লুক্কায়িত পাঠক্রম : শতানীক রায় ও শানু চৌধুরী

[ It is not good for man to keep reminding himself, that he is man. — E.M. Cioran
খুব বড়ো একটা পৃথিবীতে বসবাস করি। প্রতিদিন অনেক কিছু বদলায়। ভাঙে গড়ে। আমরা নিজেই ভেঙে আবার গড়ে উঠি। আমরা ভাবি। আমাদের এই নিগূঢ় অস্তিত্ব যাপনের পদ্ধতির মধ্যে এসে পড়ে অন্বেষণ। জানি না কক্ষনো। জানতে পারি না। গানটা কেন এভাবে হচ্ছে কেন এভাবে হেঁটে চলেছি আর শেষপর্যন্ত ভাবতে বাধ্য হই কেন বেঁচে আছি। এই অন্বেষণের একটা বড়ো অংশ হল বই। আর পৃথিবীর নানা ভাষার বই থেকে আমরা কিছু বই বেছে নিয়েছি। শুধু তাই নয়, একটি বই কিন্তু আবার জীবনও। মানুষ অদ্ভুতভাবে সেখানে লুক্কায়িত আছে। তারই পাঠ করতে করতে আমরা গড়ে উঠি। শব্দ। বাক্য। বাক্যের মধ্যে মধ্যে লুপ্ত শব্দ। শূন্যতা আর কীভাবে যে নিজেদের সংশয়কে এসে যেতে দেখি। নিজেদের অস্তিত্বচিন্তা চেপে বসে। এঁটে যায়। এই ধারাবাহিক সেরকমই কিছু বই। সেরকম জীবনের সন্ধান যার কোনো-না-কোনো অণুর ভেতর আমিও আছি। আর চাইছি সেই বিচ্ছুরণ পাঠকের কাছেও পৌঁছে যাক। এই ধারাবাহিকে শতানীক রায় সে-সব বই সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবেন। আর শানু চৌধুরী সে-বইয়ের কিছু অংশ অনুবাদ করবেন। আসলে কোনো পাঠই সম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয় যতক্ষণ-না আপনি সে-পাঠের অংশ হয়ে উঠছেন।]

পর্ব – ১

দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার
শতানীক রায়

“I want to write the history of that war. A women’s history.”

‘সুটকেসভরতি ক্যান্ডি’ এই শিরোনামে স্বেতলানা অ্যালেক্সিয়েভিচ্-এর একটি সাক্ষাৎকার পড়তে গিয়ে তাঁর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। লেখা পড়ে নয় সরাসরি লেখকের নিজের কথা পড়ে আগ্রহ জন্মেছিল। কথা পড়া মানে শোনাই একরকম। যদিও লেখকের গলার আওয়াজ তখনও শুনিনি। শুনলেও যেহেতু তিনি রুশ ভাষায় কথা বলেন তাই অর্থ বুঝে উঠতে পারতাম না। কথা শুনলাম কিন্তু অর্থ বুঝলাম না। তাহলে তাঁর আওয়াজের রেশটুকুই থেকে যাবে মনে। তার সঙ্গে লেখকের অনুভূতিকে আমার মনের অনুভূতিভুক্ত করতে পারব না। অসম্পূর্ণতা একরকম। তাই অনেক সময়ই যাদের সঙ্গে আমরা পরিচিত তাদের কোনো লিখিত বক্তব্য আমরা সহজেই অনুভব ও অনুধাবন করতে পারি। এ এক অনন্য অনুভূতি! তাকেও যেন অনুভব করা। তাদের গলার আওয়াজ কথা বলার পদ্ধতি মুখে চিন্তন প্রক্রিয়ার ভাবাবেগ সব নিয়ে অনুভবের এক মিশ্র আবেশ সৃষ্টি হয়। এখানে সেদিক দিয়ে একটু খামতি থেকে গেছে। যেন-বা লিখিত কিছু পড়ছি। লেখাই শুধু। তবুও লেখকের কথা যেহেতু তাই আগ্রহবশত তাঁর এই বই পড়তে শুরু করি— ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’। তারপর ইউটিউবে লেখকের সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো দেখি। নীচে ইংরেজি সাবটাইটেল-এ তাঁর কথাগুলো বুঝতে পারি পড়তে পারি। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও চিন্তাবহুল মুখ, কথন প্রক্রিয়া, শারীরিক ভঙ্গি— সব দেখে বুঝে শুনে আমার ওপর গভীর প্রভাব পড়ে। অনেক বার পড়েছি এই বই। বার বার অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি কেন এই বই পড়ব। কীভাবে এই বই নিয়ে আলোচনা করব। কোন ডিসকোর্স অ্যান্টিডিসকোর্সের ভেতর এই বইটা পাঠকদের সামনে উন্মুক্ত করব। এতগুলো প্রশ্ন ও দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে আমি লিখছি এই লেখা।

স্বেতলানা অ্যালেক্সিয়েভিচ্ (জন্ম ৩১ মে ১৯৪৮-) একজন বেলোরুশিয়ান জার্নালিস্ট, প্রাবন্ধিক এবং ওরাল হিস্টোরিয়ান যিনি রুশ ভাষায় লেখেন। তিনি ২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বেলারুশ থেকে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের বয়ানকে সাহিত্যে রূপান্তরিত করেন। সেটা মূলত ওরাল হিস্ট্রি হলেও সে-সবের মধ্যে আখ্যানের অনেক বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। এর কারণ, একই লেখায় দু-তিন রকম সমান্তরাল ন্যারাটিভের সংমিশ্রণ থাকে। যা খুব বেশি করে ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বই পড়তে গিয়ে আমি দেখেছি। তিনি বেলোরুশিয়ান লেখক অ্যালেস অ্যাদামোভিচ্‌-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন যা তিনি ‘সুটকেসভরতি ক্যান্ডি’ সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হল ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’, ‘জিঙ্কি বয়েস: সোভিয়েত ভয়েসেস ফ্রম এ ফরগটেন ওয়ার’, ‘চেরনোবিল প্রেয়ার’, ‘সেকেন্ড-হ্যান্ড টাইম’, ইতাদি। তাঁর প্রথম বই ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে গর্বাচেভ-এর সময়কালে যখন গ্লাসনস্ত পেরেস্‌ত্রইকা বলবৎ করা হয়। লেখকের প্রথম বই নিয়ে অনেক তথ্য আমরা তাঁর ‘সুটকেসভরতি ক্যান্ডি’ সাক্ষাৎকারে জেনেছি।

“We didn’t know a world without war; the world of war was the only one familiar to us, and the people of war were the only people we knew. Even now I don’t know any other world and any other people. Did they ever exist?”— এই বই যেন সিঁড়ি। ধীরে ধীরে মেয়েদের যুদ্ধের কাহিনি আর ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করে। লেখকের জীবন থেকে উঠে আসা একটা ডিসকোর্স এই যুদ্ধ। যা লেখককে এই কাজে অগ্রসর হতে উদ্দীপিত করেছে। আর মেয়েদের যুদ্ধ নিয়ে কেন এই বই? লেখকই এর উত্তর বইয়ের শুরুতে দিয়েছেন: “The village of my postwar childhood was a village of women. Village women. I don’t remember any men’s voices. That is how it has remained for me: stories of the war are told by women.”

জার্নাল থেকে একটি বই গড়ে উঠছে। বইটা পড়তে পড়তে আমার নিজস্ব একটি আখ্যান সৃষ্টি হয়। যেন সুর মেদুরভাবে নিজেরই গতি চিহ্নিত করছে। পূর্ণতা নেই কোথাও। মানুষের জীবনের অসম্পূর্ণতার কাহিনি। অধ্যায়ের পর অধ্যায় শুধু তাদের উত্তর। এই ‘তাদের’ হল সেই মেয়েরা যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ান ফ্রন্টে অংশগ্রহণ করেছিল। কথোপকথনে লেখক নিজের প্রশ্ন কিন্তু তুলে ধরেননি আখ্যানে। এভাবেই একটা বই। নোবেল কমিটিকে দেওয়া একটি ছোটো সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের লেখার ফর্ম নিয়ে বলেছেন: “You know, everything happens so fast and intensively in the modern world that neither one person nor the whole culture are able to conceive it. It is just too fast, unfortunately. There is no time to sit and think it over, as did Tolstoy, whose ideas matured over decades. Every person, me too, can only try to grasp a small piece of reality, conjecture only. Sometimes I leave only 10 lines out of 100 pages of my text, sometimes one page. And all together these pieces are united in a novel of voices creating the image of our time and telling what is happening to us.” নোভেল অব ভয়েসেস। এভাবেই এই ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’।

আখ্যানের নাম ‘দি আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’। আমার কাছে একদিন মাঝরাতে যুদ্ধের সেই রক্তাক্ত ইতিহাস উঠে আসছে। আমার আবছায়া খেয়াল পড়ছে। যেন সময়ের কোনো অস্তিত্ব নেই তবুও শরীর থেকে গেছে। আর সেই বড়ো কাহিনির মধ্যে ছোটো ছোটো কাহিনি। এক-একজন মেয়ের কাহিনি। প্রত্যেকেই যুদ্ধফেরতা। প্রি-ওয়ার, ওয়ার এবং পোস্ট-ওয়ার— এভাবে ভাগ করা যাবে তাদের জীবনকে।

গ্রেট প্যাট্রিয়োটিক ওয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব ফ্রন্টে রাশিয়ার যুদ্ধ নাৎসি জার্মানির সঙ্গে। রাশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনেক সময় গ্রেট প্যাট্রিয়োটিক ওয়ার বলা হয়ে থাকে। পুরো বইটাই কথোপকথনের ওপর নির্ভর করে আছে। লেখক প্রশ্ন করেছেন আর উত্তর দিয়েছে যোদ্ধা মেয়েরা উত্তর দিয়েছে। সেই উত্তরগুলো হয়ে উঠেছে আখ্যানের এক-একটি অধ্যায়। অধ্যায়গুলো এক-একটি হয়ে উঠেছে মহাকাব্যিক। অনুভূতি হয়ে উঠেছে আধার। লেখক শুধু যুদ্ধের ইতিহাস লিখছেন না, তিনি অনুভূতির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এটি একটি বিশ্বজনীন বই। আমি যেন সেই যুদ্ধের একটি অংশ। প্রবাহিত হয়ে চলেছি। অধ্যায়ের পর অধ্যায় কত মেয়েদের কথা৷ একসময় যারা যুবতী ছিল। যুবতী উদ্দীপনার কথন। তারা যেন গতকালের কথাই বলছে… মনোলগ। লেখিকা বক্তব্য কমই রাখছেন। কখনো সময়ের সীমা মুছে যাচ্ছে। আর এই গতকালের গল্পই আমরা পড়ছি, শুনছিও। অনুভব করছি যুদ্ধকে, তাদেরকে।

যুদ্ধ হয়েছিল। তার অবসানও। আগের পৃথিবী একরকম। পরের পৃথিবী আলাদা। পশুপাখি নেই। একটা গ্রামে নাইটিঙ্গেল পাখি উধাও হয়ে গেছিল। যুদ্ধশেষের দুই বছর পর আবার সে-পাখি দেখা যায়। একটা গ্রামে শুধু তরমুজ ফলেছিল। সেই গ্রামে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের ফুলের বদলে তরমুজ দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। একজন যুদ্ধফেরত সৈনিকের বাড়িতে তার মা, তিনটে বাচ্চা আর একটি কুকুর শুধু সেদ্ধ goosefoot খেয়ে বেঁচে ছিল। আর একজন সৈনিক স্মৃতিচারণ করেছেন: “—Whenever I see wild flowers, I remember the war.” শেষপর্যন্ত যুদ্ধই ছিল। অনেক বছর পরেও সেইসব মহিলাদের জীবনে যুদ্ধের অবশিষ্টাংশ থেকে গিয়েছিল। তারই প্রতিফলন এই বইয়ের কাহিনির পর কাহিনিতে। এই বইকে বই না বলে ইতিহাস না বলে চলমান জীবন বললে কেমন হয় যেখানে পূর্ণত জীবনের কাছে পৌঁছোনোর চেষ্টা করেছেন লেখক। আর তাদের সাক্ষাৎকার থেকে বেছে বেছে আর একটি জীবন গেঁথেছেন।

পাঁচশোবার কথোপকথনে বসতে হয়েছে লেখককে এই বইয়ের প্রস্তুতির জন্য, বিভিন্ন সময়ে। মেয়েরাই কথা বলেছেন। সব কথার কেন্দ্রে যুদ্ধ ও তাদের অবস্থান। তাদের জীবন দুই ভাগে বিভক্ত— যুদ্ধের আগের জীবন একরকম আর যুদ্ধের পরে আর একরকম। এই বিশ্বযুদ্ধ তাদের গঠন করেছে। এখনও নিয়ন্ত্রণ করে। সম্পূর্ণ মেয়েদের দৃষ্টিতে যুদ্ধের ইতিহাস। তখন রাশিয়া কেমন ছিল। ইতিহাস কিন্তু ইতিহাস মনে হয়নি। লেখকের উপস্থিতি খুব কম খেয়াল করা গেছে। লেখক তাঁর মেয়েবেলা থেকে তাঁর গ্রামে মেয়েদের মুখে মুখে যুদ্ধের কাহিনি শুনে এসেছেন। “আমার যুদ্ধপরবর্তী শৈশবের গ্রামটা ছিল মেয়েদের গ্রাম। গ্রামীণ মেয়েরা। আমার কোনো পুরুষকণ্ঠের কথা মনে নেই। এরকমভাবেই সেটা আমার কাছে থেকে গিয়েছে: মেয়েদের মুখে মুখে শোনানো যুদ্ধের কাহিনি। তাঁরা কাঁদে। তাঁদের গান ছিল কান্নার মতো।” যুদ্ধ নিয়ে লেখকের নিজের স্মৃতি এভাবে তৈরি হয়েছে। আর এই বইকে আমি উপন্যাস বলি বা আখ্যান, ইতিহাস বলি বা কথাসমগ্র সবই এক তীব্র অন্ধকারে গিয়ে মেশে। যে-অন্ধকারকে আমি সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব না। সেইসব মেয়েদের ব্যথাকে কীভাবে আমি এই লেখার মধ্যে ব্যাখ্যা করব! আমি শুধু কাহিনিগুলোকে আওড়াতে পারি বা পুনরায় জীবনের ঘটনার অনুভূতিগুলোকে আমার নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে লেপে দিতে পারি। তবে, এই বই যতই ইতিহাসগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পাক, একে আমি আখ্যানই বলব। কথা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় আর ব্যবহারের মহৎ গুণে লেখকের নিজের অভিযাত্রার বর্ণনের সঙ্গে লিপ্ত হয়ে তৈরি হয়েছে নতুন এক শিল্প। যে-শিল্পের স্বাদ আমি আগে কখনো অনুভব করিনি।


এই বইয়ের একটি অধ্যায়কে কেন্দ্র করে বিস্তারিত আলোচনা ও বিচরণ করলে বই সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা পরিষ্কার হবে। আর সঙ্গে অনুবাদ থাকছে— এই বইয়ের সম্পূর্ণ ভূমিকার ভাষান্তর। এবার তাহলে ধাপে ধাপে এগোনো প্রয়োজন। আসলে আখ্যান মূলত হয় linear-temporal. এখানে আখ্যানের মধ্যে লেখকের অদৃশ্য অবস্থান আমার ড্রামাটিক মোনোলগ মনে হয়েছে। যদিও সেটা কেবল আখ্যানের ভেতর যে-আখ্যান আছে সেক্ষেত্রে। শুরুর অধ্যায় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। যে-কোনো বইয়ের ক্ষেত্রে। এ বইতেও সেরকম ঘটেছে। প্রতিটা বাক্য উন্মুক্ত করছে নতুন রহস্যের। ভূমিকায় অনেক কিছু বলেছেন এ বই হয়ে ওঠা নিয়ে। তবুও যেন লেখক নিজেকে, সময়ের তিনটি কালকে এবং আখ্যানের চরিত্রকে যুদ্ধ থেকে আলাদা করে ও পাশাপাশি যুক্ত করে ধারাবাহিক সরলরেখা বরাবর সময়কে সময় আর জীবনের অদ্ভুত খাতের মধ্যে ধরতে চেয়েছেন। সাদা পৃষ্ঠা থেকে শুরু এবং তারও স্বীকারোক্তি আছে শুরুর অধ্যায়ে: “I confess: I did not always believe that I was strong enough for this path, that I could make it. Could reach the end. There were moments of doubt and fear, when I wanted to stop or step aside, but I no longer could. I fell captive to evil, I looked into the abyss in order to understand something. Now I seem to have acquired some knowledge, but there are still more questions, and fewer answers.” সাদা পৃষ্ঠা থেকে এতদূর। আর ধাপে ধাপে উন্মোচন। নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে ইতিহাসের। যুদ্ধের জীবন। সেখানে শুধুমাত্র মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনে। ব্যক্তিগত যুদ্ধ ও তার অভিজ্ঞতা। প্রথম অধ্যায়ের নাম: ‘I DON’T WANT TO REMEMBER…’.

আমি মনে করতে চাই না— এভাবেই এক শান্ত নিশ্বাসের ভেতর দিয়ে শুরু হয় কথোপকথন। লেখকের অবস্থানও একরকম প্যাসিভ রেখেছেন লেখক নিজেই। শুরুর এই অধ্যায়ে দু-জন স্নাইপার-এর যুদ্ধের জীবন সূচনা করেছে এই বইয়ের যা আসলে একদম বাস্তবচিত্র। যুদ্ধের জীবনের প্রকাশ। সমস্ত বইজুড়ে মেয়েদের পুরুষ হয়ে ওঠার গল্প ছড়িয়ে আছে। পৌরুষ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি আমি এভাবেও দেখি যে, এ-যুদ্ধে পুরুষেরা ছিল, মেয়েরা পরে যুক্ত হয়েছে। তবুও এখানে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি এটা জেনেও যে, যুদ্ধে মেয়েদের আলাদাভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। পুরুষদের থেকে অনেক বেশি সংঘর্ষ করতে হয়েছে মেয়েদের। একটার পর একটা অধ্যায়ে যুদ্ধের এক-একরকম পর্যায় উন্মুক্ত করেছে বিভিন্ন সমাজকে। সমাজের নানা স্তর থেকে উঠে আসা মেয়েরা— মা, মেয়ে, পরিবারের একমাত্র সম্বল, স্ত্রী… এভাবে তাদের জীবনের কাহিনিই শুধু নয় শূন্যতাও প্রকাশ পেয়েছে। যে-শূন্যতা হয়তো ছিলই তা যুদ্ধের অবদান আরও স্পষ্ট করেছে। কখনো-বা জীবন গড়ে তুলেছে, জীবনের নতুন দিক প্রকাশিত করেছে। তারা শূন্যতা, সময় আর যুদ্ধের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত সত্তা। কেউ মনে করতে চায় না সে-সব ইতিহাস, আবার কথা-প্রবাহ শুরু হলে থামে না। লেখক নিজেও তখন সে-প্রবাহের অংশ। প্রতিটা পঙ্‌ক্তিকে অতিক্রম করতে হয় এই বই পড়তে গিয়ে। মাঝের অবলুপ্ত শূন্যতাগুলো নিয়ে ভাবতে হয়। “I remember lying at night in the dugout. I am not asleep. Somewhere there is artillery fire. Our cannons are shooting…I really didn’t want to die…I gave an oath, a military oath, that if need be I’d give my life, but I really didn’t want to die. Even if you come home alive, your soul will hurt. Now I think: it would be better to be wounded in an arm or a leg. Then my body would hurt, not my soul…It’s very painful. We were so young when we went to the front. Young girls. I even grew during the war. Mama measured me at home…I grew four inches…”। এখানে অনুভূতির পর্যায়ক্রমগুলো খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে আমাদের। যুদ্ধ চলছে। এরকম সময় গর্তে আশ্রয় নিয়েছে একজন নারী। সে একই মুহূর্তে ভেঙে ভাবছে। নস্টালজিয়া কাজ করছে। মায়ের কথা মনে পড়ছে। সে যুদ্ধে জীবন-মরণ পণ করেছে তবুও সে মরতে চায় না। অনেকগুলো নিশ্বাসের বিরতি আছে এই কথার মধ্যে। শূন্যতা আছে। এই মুহূর্তটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। অনেকগুলো পর্যায়। সময় যে কি বিচিত্র বিভাজন করে দিয়েছে। তার মনের এই আবেগ-অনুভূতি আমরা কেবলমাত্র শূন্যতা ও সময়ের প্রবাহকে অনুভব করেই একমাত্র বুঝতে পারব। তবুও কোথাও-না-কোথাও আমাকেও Klavdia Grigoryevna Krokhina-র মতো বলতে হয়: “Forgive me…”।

বইয়ের ঠিক মাঝামাঝি করুণ গানের মতো। ‘IT WASN’T ME’. একটি অধ্যায়। দু-টি জীবন। লেখকও সম্পৃক্ত। আমি আলাদা করতে পারিনি। লেখক শুরু করছেন। সেটা কিন্তু প্রথম অধ্যায়ের মতো একেবারেই নয়। একজন মানুষ অনেকটা হেঁটে নেওয়ার পর যেরকম গতি হয় তার। ধীর ছন্দ অথচ অভিজ্ঞ। সাহসিও। Olga Yakovlevna Omelchenko এখানে দু-জন সত্তা। যদিও খুব সূক্ষ্মভাবে ভাবলে এখানে শুধু নয় পুরো বইতেই প্রতিটা চরিত্রের জীবনের একটি পৃষ্ঠাই কেবল জানতে পারছি। এখানে আরও মনে হয়েছে যে, ওলগাকে এখানে খুলে দেওয়া হয়েছে এমনভাবে যে, সে একজন নার্স। যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা করে। তার মা চেয়েছিল, তার মেয়েকে নিয়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে যেখানে কোনো যুদ্ধ নেই। তবে ওলগা পালিয়ে যায় আর এক অচেনা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয় কিছুদিন। সে যুদ্ধে যেতে চায়। সে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সে-বাড়ির মেয়ের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে এবং অবশেষে নার্স হিসেবে একটি হাসপাতালে নিযুক্ত হয়। তারপর একদিন তার ভাই দেখা করতে আসে হাসপাতালে। সে প্রথম সিনেমা হল-এ যায় ভাইয়ের সঙ্গে। জীবনের এক অন্য স্বাদ সে পায়। তারই কথায়: “It was the first time in my life I went to the theater, and with a young fellow, at that. A handsome young fellow. An officer!” তারপরে আবার ছন্দপতন। ভাইয়ের যুদ্ধে মৃত্যু। একটা উক্তি মাথায় ঘুরছে। তার ভাই বলেছিল: “It’s easy to lose each other during the war”। সে যুদ্ধে গেল তারপর। সে চেয়েছিল অন্তত একজন ফ্যাসিস্‌টের মুখোমুখি হতে। এ সম্পূর্ণ একটা অন্য সুর। প্রতিটা অধ্যায়ের অনন্য একটি সুর আছে। এখানে মাঝে মাঝে ক্লান্তি। ফুল ফোটার দীর্ঘতা ও কোমলতা। যেন ঘুমন্ত একজন মানুষকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার কেউ যেন সুরে সুরে ঘুমিয়ে পড়ছেন। অদ্ভুত! একজন মানুষের গল্প শুনছি। যুদ্ধের ছবি দেখছি। লেখকের শ্বাস নেওয়ার শব্দ। আর সব কিছু মিলিয়ে যুদ্ধ নিয়ে ওলগার মন্তব্য: “there’s nothing human in it.” যুদ্ধ শেষে সে ফিরে এল। সুস্থ হয়ে উঠল। বিয়ে হল। পাঁচটি সন্তান হল। জীবন অনেকটা এগিয়ে গেল।

এমন কিছু মুহূর্ত কখনো কখনো তৈরি হয়। রসায়ন। আবেগকে পৃথক মনে হয়। আলাদা করা যায়। শরীর মনের অভিন্ন ভাষাও অদ্ভুতভাবে ভাষা পেতে থাকে। শব্দে শব্দে। বাক্যও গঠিত হয়। সেরকমই একটা সময় সব বাক্য স্তিমিত হতে থাকে। এটাই আবেগ প্রসমিত হওয়ার পরিণতি। ‘SUDDENLY WE WANTED DESPERATELY TO LIVE…’ শেষ অধ্যায়ে লেখক শুরু করছেন, “ফোন বেজেই চলে। আমি নতুন ঠিকানা লিখে রাখছি, নতুন চিঠি আসছে। আর এটা অসম্ভব থামানো, কারণ, প্রত্যেকবারই সত্য অসহনীয় হয়ে ওঠে।” এখানেও অসহনীয় সত্যের একটা অংশ প্রকাশিত হয়েছে। সে আর নতুন করে বিবৃত করছি না। তাদের জীবন ও যুদ্ধের প্রতিটি সত্যই ভিন্ন আবার প্রতিটি ভিন্নতার একটা মিল আছে। যেন একইরকম। স্মৃতির ক্লান্তি ও ধূসরতা আমাকেও ক্লান্ত করে। তাদের বিষণ্ণতার সঙ্গে আমার বিষণ্ণতাও মিশে গেছে। সব ধূসরতারই সমগ্রতা এখানে খাঁজে খাঁজে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক এই বইয়ের প্রায় শেষের দিকে একটা অধ্যায় শুরু করছেন এভাবে: “আমি এই পথের শেষ দেখছি না। শয়তান আমার কাছে অনন্ত মনে হয়। আমি একে আর কোনোভাবেই ইতিহাস বলে ভাবতে পারব না। কে আমাকে উত্তর দেবে: আমি কীসের সম্মুখীন হচ্ছি— সময় না মানুষ? সময় বদলে যায়, কিন্তু মানুষ? আমি জীবনের ধূসর প্রাণহীন পুনরাবৃত্তির কথা ভাবি।

ওরা সৈনিক হিসেবে কথা বলেছে। মহিলা হিসেবে। তারা অধিকাংশই মা…”। আমি জীবনের ওই ধূসর পুনরাবৃত্তির কথা বলেছি। যার বহিঃপ্রকাশ তাঁরই বাক্যে প্রকাশ পায়: “আমি একে আর কোনোভাবেই ইতিহাস বলে ভাবতে পারব না।”

যুদ্ধ প্রতিটি যোদ্ধার কাছে ব্যক্তিগত। প্রত্যেকটি মহিলা যেভাবে যুদ্ধের জন্য নিবেদিত প্রাণ পাশাপাশি তারা নিজের পরিবার, সন্তান-সন্ততিদের প্রতিও তীব্রভাবে নিবেদিত। তাদের শরীর ও মনের সত্তা যেন তখন শুধুই যুদ্ধ দিয়ে তৈরি। একাধারে রক্ষা ও হননের প্রতিমূর্তি ওরা। এ-সব একপাশে সরিয়ে আমি অন্য কথা ভাবছি। আমি লেখকের যাত্রার কথা ভাবছি। তিনি এদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করেছেন। দেখেছেন তাদের বর্তমান শরীর। এই শরীর তাদের অতীতের যুদ্ধের শরীরকে কোথাও-না-কোথাও বহন করে। গড়ে তোলে চলমান ইতিহাস। তবুও ইতিহাসকে ছাপিয়ে যায় জীবন। এদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রক্তমাংস হয়ে উদ্দীপিত হয়েছে। তাদের শরীরের প্রসঙ্গ আনলাম কারণ আছে। বইয়ের শেষের দিকে একটা অধ্যায় ‘MAMA, WHAT’S A PAPA?’-এর ভেতর একটি বিভাগ ‘OF BATHING BABIES AND OF A MAMA WHO LOOKS LIKE A PAPA’ Raissa Grigoryevna Khosenevich-এর বয়ানে আমরা যে-আখ্যান পাই সেখানে তার শরীরের যে-তীব্র ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা পাই সেখানে তার তুলোর মতো পা। সারা শরীরে ঘা ও চামড়া উঠে আসছে, এরকম কিছু। এটাই হল আমার উল্লেখ করা যুদ্ধের শরীর। লেখক এদের সঙ্গে দেখা করেছেন কথা বলেছেন। চাক্ষুষ করেছেন এদের শরীরকে। ওদের স্মৃতিচারণের সময় তাদের মুখগুলো দেখেছেন লেখক। সময়ের চলাচল লক্ষ করেছেন। বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এ কীরকম যেন চলাচল। যাতায়াত। তাদের মুখভঙ্গি সে-সময়কে বহন করে। আর এতদিন পরে সেই শরীরের ভেতর থেকে বর্তমান কাঠামোটা শুধু ভাসে। ফুটে ওঠে অন্ধকারে। আমি এই টুকরো টুকরো আখ্যানের সম্মুখীন হতে গিয়ে এ-সব ভেবেছি।

চতুর্দিক থেকে কথাস্রোত এসে মিশে যাচ্ছে এক জায়গায়। সৃষ্টি হচ্ছে কেন্দ্র। তবুও এ কেন্দ্র নয়। জীবন। জীবনের অতিরিক্ত জীবন। জীবনই জীবন ধারণের কৌশল ও কাহিনি হয়ে উঠেছে। উঠছে। এ বই ইতিহাস হলেও কোথাও গিয়ে অন্তস্থ আখ্যায়িকার ধর্ম প্রকাশ করে। এত কাহিনি। লেখক অদ্ভুত দক্ষতায় মিশে গিয়ে দেখছেন। অনুভব করছেন। জগৎ যেন সম্প্রসারিত ও সংকুচিত হচ্ছে! আয়না চারদিকে। লেখক আমাদের আয়না দেখাতে গিয়ে নিজেও দেখছেন আয়নায় নিজেকে। পাশাপাশি মেয়েরা নিজেদের আয়নায় দেখেছেন। তাদের আয়নার প্রতিফলন আমরা দেখছি। আরও নিবিড়ভাবে ভাবতে গেলে লেখক তাদের প্রতিফলনকে নিজের আয়নায় দেখিয়েছেন। এর বিচিত্র ডিসকোর্স। প্রতিটা অধ্যায় শুরুর আগে যে-অনুভূতিপূ্র্ণ ইতিহাসের বর্ণনা দিচ্ছেন তা যেন শেষ হয় না। অনন্ত পর্যন্ত অনুভূতিমালা। যুদ্ধকে খুলে দেখতে গিয়ে নিজেকেও খুলে দেখা। পর পর কাহিনির চরিত্র হয়ে ওঠা। তাদেরকে ভেঙে কেটে একখানে আনা— এও কম বড়ো কাজ নয়! তাদের কথাকে সম্পাদনা করা অর্থাৎ, তাদের জীবনের গল্পকে সংক্ষিপ্ত করা। সেটুকুই তুলে ধরা যেখানে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। জীবন থেকে বেরিয়ে জীবন। আবার জীবনের মধ্যে জীবন। আপনি জানতেও পারবেন না কখন এইসব গল্প ইতিহাস থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে ইতিহাসই হয়ে উঠেছে। অনুভূতির ইতিহাস! জীবনের ইতিহাস! শরীরের ইতিহাস। একটি অধ্যায়ে লেখকের বক্তব্য:

“There was yet another war… In this war no one marked on the map where no-man’s-land was, where the front line began. No one could count up all the soldiers. The numbers of weapons. People shot from antiaircraft batteries, machine guns, hunting rifles. From old Berdan rifles. There were no pauses, no general advances. Many fought single-handed. Died single-handed. It was not an army fighting—divisions, battalions, companies—but people, partisans and underground fighters: men young and old, women, children. Tolstoy called this many-faced surge “the cudgel of the people’s war” and “the hidden warmth of patriotism,” and Hitler (like Napoleon before him) complained to his generals that “Russians don’t fight according to the rules.”
To die in this war was not the most frightening thing. There was something else…Picture to yourself a soldier at the front, surrounded by his family—children, wife, old parents. He must be ready at every moment to sacrifice them, too. To send them to the slaughter. Courage, as well as betrayal, often had no witnesses.
In our villages on Victory Day there is weeping, not rejoicing. Many weep. They grieve. “It was so horrible…I buried all my family, I buried my soul in the war” (V. G. Androsik, underground fighter).
They begin to talk softly, and in the end almost all of them shout.”


‘অবশেষে’ শব্দটা ভীষণ সুন্দর এবং হৃদয়বিদারী। এই সবকিছুর শেষ করব আখ্যানে লেখিকার বক্তব্য দিয়ে:

“আর অবশেষে— যুদ্ধজয়…
যদি জীবন ওদের ক্ষেত্রে শান্তি আর যুদ্ধে বিভক্ত করা যেত, এখন সেটা যুদ্ধ আর জয়লাভে।
আবার দুটো আলাদা জগৎ, দুটো আলাদা জীবন। ঘৃণা শেখার পরে, ওদের ভালোবাসতে শিখতে হবে আবার। পুরোনো অনুভূতিগুলোকে মনে করতে হবে। ভুলে যাওয়া কথাগুলোকেও।
যে-মানুষ যুদ্ধে সৃষ্টি হয়ে উঠেছে তাকে গড়ে উঠতে হবে এমন কিছু দিয়ে যা যুদ্ধ নয়।”

[আগামী পর্বে এই বইয়ের ‘A HUMAN BEING IS GREATER THAN WAR’ অধ্যায়ের ভাষান্তর প্রকাশিত হবে।]

Facebook Comments

3 thoughts on “লুক্কায়িত পাঠক্রম : শতানীক রায় ও শানু চৌধুরী Leave a comment

  1. এই বইটার প্রেক্ষাপট হিসাবে লেখিকার আরেকটা বই খুব গুরুত্বপূর্ণ, জিংকি বয়েজ … আফগান যুদ্ধে নিহত রুশ সৈনিকদের নিয়ে লেখা । আজকের আফগানিস্থানের যুদ্ধের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে বইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে একটা যুদ্ধ একটা সমাজকে সংকটে ফেলতে পারে, তার উদাহরণ এই বইটা। মূলত সাংবাদিকের দৃষ্টিতে দেখা। এই বইটিও তাই। পুরুষ সৈনিকদের পাশাপাশি পাঁচ লাখেরও বেশি সোভিয়েত নারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এ নারীরা- যারা স্বপ্ন দেখছিল বিয়ে করার, তাদের হতে হলো সৈনিক। তারা শুধু আহত সৈনিকদের সেবা করেননি, রাইফেল হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধে এবং যুদ্ধ শেষে অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হতে হয় তাদের। সোয়েতলানা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক নারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এ জন্য তিনি একশ’রও বেশি শহরে ও গ্রামে ঘুরেছেন। এ বইয়ে ইতিহাসের ট্র্যাজিক সময়ের বিবরণ শুধু নয়, জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ভবিষ্যতের সোভিয়েত ভূখণ্ডের পরিণাম কী দাঁড়াবে, মানুষের অবস্থা কেমন হবে, তারও ইঙ্গিত মেলে সাক্ষাৎকারগুলোতে। খুব বড়ো কাজ।

  2. ভালো লাগলো , চমৎকার পরিকল্পনা। যুদ্ধ ও যুদ্ধের পরের পৃথিবী নারী পুরুষ বিচার করে না।

  3. লিঙ্কটা পাওয়া মাত্রই পড়া হয়ে ওঠেনি বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।শতানীক, তোমাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারিনা,এমন একটা প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখার কথা ভেবেছো বলে।তোমার লেখা যে কোন বিষয়ই একটা ডিসকোর্স রচনা করে।আমি লেখার ভেতরেই আছি।পরের অংশটুকু পড়ি।

Leave a Reply