রবীন বসু-র কবিতা

সময়ের অন্নপূর্ণা

১.

আজ এই নিরালম্ব দিন হেঁটে এল ঘরে
চিৎসাঁতারে ভাসে গুমোট গৃহান্ধকার
তিজেল হাঁড়ির মধ্যে যৎসামান্য খুদকুঁড়ো
ক্ষুধা চেয়ে চেয়ে দেখে
মধ্যরাত পাড়ি দিয়ে চাঁদ ক্লান্ত
জোনাকিরাও শয্যা পাতে ঘুমুতে যাবে
অবশেষ গায়ে মেখে নিদ্রাচ্ছন্ন দূরের গ্যালাক্সি
রাত্রি অবসানে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসবে
নতুন দিনের সূর্য ; তুমি তাকে বসতে দিও
পিঁড়ি পেতে খেতে দিও খুদসিদ্ধ
হাঁ-মুখ সভ্যতা পেটপুরে কিছু উষ্ণতা ভরে নিক
তোমার শ্রমের ঘামে বাড়িঘর আলোকিত হোক।

২.

উন্মূল সময়-ঘিরে ত্রস্ততার ঢেউ ভাঙে
বাইপাস সংলগ্ন রেস্তোরাঁ রাত্রির গভীরতা মাপে
মেপে নেয় আদিমতা
সভ্যতার জৌলুস খুলে রাখে পানপাত্র
শেয়ার মার্কেটের ধস, খয়েরি পানের পিক
চিত্রিত অসৌজন্য অসভ্যতার হাত ধরে
তবু বিরামহীন শ্রমিকদের যাত্রা
আহ্লাদ পরিপুষ্ট রাজনৈতিক নষ্টামি দ্যাখে
দেখে নেয় মাইল মাইল শূন্যতা
ত্রিশঙ্কু ঝুলে আছে জীবন দিনাতিপাত
সারা বিশ্ব অন্নহীন, যোগবলে হাত পাতো হে ঈশ্বর
মুষ্টিভিক্ষা দিয়ে যাক্ লণ্ডভণ্ড সময়ের অন্নপূর্ণা।

৩.

অবরুদ্ধ দিন-ঘিরে গতির ঘোড়া থামে
ক্লান্ত বিমর্ষ বিকেল খোলাখুলি কথা বলে
সব পরিচ্ছন্নতা দূষণের দোষ ঘাড়ে নেবে বলে
মধ্যরাতের দরোজা খোলে
মেঘেঢাকা তারার জগৎ অনির্বাণ ইশারায়
কাঁপে, দোল খায় নিরবচ্ছিন্ন আকাশগঙ্গা
রহস্য জড়ানো সেই মধ্যরাত উঁকি মারে
শ্বাসকষ্ট-জর্জরিত পৃথিবীর প্রাণ
আরোগ্য সন্ধানে যাবে ভিনগ্রহের সবুজে
নির্মল বাতাস বুকে ভরার আকুতি জাগিয়ে
থেমে-থাকা ঘোড়ার লাগামে দেয় টান
গতির মাঝখানে নিঃস্ব দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতা!

Facebook Comments

Leave a Reply