঘুমায় ঘরের কোনে ৷
পড়ছে মনে শীতের দিনে জিরেন কাটের রসে
দোয়েল তোতা বুলবুলিরাও থাকতো নেশার বসে
আমিও তাদের সঙ্গী হতাম,নলেন রোদের মায়ায়
কত রকম আঁকতো ছবি তালখেজুরের ছায়া ৷
হারিয়ে গেছে ঠকঠকিয়ে হাড় কাঁপানো শীতও
তখন বাবা দিত –
একটা চাদর, উলের জামা, আঃ কি আরাম তাতে
এখন কত দামী জিনিস, ঘুম আসে না রাতে!
স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে এনরয়েডের বুকে
জানি জানি এসব শুনে বলবে যে নিন্দুকে –
হারিয়ে গেলেই নতুন আসে,
ভরছে কলম দীর্ঘশ্বাসে
খুঁজনপুরের যাত্রী আমি, খুঁজছি ছোটোবেলা
গেম ভিডিওর ওই আড়ালে দিক হারানো খেলায়…
বসন্ত
কত কথা হয় বাতাস বাহারী, কত প্রেম ছলোছলো
নদী হয়ে যাবো যদি একবার ‘ভালোবাসি’ যদি বলো ৷
মেঘলা দুপুরে একলা এ ঘরে
শ্রাবণ স্মৃতিরা শুধু খেলা করে
তুমি বলেছিলে-কাগজনৌকো ভাসাবো একটু চলো,
অপেক্ষা ছিল যদি একবার সত্যি কথাটি বলো৷
মনে পড়ে? এক বৃষ্টির দিনে সময় গিয়েছো ভুলে
মাসটা কিন্তু বসন্ত ছিল, ছুটি ছিল ইস্কুলে৷
আকাশ ডাকলো আয় মেঘ খাবি
দু’জনে দু’হাতে আমাকে বাজাবি ..
দক্ষিণ হাওয়া লুকিয়ে তোমার হাসছিল এলোচুলে
সত্যি বলো তো মনের ও কোণে কিছু কি ওঠেনি দুলে !
আজ ঠিক জানি বলবে তুমি যে ওসব কথার কথা
কেন টেনে আনো এই প্রাক্ শীতে বসন্ত ব্যর্থতা!
আমি বলবই বসন্ত সে কী –
ইচ্ছায় আসে? তাহলে সে মেকি,
ফাল্গুন সে যে রাজ অধিরাজ, হয়না যে অন্যথা,
বর্ষার দিনে তাহলে কি হ’ত এত প্রেম কাতরতা!
মেঘদের আমি দূত ভাবিনি যে,তারাও জমবে মনে
কখন কত কি আকার নেবে যে মগজের দশ কোণে,
মনে আছে? মিঁয়া-মল্লার শুনে
তুমি বলেছিলে কোনো ফাল্গুনে –
একবার এসে দাঁড়াবে এ পথে, বলবে – তুমিও চলো
মনে মনে বলি – লক্ষ্মীমেয়েটি ভালোবাসি শুধু বলো৷
বসন্ত আজ আমার দু’চোখে স্বপ্ন দিয়েছে এঁকে
গানের পাখিরা আজ বলো দেখি আসবে যে ফিরে কে কে
তাদের পাখায় চিঠি লিখে দেবো
পড়ে তুমি শুধু খানিকটা ভেবো৷
বইয়ের তাকে রবীন্দ্রনাথ হাসছেন মজা দেখে
কোন ফাঁকে কে যে কাগজের গায়ে জুঁই ফুল গেছে রেখে
Posted in: October 2021 - Cover Story, POETRY