মহাকাশ, মহাবিশ্ব : শংকর লাহিড়ী
[বিস্ময় আর খোঁজ মানুষের এই দুটো গুণই ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছে মানব সভ্যতার। নিজের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ও তারই মাঝে নিজের আপাত অবস্থানকে চিনে নিতে চেয়েছে সে চিরকাল। ধীরে ধীরে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের পৃথিবীকে, তারপর পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশ, মহাবিশ্ব। কত অজানা খবর, কত আবিষ্কার ঘটে চলেছে দিনের পর দিন। সেই সমস্ত কথা নিয়েই এবার কলম ধরলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, চিত্র-পরিচালক ও প্রকৌশলী শংকর লাহিড়ী। কসমোলজি নিয়ে তাঁর গভীর আগ্রহ ও জ্ঞানের কথা অনেকেই জানেন। যে দক্ষ শৈল্পিক ভঙ্গিতে তিনি এই সমস্ত জটিল তত্ত্ব ও আবিষ্কারের কথা লেখেন তার সাথে ইতিমধ্যেই অনেক পাঠক পরিচিত। অপরজনের ধারাবাহিক বিভাগ – “মহাকাশ মহাবিশ্ব”।]
১২
বাড়ির কাছে আরশি নগর :
কাল অনেক রাত অব্দি গভীর মহাকাশের নির্জন বিশাল প্রান্তরগুলোয় (Voids) ভার্চুয়াল ট্যুর করছিলাম। তারপর ঘুমিয়ে পড়েছি। আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি, সারারাত ধরে দেবতার ছেলেমেয়েরা নীল প্যাস্টেল ঘষে গেছে সারা আকাশে। আজ হাওয়া উঠেছে। ভাদ্রমাসের মন কেমন করা, এলোমেলো। পর্দা উড়ছে, যেন অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দমধুর হাওয়া।
কাল রাতের আকাশে চাঁদের দিকে তাকালে কাছাকাছি যে দুটো উজ্জ্বল বিন্দুকে দেখা যাচ্ছিল, তারা দুটো গ্রহ, বৃহস্পতি আর শনি। শনিকে ঘিরে আছে তার উজ্জ্বল বলয়। এই গ্রহ দুটোরও অনেকগুলো ছোটো-বড় চাঁদ আছে। বৃহস্পতির ৭৯-টা, যার মধ্যে ৫৩-টার নামকরণ হয়ে গেছে, এবং শনির ৮২-টা চাঁদ ! টেলিস্কোপে চোখ রাখলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে কয়েকটাকে, যারা গ্রহের পেছনে আড়ালে লুকিয়ে নেই এবং যারা কাছাকাছি আছে।
আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রদের নিয়ে আমাদের মতো পেটরোগা বাঙালিদের কত ভয়। মনে এই ভয় ধরিয়েছে সর্বজ্ঞ জ্যোতিষীরা। বিশেষতঃ এই কলকাতায়। এখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে শনিবার সন্ধেবেলা প্রদীপ জ্বেলে শনির পুজো হয়। ল্যাম্পপোস্টের নীচে তিনফুট হাইটের শনিমন্দির। ট্রাফিক জ্যাম। সিভিক ভলান্টিয়ারও হাত জোড় করে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু হায়, শনির ৮২-টা চাঁদ নিয়ে কারও মনে কি ভয়ডর ভক্তি কিছুই নেই? কোথাও তো কেউ মাইমাস, টিথিস, টাইটান, এনসেলেডাস বা, ক্যালিপ্সোর নামে পুজোটুজো দেয় না? হায় হায় ! পাঁজিওয়ালারাও কবেকার নোটবই পড়ে চালিয়ে যাচ্ছে, আকাশের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না।
তাহলে আমরা যা-কিছু করি, এবং করে চলেছি, তার পেছনে কি কোনও বিশেষ ভাবনাচিন্তা কাজ করে ? নাকি আমরা আবেগ, অকারণ সংস্কার, অথবা দীর্ঘদিনের বোধবুদ্ধি ও অভ্যাসবশতঃ করে চলেছি? আমরা আর নতুন করে ভেবে দেখি না কিছুই। কেউ কি কখনও নিজেকে আবার বলবে- ভাবো?
কত সহস্র বছরের সমস্ত অর্জিত জ্ঞান আজ তামাদি হয়ে গেছে, তা দিয়ে আর কিছুই আয়ত্তে আসবে না। গত পঞ্চাশ বছরে কত বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে প্রযুক্তি। বদলে গেছে প্যারাডাইম। বদলে গেছে বিপ্লবের স্বরূপও। তবুও যে আমরা বারবার ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে পড়ছি, তার সমাধান আমাদেরই খুঁজে পেতে হবে।
কথাটা আর revolution নয়, কথাটা এখন provolution ; এবার নিজের চিন্তাধারাকেই provoke করতে হবে। ভেবে দেখতে হবে নিজের গন্ডির বাইরে, সঙ্ঘারামের বাইরে, আর যা যা কিছুর বাইরে যাওয়া যায়। এমনকি এই বিশ্বেরও বাইরে। জানতে হবে Systems dynamics, আর তার বিজ্ঞানকে। এখন প্রয়োজন নতুন ভাবনা, নতুন ভাবে বুঝতে চাওয়া– কীভাবে চলছে এই বিশ্বপ্রকৃতির কিমাকার ডায়নামো। কে তাকে এমন করে, এমন বিড়ম্বিত করে চালায়।
বিজ্ঞানীরা নানা রকমের হিসেব কষে জেনেছেন যে, এই বিশ্বসংসার সৃষ্টি হয়েছিল আজ থেকে আনুমানিক ১৩৭৯ কোটি বছর আগে, একটি বিন্দু থেকে সহসা অতিকায় অতিতপ্ত বিপুল বিস্ফোরণের মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা যাকে বলেছেন ‘বিগ ব্যাং’। সেই থেকে ব্রহ্মান্ড ক্রমশঃ তীব্রবেগে প্রসারিত হয়ে চলেছে। হিন্দু শাস্ত্রে আছে– আমাকে বলেছিলেন কবি মণীন্দ্র গুপ্ত— যে, স্রষ্টা নাকি এই বিপুল বিশ্বকে সৃষ্টি করেছিলেন একটি ফুৎকারে। প্রাচীনকালের বিজ্ঞ ঋষিদের চিন্তার সাথে আজকের বিজ্ঞানীদের ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্বের এই মিলটুকু আমাকে বিস্মিত করেছিল।
এই বিপুল বিশ্ব কতকাল আগে কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, কত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ সে এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা করে চলেছেন হাজার হাজার জ্যোতির্বজ্ঞানী, প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে কত নতুন তথ্য, প্রতিদিন বেড়ে চলেছে জানার পরিধি। একে সাহায্য করছে নিত্যনূতন প্রযুক্তি, জ্ঞানভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে একেকটা মাইলস্টোন ; প্রথম যখন অপটিকাল টেলিস্কোপ আবিস্কার হল (1609), ক্রমে এলো রেডিও টেলিস্কোপ (1937), তারপরে আরও বিশালাকার রেডিও টেলিস্কোপ (Very Large Array Radio Telescope / 1980)।
ক্রমশঃ মহাকাশের গভীরে বহুদূর প্রসারিত হল মানুষের দৃষ্টি, যখন মহাকাশেই একে একে স্থাপিত হল :
১। ভূপৃষ্ঠের ৫৫০ কিমি ওপরে, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope / April 1990)
২। ভূপৃষ্ঠের ১৬,০০০ থেকে ১,৩৩,০০০ কিমি ওপরে, চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ (Chandra X-Ray Observatory / July 1999)
৩। ভূপৃষ্ঠের ৫৭০ কিমি ওপর দিয়ে এবং পৃথিবী থেকে প্রায় ২১ কোটি কিমি দূরত্বে (earth-trailing orbit) সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, স্পিটজার ইনফ্রা-রেড স্পেস টেলিস্কোপ (Spitzer Infra-red Space Telescope / August 2003)
৪। ভূপৃষ্ঠের ৫৬০ কিমি ওপরে, গামা-রশ্মি টেলিস্কোপ (Fermi Gamma-Ray Large Area Space Telescope / June 2008)
৫। ২০২১ সালেই আসতে চলেছে ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’, যা আরও শক্তিশালী।
মহাকাশের গভীরের লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রপুঞ্জ, পালসার, কোয়াজার, সুপারনোভা, নিউট্রন নক্ষত্র ও কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসা সকল রকমের দৃশ্য ও অদৃশ্য রশ্মির ছবি তুলে বিজ্ঞানীরা তাঁদের সুপার কম্পিউটারে তৈরী করে ফেললেন বিশাল ব্রহ্মান্ডের নানা অংশের ত্রিমাত্রিক মডেল। মহাকাশে এইসব টেলিস্কোপের কক্ষপথে কোনও বায়ুমন্ডল নেই, পৃথিবীর মতো বায়ুদূষণও নেই। দৃষ্টি তাই স্বচ্ছ।
হাবল টেলিস্কোপের তাই অভাবনীয় দৃষ্টিশক্তি। অন্ধকার মহাকাশের গভীরে, ১১,০০০ কিমি দূরে যদি একটি জোনাকি থাকে, হাবল টেলিস্কোপ তার স্পষ্ট ও নিখুঁত ছবি তুলে নিয়ে দেখাতে পারে আমাদের, এতটাই তার ক্ষমতা। এই লেখার আগের একটি পর্বে আমি জানিয়েছিলাম, পৃথিবী থেকে মহাকাশের দিকে তাকিয়ে ডাকটিকিট সাইজের একটা ছোট্ট অংশের (Hubble Ultra-Deep Field) ছবি তুলে ২০০৪ সালে হাবল দেখিয়েছিল যে, সেখানে রয়েছে প্রায় দশ হাজার গ্যালাক্সি, যার প্রত্যেকটি যেন আমাদের ছায়াপথের মত, যার প্রত্যেকটির মধ্যে আছে আমাদের সূর্যের মত প্রায় দশ হাজার কোটি নক্ষত্র!
মহাবিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে শুধু যে আলোকরশ্মি এসে পৃথিবীর টেলিস্কোপগুলোয় পৌঁছচ্ছে, তা তো নয়। আসছে রঞ্জন রশ্মি, অবলোহিত রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, আর তীব্র গামা রশ্মির মতো নানান তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ, যারা পুরু গ্যাসের স্তর আর অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জ ভেদ করেও চলে আসছে, যেটা আলোকরশ্মির পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু যেটুকু আলোকরশ্মি আমাদের কাছে পৌঁছচ্ছে, তাই দিয়ে ব্রহ্মান্ডের খবর নিতে গেলে বেশিটাই অজানা আর অদৃশ্য থেকে যেত মানুষের কাছে। আকাশে এইভাবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সমস্ত রকমের রশ্মিদের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হঠাৎই, ১৯৬৫ সালে, একটা জিনিস নজরে এসেছিল দুজন আমেরিকান বিজ্ঞানীর (Arno Penzias & Robert Wilson), যার জন্যে ১৯৭৮ সালে তাঁরা নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
সাধারণ টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশে চোখ রাখলে, বহুদূরের নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সিদের মাঝে অন্ধকার স্থানগুলোতে কিছুই চোখে পড়ে না, শুধুই নিকষ কালো আঁধার। কিন্তু রবার্ট এবং আর্নো দেখছিলেন রেডিও টেলিস্কোপে চোখ রেখে, যা মহাকাশ থেকে ছুটে আসা বেতার তরঙ্গকে, বিশেষত মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গকে নজর করছিল। ওঁরা দুজনে বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ করেছিলেন যে, যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে একটা অতিক্ষীণ বেতার তরঙ্গ, মহাকাশের সবদিক থেকেই যা আসছে। এটাই যেন মহাকাশ জুড়ে সবকিছুর ব্যাকগ্রাউন্ডে রয়েছে।
অর্থাৎ, সৃষ্টির আদিতে, পদার্থ ও গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি হওয়ারও আগে, বিগ ব্যাং থেকে উদ্ভূত হয়ে, ব্রহ্মান্ডের সর্বত্র যে অতিতপ্ত বিকিরণ বিরাজ করছিল, পরবর্তী ৩,৭৮,০০০ বছরে তা বিপুলভাবে আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে এবং অনেকটা শীতল হয়ে গেলে দৃশ্য আলোর ফোটন কণারা প্রকাশিত হয়। এটা তারই বর্তমান অস্তিত্ব, যাকে এখন ‘মাইক্রোওয়েভ’ তরঙ্গ অবস্থায় শনাক্ত করা যাচ্ছে।
দেখা গেল এর উৎস (যেকোনও দিকেই) আনুমানিক ১৩.৭৯ বিলিয়ান (১৩৭৯ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ, এই বেতার তরঙ্গ, আজ যা আমাদের কাছে এসে পৌঁছলো, তার সৃষ্টি হয়েছিল ১৩৭৯ কোটি বছর আগে, সেটাই তাহলে ব্রহ্মান্ডেরও জন্মসময়। কারণ, যে গতিতে ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ হয়ে চলেছে, তাকে গণনা করে অতীতের দিকে চালনা করলেও দেখা যায় ১৩৭৯ কোটি বছর আগে ব্রহ্মান্ড ছিল সংকুচিত অবস্থায়, যেন একটি বিন্দুতে অবস্থিত। -এই মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ, যার উৎস প্রায় ১৩৭৯ কোটি বছর আগে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির সময়কালে, তারই নাম রাখা হল ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশান’ (CMBR)। এটা ছিল একটা অত্যন্ত মূল্যবান আবিস্কার।
পরে ১৯৮৯-’৯৬ সালে এই নিয়ে আরও অনেক গভীর গবেষণা হয়েছে, যাতে বিশেষ অংশ নিয়েছে নাসার ‘কোবে’ নামক উপগ্রহ (COBE : Cosmic Background Explorer), এবং পরবর্তী কালে (২০০৯-২০১৩) ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির ‘প্লাঙ্ক স্পেসক্র্যাফট’।
[ সৃষ্টির আদিতে বিস্ফোরণজনিত মহাজাগতিক বিকিরণের আজকের ছবি তুলেছে প্লাঙ্ক ]
‘বিগ ব্যাং’ বিস্ফোরণ দিয়ে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির ঠিক প্রথম মুহূর্তটিতে কী কী ঘটেছিল, এই নিয়ে এখনও নাকি সর্বসম্মতভাবে জেনে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে স্টিভেন ওয়েইনবার্গ লিখেছেন, সৃষ্টির একদম শুরু বা শূন্য মুহূর্তের পরের এক সেকেন্ডের একশ ভাগের একভাগ সময়ের পর থেকে আজ অব্দি যা যা ঘটেছে, তা আমরা এখন নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি। ওই সময়ে ব্রহ্মান্ডের তাপমাত্রা ছিল দশ হাজার কোটি সেন্টিগ্রেড। এটা এত তপ্ত যে তখনও কোনও পদার্থই, বা তাদের অণু, পরমাণু কিছুই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে গঠিত হয়ে ওঠেনি। অতি তপ্ত কোয়ার্ক-গ্লুঅনের মেঘ (প্লাজমা) তীব্রবেগে ছড়িয়ে গিয়েছিল সমগ্র ব্রহ্মান্ডকে অতি বিশাল এক বেলুনের মতো ক্রমশঃ ফুলিয়ে দিয়ে। সেই ফুলে ওঠা বা, ‘ইনফ্লেশন’ (cosmoc inflation) আজও হয়ে চলেছে, এবং দূরত্বের সাথে সাথে ক্রমশঃ বাড়ছে এই ফুলে ওঠার গতি। এর ফলে মহাবিশ্বের সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জ তীব্রবেগে দূরে দূরে ছুটে চলেছে। তবে সবাই যে সকলের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে দূরে চলে যাচ্ছে, তেমনটাও নয়। যেমন ২৫,৩৭,০০০ আলোকবর্ষ দূর থেকে ঘন্টায় চার লক্ষ কিলোমিটার বেগে আমাদের ছায়াপথের দিকে ছুটে আসছে আরেকটা বিশাল গ্যালাক্সি, যার নাম অ্যান্ড্রোমিডা, যে আমাদের গ্যালাক্সির থেকেও আকারে অনেক বড়। – এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই যদি পরস্পরের থেকে দূরে চলে যেতে থাকে, তবে অ্যান্ড্রোমিডা কেন আমাদের ছায়াপথের দিকে ছুটে আসছে গ্রাস করতে?
আসলে, ব্রহ্মান্ডের মধ্যে কোটি কোটি গ্যালাক্সি কিন্তু সমানভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। বরং তারা আছে এক একটি অঞ্চলে ঝাঁক বেঁধে, যাদের ক্লাস্টার বলা হয়। মনে করা হচ্ছে, ব্রহ্মান্ডের এই ক্রমশঃ বেলুনের মতো ফুলে ওঠার মধ্যেও কিছু কিছু ক্লাস্টার আছে, যার অধিবাসী গ্যালাক্সিরা নিজেদের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণের টানে কেউ কেউ চলে আসছে পরস্পরের কাছেও।
তবে ক্লাস্টারগুলো কিন্তু পরস্পর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তীব্র বেগে, ব্রহ্মান্ডরূপী বেলুনটির ক্রমশঃ ফুলে ওঠার কারণে।
জন্মমুহূর্তের অতিতপ্ত (দশ হাজার কোটি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) অবস্থা থেকে রওনা দিয়ে যে বিকিরণ ১৩৭৯ কোটি বছর পরে আজ পৃথিবীর রেডিও টেলিস্কোপে এসে পৌঁছলো, তার তাপমাত্রা কমতে কমতে আজ প্রায় মাইনাস দুশো সত্তর (-২৭০) ডিগ্রি। সময়ের সাথে সাথে, এবং ব্রহ্মান্ড বিপুল বেগে প্রসারিত হয়ে চলার কারণেও সেই আদিতপ্ত অবস্থা এখন এতটাই শীতল। তবুও তাকে মাপা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা মেপে দেখেছেন প্লাঙ্ক স্পেসক্রাফটের তথ্য বিশ্লেষণ করে। এবং হিসেব কষে দেখা গেল, ১৩৭৯ কোটি আলোকবর্ষ পার হয়ে ব্রহ্মান্ডের দশদিক থেকে যে তরঙ্গ আজ আমাদের কাছে এসেছে, সেই একরত্তি ব্রহ্মান্ডের আদি অবস্থান থেকে আমরা এখন ৪৬৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে সরে এসেছি।
অর্থাৎ, এখন আমরা যে ব্রহ্মান্ডকে দেখতে পাচ্ছি, তা আমাদের চারপাশে প্রায় ৪৬৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূর অব্দি বিস্তৃত ; অর্থাৎ, আমাদের দৃশ্যজগত এখন এমন একটা গোলক, যার ব্যাস প্রায় ৯৩০০ কোটি (৯৩ বিলিয়ন) আলোকবর্ষ।
আরও উন্নত টেলিস্কোপ তৈরি হলে, আমরা আরও দূরে দেখতে পারবো। তবে এরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা যেমন উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে মহাকাশের আরও গভীরে দেখার চেষ্টা করবো, তেমনই নিরন্তর প্রসারণের কারণে অতিদূরের নক্ষত্রমন্ডলগুলোও তো ততক্ষণে আরও অনেক দূরে চলে যাবে, আমাদের দৃষ্টির বাইরে। আপাততঃ এইটা আমাদের মেনে নিতে হবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী ব্রহ্মান্ডের যে ৯৩০০ কোটি আলোকবর্ষ অব্দি এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্বের আয়তন তার প্রায় ২৫০ গুণ বড়।
ব্রহ্মান্ডের এই প্রসারিত হওয়ার গতিকে হাবল ধ্রুবক বা, Hubble Constant দিয়ে মাপা হয়।
তার আগে দূরত্বের মাপকে একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। মহাবিশ্ব এতই বিশাল যে সেখানে দূরত্বকে মাপার জন্য শুধু লক্ষ কোটি মাইল বা কিলোমিটার দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। তাই দরকার কিছু বড়সড় একক। যেমন অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট (AU), যা পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্বের ( ১৫ কোটি কিমি) সমান।
এর চেয়ে বড় দূরত্ব এক আলোকবর্ষ, অর্থাৎ আলো একবছরে যতদূর পথ যায়। এই দূরত্ব হচ্ছে, নয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কোটি (9.5 Trillion) কিমি, অথবা ৬৩,২৪১ Astronomical Unit (AU)।
এছাড়াও আরও দুটো মাপ আছে দূরত্বের— পারসেক, এবং মেগাপারসেক। এক পারসেক (parsec) হচ্ছে, ৩.২৬ আলোকবর্ষ। আর এক মেগাপারসেক (megaparsec) হচ্ছে, এক মিলিয়ন পারসেক, মানে, ৩২ লক্ষ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ।
1 AU = 15 crore Kms
1 Light-year = 9.5 trillion Kms; or, 63,241 AU
1 parsec = 3.26 light-years
1 megaparsec = 3.26 million light-years
এবারে ভেবে দেখা যাক, তারারা অনেক আলোকবর্ষ দূরে কীভাবে সরে সরে যাচ্ছে। এবং ব্রহ্মান্ডের আয়তন বিপুলভাবে ফুলে ওঠার সেই গতিকে ‘হাবল ধ্রুবক’ দিয়ে বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন কীভাবে। (ধ্রুবক হলেও, এর মান ক্রমশঃ বেড়েছে বলে লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা)।
Hubble Constant (present value) = 74 Kms/second/megaparsec
এর অর্থ হল, পৃথিবী থেকে ১ মেগাপারসেক অর্থাৎ ৩২ লক্ষ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে যেসব নক্ষত্র রয়েছে, তারা আমাদের থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৭৪ কিমি বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। তাহলে ২ মেগাপারসেক অর্থাৎ ৬৫ লক্ষ ২০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে আছে যেসব নক্ষত্ররা, তারা তবে আমাদের থেকে দ্বিগুণ বেগে প্রতি সেকেন্ডে ১৪৮ কিমি বেগে দূরে চলে যাচ্ছে। তার মানে, যে যত দূরে আছে, তার আরও দূরে চলে যাওয়ার গতিও তত বেশি। ব্রহ্মান্ডের জন্মসম্পর্কিত এটা এক যুগান্তকারী আবিস্কার।
যেসব নক্ষত্রমন্ডল এখন রয়েছে মহাকাশের বিপুল গভীরে, এবং তীব্র গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে তারা, তাদের থেকে তড়িতচৌম্বকীয় যা কিছু তরঙ্গই আসছে আমাদের দিকে, তার বেশিটাই ইনফ্রারেড রশ্মিতে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে এতদূর পথ পরিক্রমা করতে। তাদের দেখার জন্যে বিজ্ঞানীরা এবার অপেক্ষায় আছেন হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে ১০০ গুণ শক্তিশালী ‘জেমস ওয়েব’ (James Webb) নামের সবচেয়ে বড় ও বহুমূল্য টেলিস্কোপটির জন্য।
সোনার আস্তরণ লাগানো এই বিশাল ইনফ্রারেড টেলিস্কোপকে মহাকাশে উৎক্ষেপ করা হবে এইবছরের শেষদিকে (ডিসেম্বর ২০২১)। [নীচে তার ছবি]
পৃথিবী যে কক্ষপথে ঘুরছে, সেই কক্ষপথের কাছেই একটা স্থির বিন্দুতে (Lagrange Point: L2) থেকেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। অধীর উত্তেজনায় রয়েছেন বিশ্বের সব জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
সূর্যকে পৃথিবী পরিক্রমা করে চলেছে তার নিজস্ব কক্ষপথে থেকে। এই কক্ষপথে পাঁচটা বিশেষ স্থান আছে, যাদের ‘লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট’ বলা হয়। এই অবস্থানগুলোতে সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে সবসময়। তাই এইসব ‘পার্কিং স্পেস’-এ কোনো স্যাটেলাইটকে স্থাপন করলে সে ওইখানেই থেকে যাবে, সূর্য বা পৃথিবীর দিকে ছুটে চলে যাবে না। এদের মধ্যে L-2 পয়েন্টটাতে পার্ক করা হবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে। কারণ, ঊর্ধাকাশে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে, এখান থেকে সে সোজাসুজি গভীর মহাকাশের দিকে চোখ রাখতে পারবে, পৃথিবী ও সূর্যকে পিছনে রেখে। সহজে সে এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবে না। তবে জেমস ওয়েব কিন্তু ওই এল-টু বিন্দুতে বসে থাকবে না। বরং সে এল-টুকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে একটা ছোট্ট ও ঈষৎ লম্বাটে (Bean shaped) কক্ষপথে ঘুরতে থাকবে। এল-টু পয়েন্টকে ঘিরে এই ছোট্ট কক্ষপথকে বলা হয় ‘হ্যালো অরবিট’ (Halo Orbit)।
একটা জিনিস আমরা অনেকেই খেয়াল করিনা যে, আমরা যখন কোনও কিছুকে দেখি, তাকে আমরা বর্তমানে দেখি না। দেখি তার অতীত রূপকে। যখন তাকে দেখতে পাচ্ছি, মনে করি, তখন সে সত্যিই সেখানে আর আছে কিনা, জানি না। যেমন, ভোরবেলা যখন সূর্যকে দেখি, আসলে দেখি তার ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগের রূপকে। কেননা, সেখান থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছতে ওই সময়টা লেগেছে। সূর্য যদি সেই মুহূর্তে নিভে গিয়ে থাকে, তাহলেও আমরা সেটা জানতে পারবো আরও ৪৯৯ সেকেন্ড পরে। এরকমই, বহু দূরের যে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে আমরা টেলিস্কোপে রাতের আকাশে দেখতে পাই, সেটাও আসলে তার ২৫ লক্ষ ৩৭ হাজার বছর আগেকার ছবি। এখন সে ওখানে আছে, না নেই, জানা যাবে আজ থেকে ২৫ লক্ষ ৩৭ হাজার বছর পরে। এভাবেই যখনি আমরা কিছু দেখি, কাছে অথবা দূরে, দেখি তার অতীতকেই। টেলিস্কোপ তাই আমাদের সাহায্য করে অতীতকে দেখতে। একটা মজার উদাহরণ দেওয়া যাক।
ধরা যাক, যতীন নামের একজন সাধারণ মানুষের কথাই। ধরা যাক, তার জন্ম হয়েছিল ৫০ বছর আগে, বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া লাইনের ভীমগড়া গ্রামে (কলেজ জীবনে এখানে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম)। তো আজ এই ২০২১ সালে সেই গ্রামটায় গেলে, পঞ্চাশ বছর আগের অতীতকে তো যতীন আর খুঁজে পাবে না কোথাও। কিন্তু যদি আজ পৃথিবী থেকে পঞ্চাশ আলোকবর্ষ দূরে, 51 Pegasi নামের নক্ষত্রমন্ডলে যে একক একটা গ্রহ আছে, কোনো উপায়ে যদি সেখান থেকে একটা শক্তিশালী টেলিস্কোপে পৃথিবীর এই ভীমগড়া গ্রামের দিকে নজর করা যেত, তবে দেখা যেতে পারতো, গল্পের ওই ৫০ বছর বয়সী যতীনের জন্মের দৃশ্য, এমনকি তার বাবা-মাকেও, যাঁরা আজ আর বেঁচে নেই। টেলিস্কোপ তাই আমাদের সাহায্য করে থাকে সুদূর অতীতে চোখ রাখতে।
কোটি কোটি আলোকবর্ষ আগের ব্রহ্মান্ড থেকে রওনা দিয়েছিল যে সব তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ, তাদের মধ্যে থেকে দৃশ্য আলোকে (Visible light) শনাক্ত করা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না, দীর্ঘ যাত্রাপথে ক্রমে এতটাই ম্লান ও দুর্বল হয়ে পড়েছে তারা। তবে শনাক্ত করা যায় অত্যন্ত শক্তিশালী এক্স-রে এবং গামা রশ্মিদের। আর পাওয়া যায় ইনফ্রারেড এবং রেডিও তরঙ্গদেরও, যাদের শক্তি কম হলেও, তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক বেশি। লাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ‘এল-টু’ থেকে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নজরে রাখবে মহাকাশের গভীরতম অঞ্চল থেকে ছুটে আসা ইনফ্রারেড তরঙ্গদের। সেভাবেই তাকে নির্মাণ করা হয়েছে।
নীচের ছবিতে আছে, ক্রোনোলজিকালি, প্রাচীন থেকে নতুনতম টেলিস্কোপ, এবং ব্রহ্মান্ডের গভীর অতীতের কতদূর অব্দি (বিলিওন ইয়ার্স) তাদের দেখার ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ‘জেমস ওয়েব’-এর উৎক্ষেপণ হবে ডিসেম্বর ২০২১।
এই ধারাবাহিক লেখাটি লিখতে লিখতে এত কিছু তথ্য আর জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতে হয় !
সেদিন এভাবেই হাতে এলো, আজ থেকে বিরানব্বই বছর আগের একটা পোস্টকার্ড। আমার বাবা তখন সদ্য কিশোর, স্কুল-ছাত্র। কলকাতায় এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছাত্র পড়িয়ে নিজে পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে। আমার ঠাকুরদা তখন বসিরহাটের কাছে বিথারি গ্রামে, নিজের ভিটেবাড়িতে। গ্রামীণ ডাক্তার। দুটো স্কুল আর লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা। নিজস্ব নাট্যদল।
সেইসময় কলকাতা থেকে বাবা আমার ঠাকুমাকে একটা পোস্টকার্ডে চিঠি লিখে পাঠিয়েছে। দোয়াত কলমে লেখা চিঠি, মোটা অক্ষরে। কিন্তু যা আমার নজর কাড়লো, তা হচ্ছে পোস্টকার্ডের পেছনদিকে লেখা ঠিকানা।
লেখা আছে :
পরম পূজনীয়া মাতাঠাকুরাণী শ্রীচরণকমলেষু।
পোঃ বিথারী।
গ্রামঃ বিথারী।
জেলাঃ ২৪ পরগণা।
শ্রীযুক্ত বাবু চন্দ্রভূষণ লাহিড়ী পিতাঠাকুর মহাশয়ের বাটী।
এই শান্ত সরল গ্রামীণ ঠিকানার দিকে আমি আজও মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকি। কত সহজ ছিল আমাদের পরিচয় !
আগামী একশো বছরে, পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকে যখন পৃথিবী ছাড়িয়ে গ্রহান্তরেও পাড়ি দেবে, সে সময়ে তাদের সম্পূর্ণ ঠিকানা তারা লিখতে চাইবে কীভাবে? -আমি জিগ্যেস করেছিলাম আমার এক ফিউচারিস্টিক বন্ধু রামানুজনকে।
সে বললো, মহাবিশ্বের প্রেক্ষিতে এখন থেকেই আমাদের ঠিকানা অনেকটা এইভাবে লেখা উচিত, তাহলে বোঝা যাবে কত সামান্য মানুষ আমরা, কত সুন্দর করে রাখতে পারতাম এই একরত্তি পৃথিবীকে।
বন্ধুর প্রস্তাবিত ঠিকানা :
Mr. S. K. Ramanujan
Tower-6, Lobby-2, Flat: 16-G,
Flamingo Estate, Cluster II,
E M Bypass,
Kolkata 700046,
West Bengal,
INDIA
South Asia
Northern Hemisphere,
Planet Earth
Solar System,
Orion Arm,
Milky Way Galaxy,
Local Group
Virgo Supercluster
Laniakea
Universe 87D-4253-01*
[ *শেষ লাইনে ইউনিভার্সের পাশে লেখা সংখ্যাগুলো হতে পারে আমাদের ব্রহ্মান্ডের পিন নম্বর। কারণ, আমরা সম্ভবতঃ রয়েছি একটা মাল্টিভার্স দুনিয়ায়, যেখানে আমাদের ব্রহ্মান্ডের মতোই আরও অনেক ব্রহ্মান্ড রয়েছে। ]
[ক্রমশ…]
Posted in: August 2021 - Serial, PROSE