আত্মজ ও একটি অভিমান : লুনা রাহনুমা
সন্ধ্যা নামার ঠিক মুখে বিন্তি সেলাই ঘরের ছোকরা কারিগরটি এসেছে আমার শার্টের মাপ নিতে। আমি বিছানা বালিশ ঝেড়ে আরাম করে একটা মুভি দেখার আয়োজন করছিলাম এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে জানান দিলো তার আগমন। যদিও ওদের খাতায় আমার শরীরের সব রকম মাপ জোখ লেখা আছে। তবুও ছয়মাস অন্তর অফিসের ইউনিফর্ম বানানোর সময় প্রতিবার ছোকরাটি এসে নতুন করে মাপ নিয়ে যায়। ছয় মাসে মানুষের স্বাস্থ্যের খুব বেশি উঠা নামা হতে দেখিনি আমি। তবুও ওদের এটাই নিয়ম।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমি ঘাড় গুঁজো করে থাকি। ছেলেটি মুখে উচ্চারণ করে আর কাগজের উপরে লেখে, কাঁধ ১৭.৪। দুই হাত পাখির ডানার মতো মেলে ধরলাম, লিখলো, বুক ৩৭.৮। আমি ওর কথা মতো বুক টান করে সোজা হয়ে দাঁড়াই, ও লিখলো, লম্বা ২৬.২। হাতার লম্বা, মুহুরী, কলারের মাপ নিতে নিতে ছেলেটি আমার সাথে অনেক রকমের গল্প করে। বেশিরভাগই আমার অফিস আর কলিগদের প্রসঙ্গে। আমাদের অফিসের সবার ইউনিফর্ম বানানোর কন্ট্রাক্ট দেয়া আছে এই বিন্তি সেলাই ঘরকে। সেই হিসেবে কানাই ছোকরাটা আমাদের সবার বাড়ি বাড়ি এসে শার্ট, প্যান্ট, আর কোটের মাপ নেয়। ওর কাছে আমাদের অফিসের সবার লেটেষ্ট খবরাখবর পাওয়া যায়। মল্লিক সাহেব যে গতমাসে স্যারের স্ত্রীকে একটা লাল আর সাদা জামদানি শাড়ি উপহার দিয়ে পটিয়ে ফেলেছে, এইকথা আমি সহ মেসের সবাই জানে। স্যারের স্ত্রীর অনুরোধেই তো মল্লিক সাহেবকে প্রমোশন দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার করে পাঠানো হয়েছে। না হলে মল্লিকের আগে শ্রীরাম দাস আর ফরহাদ আহমেদ সেই কবে থেকে অপেক্ষা করে আছে প্রমোশনের জন্য! সময় আর সুযোগ সবার কাছে একসাথে আসে না, সেতো জানা কথাই। আমার কলিগ তারিক এবং মঞ্জুর একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকে। কানাইয়ের কাছে জেনেছি শুক্রবার আর বুধবার রাতে তাদের বাড়িতে প্রস্টিটিউট আসে। শুনেছি তাদের একজনই বাঁধা মেয়েমানুষ আছে। একঘন্টা করে পরপর দুই জনের সাথে কাজ করে আবার আলগোছে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। এইসব চমকপ্রদ তথ্যের জন্য কানাইকে সবাই হাতে রাখে, চারপাশের সত্য ঘটনাগুলো জেনে নিজেকে বাস্তবের সাথে চলমান রাখে। গায়ের গেঞ্জি ঠিকঠাক করে চেয়ারে বসতে বসতে বলি, শুনলাম ম্যানেজার স্যারের পরিবার এসেছে এখানে, বেড়াতে, দেখেছিস নাকি?
মাপের ফিতা গলায় ঝুলিয়ে হাতের কাগজে আমার নামটি লিখতে লিখতে কানাই বলে, জি স্যার, দেখছি। হের বৌ আর দুইটা পোলা আইছে লগে।
কয়দিন থাকবে?
তা কইতে পারি না। নরমালি তো স্কুলে যতদিন ছুটি থাকে ততদিনই থাকে পরিবারের লোকজন।
তা ঠিক।
মাপ নেয়া শেষ স্যার। তাইলে আমি যাই। আরো চাইরজনের শার্ট আর প্যান্টের মাপ নিতে অইবো। আপনের শার্ট তিনদিন পরে আইস্যা দিয়া যামু আমি।
চলে যাবার সময় কানাইয়ের হাতে আমি একশত টাকার দুটো নোট গুঁজে দিলাম। মাঝেসাঝে ছোকরাটা আমার অনেক কাজ করে দেয়। দুয়েকদিনের জন্য কোথাও গেলে আমার মেসের চাবিটি রেখে যাই ওর কাছে। নরম বিছানায় আরাম করে কয়েকটি দিন ঘুমানোর সুযোগ পায় তখন সে। আমার একার জীবনে, এই শহরে ওর সাথেই কথা বলা হয় বেশি। অফিসের কলিগরা আমাকে নিয়ে অনেক ফিসফাস করে জানি। প্রকাশ্যেও বলেছে অনেকে, কী সুমন সাহেব, আর কতদিন এমন একলা রাজ্যের রাজা হয়ে ঠকবেন? বিয়ে থা করার সময় তো শেষ হলো বলে। এরপর কিন্তু বিয়ে করলেও কোন ফল হবে না ভাই। লাগলে আমাদেরকে বলবেন, বিয়ের পাত্রী অথবা নটি স্কুলের ছাত্রী, দুটোরই বন্দোবস্ত করা যাবে।
তাদের কথার অর্থ আমি বুঝি। তবুও উত্তর করি না। চুপচাপ শুনে যাই শুধু। আমাদের সমাজে মানুষদের অনেক রকম বদ অভ্যাসের মতোই অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যাসটি বাড়াবাড়ি রকমের অপছন্দ করি আমি। স্বভাবে নিরীহ মানুষ হলেও আমার ভেতরের ঝিমিয়ে থাকা বদরাগী সত্তাটির অস্তিত্ব টের পেয়েছি কয়েকবার। আর কেউ সেটি জেনে যাক, তা আমি চাই না। তাই নিজের চারপাশে একটা বোবা আর কালা দুর্বোধ্য বলয় গড়ে রেখেছি সচেতনভাবে। পারতপক্ষে কারো সাত অথবা পাঁচ এর ভেতর যাই না। তবুও কানাইয়ের কাছে শুনেছি, এখানে সবাই আমাকে নিয়ে কানাকানি করে। পুরুষমানুষদের যখন প্রয়োজন হয় তখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কথা বলে, আবার ডেস্কে বসে মিনমিন করে অন্যদের কুৎসা আলাপ করতেও বেশ পারঙ্গম এরা।
নিজের কথা বলতে পারি না সঠিক করে। অভিমান কিনা জানি না। কয়েক বছর আগে ট্রাভেল এজেন্সির চাকরিটি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার চেয়ে নিয়েছিলাম আমি নিজেই। সবাই যেখানে রাজধানীমুখী হয়, ঢাকায় ট্রান্সফার নেয়ার জন্য ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজারকে ধরে নানারকম ফন্দি ফিকির করে, সেখানে আমি নিজ মুখে বলে, তারপর দরখাস্ত লিখে আমার ঢাকা ব্রাঞ্চের চাকরিটি এখানে সরিয়ে এনেছি। পরিচিত সবাইকে ঢাকায় ফেলে রেখে আমি সরে এসেছি সাগরের কাছাকাছি। না, সমুদ্র আমার খুব প্রিয় সত্যি, কিন্তু সে কারণে এখানে আসা নয়। আসলে একটু নিজের মতো করে থাকতে চেয়েছি। আম্মার অনেক রকম যুক্তি তর্কের উত্তরে শুধু একটিই কথা বলেছিলাম, প্রয়োজনের সময় আমি ছুটে আসবো তিরের মতো, আমাকে দিনেন দিন কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছতে কিচ্ছু আটকাতে পারবে না।
অবশ্য কথার ভেতর ফাঁক থেকে গিয়েছিলো। কী প্রয়োজন, কেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন, বিশেষ কী আয়োজন অথবা বিয়োজনের অপেক্ষায় আমি বসে আছি সেকথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি এই বাক্যে। পরিবারের সাথে বিচ্ছিন্নতা কাটাতে আমার মা অনেক চেষ্টা করেছে। কান্নাকাটি করেছে। বিয়ে থা করে সংসারী হতে বলেছে। আমি সাহস পাইনি। বলেছি, বিয়ে করতে অনেক সাহসের প্রয়োজন হয়। আমার অতো সাহস নেই। বন্ধুরা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু আমি জানি আমার ওসব কোন সমস্যা নেই। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বন্ধু রাহাতের প্রেমিকাকে একবার ক্লাস শেষে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন ঢাকা শহরে। গনগনে চুলোর উপরে তাতানো লোহার কড়াইয়ের মতো উত্তপ্ত শাহবাগের আবহাওয়া মুহূর্তে হিম চাদরে ছেয়ে গিয়েছিলো। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমরা জলদি করে সামনে যে রিকশাটি খালি ছিল, সেটিতেই উঠে বসেছিলাম। গায়ের কাপড় ভিজে যাচ্ছিলো বলে রিক্সায় হুড তুলে দিয়েছিলো হাসিনা। প্লাস্টিকের পর্দার ভেতরে হাসিনার হাত, কোমরের একাংশ, উরু ঘষে যাচ্ছিলো আমাকে। আমি রাহাতের কথা ভেবে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে নষ্ট হতে দিতে চাইনি। কিন্তু বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে হাসিনা খুব জোর করছিলো ওর বাড়িতে একটু বসে যেতে। অন্তত এক কাপ চা? কথা ফেলতে না পেরে ঢুকে গিয়েছিলাম ওদের বাড়ি। অমন বিকেল বেলাতেও যে বাড়িতে কেউ থাকবে না কে জানতো? শুকনো গামছা দিয়ে আমার মাথার চুল মুছে দিতে চেয়েছিলো হাসিনা। আমি নিষেধ করতে পারিনি কেন তাও বলতে পারবো না? কিন্তু বৃষ্টিতে নরম পাপড়ির গলে যাওয়া স্নিগ্দতার সাথে ঝাপসা আলোর অমন বিকেলে অতটা কাছে আসা হাসিনাকে তখন বন্ধুর প্রেমিকা বলে মনেই হচ্ছিলো না আমার। সম্পর্কহীন মুক্ত মানুষ আমরা দুইজন তখন। আদম ও হওয়ার বংশধর। একজন পুরুষ। একজন নারী। এরচেয়ে বেশি আর কোন পরিচয়ের প্রয়োজন বোধ করিনি কেউ। হাসিনার গলিত মাখনের মতো নরম শরীর আমাকে গভীর জলে তলিয়ে যাবার মতো করে টেনে নিয়েছিল ওর ভেতরে। এরপর আরো কয়েকদিন একান্তে দেখা হয়েছিল আমাদের। ঘটেছে কাউকে না জানানো গোপন শারীরিক মিলন। বছরখানেক পর রাহাতের সাথে বিয়ে হয়ে গেলে পরে হাসিনা আমাকে আর ওর কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। আমিও জোর করিনি। ওই কয়েকবারের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস জন্মেছিলো আমার। নিশ্চিতভাবে জেনেছিলাম, আমি সক্ষম পুরুষ। এই জানাটুকুর জন্য আজো ধন্যবাদ দেই হাসিনাকে।
ছুটির দিনে আমার বিশেষ কিছু করার থাকে না। নেটফ্লিক্সে মুভি দেখি, ইউটিউবে গান শুনি অথবা অনলাইনে পিডিএফ গল্পের বই পড়ি। একটা মহিলা এসে দুইবেলা করে ঘরের কাজ করে দিয়ে যায়। আর আমার জন্য রান্না করে আনে তার বাড়ি থেকে। শুধু শুক্রবারদিনই কাজের মহিলার সাথে দেখা হয় আমার। হঠাৎ এক দুই লাইন কথা হয়। বেশিরভাগ সময় কোন কথাই হয় না। আজ কানাই যতক্ষণ ছিল ভালো লাগছিলো। কথা বলার একজন মানুষ ছিল। চলে যাবার পর প্রিপারেশন নিয়ে রাখা সিনেমাটি আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। তিন বছর হলো আমি এখানে এসেছি। এরমধ্যে একবারও ঢাকায় যাইনি। তিন বছরে চারপাশে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। পরিচয়ের পর পরিচিতি বাড়াতে হয় কীভাবে সেটি আমার জানা নেই। আবার যেচে পড়ে অন্যেরা আমার সাথে সখ্যতা গড়তে চাইলে, আমি নিজের ভেতরে কেঁপে উঠি। আমার ভেতরে চুপটি করে লুকিয়ে থাকা কেউ তারস্বরে সতর্ক করে দিতে থাকে আমাকে। ভয় হয়, আমাকে ওরা চিনে ফেলবে। আমার কাপুরুষ মানসিকতাকে লুকিয়ে রাখতে, নিজেকে সবার কাছে থেকে গুটিয়ে রাখতে তৎপর থাকি সারাক্ষণ। তারজন্য অনেক সময় বেশ রূঢ় আচরণ করতে হয় আমাকে। মানুষ ভুল বোঝে হয়তো। কিছু করার নেই। যা ইচ্ছে হয় বুঝুক। হল্লাগোল্লা করে সবার ভেতরে নিজেকে মেলানো সম্ভব হয়নি আমার কোনদিন। আর হয়তো হবেও না। মানুষের মাঝে গেলে, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে তাদের বাবার সাথে হাত ধরে হাঁটতে দেখলে, খেলতে দেখলে আমার ভেতরে সেই ভয়টা ভয়ানক ভাবে নড়ে উঠে। আমি মুষড়ে পড়ি। আমার অন্তরাত্মা পাঁজরের খাঁচার ভেতর দমাদম মাথা ঠুকতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে, কিন্তু বুক থেকে দম বেরিয়ে যায় না। আমি যত জলদি সম্ভব নিজেকে একাকিত্বে বন্দি করে রাখি তাই। আমার পরিবার পছন্দ না। পারিবারিক জীবনে দেখতে সুখী মানুষদেরকে আমার সহ্য হয় না। বাড়ির বাইরে তাদের লোক দেখানো প্রেম, স্নেহের তৈলাক্ত চাকচিক্য দেখা গেলেও, সেসব বাড়ির ভেতরে অন্যরকম চাল চলে, সেকথা আমার ভালো জানা আছে। সন্তানকে “মানুষ” করার প্রচন্ড বাসনায় উন্মত্ত পিতা-মাতাদের নির্লজ্জ লোভকে ঘৃণা করি আমি। বয়সী লোকগুলো যখন জেনে যায়, তাদের এবার নিজেদের নাম কমানোর মোক্ষম উপায় হচ্ছে, অমুকের বাবা, অমুকের মা এই নামে পরিচিত হওয়া, তখন এই বাবা-মায়েরা সন্তানের নামের আলোয় নিজেকে উজ্জ্বল করতে অমানবিক অত্যাচার করে বাচ্চাগুলোর উপর। ইস! বাচ্চারা যদি প্রতিবাদ করতে পারতো? টের পাচ্ছি আমার কপালের ডান পাশে টান পড়ছে। আমি ওসব কথা ভাবতে চাই না আর। মনেপ্রাণে চাইছি এখানে বেড়াতে আসা ম্যানেজার স্যারের ছেলে দুইটি সাথে যেন আমার দেখা হয়ে না যায়।
ছুটির বিকেলটিকে ফলপ্রসূ করার চিন্তায় আমি মহুয়ার পাঠানো চিঠির বাক্সটি খুলে বসলাম। ঠিক করলাম আজ মহুয়াকে চিঠি লিখবো। আপনারা ভাবছেন তো এটা আবার কে? সংসার বিরাগী, পরিবার প্রথা বিদ্বেষী, একাকিত্ব প্রিয় লোকটির মুখে ফুলের নামে নাম একটি মেয়ের নাম? ধীরে ধীরে বলছি। মহুয়ার কথা জানতে পারবেন একটু পরেই।
চাকরির ইন্টারভিউ দিতে মতিঝিলে একটা ব্যাংকের হেড অফিসে গিয়েছিলাম বছর পাঁচেক আগে। তখন লেখাপড়া শেষ করে পুরো দমে টিউশনি করছি আর একটা চাকরি খুঁজছি। ব্যাংকের লাউঞ্জে আরো আটজন প্রার্থীর সাথে বসে আমিও অপেক্ষা করছিলাম আমার ডাকের জন্য। নীল সোফার শেষ মাথায় বসে ছিল সে। গাঢ় নীল সোফার উপর হালকা বেগুনি কামিজের ছোটখাটো মেয়েটি। মিষ্টি মুখটি হাসি হাসি। একমাত্র সে ছাড়া আমাদের সবাইকে দেখে মনে হচ্ছিলো আমরা একটা যুদ্ধক্ষেত্রে বসে আছি, অপেক্ষা করছি সেনাপতির বাঁশির ফুত্কারের জন্য। বাঁশি বাজার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়বো একক যুদ্ধে। শুধু বেগুনি জামার মেয়েটির হাতে একটা গল্পের বই ছিল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো সে কোন কৌতুক বা রম্য লেখা পড়ছে। কিছুক্ষণ পরপর মুখে হাত দিয়ে দুলে দুলে হাসছিলো। আমি আড় চোখে লুকিয়ে মেয়েটাকে দেখছিলাম আর মনে ভাবছিলাম, পাগল মনে হয়। মাথায় সিট্ আছে নাকি? আমাকে ইন্টারভিউতে ডাকার কিছুক্ষণ আগে মেয়েটি এসে আমার পাশে দাঁড়ায়, বলে, বসতে পারি?
মানে?
মানে আপনার পাশে বসতে পারি?
আপনার ইচ্ছে।
আপনার আপত্তি নেই তো?
আশ্চর্য তো। এটা কি আমার বাড়ি যে আমার অনুমতি নিয়ে বসতে হবে?
তা নয়। তবুও, একটা ভদ্রতা আছে না?
বসুন। পড়া শেষ?
কী?
যা পড়ছিলেন। আর পাগলের মতো একাই হাসছিলেন?
ঘাড়ের সাথে ঝোলানো ব্যাগটিতে হাত ছুঁইয়ে বললো, ওহ, সুকুমার রায়ের অবাক জলপান, পড়েছেন?
অবাক জলপান? হা হা হা। পড়েছি। আমারও খুব প্রিয়।
এভাবে প্রিয় বিষয়ের আলোচনা থেকে আলাপ শুরু হয়েছিল আমাদের। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার নাম মহুয়া কেন? উত্তরে ফুলের নামে নামের মেয়েটি হেসে বলেছিলো, কেন, মাতাল হয়ে যাবার ভয় লাগছে মনে? উত্তর দেইনি কিছু। এরপর যখন মোবাইলে কথা হতো সারারাত, নিঃসন্দেহে আমি আমার চারপাশে মিষ্টি একটা গন্ধ পেতাম। সম্ভবত মহুয়া ফুলের ঘ্রান তেমনই হয়। আমাদের দেখা হয়েছে অনেকবার। একসাথে সারাদিন বেড়ানো। ঘন্টার পর ঘন্টা শব্দহীন, কেবল চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকা। লক্ষ্য করছিলাম মহুয়া দিনেদিনে আরো ছোটখাটো হয়ে যাচ্ছিলো। আমার মুঠোতে ওর দুইটি হাতের সবগুলো আঙ্গুল এঁটে যেত স্বাচ্ছন্দে। শুকিয়ে যাবার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেছে, “তোমার বিরহে। তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছো না বলে আমার শরীরে আর মগজে ভয়ানক একটা অসুখ বাসা বেঁধেছে জানো। শুধু তোমার সাথে আমার বিয়ের কাবিন নামায় সাক্ষর করলেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো।“ মহুয়ার কথার জবাব দেইনি আমি কখনো পরিষ্কার করে। এড়িয়ে গিয়েছি সবসময়। কেন বিয়ে করতে পারি না আমি মহুয়াকে সে কথা বলতে পারি না। যদিও জানি, সংসারের যে স্বপ্ন আমার মনের ভেতরে উঁকি দিয়েছে কখনো সখনো, সে সংসারের খুন্তি কড়াই একমাত্র মহুয়ার হাতেই কল্পনা করেছি প্রতিবার। তবু সাহস করে আগাতে পারিনি। বিয়ে করলে মেয়েরা অনেক কিছু পেতে চায়। একটি স্বচ্ছল সংসার চায়। একজন অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের “ভালো” স্বামীকে পাশে চায়। কয়েক বছর যেতে না যেতেই তারা মা হতে চায়। কয়েকটি সুস্থ সন্তান চায়। বিবাহিতা নারী স্বামীকে আদর্শ বাবা হিসেবে দেখতে চায়। আর সব কিছু বাদ দিলেও সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্ক ব্যাপারটি আমার মনে আতঙ্ক ধরায়। তাই আমি মহুয়াকে কিছু বলি না। শুধু বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে মুখে খিল আঁটি। তবুও, মহুয়া অপেক্ষা করে আছে। আমার মৌনতাকে সে সম্মতি মনে করে আমাকেই স্বামী মনে করে বসে আছে। আমার খুব কষ্ট হয় ওর জন্য। আমরা চিঠি লিখি একে অন্যকে নিয়মিত। মহুয়া এখন নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। কাজের শত চাপেও প্রতিদিন একবার করে আমার সাথে কথা বলে। মহুয়ার সত্যি ভালোবাসা আমাকে আমার বিপন্ন মানসিকতা থেকে উদ্ধার করতে পারে না। মহুয়ার মতো আমিও অপেক্ষা করছি, একদিন, হয়তো একদিন, আমি অতীত স্মৃতিকে সহজভাবে নিতে পারবো। নিজের বিষণ্ণ জগতে ঘুরপাক খেতে খেতে আজ অনেকরাত পর্যন্ত জেগে মহুয়ার পুরোনো চিঠিগুলো পড়লাম। নিজে একটি ছোট্ট চিঠিও লিখলাম।
“প্রিয় ফুলেশ্বরী,
বহুদিন তোমাকে দেখি না। বহুদিন আমি তোমার চোখে চোখ রেখে নিঃশব্দে কথা বলি না। তুমি যখন ফোন করো, মোবাইলের তারের যন্ত্রাংশ তোমার কণ্ঠের লালিত্য অনেকখানি শুষে নেয়। তোমাকে তখন আমার চিঠির প্রেমিকার চেয়ে বেশি করে মনে হয় টেলি-সেলসের সেই মেয়েটির মতো, যার কণ্ঠস্বর চিত্তাকর্ষক হলেও সেখানে ব্যবসায়িক ধান্দা প্রকট।
তুমি আবার রাগ করো না যেন আমার এই কথায়। আসলে আজ তোমাকে খুব মন পড়ছে। তুমি কি আসবে দুটো দিনের জন্য সাগরের কাছে? আমিও যেতাম তাহলে তোমার সাথে। সৈকতের বালিতে আঙ্গুল দিয়ে তুমি যখন একটি লাভহার্ট আঁকো এবং তার ভেতরে লেখো এস + এম, পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে খুব ভালো লাগে আমার। এবার আসলে মিলিয়ে দেখবো তোমার হাতের লেখা আগের মতোই আছে নাকি আরো খারাপ হয়ে গিয়েছে।
সময় মতো খাওয়া দাওয়া করো। দিনদিন যেভাবে শুকিয়ে যাচ্ছ, সহসা হয়তো হাওয়াতেই মিলিয়ে যাবে তুমি। তোমার কণ্ঠস্বর, চিঠি, বালির উপর তোমার আঙুলের লেখা- সবকিছু সাথে করে নিয়ে চলে যেয়ো না, প্লিজ।
আমি ভালোই আছি। কানাই আজকে এসে শার্টের মাপ নিয়ে গিয়েছে। এক ইঞ্চিও বদলাইনি। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো।
ইতি,
তোমার কেউ, সুমন, প্রাণমন।”
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো মোবাইলের রিংয়ে। ঢাকা থেকে ছোটমামা ফোন করে দুঃসংবাদটি দিলেন। প্রথমে কিছুক্ষণ গম্ভীরস্বরে অদরকারি কথাবার্তা বললেন। আমি ভাবছিলাম, ভোর পাঁচটায় ছোটমামা নিশ্চয়ই এসব কথা বলতে ফোন করেনি আমাকে। টেলিফোনের ওপাশে অনেক মানুষের কথার আওয়াজ। আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি। ছোটমামা বিশেষ কিছু বলবেন। প্রতিটি সন্তানের কাছে জীবনে একবার করে এমন বিশেষ সংবাদ আসে। তারপর থেকে প্রতিটি সন্তান সেই বিশেষ সংবাদের কথা মনে করে বুক চাপড়ায় আজীবন। আমার আম্মার কথা মনে পড়ছিলো বারবার। বাড়ি ভর্তি মানুষজন আর হৈচৈয়ের কুচকাওয়াজ ডিঙিয়ে অবশেষে শোকসংবাদটি পরিষ্কার হলো। আমার আব্বা মারা গিয়েছেন। সংবাদটি শুনে আমি মোবাইল হাতে করে কিছুক্ষণ স্থবির হয়ে রইলাম। আব্বার সাথে আমার অনতিক্রম্য একটা দূরত্ব রয়েই গিয়েছিলো আজীবন। কিছুতেই সহজ হতে পারতাম না তাঁর সামনে। বাড়িতে আব্বার সাথে লুকোচুরির খেলা এড়াতে কলেজ পাশ করার পর থেকেই বাড়ির বাইরে আস্তানা গেড়েছিলাম। এখনো পড়ে আছি এই সমুদ্রের কাছাকাছি। তবুও আজ সকালে টেলিফোনে পাওয়া সংবাদ অথবা দুঃসংবাদটি শোনার পর আমি কেন যেন বুকের ভেতর ক্ষরণ অনুভব করলাম। মাথার উপর থেকে ছাদ কিংবা পায়ের নিচে চিরকালের পদদলিত শক্ত মাটি হঠাৎ করে কেঁপে উঠলে যেমন লাগতে পারে, তেমন লাগতে থাকে আমার। তারপর মনে আছে, উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গিয়েছিলাম সাগরের কাছে। হুহু ঠান্ডা হাওয়া আর পায়ের তলায় ভেজা বালি সরসর করে হাত বুলিয়ে দিলো আমার সর্বাঙ্গে। সাগরের ঢেউয়ের শব্দ আমাকে ঐশ্বরিক বাণীর কথা মনে করিয়ে দেয়। ছোট্টবেলায় আব্বা বেত হাতে বসে আমাকে আর আমার ছোট ভাই-বোনদেরকে কোরান শরীফ পড়াতেন। আজ সকালের বাতাস ঠিক আব্বার কণ্ঠের সেই তেলাওয়াতের মতো সুরেলা-সুশ্রাব্য শোনাচ্ছে। আমি উপুড় হয়ে শুয়ে ভেজা বালিতে মুখ রাখি। গভীর বিষাদে বুক ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু আমার চোখে পানি আসে না। সাগরের ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার চোখ। এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানি না, একটু চেতন ফিরতে মনে হলো আমাকে ঢাকা যেতে হবে। আম্মা অপেক্ষা করছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার এখন অনেক কাজ। আব্বার শেষ গোসল, জানাজা, দাফন, আব্বাকে মাথার দিকে ধরে কবরে শুইয়ে দেয়া, কবরে প্রথম মাটি দেয়া, আত্মীয় মুরুব্বিদের সাথে কথা বলা, আরো অনেক দায়িত্ব অপেক্ষা করে আছে। আব্বার জীবনকালে আমার সাথে তাঁর সম্পর্কে দূরত্ব থাকলেও শেষ বিদায়ের এই ধর্মীয় আচারে আমার ভূমিকা প্রধান। তাই প্রধান চরিত্রের অভিনয় আর সংলাপ বুঝে নিতে আমি তৎক্ষণাৎ রওনা হলাম ঢাকার পথে।
ঢাকায় এসে বাড়িতে ঢুকতে কেমন ইতস্তত লাগছিলো। বহুদিনের না দেখা আত্মীয় স্বজনেরা চলে এসেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলো। ভোরবেলা ফজর নামাজ পড়তে উঠছিলো না বলে আব্বাকে ডাকতে গিয়েছিল আমার বোন। তখনই জানা যায় আব্বা আর নেই। ঘুমের ভেতর মারা গিয়েছেন তিনি। এমন মৃত্যু অধিকাংশ মানুষের কাছে কাঙ্খিত। যন্ত্রণাহীনভাবে যাত্রা অনন্তের পথে। কিন্তু আমার বোনটির ট্রমাটাইজড মন শান্ত হচ্ছে না কিছুতেই। একটু পরপর তীব্রস্বরে চিৎকার করে উঠছে সে। আব্বা! আব্বা গো! তারপর আবার থরথর করে কয়েকবার শরীর কাঁপিয়ে ফেইন্ট হয়ে যাচ্ছে বোনটা। মরা বাড়ির মানুষজন আজ এই দুইজনকে নিয়ে খুব ব্যস্ত আছে।
আমি থমথমে মুখে বাড়ির সবগুলো ঘরে ঘুরতে থাকি। এই বাড়িতেই জন্ম হয়েছে আমাদের পাঁচ ভাই বোনের। এখানে আছে আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন, আমার মানুষ জীবনের গড়ে উঠার আশি ভাগ সময়। বাড়ির আড়াই তলায় অবস্থিত আমার নিজের রুমটাতে গেলাম। ছাদের উপর কাঁঠাল গাছের পাতার সাথে সখ্যতা করে জানালা খুলে আছে আমার ঘরটি। পড়ার টেবিলের সামনে কাঠের চেয়ারটিকে দেখে আজ খুব ছোট মনে হচ্ছে। আমার শরীরের ভার সে আর বইতে পারবে কিনা সন্দেহ হলো। তাই দাঁড়িয়েই থাকলাম। চারপাশে চোখ বোলাতে গিয়ে খাটের নিচে আম গাছের মোটা লাঠিটি দেখতে পাই, ওটা আমার খুব চেনা। একটা সময় আমি মনে মনে দাগ কাটতাম, প্রতিটি আঘাতের দিন- তারিখ ডায়েরিতে টুকে রাখতাম। রোমান হরফে ট্যালি করে চারদিনের পর পঞ্চমদিনে একটা তেছরা দাগ টানতাম। আমার গায়ে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে ধোয়া সাদা শার্টের ভেতরে সাবধানে ঢেকে রাখা আছে একটি ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত কিশোর শরীর। আমি জলদি ঘরটি থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আব্বার জানাজার নামাজ হলো বাসাবোর জামিয়া মসজিদে আছরের নামাজের পর। নামাজ শেষে আব্বাকে সরাসরি পারিবারিক গোরস্থানে নিয়ে এসেছি কবর দেয়ার জন্য। আমাদের সাথে আত্মীয় ছাড়াও অনেকগুলো অপরিচিত লোক দেখলাম। আমি তাদেরকে না চিনলেও তারা সবাই জানে আমি এই মৃত মানুষটির ছেলে। সবাই আমাকে সান্তনা দিচ্ছে এসে। যদিও আমার সান্তনার কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি কাঁদছি না। গোঙাচ্ছি না। দুঃখী মুখে অন্যের বাবার দিকে তাকাচ্ছি না। আব্বাকে খাটিয়া থেকে নামিয়ে কবরে শোয়ানোর সময় আমাকে ইমাম সাহেব বললেন হাত লাগাতে। সাদা কাফনের উপর থেকে আব্বার শরীরে আমার হাত লাগলো। অদ্ভুত এক অনুভব বয়ে যায় আমার শরীরে আর মনে। অনেক বছর পর আব্বার স্পর্শ আমার হাতে। নাকি আব্বার হাত স্পর্শ করেছে আমাকে? কিন্তু আমি কেঁপে উঠলাম। আব্বার এই নিথর হাত দুটিকে একসময় আমার খুব ভয় লাগতো। যেকোন সময়েই আব্বার হাতের দিকে চোখ পড়ে গেলে আমার শিশুমন ভয়ে শুকিয়ে যেত। ছোটবেলা থেকেই দেখেছিলাম, সন্তান শাসনের ব্যাপারে আব্বা খুব কড়া ছিলেন। সময় মতো স্কুলের পড়া, প্রাইভেট মাস্টারের পড়া, আরবি হুজুরের পড়া সব পড়তে হতো। একটি অঙ্ক ভুল হলে আব্বার হাতে লাঠির আঘাত পিঠ ফাটিয়ে ফেলতে ভুল করতো না এক দণ্ড। পিতার শাসনের আঘাত যে শুধু সন্তানের পিঠেই পড়ে না বুকেও পড়ে, আব্বা মনে হয় এই কথাটি জানতেন না। আজ আমার ভীষণ রাগী সেই আব্বা, কেমন শক্তিহীন পড়ে আছেন কবরের গর্তে। কাফনের কাপড়ে মুখ বাঁধা। আমার অনুরোধে ইমাম সাহেব আব্বার মুখের কাপড়টুকু খুলে দিলেন। অনেক বছর পর আমি পূর্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকি আব্বার মুখের দিকে। ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখটি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে না আজকে। শুধু জন্মদাতার স্নেহ মমতা মাখা এক টুকরো দুর্মূল্য হাসি দেখতে পেলাম ঠোঁটের কাছে! আমার মনের ভুল হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু তবুও আমার বুকের ভেতরে এতো বছর ধরে অভিমানে শক্ত হয়ে জমে থাকা একটি ভারী পাথর বজ্রপাতের গর্জনের মতো ভেঙে গুড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। নিজের স্বভাবের নির্লিপ্ততা ধরে রাখতে পারি না আমি আর। হাউমাউ কান্নায় ভেঙে পড়লাম আব্বার মৃতদেহের উপর। আমার বুকভাঙা আর্তনাদের সাথে মিলিত একটিমাত্র অভিযোগের বাণী দাফনকার্যে উপস্থিত জনতার কেউ বুঝলো না, আব্বা আপনি আমাকে নিয়ম করে অমন না পেটালেও আমি ঠিকই মানুষ হতাম! সদ্য খোঁড়া সাড়ে তিন হাত মাটির আয়তাকার ঘরে আমি আর আব্বা একসাথে আছি, খুব কাছাকাছি। কিন্তু আমাদের ভাবের বিনিময় অসম্ভব এখন। আমরা একজন দাঁড়িয়ে আছি এইকালে, আরেকজন শরীর ফেলে পৌঁছে গিয়েছে অজানা অন্যকালে। সেই ভুবনে তিনি কী হাঁটছেন, দৌড়াচ্ছেন, বাতাসে ভাসছেন, নাকি কৌতূহল ভরে আমাদেরকেই দেখছেন, এসব কিছুই জানার উপায় নেই।
ইমাম সাহেব আমার কাঁধে হাত রাখেন। কাঁদতে নিষেধ করেন। কাঁদলে মৃতব্যাক্তির আত্মা গুনাহগার হয়। বাড়ি ফিরে আমি বহু বছরের সঞ্চিত অশ্রু ঢেলে দিয়ে সারাটি রাত কাঁদলাম। পুরুষ মানুষকে কেউ এভাবে কাঁদতে দেখে না। তবুও আমার কান্না থামতে চাইছে না। ফুলের নামে নাম আর ফুলের মতো নরম নিষ্পাপ মেয়ে মহুয়ার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বাকি রাতটুকু শেষ হবার অপেক্ষায় আছি। কী যে হয়েছে আমার, কিছুতেই মনে করতে পারছি না, মহুয়া লাল নাকি বেগুনি বেনারসি পরবে বলেছিলো আমাদের বিয়ের দিন?
Posted in: September 2021, STORY