কাবুল-তালিবান-ভারতীয় মিডিয়া: একটি খণ্ডচিত্র – ডঃ রাজেশ দাস, সুবিনীতা পাল
আফগানিস্তান শব্দটির ব্যাপ্তি এবং প্রকরণ কি শুধুমাত্রই কাবুল-কান্দাহারের দুর্গম গিরিপথের নিছক একটি ভৌগলিক সীমারেখা নাকি পশতু ভাষা, জোব্বা আলখাল্লা টাইপের পোশাক, আর আখরোট কাজু-কিসমিস এর হরেক পসরা সাজানো একটি সংস্কৃতি, নাকি‘ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’!
বাঙালির মনের ঠাকুর তার কালজয়ী ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে আফগানিস্তান এবং আফগানকে নিয়ে এসেছেন একটি শাশ্বত পিতৃত্বের পরম মমতায়। কলকাতার রাস্তায় ফল বিক্রি করা মধ্য চল্লিশের রহমত মিয়াঁর সঙ্গে ফুটফুটে একরত্তি বাঙালি ‘মিনি’-র নির্মল বন্ধুত্ব বাঙালিকে ডাকতে শিখিয়েছিল “ কাবুলিওয়ালা ও কাবুলিওয়ালা।”
‘অন্য আফগান’
এই আফগানীদের ঝুলিতে কিসমিস বা খোবানি কিছুই নেই। সেখানে পেস্তা বাদামের ঘুষ দিয়ে বরং ‘ক্ষুব্ধ লুব্ধ হৃদয় অধিকার করা নিষিদ্ধ’। বরং সেখানে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি গুঁড়িয়ে সেই ধুলোতে এক নিকৃষ্ট উল্লাস ভেসে আসে। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। ‘ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ আফগানিস্তান’- এই নামাবলীর মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয় স্বেচ্ছাচার আর একনায়কতন্ত্রের ‘নাজিবুল্লাহ মডেল’। সেটা ১৯৮৫-র মাঝামাঝি। ক্ষমতার দখল ঘিরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তখন অবিশ্বাস আর বিশ্বাসঘাতকতার চোরাপথে মধ্য এশিয়ার ঝুরঝুরে বালিতে দাগ কাটতে শুরু করে দিয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরানে তখন হাফিজুল্লাহ আমিনে বাড়বাড়ন্ত। কিছুটা লোপ্রোফাইল আমলা হিসেবে নাজিবুল্লাহ রাষ্ট্রদূত হয়ে গেলেন ইরানে। এরপর একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে আফগানিস্তান জুড়ে। সেই ঘটনার রিমোট যেন মনে হয় কখনো ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে আবার কখনো বা সেটি কন্ট্রোল হয়েছে মার্কিন মুলুক থেকে। নাজিবুল্লাহের চরম পরিণতি বোধহয় আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু ‘কেজিবি বনাম খাদ (KHAD)’-র নেপথ্য ও নৃশংস লড়াই নাজিবুল্লাহ বা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বৃহৎ পরিসরে সেই আলোচনা বোধহয় কম-ই হয়েছে। আসলে হাল আমলে অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে কাবুল, তালিবান ইত্যাদি শব্দগুলো মিডিয়াতে যেভাবে বোমাবর্ষণ করে চলেছে তার উৎস সন্ধান করতে হলে কিছুটা পিছন ফিরে তাকাতেই হয় ।
এই প্রবন্ধের অভীষ্ট হল, বর্তমান আফগান পরিস্থিতিকে কিছুটা “মিডিয়া আখ্যান-র প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করা। আর সেই কর্মকারকীয় পথে নাজিবুল্লাহ অথবা হামিদ কারজাই-র নীতির উল্লেখ করা অবশ্যই প্রয়োজন ।
আসলে ২০২১ এর আগেও তালিবান, কাবুল আক্রমণ করেছে; দখল করেছে। ১৯৯৬র সেপ্টেম্বরে তালিবানরা নাজিবুল্লাহকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। মনে রাখতে হবে তালিবানরা নাজিবুল্লাহকে ‘জাতিসঙ্ঘের’ হেফাজত থেকে অপরহণ করেছিল। নৃশংস অত্যাচার এবং হত্যার পর মৃতদেহ টেনে নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে ট্র্যাফিক লাইটের খুঁটি থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা কি শুধুই জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টির কৌশল নাকি নতুন যুগের ঘোষণার একটি ব্যতিক্রমী জঙ্গি প্রয়াস? কেননা ‘তালিবান’ একটি সামরিক সংগঠন কিংবা ইসলামপন্থী উগ্রধর্মীয় ( মৌলবাদ) চিন্তাধারা। এর পাশাপাশি তালিবান একটি রাজনৈতিক আন্দোলনও বটে।
আফগানিস্তান এবং তার রাজনৈতিক পটভূমি ইত্যাদি প্রভৃতির আলোচনায় আমরা উল্লেখ করেছি ‘মিডিয়া’ শব্দবন্ধটিকে। এখন সেই পরিসরে একটি সম্পর্কিত দিক হল আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক – পররাষ্ট্রীয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি কীভাবে মিডিয়াতে প্রকাশিত হচ্ছে। “Dealings with the Taliban: India’s Strategy in Afghanistan after U.S Withdrawal” – শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০২০ তে। রুদ্র চৌধুরি এবং শ্রেয়া সসিন্ধ্রে ভারতের বৈদেশিক নীতির নিরিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফর কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনার কিছু নির্যাস তুলে বিশ্লেষণ করেছেন। চৌধুরির বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছিল যে তালিবানদের পুনর্মিলন সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসন ভারতকে আশ্বস্ত করে। সম্ভবত: এখান থেকে একটি নতুন কূটনৈতিক ব্যস্ততা দেখা গেল নয়া দিল্লির সাউথ ব্লক অফিস থেকে। সীমান্ত সংলগ্ন এই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে তৈরি হল ‘প্রশমন কৌশল’ । এর বেশ কিছু দিন আগে ২০০৮-র জানুয়ারিতে ‘United State Institute of Peace’ সংগঠনের পত্রিকায় একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হল। ‘Media and conflict – Afghanistan as a relative success story” – শীর্ষক প্রবন্ধে মিডিয়া-বিশেষজ্ঞের প্যানেল উপস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু দ্বান্দ্বিকতা তুলে ধরা হয়েছে । যার কেন্দ্রে রয়েছে তালিবান পরবর্তী আফগানিস্তানে মিডিয়ার তুলনামূলক অংশগ্রহণ এবং উন্নয়ন।
মিডিয়া সম্পর্কিত এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রতিবন্ধকতার তালিকাটি খুব দীর্ঘ। যেমন ২০০৪ থেকে ২০০৮ সময়ে আফগানিস্তান জুড়ে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাব, চূড়ান্ত কঠিন কঠোর এক ভৌগোলিক পরিসর , সে রকমভাবে কোন মিডিয়া আউটলেট গড়ে না ওঠা, সর্বোপরি একটি ধর্মীয়, মৌলবাদী, রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারার মধ্যে মহিলা-স্বরকে সম্পূর্ণভাবে দমিয়ে রাখার গোঁড়া মানসিকতা-এর কোনটিই ‘freedom of speech and expression’ এর অনুকূল নয়। কিন্ত আফগানী মিডিয়ার উন্নয়ন ঘটেছিল। সেই কারণে কাবুলে ঘটে যাওয়া চলতি বছরের জুলাই- অগস্ট জুড়ে প্রতি মুহূর্তের আপডেট আছড়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। ১৫ ই অগাস্ট কাবুলে তালিবান বাহিনীর রাস্তা জুড়ে সমরসজ্জা কিংবা বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আশরফ গনির সঙ্গে আলোচনা অথবা বিমানের ডানায়, চাকায় মনুষ্যত্বের পদলেহন এবং সবশেষে কাবুল বিমান বন্দরে আত্মঘাতী বোমা হানায় শয়েশয়ে দলা পাকানো দেহখন্ড- আমাদের সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা জোড়া এই সব খবরগুলি আমরা পেয়েছি হামিদ কারজাইয়ের দীর্ঘ ১৪ বছরের একটি প্রগতিশীল শাসনকাল বজায় থাকার জন্য। তালিবান পরবর্তী সময়ে কারজাই প্রশাসন , স্থানীয় স্তরে গণমাধ্যমের বিস্তারে নজর দিলেন। বিশেষ করে রেডিও সম্প্রচার বলা যেতে পারে ‘কমিউনিটি রেডিওর’ একটি মডেল, এই সময়ে আফগানিস্তানে তথ্য প্রচারে একটা বড় পরিবর্তন এনে দিল। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হল তথ্য আদান প্রদানের সহযোগিতা করার জন্য। পাশাপাশি যুক্ত হলো রাষ্ট্রীয় স্তরে যোগাযোগ সংক্রান্ত একটি বহুমুখী আন্তঃক্ষমতা বাড়ানোর সদর্থক প্রয়াস। তা নাহলে , জাতি-জঙ্গি-প্রকৃতি-মৌলবাদ এবং অর্থনীতির বিষয় সম্পর্কিত বহুমাত্রিক দ্বন্দ্বে দীর্ণ সমাজ ব্যবস্থায়– মিডিয়ার আধিপত্য এক প্রকার অসম্ভব ছিল।
চলতি বছরে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রীয় ঘটনাবলী মিডিয়া ন্যারেটিভের ভিত্তিতে আলোচনার আগে , সম্পর্কিত পরিসরটি আরও সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। ২৫ থেকে ২৮ শে অগস্ট ২০২১- প্রথম সারির দৈনিকগুলিতে তাকালে, একটি ছবি বারবার চোখে পড়বে- তালিবানি ফতোয়া এবং মৌলবাদী অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আফগান মহিলাদের সংগঠিত ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। এই ঘটনাটি কিন্তু একদিনে সম্ভব হয়নি। স্থানীয় মিডিয়া (Local Media) গুলিতে মানুষের উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ তথ্য আদান প্রদানে একটা নতুন ‘প্রযুক্তি’ আনতে পেরেছে। কারণ আফগান নাগরিকরা এ কথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, মিডিয়া শুধুমাত্র বাস্তব তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যম নয়, নাগরিক সনদ দাবি করারও প্ল্যাটফর্ম।
২০০৮ থেকে ২০১৪’র সময়কালে, অর্থাৎ তালিবান শাসনের পতনের পর, দীর্ঘদিনের নিপীড়ন এবং গৃহযুদ্ধে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ধ্বস্ত আফগানিস্তানে পরিবর্তনের নতুন কাঠামো এনে দিল মিডিয়া। প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং নিরক্ষরতায় ডুবে থাকা একটি দেশের গণমাধ্যমের উন্নয়নের জন্য মনোনিবেশ করা হলো ; রেডিও স্টেশনগুলিতে। দুর্গম, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেল রেডিও সিগন্যাল, যা সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের পক্ষে সম্ভব ছিল না। United States Institute of Peace-র প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, “…..consequently, radio was able to serve the people’s need…Increased international broadcasting of post conflict Afghanistan also nurtured the radio culture….”
সেখান থেকে আবার দেওয়াল লেখা শুরু হল যে, ” You have no right to complain!!!” সেটা চলতি বছরের জুলাই-অগস্ট। এই সময়ে কাবুল জুড়ে একের পর এক যে সমস্ত ধ্বংসাত্মক খন্ডচিত্র মিডিয়াতে উঠে এসেছে- সেগুলি আর যাইহোক সভ্যতা, মানবিকতা, সামাজিক ন্যায় কিংবা রাজনৈতিক কৌশলকে প্রকাশ করে না। ২০২১-এ আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সির পাশাপাশি যথেষ্ট সক্রিয় থেকেছে Radio Television Afghanistan (RTA), বিভিন্ন মাল্টি চ্যানেল মিডিয়া গ্রুপ এবং তার সাথে বেসরকারি FM চ্যানেল। যতটা সম্ভব পেরেছে তারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে তথ্য আদান-প্রদান করেছে। মনে রাখতে হবে, নিরক্ষরতা, কঠিন ভূখণ্ড এবং বিদ্যুতের অস্তিত্বহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে বর্তমান আফগানিস্তান। সেখানে, Afriana Television Network, Moby Group, Saba Media Organization এবং Noor Television Network -দারী, পশতু বা ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচার করে গিয়েছে। এই সমস্ত স্যাটেলাইট সংযোজিত সম্প্রচার ব্যবস্থার মূলে অনেক অবদান রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির। ২০২১-এ এসে যদি আফগানিস্তানের মিডিয়া ইকোলজিকে ব্যাখ্যা করা যায়, সেখানে দেখা যাবে, তিনটি মূল অনুঘটক যথেষ্ট সক্রিয় । প্রথমটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মাল্টি চ্যানেল সম্প্রচার, দ্বিতীয়টি উল্লেখযোগ্য ভাবে মোবাইল টাওয়ারের স্থাপন এবং সবশেষে কমিউনিটি রেডিওর সুশৃঙ্খল ব্যাপ্তি। জ্ঞাপন সংক্রান্ত এই ত্রয়ী রসায়নকে সামনে রেখে প্রবন্ধের পরবর্তী অধ্যায়ে জুলাই-অগস্ট জুড়ে আফগানিস্তানের ঘটনাবলী ভারতীয় মিডিয়ার ‘Media Scape’ দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তালিবানের ক্রমাগত এগিয়ে আসার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছিল অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকেই। কিছুটা কাকতালীয় ভাবেই ১৫ই অগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন এলো ক্লাইম্যাক্স। তবে যেরকম ভাবা গিয়েছিল ততটা জঙ্গি-সংঘর্ষ হয়নি কাবুল দখলের প্রচেষ্টায়। দুপুর থেকে মিডিয়ায় উঠে এলো তালিবানি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির আলোচনার ছবি। এই পর্যায়ে কাবুল রক্তস্নাত হয়নি। মিডিয়ার ব্যাখ্যায় এটি একটি তালিবানি ‘Peer strategy’ . মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের ভাবমূর্তিকে কিছুটা মেরামত করে নেওয়া।
তালিবানদের কাবুল দখলের পর অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় নাগরিকদের মধ্যে বাড়ছিল আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর মরিয়া চেষ্টা। তবে দেশের প্রশাসনিক শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা, খানিকটা ক্ষমতার বলেই প্রথমেই দেশ ছেড়ে পালালেন। দেশের অন্যতম সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা সংস্করণ যা লিখল, তার খানিক বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, প্রেসিডেন্ট গনি নগদ বোঝাই উড়োজাহাজে দেশ ছাড়লেন; এর সাথে কাবুল থেকে দিল্লি অভিমুখে ছাড়া শেষ ফ্লাইটে দিল্লি এসে পৌঁছলেন কাবুলের National Directorate of Security এর অধিকর্তা। তার বিবৃতি “আসতেই হলো, না হলে ওরা মেরেই দিতো”
এই ভয়ভীতি নিয়েই কেটে গেল দুদিন। খবরের কাগজ, বৈদ্যুতিন মাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম- সব কিছুতেই উঠে এলো ১৯৯৬-২০০২ এর তালিবানি শাসনের খণ্ড চিত্র।
এইসময় দু’রকমের ন্যারেটিভের মধ্যে লড়াই চললো সমস্ত খবরের কাগজের পাতায়। কেউ বললো, তালিবানের পরিবর্তন নেই, গত দু’দশক আগেও যা ছিল, আজ ও তাই থাকবে। কারণ সারিয়া আইন তো পরিবর্তন হয়নি! তাহলে মতাবলম্বীরা কেনই বা পরিবর্তিত হবে? পাশাপাশি একথাও আলোচনায় উঠে এলো যে, যুগ বদলেছে, সময় বদলেছে, তালিবান ও বদলাবে। ‘তালিবানি ২.০’ এই শব্দবন্ধ তৈরি হলো মিডিয়াতেই। এই শব্দবন্ধ দাবি করলো, ‘এ তালিবান, সে তালিবান নয়’।
রাজনৈতিক এবং জঙ্গি সমরাস্ত্রে সজ্জিত তালিবানি ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র কাবুলকে ঘিরে একটি নমনীয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব তুলে আনলো। আমরা যারা তপন সিনহা এবং রবি ঠাকুরের মাধ্যমেই কাবুলকে চিনেছি, আমরা যারা রহমতকে ভালোবেসেছি, সেই বাঙালির আপামর ইমোশন-কে উস্কে দিলো, আনন্দবাজারের খবর , “তালিবান মানেই জঙ্গি নয়”। আমরা যেন এটাই শুনতে চাইছিলাম। বাংলা খবরের চ্যানেলে সম্প্রচারিত হলো বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতার কাবুলিওয়ালাদের নিয়ে, তাদের বাংলার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। এরা ভারতীয়, আরো বেশি করে বাঙালি। তাই গৃহযুদ্ধে জীর্ণ আফগানিস্তানে তাদের আর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
তালিবানদের কাবুল দখল সংক্রান্ত খবরের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিংহভাগ মিডিয়াই এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তাদের দৃষ্টিকোণ দিয়ে আলোচনায় তুলে এনেছেন। কিন্তু আফগান কী ভাবছে, সেই নিয়ে প্রথম লিখলো ‘দ্যা হিন্দু’। পত্রিকাটি বোঝালো ভারত বা গোটা বিশ্ব যতটা ‘ভয়ঙ্কর’ শব্দে তালিবানকে বর্ণনা করছে, সামগ্রিকভাবে কাবুলবাসীরা হয়তো অতটা খারাপ ভাবছে না। বরং তাদের মধ্যে উৎসাহের আধিক্যই বেশি ছিল, অন্তত প্রথম সপ্তাহে।
ধীরে ধীরে পটচিত্রে কালির আঁচড় অন্যদিকে মোড় নিলো। তালিবান ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে মধ্য-এশিয়ার বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল নিলো। কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব চলে এলো আবার সামনের সারিতে। ২১ সে অগাস্ট আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল, “কাশ্মীরে তালিবানি মদত চায় জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল”। খবরে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলো যে, হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা সালাউদ্দিনের অডিও বার্তা প্রকাশ পেয়েছে, যাতে বলা হয়েছে কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালিবানরা পূর্ণ মদত দেবে।
এর ঠিক তিন দিন আগে, ১৮ই অগাস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো; “বিশ্বাস নেই মারবো না আশ্বাসেও”। সেই একই দিনে দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখলো “Taliban gained ‘fair amount’ of US defence equipment: White House”. অর্থাৎ যে কোনো সংবাদ পত্রের সেই দিনের ন্যারেটিভ ডিসকোর্স ছিল একটাই, ‘ভয়’। এর মধ্যে আরেকটি দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরতে শুরু করলো, আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। দেশ ছেড়ে যখন সেই দেশের মানুষরাই প্রাণপণে বেরিয়ে আসতে চাইছেন, যখন প্লেন থেকে ঝুলন্ত মানুষের পরে যাওয়ার ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, নিছকই কতগুলো বিন্দুতে পরিণত হয়েছে মানুষের প্রাণ, তখন কর্মসূত্রে সেই দেশে থাকা স্বজনের প্রতি চিন্তা হয় বৈকি!
অন্যদিকে কিছুটা ব্যতিক্রমী প্রতিরোধ গড়ে তুললো দেশের উত্তর-মধ্য প্রান্তের পঞ্জশির প্রদেশ। শেষ অবধি লড়ে যাওয়ার অদম্য জেদের গল্প। পঞ্জশির নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি মানবিক মুখটি উঠে এলো বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। “খাবার বন্ধ, পঞ্জশির কি পতনের মুখে?” – সেপ্টেম্বর ৬ তারিখে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন যেন বাঙালীকে একাত্ম করে দিলো সুদূর আফগানে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করা, আসাবুল্লাহ সালেদ বা আহমেদ মাসুদদের সাথে।
কাবুল বিমান বন্দর ঘিরে পরেরপর বিস্ফোরণ চলতে থাকে। অগাস্ট মাসেই নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০০ এর বেশি। এর সাথে যুক্ত হতে থাকলো, ইন্দো-পাক সম্পর্ক নিয়ে নিত্য নতুন আখ্যান। ৩রা সেপ্টেম্বর BBC নিজেদের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে উল্লেখ করলো, “What rise of Taliban means for Pakistan?” যাতে উঠে এলো ঠিক কীভাবে পাকিস্তান এবং তালিবানি শক্তি নিজেদের মধ্যে শক্তির বিনিময় করতে পারে।
এই তালিবান-পাকযোগ সূত্র নিয়ে সেপ্টেম্বর ২ তারিখে দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মুম্বাই এডিশনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, “The real winner of the Afghan war is not Taliban, it’s Pakistan” . হয়তো বা ২৬/১১ স্মৃতি থেকেই এতটা সরাসরি দাগিয়ে দেয়ার কৌশল। কাকতালীয় এটাই যে, যে ৯/১১ সারা বিশ্বের ভাবনায়-চিন্তনে ‘ইসলামোফোবিয়া’ বপন করেছিল, সেই ৯/১১ তেই ২০ বছর পর আবার আফগানিস্তানে তালিবানি পতাকা উত্তোলিত হলো।
তালিবান গোষ্ঠীর সঙ্গে গোঁড়াই সলামিক ফতোয়া জারি-একপ্রকার সমার্থক। যা, ২০০২ সাল অবধি সকল নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এনেছিল। ‘তালিবান ২.০’ কিসের কমই কিছু আবার ফিরিয়ে আনবে? আফগানিস্তানে নারীরা দু- দশকে যেটুকু স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তা-ও কি আবার চলে যাবে? আবার আসবে বোরখা? আবার আসবে লিঙ্গ বৈষম্য? না, কেউ -ই সদুত্তর দিতে পারলো না। ‘তালিবান’ , ‘ফতোয়া’, যে শব্দগুলো পৃথিবী প্রায় ভুলতে বসেছিল, দু-দশক পর আবার সেই শব্দগুলো উসকানি পেলো তালিবানদের পুনরায় কাবুল দখলের মধ্যে দিয়ে। নারী-বিদ্বেষ, নারী-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ যে, কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা বিচার্য বিষয় হয়ে উঠলো সংবাদ মাধ্যমগুলিতে। ২৪শে অগস্ট হিন্দুস্তান টাইমসের পাতায় উঠে এলো “Can the Taliban be trusted with women’s rights?” শীর্ষক প্রবন্ধ। যার মূল উপসংহার হলো, ” Many Afghan women and women’s rights activists globally fear a repeat of such policies after the group toppled the US-backed government last month”. এর আগে যখন তালিবানরা ক্ষমতায় ছিল, সেই সময় গৃহীত নারী-স্বাধীনতা বিরোধি নীতির যে পুনরাবৃত্তি হবে না, তা নিয়ে শুধু আফগানিস্তানের মহিলারাই নয়, বিশ্বের নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরাও যথেষ্ট সন্দিহান। নারী স্বাধীনতা লঙ্ঘন বা সম্পর্কিত ফতোয়া জারি-এসব নিয়ে উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরণের রিপোর্টিং চোখে পড়ার মতো। ১৭ই অগস্ট নিউ দিল্লি থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র দ্যা হিন্দুস্তান টাইমস লিখলো “Taliban promises Women’s rights and security under Islamic rule”. অর্থাৎ, তালিবান দাবি করেছে তারা মহিলাদের সর্বোৎকৃষ্ট সুরক্ষা প্রদান করবে, পাশাপাশি দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া মুম্বাই এডিশন কিছুটা সুর নরম করে রিপোর্টিং করলো , “Taliban vow to respect women’s rights within Sharia, and to seek no vengeance.” দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সংবাদে এই যে তারতম্য তা কী সেই অঞ্চলের নারীর অবস্থান এবং নারী সুরক্ষাকেই চিহ্নিত করে? কেননা, NCRB রিপোর্টে দেখা গেছে ভারতে দিল্লী রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও, নারীদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি অসুরক্ষিত।
এই ডামাডোলের মধ্যেই আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশে ফিরলেন। দেশে ফিরে এসে এক বাঙালি শিক্ষক, কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে বললেন, , “তালিবান আশায় তিনি খুশি-ই”। আনন্দবাজার পত্রিকা ২৪শে অগস্ট এই বিষয়ক প্রবন্ধে লিখলো, “তালিবানি নৃশংসতার কোনো উদাহরণ তার চোখে পড়েনি”, বরং তার মনে হয়েছে, সারিয়া আইন মানুষকে ঠকায় না; হ্যাঁ ! কেটে হয়তো ফেলতে পারে, কিন্তু ‘ঠকায়’ না।
পাশাপাশি আর একটি ন্যারেটিভ প্রকাশিত এল আমেরিকাকে ঘিরে। দীর্ঘদিন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাহায্যে হোয়াইট হাউস আফগান প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। কথা ছিল, ৩০শে অগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী ফিরে যাবে ওয়াশিংটনে। সেই বাইডেন প্রশাসনের কাছে আফগানিস্তান ঘিরে এই তালিবানি কাবুল আক্রমণের কোনো প্রাক-সংবাদ ছিল না-তা যেন কোনোভাবেই বোধগম্য হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাঠগড়ায় বাইডেন প্রশাসনের কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছিলো। আবার সেই আমেরিকাকে নিয়েই মানবিক দিক মিডিয়াতে উঠে এলো কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর। ২৬শে অগস্ট আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হলো মার্কিন সেনার একটি মানবিক মুহূর্ত। সমরাস্ত্রে সজ্জিত সেই মার্কিন সেনা পরম মমতায় কয়েক মাসের এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ যেন এক অন্য কাবুল! সন্তান বাৎসল্যের এই ছবির ক্যাপশনে লেখা হলো, ” মায়ের আসতে দেরি, ততক্ষণ আফগান শিশুকে সামলাচ্ছেন মার্কিন সেনা”। অলঙ্কার শাস্ত্র বা রেটোরিক দিয়ে কথাটির বিশ্লেষণ করলে, প্রতিভাত হয় যে হাতের শিশুটি-ই হলো আফগানিস্তান, এবং এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই তাকে সামলাতে পারে।
তালিবানি শাসন ঘিরে যে ভয় ভারতের প্রায় সমস্ত বড়-মাঝারি সংবাদপত্র তুলে ধরছিল, বাংলা যেন সেখানে একটু ব্যতিক্রমী। ভয় নয় বরং সমব্যথা উঠে এসেছে বারবার। বাংলার মানুষ বোঝে ‘দেশভাগের’ জ্বালা, রাতারাতি নিজের ভিটে-মাটি ছেড়ে বেরিয়ে আসার দুঃখ এখনো পূর্ব-প্রজন্মের মুখেমুখে ঘোরে। এই ক্ষত ভারতের বাংলা ও পাঞ্জাব রন্ধ্রে রন্ধ্রে টের পায়। তাই জন্যই হয়তো আনন্দবাজারের মতো পত্রিকা ২৪ সে অগস্ট থেকে প্রায়শই সম্পাদকীয় কলামে তুলে এনেছে সেই মর্মস্পর্শী দিকগুলি। সম্পাদকীয় তে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তো আছেই , তারচেয়ে ও বেশি আছে আবেগ।
আফগানিস্তান, এবং রাজধানী কাবুলে তালিবান নেতৃত্বের প্রবেশ এবং তাদের উল্লাস- সবকিছুই অসমাপ্ত থেকে যায়, সোশ্যাল সাইট এবং তার থেকে উঠে আসা ন্যারেটিভের বিশ্লেষণ ছাড়া। একদিকে প্রচলিত মিডিয়ায় মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে প্যানিক induce করার তত্ত্ব, অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে নির্মম রসিকতা, দুটি বিষয়ই চলতে থাকে পাশাপাশি।
১৬ই অগস্টের শুরুতেই যখন সারাকরিমি-র মতো আফগান মহিলা চিত্র পরিচালক সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “ভগ্ন চিত্তে ও গভীর আশা নিয়ে লিখছি, আমার দেশের সুন্দর মানুষদের, বিশেষত চিত্র নির্মাতাদের বাঁচাতে আমার সঙ্গে যোগ দিন”। সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে অমানবিক ‘মিম’ আমাদের নাড়া দেয়। যেমন একটি মিমে বলা হলো, মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকায় বারোশো বর্গ গজের ফার্ম হাউস চাই? বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা, তারপর লেখা “চলে যান কাবুল, যাওয়ার টিকিট কাটুন, ফেরার টিকিট কাটার দরকার নেই”….হাসির ইমোজি।..নির্মম রসিকতা।
নির্দিষ্ট কয়েকটি সংবাদপত্রের ক্ষেত্র সমীক্ষার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, তালিবানি শক্তিকে ধর্মীয় মৌলবাদ, সামরিক শক্তি অথবা জঙ্গি ক্রিয়াকলাপের মদতদাতা হিসাবে বর্ণনা করা হলেও, এর রাজনৈতিক শক্তির দিকটি যথেষ্ট অবহেলিত। ঠিক হোক বা ভুল তালিবানি রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পর্কিত আলোচনা আবারও প্রয়োজন। ১৯৮৫-২০১২; মোটামুটি ত্রিশ বছরের এই সময়কালে মধ্য-এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই তালিবানি শক্তিকে কেন্দ্র করে। মিডিয়া জনসাধারণকে শিক্ষিত করে। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা, আরো স্পষ্ট করে বললে যেখানে পররাষ্ট্রীয় এবং বৈদেশিক নীতি জড়িয়ে সেই সমস্ত বিষয়ে মিডিয়ার কাজ ‘পাবলিক ওপিনিয়ন’ তৈরি করা। রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদ এবং তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করাই মিডিয়ার চরিত্র। কাবুলের সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া এই জঙ্গি-রাজনীতির প্রেক্ষাপট ঘিরে এই প্রশ্ন তোলা বড্ড দরকার ছিল। বিশেষত বাংলা দৈনিকগুলি- কেননা প্রবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম সবকিছু বাদ দিয়ে বাঙালির কাছে আফগানিস্তানের পরিচয়, ‘রহমতের জোব্বা’। যার মধ্যে হরেক রকম সাংস্কৃতিক প্রকরণ রয়েছে। সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের আড়ালে যেন ঢাকনা পরে যায়, সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বৌ’-ঘটনাটি। দুটি ঘটনাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাবুল যেমন একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পাশাপাশি উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী একটি ভূখণ্ডও বটে। মিডিয়ার বোধকরি যুগপৎ দুটি দিকের বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে নতুন কিছু ন্যারেটিভ তুলে আনা উচিত। কেননা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে আফগানিস্তান যে একটি স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে রয়েছে- সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
[লেখক –
ডঃ রাজেশ দাস – বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান
সুবিনীতা পাল – কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিমূলক সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা]
Posted in: ARTICLE, September 2021 - Cover Story