আফগানিস্তান : একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের সমাজ-নৃতাত্ত্বিক পর্যালোচনা : সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়
মানুষ ও তার নৃকুলসত্ত্বা
বিগত কয়েক দশকের বিশ্ব-রাজনৈতিক পরিসরের ঘটনাগুলিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে নৃকুলজাতীয়তাবাদ বেশিরভাগ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসেবে হাজির হচ্ছে।[১] শুধু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে নয়, জাতি-রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ক্রমে অভ্যন্তরীণ হিংসার কারণ হয়ে উঠছে। উভয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা সার্বভৌম হলেও শুধুমাত্র নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা সেই ব্যবস্থায় ভাঙন ঘটাচ্ছে। সাংস্কৃতিক সমরূপতার আলোকে যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় জাতি-রাষ্ট্রের চেহারা আগেই গড়ে উঠেছিল, সেখানেও আজ অন্তর্বিস্ফোরণ ঘটছে।
এই নৃকুলসত্ত্বায় বিধিবদ্ধ ও আইনী রাষ্ট্র কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটছে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে, যেগুলির বেশীরভাগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়, যেমন বার্মা, বুরুন্ডি, ইথিওপিয়া, গুয়েনা, কেনিয়া, মালেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সুদান, উগান্ডা, ইত্যাদিতে, প্রতিটি নৃকুল গোষ্ঠী রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে না। একইভাবে প্রথম বিশ্ব, যেখানে প্রযুক্তিগত সংহতি মাত্রা বেশ উচ্চ, সেই কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদিতেও নৃকুল গোষ্ঠীগত বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্ব, যেখানে জাতীয়তাবাদী চেতনা বলে কোন কিছুকে মেনে নেওয়া হয় না, সেই চীন, রাশিয়া, লাওস, রোমানিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদিতে রাষ্ট্রনায়কগণ তাদের জাতীয় প্রশ্নকে সফলভাবে সমাধান করার পরও অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত রাজনৈতিক বিষয়ে তারা যেটার মুখোমুখি হন তার একটি প্রধান উপাদান হল নৃকুল গোষ্ঠীর অস্থিরতা।
জাতিসত্ত্বা, নৃকুলসত্ত্বা এবং গোষ্ঠীচেতনা
নৃকুলগোষ্ঠী হল সেই মানবগোষ্ঠী যারা অভিন্ন পরিচিতি সত্তার অধিকারী। তাদের ইতিহাস যে স্বতন্ত্র ধারাগুলির চিহ্ন প্রকাশ করে সেখানে যৌথ অনুভূতি গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণ। এই দৃষ্টিকোণে এথনিক গোষ্ঠী বা নৃকুলগোষ্ঠীকে জাতিগোষ্ঠী হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। “রেস” অর্থে একটি জাতিসত্ত্বায় তখন নরগোষ্ঠী ‘এথনিক’ হয়ে ওঠে।[২]
তত্ত্বগত দিক থেকে একটি সামাজিক বিশ্লেষণে জাতিসত্ত্বা এবং নৃকুলসত্ত্বার মধ্যে সংযোগ সাধিত হয়। তবে এই সংযোগী ব্যাখ্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। নৃকুল গোষ্ঠীর ধারণা জাতি গোষ্ঠীর ধারণা থেকে আরও বৃহত্তর পরিসরে ব্যাখ্যা পায়। জাতিবাদ এবং নৃকুলসত্ত্বা সমার্থক হয় না মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, জাতিবাদ জাতি সংস্কারের ধারণাকে ম্লান করলেও জাতীয়তাবাদী ধারণার বিকাশে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে নৃকুলসত্ত্বা জাতীয়তাবাদ এবং সংস্কৃতি চেতনায় এক বৃহত্তর যৌথ অনুভূতিতে সংঘবদ্ধতার কথা বলে। দ্বিতীয়ত, জাতিগত বৈশিষ্ট্যে যে পার্থক্যগুলি সুনির্দিষ্ট, তার জীববিজ্ঞানগত তাৎপর্য আজ না থাকার কারণে এবং সংস্কৃতির উপাদানগুলি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ফলে, নৃকুলগোষ্ঠী জাতিগোষ্ঠীর সমার্থক নয়। একটি জাতি একটি সাংস্কৃতিক স্বার্থনিদের্শক বৈশিষ্ট্যে একটি নৃকুলগোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারে বা তার অনুকুলসত্ত্বাকে প্রকাশ করে।
নৃকুলসত্ত্বা যূথবদ্ধতার মাত্রাকে নির্দেশ করে। একটি নৃকুলগোষ্ঠী গঠনের এটি হল প্রাথমিক শর্ত। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, জাতিয়তাবাদী চেতনায় নৃকুলসত্ত্বা জাগরিত হতে পারে।[৩] তবে সাংস্কৃতিক নৃকুলসত্ত্বা, আর রাজনৈতিক নৃকুলসত্ত্বা এক নয়। সাংস্কৃতিক নৃকুলসত্ত্বায় ধর্মীয়, ভাষাগত এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপাদান সম্পৃক্ত আচরণের যৌথ প্রকাশ ঘটে থাকে, যখন রাজনৈতিক নৃকুলসত্ত্বা মতাদর্শগত সচেতনায় দীপ্ত। সাধারণ অর্থে নৃকুলসত্ত্বা জাগরিত হয় সম-বংশোদ্ভব, সমভাষা, সমপ্রথা ও একই ধরনের আচার অনুষ্ঠান পালনে অভ্যস্ত জীবনধারার মধ্য দিয়ে। তবে জাতিগোষ্ঠীর মতো নৃকুলগোষ্ঠী-পরিচিতি একটা বিশ্বজনীন ঘটনা নয়। অঞ্চল বিচারে এবং অন্য কোনো গোষ্ঠীর সাপেক্ষে এই পরিচিতি গঠিত হয়।
আজকের বিশ্বে সবচেয়ে বড় নৃকুলগোষ্ঠী হল চীনের হান সম্প্রদায়। ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী তার কুলগোষ্ঠী পরিচয়ে অপরের প্রতি হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে। আঠারো শতকে পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী জনসম্প্রদায়ের নৃকুলসত্ত্বা এমন কারণেই আক্রান্ত হয়েছিল। আফ্রিকার হুতু ও তুতসি উপজাতি সম্প্রদায়ের হানাহানিও নৃকুলগোষ্ঠী হিংসার উদাহরণ। গাজায় ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের লড়াইও বিশ্বায়িত রাজনৈতিক নৃকুলসত্ত্বারই প্রকাশ। আসামের জাতিদাঙ্গা আসলে নৃকুলগোষ্ঠী হিংসার প্রকাশ। এমনকি ১৯৯০-এ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয় নানা নৃকুলগোষ্ঠীর মধ্যে হিংসার উদাহরণ সৃষ্টি করে। চেচেন, বলকান ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলি কোথাও সংহতি, আবার কোথাও সংঘাতপূর্ণ অবস্থান প্রকাশ করে।
নৃকুলগোষ্ঠী হিংসায় জর্জরিত আফ্রিকার দেশগুলি। রাওণ্ডা, বুরুণ্ডি, কঙ্গো, উগাণ্ডা সহ মধ্য পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে একই বংশোদ্ভব এবং সংস্কৃতিতে লালিত জনগোষ্ঠীগুলি তাদের পরিচয়ের শেকড় আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়। এইচ আই ভি/এইডস-এ আক্রান্ত এই অঞ্চল বিশ্বাস করে যে তারা তাদের সংস্কৃতির বাইরে বেরিয়েছিল বলেই তাদের সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে।[৪] অন্যসংস্কৃতির ধারাতে আর আত্তীকরণ নয়, অপর সাংস্কৃতিক রেণুতে আর অভিযোজন নয়, নিজস্ব সংস্কৃতিকেই রক্ষা করা প্রতিটি সদস্যের কাজ। এই যৌথ চেতনা অপরকে খুব সহজেই ত্যাজ্য করে। ফলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হিংসাশ্রয়ী আচরণ, নৃকুলগোষ্ঠীগুলির ভবিতব্যে বিশ্বায়িত সংস্কৃতির অন্ধকার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা ও হিংসা
সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম গ্রাহাম সামনারের মতে নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা হল এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব গোষ্ঠী বা সংস্কৃতিকে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এবং উচ্চমার্গের বলে বিবেচনা করে এবং বাকি সবকিছুকেই এই কেন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে তুলনার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে। ফোকওয়েজ শীর্ষক গ্রন্থে সামনার এই নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধের জন্য গর্ব অনুভবের ভিত্তিতে গঠিত ঐক্যে যে যূথবদ্ধতাকে বিশ্লেষণ করেন, সেটি হল নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা।[৫] প্রসঙ্গত, নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব যেখানে অন্যের চেয়ে নিজের জীবনযাত্রাকে উৎকৃষ্টতর ভঙ্গিমায় প্রকাশ পায়। সমাজবিজ্ঞানের পাঠে সামনার এই অনুভবের ভিত্তিতে অন্তগোষ্ঠীর মধ্যে যে আমরা-বোধ বিদ্যমান থাকে তার কথা বলেছেন। সামনারের এই ধারণা সমর্থন করেন আমেরিকান সমাজতাত্ত্বিক রবার্ট কিং মার্টন। তিনি বলেন যে বৰ্হিগোষ্ঠীর সাপেক্ষে অন্তগোষ্ঠীতে ‘এথনোসেনট্রিজম’-এর ধারণা সঙ্গতিপূর্ণ।[৬]
নৃতাত্ত্বিক ফ্রাঞ্জ বোয়াস এবং ব্রনিসল কাসপার ম্যালিনোস্কি গোষ্ঠীকেন্দ্রীকতার সমস্যা দূর করতে মানবজাতিতত্ত্বের প্রসার চেয়েছেন। নারীবাদী সমাজতাত্ত্বিক মার্গারেট মিড গোষ্ঠীকেন্দ্রীকতার বিরোধিতা করেন। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত Coming of Age in Samoa শীর্ষক গ্রন্থে [৭] মিড, ১৯২৯ সালে প্রকাশিত The Sexual Life of Savages in North-Western Melanesia শীর্ষক গ্রন্থে [৮] ম্যালিনোস্কি, এবং ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত Patterns of Culture শীর্ষক গ্রন্থে [৯] রুথ বেনেডিক্ট দাবি করেন যে গোষ্ঠীকেন্দ্রিকতার ঝোঁক কখনই বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারে না। মানুষের আবেগ তার জৈবিক শক্তির প্রকাশ নয়, বরং এটা তার সাংস্কৃতিক কারণগুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমাজতাত্ত্বিক রবার্ট মরিসন ম্যাকাইভার সমাজ গবেষণার নিরপেক্ষতা অবলম্বনের স্বার্থে ‘এথনোসেনট্রিজম’ সম্পর্কে গবেষকদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। এই ধরনের পরামর্শ সমাজ, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করে বছরের পর বছর ধরে চলা প্রধান বিতর্কগুলির ওপর আলোকপাত করে।
নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতার ঝোঁক সমাজে জাতিভেদ, বর্ণবাদ, বিদেশাতঙ্ক, সাংস্কৃতিক অজ্ঞতা এবং অসংবেদনশীলতার মতো সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। এটি কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সহিংসতাতেও অবদান রাখতে পারে। যেমন আফগানিস্তানে নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা, জাতিগত বৈষম্য এবং ধর্মীয় সহনশীলতার অভাব, ইত্যাদি দেশটিকে দুর্গম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে।[১০] জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে আফগান রাজারা তাদের নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য একটি নৃকুলগোষ্ঠীর সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে ফতোয়া বা ধর্মীয় ডিক্রি জারি করেছিলেন।
তালিবানেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার উপযোগবাদী এবং চেহারাভিত্তিক ধারণা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি যুদ্ধের লুণ্ঠনের ধারণায় বাড়ী, সম্পদ, ইত্যাদি থেকে শুরু করে সেখানে বসবাসকারী নারী এবং শিশুদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রসারিত তালিকা তাদের সহযোগিতায় গঠিত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও প্রতিফলিত। নৃ-কেন্দ্রিকতা তাদের কর্মসূচির শীর্ষে, এবং তার ওপর ভিত্তি করেই তালিবানরা সেই এলাকায় অধিক এবং একচেটিয়া সহিংসতা দেখিয়েছে। স্পষ্টতই তাদের শিয়া সম্প্রদায় এবং হাজারাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নেই এবং যারা দরি ভাষায় কথা বলে সেই তাজিকদের প্রতিও তারা বিরূপ। আফগানিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষকগণ আমাদের যে গণহত্যার রেকর্ড সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার কথা বলেন সেখানেও আফগান গৃহযুদ্ধের কারণ হিসেবে তাজিক বনাম পশতুনদের নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের কথাই উঠে আসে।[১১] যেমন, অনেক আফগান পশতুন আফগান ন্যাশনাল আর্মি (এএনএ)-কে তাজিক নেতৃত্বাধীন পশতুন-বিরোধী নৃকুলগোষ্ঠীগত জোটের আধিপত্য হিসেবে দেখে। অন্যদিকে, তাজিকরা পশতুন জনগোষ্ঠীকে তালিবানের সঙ্গে একতাবদ্ধ বলে মনে করে। এর ফলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। নৃকুলগোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসন সব সময়ই নিন্দনীয় কারণ তা একপেশে।
আফগানিস্তানের নৃকুলগোষ্ঠী পরিচয়
আফগানিস্তান একটি বর্ণময় নৃকুলগোষ্ঠীর দেশ। ভাষা এবং নৃকুলগতভাবে এখানে নানা গোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। পশতুন (পাঠান বা পাখতুন), তাজিক, হাজারা, উজবেক, চাহার আইমাক, তুর্কমেন, বালুচ, পাশাই, গুজ্জর, আরব, ব্রাহুই, কিজিলবাশ, কুছিস, উইঘুর, পামীরি, কির্গিজ, সাদাত, দারদিক বা নূরিস্তানী ইত্যাদি নৃকুলগোষ্ঠী আফগানিস্তানে বাস করেন। এর মধ্যে পাশতুন জনজাতি সর্ববৃহৎ এবং এরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২%। তাজিক জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত মানুষ মোট জনসংখ্যার ২৭%। এছাড়া উজবেকরা ৯% এবং হাজারা জনজাতি গোষ্ঠী ভুক্তমানুষ ১০% আছে। বাকিরা সবাই মোট জনসংখ্যার ১০-১২%।[১২] তালিবানদের অধিকাংশই পশতুন সম্প্রদায়ভুক্ত। জনসংখ্যার বাকি ৫৮% সাধারণভাবে তালিবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। আবার পশতুনদের সবাই যে তালিবানদের সমর্থক তেমনটাও নয়। বরং আফগান জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তালিবান নির্যাতনের বিরোধী।
আফগান নৃকুলগোষ্ঠীর মানুষ শুধু শিয়া আর সুন্নিতে বিভক্ত নয়, তাদের এই জনগোষ্ঠীগত পার্থক্যে ভাষা, শারীরিক গঠন, জীবনধারার আঞ্চলিক রীতি, সবই মুখ্য হয়ে ওঠে। যেমন হাজারাদের পশতুনরা খুবই অপছন্দ করে। এই বৈষম্যমূলক হওয়ার প্রধান কারণ হল তাদের চেহারার গঠন। হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্চতায় খাটো, চ্যাপ্টা বা ভোঁতা নাক, ছোট চোখের মঙ্গোলীয় জনগণের মত দেখতে হয়। হাজারাদের আফগানিস্তানের সবচেয়ে দুর্বল এবং দরিদ্র জাতি হিসেবেও দেখা হয়, যাতে তারা সহজেই পশতুনদের দ্বারা নিহত, অপমানিত এবং নির্যাতনের শিকার হয়।
পশতুনদের মধ্যে পস্তো ভাষা প্রচলিত।[১৩] আফগানিস্তানের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ নাগরিক এই ভাষা জানেন। নিজেদের মধ্যে এই ভাষায় কথা বলেন। এই পস্তো ভাষার সঙ্গে এখানে সরকারীভাবে দরি ভাষা স্বীকৃত, যা আফগান সমাজে অনেক বেশী প্রচলিত। প্রায় আশি শতাংশ আফগান নাগরিক এই ভাষা ব্যবহার করেন। দুটি ভাষার ব্যবহারে পটু মানুষের সংখ্যাটাও এখানে কম নেই। ভাষা গবেষকদের দাবি অনুসারে দুটো ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ঘরানার। তবে ইরানীয় পারসিক ভাষার সঙ্গে আফগানীয় পারসিক ভাষার পার্থক্য করতে সহজ উদাহরণে ফার্সি ভাষার উচ্চারণগত পার্থক্যকেই নির্দেশ করা হয়। দরি হল আফগান উচ্চারণ ভঙ্গিমায় ফার্সি ভাষা। এই পরিবর্তনে তুর্কি, স্লাভিক, পামিরীয় ভাষা রীতির প্রভাব রয়েছে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা রীতিরও প্রচলন এই মাটিতে স্পষ্ট। দারদিক বা নূরিস্তানী সম্প্রদায়ের মানুষ সেই ভাষায় কথা বলেন। যেমন ব্রাহুইরা দ্রাবিড়ীয় ভাষা কাঠামোর ব্যবহারে পটু।
নৃকুলগোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি অবস্থান প্রধানত দুই ধরনের প্রক্রিয়াকে সচল করে, যার একটি হল সংস্কৃতিকরণ, এবং অপরটি উপযোজন। সংস্কৃতিকরণে নৃকুলগোষ্ঠীগুলি পরস্পরের সংস্পর্শে আসার ফলে তারা একে অপরের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে গ্রহণ করে এবং সেই সংমিশ্রণে নতুন জীবনধারার জন্ম হয়। এর বাইরে উপযোজন প্রক্রিয়ায় সংঘাত ও বৈপরীত্যকে মানিয়ে নেওয়া সম্ভবপর হয়। আফগানিস্তানের মাটিতে উপযোজন প্রক্রিয়ার প্রাবল্য লক্ষ্যণীয়। যেমন এখানকার উত্তরাঞ্চলীয় উজবেক সম্প্রদায়, যারা শুধু সংখ্যায় বেশী তাই নন, তারা গ্রাম-শহর উভয় জীবনে এমনভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন যে যাযাবর বংশোদ্ভূত হয়েও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দুর্রানি সংখ্যালঘুদের তুলনায় তারা আজ আরও বিস্তৃত এবং পরিশীলিত জীবনধারায় অভ্যস্ত। বংশোদ্ভবের নীতি মেনে বিবাহ রীতিতেও তারা দুর্রানি সহ পশতুনদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন।[১৪]
উত্তরাঞ্চলের সরিপুলে অবশ্য এই দুর্রানি খানদের আধিপত্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে যায়নি। উজবেক এবং দুর্রানিরা সরিপুল এবং এর আশেপাশ অঞ্চলের “জীবনানুকূল পরিবেশ” যৌথভাবে দখল করেন না; বরং তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট ওভারল্যাপ এবং প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।[১৫] সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব, পশতুন এবং বাকিদের মধ্যে একটি বড় ফাটলের জন্ম দেয়, যাকে সাধারণভাবে “আউঘানিয়া” বনাম “উজবেকিয়া” হিসাবে দেখা হয়। ধর্মীয় আচার পালনের বিষয়ে, উজবেক এবং দুর্রানিরা একে অপরের প্রতি কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত মনোভাব পোষণ করেন। একদিকে, উভয় গোষ্ঠীই সুন্নি এবং সহজেই সুন্নি-শিয়া বিভাজনে তাদের মধ্যে একটা আমরা-বোধের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত। কিন্তু উজবেকদের ধর্মীয় অনুশীলনে তারা তাদের সুন্নি দুর্রানি নেতা এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের সঙ্গে কার্যত দূরত্ব রেখে চলেন। ফলস্বরূপ পরস্পরের ধর্মীয় জীবনের প্রতি অজ্ঞতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, অবজ্ঞা এবং কটূক্তিতে ভরা আচরণ সমাজজীবনে প্রতিফলিত হয়। দুর্রানিদের (এবং সমস্ত পশতুনদের) ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের শিথিলতার, তাদের নোংরা খাদ্যাভ্যাসের এবং মহিলাদের প্রতি তাদের হীনমানসিকতার বিরুদ্ধাচরণ উজবেকরা সাধারণত করে থাকেন।
নৃকুলগোষ্ঠীয় ফাটল এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষণমূলক রাজনীতি
পশতুন বা পাঠানদের মৌলবাদী আচরণ তাদের এক ধরনের গোঁড়ামির পরিচয় প্রকাশ করলেও সেটা যে ধর্মীয় আনুগত্যেই সম্পৃক্ত, তেমনটি নয়। বরং ধর্মীয় গোঁড়ামির মাপকাঠিতে উজবেকদের থেকে দুর্রানিরা অনেক উদার। নারীর তুলনামূলক স্বাধীন চলাফেরার ছাড়পত্রে সেটা প্রমাণিত। সুতরাং আফগান ইতিহাস এই নৃকুলগোষ্ঠীর রক্তাক্ত লড়াইয়ের ইতিহাস হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতিগত বৈচিত্র্যের এবং এর ঐতিহাসিক জটিলতায় যে বিকৃত মৌলবাদী রূপ প্রকাশ করে সেটা ধর্মকে আশ্রয় করে আবর্তিত হলেও তার নেপথ্যে থাকে রাজনীতি। সেই রাজনীতি আফগানিস্তানে ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর পশতুন জাতীয়তাবাদীদের মতাদর্শগতভাবে গঠন করেতে ব্যর্থ হলেও তারা পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের দমন করেছে। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে একচেটিয়া করার লক্ষ্যে এবং পশতুন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে “জাতীয়” ইতিহাস নির্মাণ বা তার পুনর্লিখন করার অভিপ্রায়ে সেটা সেখানে ঘটানো হয়েছে। এই পন্থা দেশটির সাম্প্রতিক রাজনীতিকেও বিকৃত করেছে।
উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে, নৃতাত্ত্বিকসহ অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীরা আফগানিস্তানের জাতিগত পরিচয় এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলিকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যেমন ফ্রেডরিক বার্থ তাঁর কাজ Political Leadership among Swat Pathans (১৯৬৫)-এ, [১৬] আকবর আহমদ তাঁর Pukhtun Economy and Society (১৯৮০) গ্রন্থে, [১৭] চার্লস লিন্ডহোম তাঁর Generosity and Jealousy (১৯৮২) গ্রন্থে [১৮] এবং আকবর আহমদ তাঁর Social and Economic Change in the Tribal Areas (১৯৭৭) গ্রন্থে [১৯] একটি জাতি-রাষ্ট্র-নির্মাণের এজেন্ডাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। তবে সেই কাজ সফল হয় না।
এটা যে হওয়ার নয় সেটা আর্নল্ড ফ্লেচার ১৯৬৫ সালেই তাঁর Afghanistan: Highway of Conquest শীর্ষক গ্রন্থে দাবি করেছিলেন।[২০] ফ্লেচার দেখান যে আফগান ইতিহাসে অন্যান্য দেশের তুলনায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলির গুরুত্ব কম ছিল, যেহেতু প্রায় ত্রিশ বছর আগে পর্যন্ত তারা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং বিশেষ করে এই ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের বিষয়গুলি, বস্তুতই বাইরের শক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এবং তার প্রতি নৃকুলগোষ্ঠীগুলির ভিন্নভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকে। এই ভিন্নতা আফগানিস্তানের মাটিতে জাতীয়তাবাদের বিকাশে শুধু প্রতিবন্ধকতারই জন্ম দেয় না, সেই ভঙ্গুর রাজনৈতিক-সংস্কৃতি এই মাটিতে থাকা মহামূল্যবান খনিজগুলোর লুন্ঠনে বিদেশী শক্তির সহায়ক হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন গ্রন্থে এবং গবেষণা পত্রে আফগান পরিচয়ের প্রশ্নটিকে ঐতিহাসিক ধারণায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। সেখানে নৃকুলগত পরিচয়টিকেই জাতীয় স্তরে তুলে আনা হয়েছে। “আফগান” পরিচয়কে “পশতুন” পরিচয়ের সমার্থক করে তোলা হয়েছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক সমতুল্যতার নিরিখেই সেটা করা হয়েছে। সেটিও একটি রাজনৈতিক কৌশল। তাতে নৃকুলগোষ্ঠীগুলির মধ্যে চলা বিরোধকে জিইয়ে রাখা যায়। যেমন মার্টিন এওয়ান্স তাঁর Afghanistan: A Short History of Its People and Politics গ্রন্থে হাজারা, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন সহ অন্যান্য নৃকুলগোষ্ঠীর উপস্থিতিকে গৌণ অবস্থানে বিচার করেন।[২১] তিনি অন্যান্য নৃকুলগোষ্ঠীগুলিকে অস্বীকার করেন এবং আফগান পরিচিতিকে পশতুনে সমার্থক করে তোলেন। আফগান জাতি-রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বৈধতা পশতুনদের নেতৃত্বেই কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে তিনি দাবিও করেন। এই রাজনীতিতে মাটির অধিকার এবং একটি আফগান পরিচয়কে কেবলমাত্র পশতুন নৃকুলগোষ্ঠীর সঙ্গেই জড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শাহ মাহমুদ হানিফি তাঁর Interregional Trade and State Formation in Nineteenth-Century Afghanistan (২০০১) গবেষণা পত্রে আফগানের অর্থনৈতিক প্রকাশ এবং তার রূপান্তরের বৃহত্তর গতিশীলতায় নৃকুলগত ও রাজনৈতিক মাত্রা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন।[২২]
এর ফলাফলটি খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন টমাস বারফিল্ড তাঁর Afghanistan: A Cultural and Political History (২০১০) শীর্ষক গ্রন্থে।[২৩] তিনি দেখান যে আফগানিস্তানের সকল নৃকুলগোষ্ঠীগুলি আজ রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ক্ষমতায়িত হয়েছে। ১৯৯৬র পর এক ইসলামপন্থী নৃকুল-গোষ্ঠীপরিচয়ে ক্ষমতায়নের প্রেক্ষিতে যখন আফগান তালিবানরা অগ্রভাগে উঠে আসে, তখন প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তান এবং আমেরিকায় প্রশিক্ষিত জেহাদিদের সহায়তায় কাবুলের ক্ষমতা দখল করেও তারা কোন সরকার গঠনের পথে এগোয় না। যদিও তারা ইসলামী শরিয়ত আইনে তাদের শাসনকে ন্যায্যতা দিয়েছিল, তবুও এই তালিবানরা, মূলত পশতুনরা, অন্য সকল নৃকুলগোষ্ঠীগুলিকে শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করেছিল। এমনকি তারা প্রায় সমস্ত দেশ জয় করার পরেও সরকার গঠন না করে আফগানিস্তানকে একটি ধ্রুপদী “ব্যর্থ রাষ্ট্রে” পরিণত করেছিল।[২৪]
একটি আমূলসংস্কারবাদী সমাজতান্ত্রিক শাসন, একটি উগ্র ইসলামপন্থী দমন এবং একটি সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও আধুনিক আফগানরা জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হন না। এই প্রেক্ষিতে আফগান প্যারাডক্সটি হল : জাতীয়তাবাদ ছাড়াই নৃকুলসত্ত্বার অস্তিত্ব এবং একটি বাস্তববাদী রাজনীতির প্রতিফলন, যা মূলত মতাদর্শ থেকে মুক্ত থাকে।
শেষের কথা
আঞ্চলিক এবং নৃ-গোষ্ঠীগত ক্ষমতার দালালরা আজও আফগানের মাটিতে আবির্ভূত হয়েছে। আজকের মতো সেদিনও তারা কাবুল-ভিত্তিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আফগান রাজনীতিতে বিদেশী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর ভূমিকা সেদিনের মতোই তাই আজও বেশ জোরালো। তারা নিজেদের উদ্দেশ্যেই আফগানিস্তানের দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চায়। আফগানিস্তানের মাটিতে থাকা মূল্যবান সম্পদকে তারা বিশ্ব বাজারের উপযোগী করতে চায়। নেশার দ্রব্য উৎপাদনের বিশ্ব-ভান্ডার হিসেবেই আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে চায়।
ফলে আজ যদি কোন রাষ্ট্রীয় কাঠামো এখানে তালিবানদের নেতৃত্বে গড়ে তোলা সম্ভবও হয়, তবে তা এতটাই দুর্বল হবে যে, যারা ক্ষমতার আনুষ্ঠানিক লাগাম ধরে রাখবে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী অবস্থানকে স্থায়ীভাবে নিশ্চিত করতে পারবে না। নৃকুল গোষ্ঠীকেন্দ্রিক লড়াই প্রতিনিয়ত আফগানের ক্ষমতাপটের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে, অথবা অভ্যন্তরীণ বিবাদে ক্রমশ জীর্ণ হবে সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতটি তাই এখানে নৃকুলসত্ত্বায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেগে থাকে, যা আফগানিস্তানকে বিদেশী দখলদার অপসারণের মধ্যেই পুনর্গঠনের নামে অনুপ্রবেশযোগ্য করে তোলে। নৃ-গোষ্ঠীগত হানাহানির উন্মত্ত চোখে আফগানরা তাই দেখতে পায় না যে তারা অন্য কারও ষড়যন্ত্রে অনিচ্ছাকৃতভাবে এই মাটিকে বারেবারে পরাধীন করে ফেলেছে।
পাদটিকা ও গ্রন্থসূত্র
১. নৃবিজ্ঞানীগণ তাদের নিজেদের সন্তুষ্টিতে প্রমাণ করতে পারেন যে পুশতুন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু জেনেটিক স্ট্রেন আছে, বিশেষ করে যারা আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত-অঞ্চলকে বাস করেন। এই প্রমাণের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে এই নৃকুলগোষ্ঠীটি এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া বেশ কয়েকটি শাসকের বৈচিত্র্যময় বংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি হল, পশতুনরা নিজেরাই তাদের বিশ্বাসে নিশ্চিত যে সমস্ত পশতুন একটি উৎস থেকে বিবর্তিত হয়েছে এবং জিনগতভাবে তারা মূলত অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এটি এমন একটি বিষয় যা স্বজ্ঞাত এবং সন্দেহাতীতভাবে পরিচিত একটা মনোভাবের বিষয়, কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য নয়। এমন আলোচনা সহ নৃকুলসত্ত্বার রাজনীতি প্রসঙ্গে দেখুন, Walker Connor, (1978). “A nation is a nation, is a state, is an ethnic group is a … .,” in Ethnic and Racial Studies, 1(4): 377-400.
২. দেখুন, Siniša Maleševic, (2004). The Sociology of Ethnicity. New Delhi: Sage Publications India Pvt. Ltd.
৩. দেখুন, Christian Karner, (2007). Ethnicity and Everyday Life. New York: Routledge.
৪. বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে নৃকুলগোষ্ঠী চেতনা প্রসঙ্গে দেখুন, Samir Dasgupta and Kaushik Chattopadyay, (2002). Global Malady in the Third World: A Reflection. Kalyani: Prateeti Publication.
৫. দেখুন, William Graham Sumner, (1906). Folkways: A Study of the Sociological Importance of Usages, Manners, Customs, Mores, and Morals. Boston: Ginn and Company. P. 13.
৬. দেখুন, Robert King Merton, (1973). The Sociology of Science: Theoretical and Empirical Investigations. Chicago: The University of Chicago Press.
৭. দেখুন, Margaret Mead, (1928). Coming of Age in Samoa. London: Penguin Books.
৮. দেখুন, Bronislaw Kaspar Malinowski, (1929). The Sexual Life of Savages in North-Western Melanesia. New York: Eugenics Publishing Company.
৯. দেখুন, Ruth Benedict, (1934). Patterns of Culture. London: Routledge & Kegan Paul Ltd.
১০. দেখুন, Nabi Misdaq, (1990). “Traditional Leadership in Afghan: Society and the Issue of National Unity,” in Central Asian Survey, 9(4): 109-112.
১১. দেখুন, James Fergusson, (2008). A Million Bullets: The Real Story of the British Army in Afghanistan. London: Bantam Press.
১২. দেখুন, Minority Rights Group International, World Directory of Minorities and Indigenous Peoples-Afghanistan, July 2018, available at: https://www.refworld.org/ docid/ 4954ce5ec.html [accessed 12 September 2021.] এছাড়াও দেখুন, Robert D. Crews and Amin Tarzi, (eds.), (2008). The Taliban and the Crisis of Afghanistan. Cambridge: Harvard University Press. গ্রন্থটির ১৬ পাতায় আফগানের মাটিতে ছড়িয়ে থাকা মূল ১০টি নৃ-গোষ্ঠী সম্পর্কিত যে মানচিত্রটি দেওয়া আছে, সেটি অবশ্যই দ্রষ্টব্য।
১৩. দেখুন, Vladimir Kushev, (1997). “Areal Lexical Contacts of the Afghan (Pashto) Language,” in Iran and the Caucasus, 1(1): 159-166. এছাড়াও উনিশ শতকে এশিয়াটিক সোসাইটি ভাষার ওপর যে কাজ করেছিল, সেই প্রসঙ্গে দেখুন, Viscount Strangford, (1863). “On the Language of the Afghans. Part I,” in Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, 20(1): 52-66.
১৪. দেখুন, Nancy Tapper, (1983). “Acculturation in Afghan Turkistan: Pashtun and Uzbek Women,” in Asian Affairs, 14(1): 35-44. এছাড়াও তাঁর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Marriage and Social Organization among Durrani Pashtuns in Northern Afghanistan শিরোনামে ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত পিএইচডি থিসিসটি দেখা যেতে পারে।
১৫. দেখুন, Robert Nichols, (2005). “Afghan Historiography: Classical Study, Conventional Narrative, National Polemic,” in History Compass, 3(AS 141):1–16. এছাড়াও দেখুন, David B. Edwards, (2002). Before Taliban: Genealogies of the Afghan Jihad. Berkeley: University of California Press.
১৬. দেখুন, Fredrik Barth, (1965). Political Leadership among Swat Pathans. New Jersey: The Athlone Press.
১৭. দেখুন, Akbar Ahmed, (1980). Pukhtun Economy and Society. Boston: Routledge and Kegan Paul.
১৮. দেখুন, Charles Lindholm, (1982). Generosity and Jealousy. New York: Columbia University Press.
১৯. দেখুন, Akbar Ahmed, (1977). Social and Economic Change in the Tribal Areas. Karachi: Oxford University Press.
২০. দেখুন, Arnold Fletcher, (1965). Afghanistan: Highway of Conquest. Ithaca: Cornell University Press.
২১. দেখুন, Martin Ewans, (2002). Afghanistan: A Short History of Its People and Politics. New York: HarperCollins Publishers.
২২. দেখুন, Shah Mahmoud Hanifi, (2001). Inter-regional Trade and State Formation in Nineteenth-Century Afghanistan. Ann Arbor : University of Michigan Press.
২৩. দেখুন, Thomas Barfield, (2010). Afghanistan: A Cultural and Political History. Princeton: Princeton University Press.
২৪. দেখুন, Barnett R. Rubin, (1995). The Search for Peace in Afghanistan: From Buffer State to Failed State. New Haven: Yale University Press.
[লেখক – এম. এ, সহকারী শিক্ষক, হালিশহর রবীন্দ্র বিদ্যামন্দির (উঃ মাঃ), হালিশহর, উত্তর চব্বিশ পরগণা।]
Posted in: ARTICLE, September 2021 - Cover Story