শংকর লাহিড়ী-র কবিতা
টেরোডাক্টিল
কীভাবে যে আঁধার ঘনায় !
কার্পেট পরিস্কার করতে গিয়ে তার
মনে পড়েছিল,
জুরাসিক কালের এক টেরোডাক্টিলের কথা ;
সবুজ বিস্তৃত ডানা
নেমে আসছে তীব্র বেগে
নীচে, নীল জলে।
আমরা তো আদিকাল থেকে
আফিম সেবন করি, ধর্মাধর্মে অর্ধেক বেহুঁশ।
আমাদের ছোটকাকা ইছাপুর বন্দুকের কলে
প্রহরীর কাজ করে ;
তার সাথে টেরোডাক্টিলের
কীভাবে যোগাযোগ হল ঈশ্বর জানেন।
আমাদের ছবিগুলো গড়ে ওঠে অন্ধকারে–
বেশিটাই বন্দুক ও যুবতী।
আজ খুব ভোরে আমি খিড়কির দরজার ওপারে
দুটো খরগোশ দেখেছি।
ঘুমফ্রক থেকে ওরা মুখ বার ক’রে
পৃথিবীর সংকটের কথা
বলাবলি করছিল ; বহুদূরে জলের আওয়াজ।
ক্রমশ আঁধার ঘনালো। উল্লম্ব মেঘের মাঝে
পারমাণবিক চুল্লী থেকে
আমাদের কার্পেটের ওপরে
ঝলসে উঠলো ফিরোজা রঙের
প্রচন্ড বিদ্যুৎ।
সহসা দরজায় যেন কার
ভয়ংকর লেজের ঝাপট আর
কড়কড় বাজ।
ইথার টেবিল
কীভাবে পৌঁছলো সে, নিজেরই পেটের ভেতরে
ঢুকলো কী করে ?
অন্ধকারে জননীর মতো
আলো জ্বলছে প্রদীপের।
নাকি দূর নক্ষত্রের আলো,
কিংবা জোনাকীরা কোনও ছিদ্রপথে ঢুকেছে এখানে।
তেতলার উন্মুক্ত ছাদে
মহাকাশ থেকে ঝরে অবিরাম ভস্মদল–
গামা রশ্মি ঝরে।
এই বুঝি কবিতা লেখার ঘর ?
এই তার যকৃৎ, প্লীহা ?
পিত্তথলি দপদপ করে,
আকাশের আলটেয়ার নক্ষত্রের মতো।
জীবাণুনাশকের গন্ধে ভরে গেছে বহির্পৃথিবী।
সে কি শেষে এইখানে লুকোলো? নিজেরই অভ্যন্তরে?
অথবা সে কিছুই জানেনি,
শুয়ে আছে অপারেশন টেবিলে, ইথারে অজ্ঞান।
আমরা যারা অপেক্ষায় আছি, বিপর্যস্ত এবং সজ্ঞানে-
ঘননীল অন্ধকারে মাথার ওপরে
চক্রাকার ঘোরে শনিগ্রহ ;
মিমাস, টাইটান, রিয়া,
এবং ডাইওনি।
Posted in: August 2021, POETRY