ওরা যুদ্ধ করে : ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী
(১)
কালিন্দি গ্রামের থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে কাঁচা মাটির অন্ধকার রাস্তায় লাইট জ্বালিয়ে জীপ এসে থামে। পাশে পরিত্যাক্ত ফ্যাক্টরি আউটলেটের থেকে কিছু লোক চাদর গায়ে দিয়ে হাতে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে আসে, গাড়ির কাছে এসে দাড়ায়। জিপ থেকে একজন মধ্য বয়স্ক লোক নেমে আসে, তারপর টর্চ নিয়ে এগিয়ে আসা লোকদের দিয়ে তাকিয়ে বলে,
“তোরা কজন আছিস সব মিলিয়ে ?”
“এই পাঁচ জনই দাদা।”
“হুম” তারপর জীপের দিকে তাকিয়ে বলে “আমার সাথে জীপে আরও তিনজন, সব মিলিয়ে আট। তোদেরকে ফাইনাল বলে যাই, আর পনেরো মিনিট পর আমি বেরিয়ে যাব। তোরা ফ্যাক্টরির থেকে আমার বাইকটা বের করে রাখ। আমি বাইকে ফিরব। গাড়ি হিসেবে এই জীপটা নিয়ে যা, জায়গা না হলে, ভিতর থেকে খাটারাটা বের করে নিস। “
“দাদা, কাজ হয়ে গেলে কি আমরা সরকার বাড়ি চলে যাব”
“হ্যাঁ , তবে পেয়ারা বাগানের রাস্তা দিয়ে যাবি, মনে থাকবে তো? কিছু কিচাইন হলে তোমরা সব কিন্তু ভোগে যাবে। কিরে বাল বল না? হ্যাঁ কি না বলবি তো?”
“দাদা আপনি চাপ নেবেন না।”
“চাপ না নিলেই ভালো। ভালো কথা, গামছা দিয়ে ভালো করে মুখ ঢেকে যাস। সব পজিশন নিয়ে নিস, তাড়াহুড়ো করবি না, মাথা ঠাণ্ডা রাখবি। ভালো করে কেরোসিন ঢালবি। সব ঢালা হয়ে গেলে, এক সঙ্গে লাগাবি সব আগুন। পর পর না । লাগিয়ে গাড়িতে উঠবি। সোজা পেয়ারা বাগানের রাস্তা ধরে সরকার বাড়ি চলে আসবি। তোরা ওখানে থেকে যাবি। ওখান থেকে নতুন লোক জিপ নিয়ে বেরিয়ে যাবে। না বলা পর্যন্ত ওখান থেকে বেরোবি না। একজন একজন করে বেরোবি, সব বলে দেওয়া হবে, চাপ নেই। ভালো কথা জীপ কিন্তু কাজের জায়গার থেকে দূরে রাখতে হবে। রেইঞ্জে যেন না থাকে। গাড়ির শব্দে লোকে এসে গেলে কেলো হবে। ওরা সব ব্যাস্ত থাকবে যাত্রা দেখতে, আসতে আসতে সব জ্বলে যাবে। যতক্ষণে ওরা আসবে, জল ঢালতে লাগবে, ততক্ষণে তোরা বেরিয়ে যাবি। কোনও ভুল চুক যেন না হয়। ভুল হলে একটা পয়সাও পাবি না। তবে একটা জিনিস, দেখি নিস, লোক যেন না মরে। ফাঁকা বাড়িতেই লাগাবি। বেশী কিচাইন চায় না দাদা। ”
“ঠিক আছে দাদা, আপনি নিশ্চিন্তে চলে যান। আমরা এখনই বেরিয়ে পড়ছি। একটা জীপে আমাদের হয়ে যাবে । বেশী গাড়ি নিলে বেশী হ্যাপা। খাটারাটা বেশী শব্দ করে। ”
“ঠিক আছে তোরা বেরিয়ে পর। আর হ্যাঁ এই খোকন ঘরে যে বোতল গুলো রেখেছিস তার মধ্যে দুটো আমায় দিয়ে যা।”
বোতলগুলো আনার পরে জীপ একদিকে শব্দ করে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে বাইক। আলোর রেখা গুলো একে অপেরের থেকে দূরে চলে যেতে থাকে। জায়গাটা যেরকম শুনশান ছিল সেরকম শুনশান হয়ে যায়। ঝিঁঝিঁর ডাক গুলো যেমন শোনা যাচ্ছিল তেমন শোনা যেতে থাকে।
রাত তখন আটটা, কালিন্দি গ্রামের বাড়ি গুলো অন্ধকার রাতে নিথর মমির মত দাড়িয়ে আছে। কিছু কিছু বাড়িতে আলো জ্বলছে। কেউ কেউ বাড়ি না থাকলে পুরো বাড়ি অন্ধকার রাখে না, হাল্কা করে কেরোসিনের আলো জ্বালিয়ে রাখে। কিছু দুরেই যাত্রা চলছে, গ্রামের ছেলে বুড়ো, বউ, বাচ্চারা সব যাত্রা দেখতে গেছে। সব রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে বেরিয়েছে দেখতে। দূরের মাঠের থেকে যাত্রার সংলাপের হাল্কা আওয়াজ আসছে। শুধু কালিন্দি গ্রামের লোকই না, আশে পাশের গ্রামের লোকেরা সব এসেছে যাত্রা দেখবে বলে। মাথার উপর ঘন অন্ধকার আকাশ, একটিও তারা নেই আজ, যেন থম মেরে রয়েছে। সমস্ত নিস্তব্ধতা আকাশ থেকে নেমে যেন গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। একটুও হাওয়া নেই। স্থির হয়ে সমস্ত পরিবেশ। দূর থেকে যাত্রা পালার থেকে আসা গমগম শব্দ যেন এক বিরাট প্রহেলিকা সৃষ্টি করছে। গ্রামের থেকে অনেকটা দূরে জীপ রাখা ছিল। সেখান থেকে আটজন লোক মুখে গামছা চেপে এগিয়ে আসছিল গ্রামের দিকে । হাতে টিনের ক্যানে ভর্তি কেরসিন আর কাপড় পেঁচানো লাঠি। যতটা সন্তর্পণে আসা যায় ততটা সন্তর্পণে আসছিল। দীঘির জলে পর্যন্ত ঢেউ খেলছিল না। অশোক, পলাশ, বট, নিম গাছ গুলোর অস্তিত্ব রাতের অন্ধকারে পাওয়া যাচ্ছেনা; তারা যেন এই অন্ধকারে কোথাও মিশে গেছে, এক হয়ে গেছে। সভ্যতার থেকে একশো মাইল দূরে সভ্যতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অন্য এক সভ্যতা তৈরী হতে যাচ্ছিল। যে সভ্যতা বাড়ি গুলো জ্বালিয়ে দিতে ইন্ধন দিয়েছে। যে সভ্যতা বলেছে এই ধরণের অসভ্য গ্রামের কোনও অস্তিত্ব নেই। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত অসভ্যতা দূর হয়ে যেত। কিন্তু বাধা সাধল কিছু লোক। কেরোসিনের টিন গুলো খোলার সাথে সাথেই পাশের ঝোপঝাড় থেকে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্যাপারটা এত দ্রুত হল, যে ওরা ঘাবড়ে গেল। খবর পেল কোথেকে? সবার তো যাত্রা পালা দেখার কথা ছিল। সেই রকমই তো খবর ছিল। যে গ্রামের লোকেরা যাত্রার দিকে গেছে। তাহলে কি ফিরে এল? না কেউ কেউ রয়ে গেছিল। ঠিক ঠাউর করতে পারল না। শুধু বুঝতে পারল যে তারা ফাঁদে পরেছে। লাঠি, কেরোসিন ফেলে তারা পালাতে লাগল। শুধূ একজন পারল না। সে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের ছেলেরা তাকে ধরে ফেলল। তাকে দড়ি দিয়ে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলল। তাকে থাপ্পড় মারতে গেলে , ভিড় থেকে কেউ বলল
“এই ছাড় ছাড় আগে ওকে জিজ্ঞেস করি,”
“দেবুদা, আগে এ শালার পাওনা মার, তারপর কথা। আমাদের বাড়িগুলায় আগুন লাগাতে এসেছিল।”
“দাড়া তো রাজু “, বলে দেবু এগিয়ে আসে তারপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে ,“এ ভাই তোমায় কে পাঠিয়েছে এখানে?”
দেবুর এই প্রশ্নে ছেলেটি চুপ করে থাকে। ছেলেটি কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেয়না। চড় থাপ্পড় চলে, কিন্তু কোনও উত্তর আসেনা। ততক্ষণে খবর পেয়ে গ্রামের বাকি লোকেরা যাত্রার থেকে চলে আসে। ভিড় জমে যায়। একজন বলে ,
“খোকা, জামির, মন্টু, সুধীর, হাসান তোরা সারা রাত একে পাহারা দিস পালা করে। কাল একদম সকালে একে নিয়ে থানায় যেতে হবে। আমি যাব থানায়। সঙ্গে আরও কয়েকজন কে নিয়ে যাব। কাল সকালে ঠিক করব কে কে যাবে। ”
(২)
হাসপাতালের নীচে বড় গেটের সামনে জনা দশেক ছেলে দাড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল
“এখনো তো সমীর দা এলো না।”
“আমাদের এখানে দাড়াতে বলে সেই যে ভিতরে গেল, এখন ফিরল না।”
“তাইতো রে ! অনেকক্ষণ গেছে। ভিজিটিং আওয়ার প্রায় শেষ হতে চলল দেখছি।”
সকাল তখন এগারোটা। হাসপাতালের সামনে অল্প কজন লোক দাড়িয়ে আছে। অনেকটা জায়গার মধ্যে এটাই একমাত্র হাসপাতাল যাদের পরিষেবাটা একটু ভালো। কালিন্দি গ্রাম থেকে কুড়ি মাইল দূরে এই হাসপাতাল। এখানে ওরা সব টোটো করে এসছে। অনিমেষকেও যখন নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন টোটো করে নিয়ে আসে। এখন ভিজিটিং আওয়ার চলছে। সমীর বাকি ছেলেদের দাঁড় করিয়ে ভালো খবরটা অনিমেষকে দিতে গেছে। হাসপাতাল থেকে সকালবেলা খবর এসছে অনিমেষ সুস্থ হয়ে আসছে আর কথা বলছে। ভাই সমীর দাদার খবরটা পেয়ে, কয়েকজনকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। তার আর থানায় যাওয়া হয়নি। দেবু জোর করে সমীর আর জনা দশেক ছেলেকে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালের দিকে। সমীর ভাবে হয়তো দাদাকে এবার জেনারেল বেডে দেবে। দাদার সাথে কথা হবে দুদিন পর, আর কাল রাতের খবরটা দেওয়াও হবে। গ্রাম থেকে হয়তো আরও লোক আসবে। সবাই এখন এসে উঠতে পারেনি। তাদের নেতা অনিমেষকে দেখতে আসবে। সারা রাত গ্রামের মানুষদের যা ধকল গেছে তা কহতব্য নয়। কিছু ছেলে এখানে এসছে সমীরের সাথে আর কিছু ছেলে দেবুর সাথে লোকটাকে নিয়ে থানায় গেছে ।
আধ ঘণ্টা আগে সমীর লিফটের জন্য অপেক্ষা না করে সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে তিন তলায় পৌঁছে যায়। দম নিয়েই সামনে দাঁড়ানো দারোয়ানকে কার্ড দেখিয়ে বলে,
“আইসিউ, পেশেন্টের নাম অনিমেষ হালদার। ”
“আপনি?”
“আমি উনার ছোট ভাই সমীর হালদার, একটু নার্সকে বলুন না। ”
“বলার দরকার নেই। এখন তো ভিজিটিং আওয়ার, বেড চেনেন তো?”
“হ্যাঁ” বলে সমীর আইসিউর দিকে এগিয়ে যায়। আইসিউতে তিনটি বেড তার মধ্যে একটিতে অনিমেষ শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। সমীর মাথার কাছে গিয়ে বলে “দাদা”। চোখ খোলে না । একটু পরে আবার বলে “দাদা”। বড় বড় শ্বাস শুনতে পায়,। পাশের বেডে একজন নার্সকে দেখে জানতে চায়
“কেমন আছেন উনি? ”
“কে তিন নম্বর”
“হ্যাঁ”
“আগের থেকে অনেক বেটার। প্রেশার, সুগার আপাতত ঠিক আছে, ওষুধ গুলো ঠিক ঠাক কাজ করছে। কথা বলছে, আমাদের সাথে কথা বলেছে ব্রেকফাস্টের সময়। কাল রাত থেকেই কথা বলছে স্পষ্ট। ”
“এখন বোধহয় ঘুমাচ্ছে”
“হ্যাঁ হতে পারে, এখনও শরীর দুর্বল। আপনি বসুন না, এই সময়ে ডঃ ঘোষ আসবেন।”
সমীর আবার তার দাদার কাছে ফিরে আসে। তখন চোখ বোজা। পাশে একটা টুল নিয়ে বসে পরে।
আজ পাঁচ দিন হয়ে গেল দাদা হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে ডেংগু। তার আগের দু দিন জ্বর ছিল, কিছুতে নামছে না। প্রেসার ফল করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতে হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা দেখে ডাক্তার ঘোষ আইসিউতে নিয়ে যায়, প্লেটলেট ভীষণ ভাবে কমে যাচ্ছিল। ছয় বোতল রক্ত দিতে হয়েছে এ কদিনে। ডেঙ্গু হবার আগে পর্যন্ত অনিমেষ গ্রামের লোকদের সঙ্গে মিটিং করেছে, ওদের সতর্ক হতে বলেছে, সাবধানে থাকতে বলেছে, কি ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে তাও বলেছে। রাতের বেলা পাহারা দিতে বলেছে। ওদের দলবলেরা রাতে আক্রমণ করতে পারে। অনিমেষ অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে সমীরের ভয় হয়েছিল যে ওরা পারবে তো সব ঠেকিয়ে রাখতে, কিন্তু ওরা পেরেছে। জমি নিতে দালালের দলবলের যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পরেছিল, তাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলাটা খুব দরকার ছিল। অনিমেষ, দেবু গ্রামের ছেলেদের সংগঠিত করে । সাবধান করে টাকা আর হুমকি দিয়ে যখন ওরা পারেনি ওরা তখন কিছুভাবে আক্রমণ করবে। সব সময় সজাগ থাকতে বলেছিল। বিশেষত রাতে। সমীরের হটাতই বাবার কথা মনে পরে। ভাবে দাদা একেবারে বাবার মত হয়েছে। নির্ভীক, সৎ, আর ঠিক বাবার মতই কখন অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে শেখেনি। জেলা স্কুলের হেড মাস্টার ছিল বাবা। স্কুলের বাইরে বিনা পয়সায় গরীব ছাত্র দের পড়াত। দাদাও ছোটবেলার থেকে দেখেছে আর বাবারই মত সবার বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পরেছে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করে ।
“কিছু কি পেলে?”
“পেয়েছি তো , আমি নির্লোভ নই। পাওয়ার জন্য করছি। কিন্তু কি চাইছি সেটা বড় কথা। সন্মান , নিজের শান্তি। এই লোভ আছে তো”- বাবা উত্তর দিত।
দাদা অবশ্য ছোট বেলায় বেশী কথা কখনই বলত না,মিটিমিটি হাসত। বাবা যেমন কথা বলতে ভালবাসত। লোককে বোঝাতে ভালবাসত। দাদা বড় হবার পর বাবার মতই কথা বলতে শুরু করে। বাবারই মত শিক্ষকতা শুরু করে। সবাই তাকে ভালবেসে ছোট মাস্টার বলে ডাকতে শুরু করে। দাদার শরীর খারাপ হবার পর হটাৎ ই দাদার সেই ছোট বেলাকার মিটি মিটি হাসিটা বার বার মনে পরছে। এই সব নানান কথা ভাবতে ভাবতে সমীর অনিমেষের দিকে তাকায়, অনিমেষের চোখ বোজা। অনিমেষ তখন স্বপ্ন দেখছিল। এক ভারি বিচিত্র স্বপ্ন………………………………।।
……………………………………………………………
অনেক গুলো বাচ্চা ছেলেমেয়ে বিরাট উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দুরকমের পোশাক। একদলের লাল রঙের পোশাক, সবকিছু লাল। লাল জামা,লাল প্যান্ট। আরেকদলের সাদা রঙের পোশাক। লাল রঙের ছেলে মেয়েরা উঠোনে নানান কাজ করছে। একজন লাল পোশাক আরেকজন লাল পোশাক কে জিজ্ঞেস করে
“এই সাদারা কোনও কাজ করছে না কেন? খালি ঘুরে বেড়াচ্ছে ”
“করবে করবে। দেখে যা”
অবাক হয়ে অনিমেষ দেখছিল কি ভীষণ একটা ব্যাস্ত পরিবেশ। ভালো লাগছিল আর তখনই হঠাৎ দূর থেকে একটা বিরাট চিৎকার “হা রে রে”। কত গুলো রাক্ষোসের মুখোশ পরা বাচ্চা বেড়া ডিঙিয়ে উঠোনে ঢুকে পরে। সবাইকে নারকেল গাছের পাতা দিয়ে আক্রমণ করতে শুরু করে। দারুন হই হই শুরু হয়ে যায়। প্রথমে সবাই বিচলিত হয়ে টপা টপ লাল পোশাক পরা বাচ্চারা মাটিতে পরে যেতে থাকে। সাদা পোশাক পরা বাচ্চারা ভয় না পেয়ে হাতের সামনে পরে থাকা কাঠি, স্কেল নিয়ে মুখোশ ধারীদের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির ভিতর থেকে আরও সাদা পোশাক পরা বাচ্চারা বেরিয়ে আসে। তাদের হাতে সব নারকেল পাতা । ক্রমেই সাদা পোশাকেরা রাক্ষোস মুখোশ ধারিদের উপর কব্জা করে ফেলে। ওদেরকে ঠেলতে ঠেলতে উঠোন থেকে বের করে দেয়। সবাই স্বস্তি পায়।
লালের মধ্যে কে যেন বলে ওঠে,
“দেখলি তো ওরা কি করে, ওরা যুদ্ধ করে।”
………………………………………………………
“ওরা যুদ্ধ করে। ওরা আপনার, আমার শরীরের সৈনিক। যখনই কোনও বিজাতীয় ক্ষতি কারক পদার্থ আমাদের শরীরে ঢোকে, তখন ওরা আমাদের শরীর কে রক্ষা করার জন্য । অনিমেষ বাবুর শরীরের শ্বেত কনিকা প্রাথমিক ধাক্কা সামলে আবার কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। ” ডাক্তার সুখময় ঘোষ সমীরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাছাড়া ওনার প্লেটলেট সংখ্যা আসতে আসতে বাড়চ্ছে, ভয়ের কিছু নেই। বিপদ কেটে গেছে।”
তারপর অনিমেষের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই তো উনি চোখ খুলেছেন। কেমন আছেন অনিমেষ বাবু”
অনিমেষ একটু হাসে।
“ভালো”
“নিন তাহলে আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলুন। উনি আপনার জন্য বসে আছেন ”
সমীর টুলটা টেনে দাদার কাছে এসে বসে,
“আজ কষ্ট কেমন? কষ্ট হচ্ছে কি?”
“কাল থেকে ভালো”
“দাদা,তোমাকে একটা ভালো খবর দেওয়ার আছে। তুমি খুব আনন্দ পাবে শুনে।“
ঘাড় তোলার চেষ্টা করে অনিমেষ জিজ্ঞেস করে
“কি?”
“তোমার সন্দেহ সঠিক ওদের লোকজন রাত্রে বেলা যখন সবাই যাত্রা দেখতে ব্যাস্ত, তখন তারা বাড়ি ঘরে আগুন লাগাতে এসেছিল। কিন্তু আমরা জানতাম ওরা আসবে, আমাদের কিছু ছেলে ওখানে রেখে দিয়েছিলাম । আমরা আটকে দিয়েছি ওদের। আগুন লাগাতে পারেনি।”
অল্প উত্তেজিত হয়ে দুর্বল কণ্ঠে অনিমেষ বলে “ধরতে পেরেছিস ওদের? “
“একজনকে পেরেছি। বাকিরা পালিয়েছে। কাল সারারত বেঁধে রেখেছিলাম। চুপ করে আছে , নাম কিছু বলছে না। বাইরের লোক। আজ সকালে ওকে নিয়ে থানায় গেছে। ”
“কারা নিয়ে গেছে? তুই যেতে পারতিস”।
“চিন্তা করো না, দেবুদা গেছে, সঙ্গে বাবলু, আলম, তপন অনেকেই গেছে।”
অনিমেষের একটু দুর্বল লাগছিল, তাই আসতে আসতে চোখ বোজে। স্বপ্নটা মনে করার চেষ্টা করে। সমীরের কথা কানে আসছিল, এখন আর আসছে না।
…………………………………………………
সাদা পোশাক পরা আর লাল পোশাক পরা বাচ্চারা দাঁড়িয়ে আছে। আর কে যেন কোত্থেকে বলছে,
“দারুন, দারুন হয়েছে বাচ্চারা। তোমরা সব স্টেজ থেকে নেমে এসো। মিষ্টি রাখা আছে খাবে এস।”
সবাই সবাই হই হই করে স্টেজ থেকে নামতে থাকে, লাল পোশাক, সাদা পোশাক, এমনকি রাক্ষসের মুখোশ পরা বাচ্চারাও নামতে থাকে। স্টেজের সামনে বড় বড় প্যাকেটে চমচম ,দরবেশ আর হাঁড়িতে রসগোল্লা রাখা ছিল।
………………………………………………
Posted in: October 2021, STORY