আফগানিস্তানের সাহিত্যের ইতিহাস ও তালিবানি অপশাসনের গালগপ্প : সুদীপ ঘোষাল

কাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, তাঁর কাবুলিওয়ালা গল্পে।কী এক ভীষণ মায়ায় বাঁধা পড়ে যায় আমার হৃদয়।রাস্তায় কাবুলিওয়ালা দেখলেই মনে হত একবার তার কাছে যাই, কথা বলি কিছুক্ষণ। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।আফগান সাহিত্যের এক ব্যাপক অংশ সৃজিত হয়েছে দারি, ভাষায়। দারি কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত হয় ষাটের দশকের প্রথমার্ধে, পাশের দেশ ইরানের ফার্সি কবিতার বিবর্তনের প্রভাবে। ইরানে ‘ফ্রি স্টাইল পোয়েট্রি’ বা মুক্তক ঘরানাকে ধ্রুপদি কাব্য প্রকরণের দৃঢ় রীতি ভেঙে ভিন্ন এক ভাবনাপ্রধান কাব্যশৈলী নির্মাণের উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যশস্বী ইরানি কবি নিমা ইউশিজ, এই ধারার পথিকৃৎ। ফলে তাঁর নাম থেকেই মুক্তক কাব্যশৈলী ‘নিমায়ি’ কবিতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে ইরান ও আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানেও নিমায়ি কাব্যশৈলী বলতে ধ্রুপদি কাব্যকলার বন্ধনমুক্ত হাল জমানার আধুনিক ভাবনাবিষয়ক কবিতাকে বোঝানো হয়। এখানে এই নিমায়ি রীতি বিকশিত হয় গত শতকের ষাটের দশকে। যুদ্ধজনিত কারণে সত্তর দশক থেকে প্রবাসের শরণার্থী শিবিরে বাস করে পরবর্তী জীবনে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হাওয়া আফগান কবিরা নিমায়ি শৈলীতে রচিত আধুনিক কাব্যধারাকে সমৃদ্ধ করতে শুরু করেন। তাঁদের রচনায় বিষয়রূপে আসে দিনযাপনের অনিশ্চয়তা, প্রণয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রতীকীভাবে রাজনৈতিক জীবনের হিউমার। এ ধারার নমুনা হিসেবে উপস্থাপিত হলো তিনটি দারি কবিতার অনুবাদ। পঞ্চাশের দশকে ইরান থেকে প্রকাশিত কবিতার সাথে মিথস্ক্রিয়ার নতিজা স্বরূপ আফগানিস্তানের দারী ভাষার কয়েকজন প্রধান কবি, যেমন — খালিলুল্লা খালিলি, ইউসুফ আইনা, জিয়া ক্বারিজাদা এবং ফতে মোহাম্মদ মোনতাজির প্রমুখ কবিতায় আধুনিকতার সাথে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এঁদের সকলেই ছিলেন খোরাসানী শৈলীতে দক্ষ কাব্যকলাকার। আধুনিক প্রকরণের প্রাথমিক পর্যায়ের নিরীক্ষা হিসাবে তাঁদের হাতে কিছু কবিতা পঞ্চাশের দশকে রচিত হয়ে থাকলেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে দানা বাঁধে ষাটের দশকে।পাশ্চাত্যের কিছু কবিতার অনুবাদ দারী ভাষায় আধুনিক কবিতার উন্মেষে সহায়তা করে। কয়েকজন কবি যেমন মোহাম্মদ আকবর সায়গান বা আব্দুল হক ওয়ালা প্রমুখ পাশ্চাত্যের কবিতার অনুবাদের সাথে সাথে আধুনিক শৈলীতে মৌলিক কবিতা লিখেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আবার ষাটের দশকের শেষদিকে আফগানিস্তানে আল্লামা মোহাম্মদ ইকবাল যিনি কাবুল কান্দাহারে ইকবাল লাহোরী হিসাবে পরিচিত, কোনো-এক অজ্ঞাত কারণে আবার ব্যাপকভাবে পঠিত হতে থাকেন। দারী কবিতায় অভিজ্ঞ কারো কারো অভিমত হচ্ছে — ষাটের দশকের শেষদিকে ইকবালের ফার্সি কবিতার পুনরায় লোকপ্রিয়তা আফগানিস্তানে আধুনিক কবিতার বুনিয়াদকে মজবুত করতে সাহায্য করে।ষাটের দশকের শেষদিকে নামজাদা কয়েকজন আফগান কবি কয়েক বছর আধুনিক ধারায় কবিতা মশকো করে অতঃপর ফিরে যান খোরাসানী শৈলী অথবা সনাতনী ধ্রুপদী ধারার অন্য কোনো প্রকরণে। উদাহরণস্বরূপ, খালিলুল্লা খালিলি রুবাই প্রকরণে ফিরে যান এবং প্রচুর পরিমাণে রুবাই লিখতে শুরু করেন জোরেশোরে। জিয়া ক্বারীজাদা গজল ও ইউসুফ আইনা নজম্ রচনায় অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠেন।দারী, কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাতে ইরানে ‘ফ্রি স্টাইল পোয়েট্রি’ বা মুক্তক ঘরানার কবিতা প্রচলনের যোগাযোগ অত্যন্ত নিবিড়। ফার্সি কবিতায় মুক্তক ঘরানার উদ্ভবের সাথে ইরানের নারী কবিদের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে মুক্তক ঘরানাকে ধ্রুপদী কাব্যপ্রকরণ তথা খোরাসানী ট্রাডিশনের দৃঢ় রীতিকলা ভেঙে ভিন্ন একটি ভাবনাপ্রধান কাব্যশৈলী নির্মাণের উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের যশস্বী মহিলা কবি নিমা ইউশিজ-কে মুক্তক কাব্যশৈলীর পায়োনিয়ার বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাঁর নাম থেকে মুক্তক কাব্যশৈলী ‘নিমায়ী’ কবিতা হিসাবে ইরান ও আফগানিস্তানে পরিচিত হয়ে ওঠে।আফগানিস্তানেও ‘নিমায়ী’ কাব্যশৈলী বলতে ধ্রুপদী অন্যান্য প্রকরণ ও বিশেষভাবে খোরাসানী কাব্যকলার বন্ধনমুক্ত হাল-জামানার আধুনিক ভাবনা বিষয়ক কবিতাকে বোঝানো হয়ে থকে। অন্যভাবে বলা যায়, আফগান কবিতার আলোচনায় ‘আধুনিক কবিতা’ ও ‘নিমায়ী কবিতা’ সমার্থক হিসাবে বিবেচিত হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেছেন, বয়সের তুলনায় অনেক বড় হয়ে গিয়েছে ওই কবিরা৷ কারণ, জীবনযুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখে ফেলেছে তারা৷ তাদের মতো প্রতিভাদের পাশে যদি দাঁড়ানো যায়, একটা অন্যরকম সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন তাহলে দেখাই যায়৷ বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়।আফগানিস্তানের ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের ব্যপ্তি ছিল প্রধানত : গদ্য এবং প্রচলিত উপকথা, রূপকথা কিংবা পুরাণ কাহিনি বা গল্প । তবে ক্লাসিক্যাল দারি সাহিত্য থেকে আধুনিক আফগান সাহিত্যের বিস্তর ফারাক রয়েছে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অতীতে যেখানে ছিল লোকগাথা ভিত্তিক সাহিত্য, তা এখন রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্ভর সাহিত্যে রূপ নিয়েছে । আগে যেখানে ছিল প্রাঞ্জল ভাষায় কল্পকাহিনি, তা আজ যুক্তি নির্ভর সচেনতা এবং মননশীল সাহিত্যকর্ম । এছাড়া আগে যেখানে ছিল ভৌতিক কাহিনি, আজ সেখানে দেখা যায় দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন । আধুনিক পশতু ছোটগল্পের বিষয়বস্তু লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি এবং মানসপটে আঁকা বিচিত্র কাহিনি, যা চারপাশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত । এসব গল্পের কাহিনিতে কোনো ঐতিহাসিক পটভূমি নেই, এমনকি আঙ্গিকের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষারও বালাই নেই । তবে অনেকের মতে সাংস্কৃতিক এবং ভৌগলিকভাবে পশতু ছোটগল্পের কাঠামো, প্রকাশ ভঙ্গি, গল্প প্রকাশের প্রবণতার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ-ভারত, মিশর, তুরস্ক, রুশ এবং পারস্য সাহিত্যের প্রভাব আছে । বর্তমানে পশতু সাহিত্য তার নিজস্ব পরিচয় খুঁজে পেয়েছে ।বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান । সেই পরিবর্তনের হাওয়া এসে সাহিত্যকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল । ফলে এক নতুন ধারার সাহিত্যের স্ফুরণ ঘটেছিল । নির্বাসন থেকে ফিরে এসে মাহমুদ তারজি পরোক্ষভাবে ফরাসি এবং ইউরোপীয় ভাষার সঙ্গে তুর্কী ভাষার সংমিশ্রণে চিরায়ত আফগান সাহিত্যকে আধুনিতার মোড়কে পাঠকের সম্মুখে উপস্থাপন করেছিলেন । মাধ্যম হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ‘সারাজ-উল আকবার’ পাক্ষিক ম্যাগাজিন । তিনি ছিলেন সেই ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । তিনি পশ্চিমা সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত উপন্যাস, বিশেষ করে জুলভার্নের উপন্যাস, ‘দারি’ ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন । কিন্তু তিনি লেখনীর সনাতন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করেননি, বরং চিন্তা-চেতনা এবং মতামতকে আবরণ বানিয়ে নাতন নিয়মের গায়ে আলগা চাদর পড়িয়েছিলেন । পরবর্তীতে গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তর দশকে (১৯৬৪-১৯৭৩) শুধু যে কবিতার সমৃদ্ধি হয়েছে, তাই নয় । সেই সময়ে কথাসাহিত্যের, বিশেষ করে ছোটগল্পের, ব্যাপক প্রসার ঘটেছে । তখনকার চারপাশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা চিন্তা-চেতনাকে উপজীব্য করে অনেক লেখক সাহিত্য রচনা করেছেন । অন্যদিকে কেউ কেউ সরকারের সমালোচনা করে অথবা বিরোধী দলের প্রশংসা করে কলম ধরেছিলেন । এছাড়া অতীতের গহ্বরে বিলীন হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যও অনেকের উপন্যাস এবং ছোটগল্পে উঠে এসেছে । আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা – দেশটির অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত। পর্বত উপত্যকাগুলি আর উত্তরের সমভূমিতেই কেবল গাছপালার দেখা মেলে। এখানকার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে এখানে প্রচণ্ড শীত পড়ে। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন, এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রটির সব নাগরিককেই বোঝায়।১৭৪৭ সালে আহমদ শাহ দুররানি কান্দাহার শহরকে রাজধানী করে এখানে দুররানি সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। তখন থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান একটি রাজতন্ত্র ছিল। এরই মাঝে দেশের রাজধানী কান্দাহার থেকে কাবুলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং দেশটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কাছে অনেক অঞ্চল হারায়। ১৯শ শতকে দেশটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে এক বিরাট খেলার মধ্যবর্তী ক্রীড়ানক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সামরিক অফিসারেরা রাজার পতন ঘটান এবং একটি প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। ১৯১৯ সালে তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান দেশটি ব্রিটেন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে সাথে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তালেবান নামের একটি মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠী কাবুলের দখল নেয়। তালেবান সন্ত্রাসবাদী দল আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু হয়।এদের মধ্যে আরেফ সুলতানজাদাহ্, খালেদ নাউইশা, রাজেঘ মামুন, হুসান ফাকরি অন্যতম ।আফগানিস্তানের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা আফগান সাহিত্যের অন্যতম বিষয় । তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয় বা কর্মকাণ্ড । পরিব্যাপ্তি-কাল অনুযায়ী বিংশ শতাব্দীর আফগান সাহিত্যকে স্বনামধন্য লেখক মীর হেকমতুল্লাহ্ সাদাত বিষয়-ভিত্তিক কয়েক শ্রেণিতে ভাগ করেছেন, যেমন রাজনৈতিক জাগরণ দেশাত্ববোধক মূল্যবোধ, অনুভূতি-আশ্রিত সমাজবদ্ধতা, বাস্তববাদ সমাজতাত্ত্বিক বাস্তবতা বিপ্লবী কর্মকাণ্ড এবং সমঝোতা ও অভ্যন্তরীণ বাধা । বিভিন্ন লেখক লেখার মাধ্যমে এসব বিষয়গুলো পাঠকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন ।অতীতে বার বার রণক্ষেত্রে রূপ পরিগ্রহকারী আফগানিস্তানে প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক-স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্যবসতি ছিল। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানের কৃষি খামার সম্প্রদায় বিশ্বের প্রাচীনতম খামারগুলোর একটি। আর সেখানে অনেক সাম্রাজ্য ও রাজ্য ক্ষমতায় এসেছে, যেমন গ্রেকো-বারট্রিয়ান, কুশান, হেফথালিটিস, কাবুল শাহী, সাফারি, সামানি, গজনবী, ঘুরি, খিলজি, কারতি, মুঘল, ও সবশেষে হুতাক ও দুররানি সাম্রাজ্য। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতিও স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়, যাদের মধ্যে পাঠান, কাজিক, তাজিক, হাজারা অন্যতম। বস্তুতপক্ষে আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায়-সবাই ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান। তবে নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে মধ্য এশিয়ান, চীনা, পারসিয়ান-ইরানি এবং ভারতীয় উপমহাদেশ, এই চার সাংস্কৃতিক,জাতিতাত্ত্বিক অঞ্চলের মিলন ঘটেছে এখানে। ফলে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল ভাষাগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য,বলা হয়, সিল্ক রোড ও প্রাচীন বাণিজ্য পথগুলোর সঙ্গে সুপ্রাচীনকাল থেকেই সংযুক্ত থাকায় আফগানিস্তানে বসবাসকারী মানুষদের পূর্বপুরুষগণ ইরান, পাকিস্তান, ভারতবর্ষ, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, চীন, আরব উপদ্বীপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং আরও বহু জায়গা থেকে এসেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের চলাচল, রাজনৈতিক বিপ্লব, আক্রমণ, রাজ্যবিজয় ও যুদ্ধ বহু মানুষকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসে। এদেরই কেউ কেউ আফগানিস্তানকে নিজের মাতৃভূমি বানিয়ে নেয়। রাজনৈতিক দল ও জাতিসত্তার ধারণা বহু পরে এই বিচিত্র জাতি-সমাহারের ওপর অনেকটা চাপিয়ে দেয়া হয়।কাবুল আজ তালিবানের কব্জায়। দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। আটকে রয়েছেন অনেক ভারতীয় নাগরিকও। জঙ্গিদের ছাড়তে শুরু করে তালিবান। কুখ্যাত তালিবানের এই গতিবিধি দেখতে গোটা দেশের মতো বাংলার মানুষের নজর আজ কাবুলের দিকে। কারণ কাবুলের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় তো আজকের নয়। বাঙালির সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রে বারবার উঠে এসেছে কাবুল। বোকাচোদা তালিবান শাসক,শরিয়ত আইন প্রণয়ন করে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করছে এই তালিবান।১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং তারা সেখানে ইসলামি আইন প্রণয়ন করেছিলো। ১৯৯৪ সালে আফগান গৃহযুদ্ধের অন্যতম প্রধান দল হিসেবে তালেবানের আবির্ভাব ঘটে। এই দলটি মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ আফগানিস্তানের পশতুন এলাকার ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় যারা ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলো এবং সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছিলো।মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বে, এই আন্দোলন আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আফগান রাজধানী কান্দাহারে স্থানান্তরিত হয়। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর ২০০১ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আক্রমণের পর ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ অংশ তালেবানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিলো মাত্র তিনটি দেশ: পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে এই দলটি আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কারজাই প্রশাসন এবং ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি বিদ্রোহ আন্দোলন হিসেবে পুনরায় একত্রিত হয়।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আফগান সরকার ব্যাপকভাবে অভিযোগ করে, তালেবানের প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায় থাকাকালীন পাকিস্তান ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ও সামরিক বাহিনী তাদের সহায়তা প্রদান করেছে এবং বিদ্রোহের সময় তালেবানদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর তালেবান আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।তালিবানের শাসনে কাবুল।বেশ কয়েকজন তালেবান ও আল-কায়েদা কমান্ডার মানব পাচারের একটি নেটওয়ার্ক চালায়, জাতিগত সংখ্যালঘু নারীদের অপহরণ করে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যৌন দাসী হিসাবে বিক্রি করে।।মানব পাচারের টার্গেট হয় বিশেষ করে তাজিক, উজবেক, হাজারা এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য অ-পশতুন জাতিগোষ্ঠীর নারীরা। কিছু নারী দাসত্বের চেয়ে আত্মহত্যা করতে বেছে নিয়ে, আত্মহত্যা করে। ১৯৯৯ সালে শুধুমাত্র শোমালি সমভূমিতেই তালেবান ও আল-কায়েদার আক্রমণে ৬০০ এরও বেশি নারীকে অপহরণ করা হয়েছিল।বানচোদ, শয়তান স্থানীয় তালেবান বাহিনীর সঙ্গে আরব ও পাকিস্তানি আল-কায়েদার হোলের জঙ্গিরা তাদের ট্রাক ও বাসে জোর করে নিয়ে যায়। বানচোদরা তাদের মধ্যে সুন্দরীদের বাছাই করে নিয়ে গিয়েছিল। মরণ হোক জঙ্গের পাঁঠার গোঁ।ত্রাণ কাজ নাই কম্ম নাই শালারা নিখোঁজ নারীদের অনেক মহিলাকে পাকিস্তানের যৌনপল্লী ও বাসাবাড়িতে দাসী হিসাবে থাকার ব্যবস্থা করেছে ।তবে ডাকাতের মাঝেও কয়েকটা মানুষ থাকে।কিন্তু তারা মুষ্ঠিমেয়, কি বাল ছিঁড়বে।অনেক আবাল তালেবান , মানুষমারার বাহাদুর, ছিল।জীবন একটা দিতে পারবি শয়তানের দল। জালালাবাদে, তবু কিছু স্থানীয় তালেবান আল-কায়েদার আরব সদস্যদের দ্বারা একটি ক্যাম্পে আটকে রাখা মহিলাদের মুক্ত করে দেয়।প্রাণে বাঁচতে আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছেন অনেকেই। কাবুল ছাড়তে চেয়ে হুড়োহুড়ির মধ্যে বিমানবন্দরে মার্কিন সেনার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে, চলে যাচ্ছে প্রাণ! পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা এই ছবি থেকেই স্পষ্ট।২০ বছর পর আফগানিস্তানে ফের শুরু হয়েছে তালিবানি শাসন।অত্যাচারী তালিবান শাসনে হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্গতি।হাজার মানুষের অভিশাপে তালিবান শাসনের ভিত নড়ে উঠবে একদিন।তখন উদিত হবে শান্তির সূর্য। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য এখন হুড়োহুড়ি। বিমানবন্দরেক টারম্যাকে হাজার হাজার মানুষের ভিড়, হুড়োহুড়ি আর বিমান থেকে পড়ে মৃত্যুর ছবি দিনভর আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। পরিস্থিতি এমন যে, বিমানে জায়গা না পেয়ে চাকার উপরেই চড়ে বসেন কয়েকজন যাত্রী। আফগানিস্তানে পুনরায় তালিবান শাসনের জেরে ভারতে খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে হামিদ কারজাই ও ডা. আবদুল্লা থাকাই সম্পর্ক ভাল থাকতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান এবং তালিবানের মধ্যে মজবুত সম্পর্কের বিষয়টিও কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই বিষয়ে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, তাঁরা ভারত সহ সমস্ত দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের আশা রাখেন। তাঁরা আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। যদিও আগে সম্পর্ক ভাল ছিল না, তবে এখন সম্পর্ক ভাল রাখারই চেষ্টা করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক সামগ্রী, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অটো যন্ত্রাংশ আমদানি করে আসছিল কাবুল। তবে তালেবানের উত্থানে হুট করেই সে প্রক্রিয়ায় ধাক্কা লাগে। দিল্লির চেম্বার অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান ব্রিজেশ গোয়াল বলেন, চালান আটকে আছে এবং পেমেন্ট বড় আকারে আটকে যেতে পারে। ফলে ভারত সরকারের অবিলম্বে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ হওয়া প্রয়োজন। তাদের কিছু উপায় খুঁজে বের করা উচিত। তালিবানির অত্যাচারী শাসন থেকে বাদ যাচ্ছে না মহিলা,বৃদ্ধ কিংবা শিশু।এভাবে শাসনকার্য কি পরিচালনা করা উচিত? মনুষ্যত্বের চরম অপমানে ডুবে যায় অত্যাচারী শাসনের রক্তচক্ষু। ঠিক ফিরে আসে শান্তির আবহ।একমাত্র ভালোবাসাই পারে পৃথিবী জয় করতে।

Facebook Comments

Leave a Reply