তুষ্টি ভট্টাচার্য-র কবিতা

জলের ঘর

#১২

ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে সঙ্গীত ভেসে আসে—লোনা জলের গান। সিগ্যালের চিৎকার ভরা বিদ্রূপ! মরা মাছের আঁশটে গন্ধ! রাসায়নিক তেল প্রস্তুতকারীরা জানে না, তেলেজলে মিশেল হয় না? ভুরিভুরি জলজ মৃত্যুর ছায়া আঁকা থাকে জলের কিনারে। খাদ বরাবর হেঁটে যেতে যেতে একটা কুঁজো লোক একবারও পতনের কথা ভাবেনি। ভাবেনি দূরের ধোঁয়া ওঠা চিমনি থেকে মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধ পাবে আরেকটু গেলে। আমাদের ভয় লেখা হচ্ছে পাতায় পাতায়। আর সমুদ্র মন্থন করে বেরিয়ে আসছে দস্তার কলস। প্রবল বৃষ্টিপাত ধুয়ে দেবে সব জনপদ—এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চায় ওই লোকটি। কাদায় মাখামাখি হয়ে পাড়ার মাঠে তখন ফুটবল খেলা হচ্ছে। নক আউট সিরিজ। আর দুটো ম্যাচ জিতলেই শিল্ড। ওরা বৃষ্টিকে পাত্তা দেয় না।

(শমিত রায়ের ছবি মনে করে)

#১৪

কাচ শব্দে চন্দ্রবিন্দু দিলে বেশি ধারালো মনে হয়। জলের ধার নেই। কাচের ওপর গড়িয়ে সে চলে যাবে একদিন। চন্দ্রবিন্দুর ওপর পা ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত মানুষেরা জলের ধার ধারে না যদিও। বায়ুবাহিত হয়ে উড়ে আসা জলবিন্দু তাদের আশ্রয়। আর কোনোভাবে যদি কাচ ভাঙার শব্দ শুনতে পাও, জানবে চন্দ্রবিন্দু তখন চাঁদের কাছে গেছে। চরকার ধার কমে এসেছে, সুতো কাটে না এখন সেই বুড়ি। নিথর চক্রের পাশে একরাশ চন্দবিন্দু উবুদশ খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ছে—এমন দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদ। চাঁদের বরফ ভেঙে জল গড়ায়নি কখনও, নাব্যতার আশেপাশে কঠিনের ঘর খুলে যাচ্ছে… ওদিকে জল শুধু জল আর জলের অথৈ! নটরাজ মুদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে আজ জলের আঙুল।

(নীলাব্জ চক্রবর্তীকে মনে করে)

Facebook Comments

Leave a Reply