মির্জালী বিশ্বরূপ-এর কবিতা
১.
এ জীবনে রাধা-কৃষ্ণ মেলে না।
না মেলে বৃন্দাবন।
না পাওয়া যায় বাঁশি
মাঠের পাটপচা-জল থেকে উঠে আসে মেয়ে
শরীরে পচাজলের অস্বাভাবিক ঘ্রাণের ডাকঘর
লতাগুল্মের উপরে নাঙ্গা কিশোরগঞ্জের গৃহপালিত
ছেলেটি যেন রাজকন্যার
কখন এলে বলো এ মধুর ঘটনার বদ্ধ-শ্রাবন্তনে
লন্ঠন জ্ব’লছে দিনের আলোয় ভাল্লাগছে জিভের রসুই
পৃথিবীর ডোরে কালো আর আলোর অনাবৃত উষ্মেদক
এ হাওয়ায় বনতুলসীর নৃত্যপরবশ মেলে না
এ সুসজ্জিত আতুরে মেলে না
মাংশাশী ফুলের পিয়ানো
পতঙ্গ
কখন এলে বলো ওগো রণক্ষেত্রের দক্ষিণাবর্তের খরগোশ
এই নিলামরাতের পথের উষর্বুধে ওড়ে ঠ্যাংছেঁড়া পাখিরা
ওদের উল্লুন্ঠনের শোরগোল বড়ো-ই মনোহর এবং রম্যশ্রী
যত শুনি তত ম’নে হয় দূরের সুর কান্তরের বেণুর
ওরাও কি পৌরাণিক চরিত্রের শাওন ও ভাদর
এ জীবনে কিছু-ই মেলে না
না মেলে রাধা। না মেলে কৃষ্ণ
না পাওয়া যায় মৃত্যুর ডহরের সুগভীর স্থানীয়-স্থান।
এ জীবনে রাধা-কৃষ্ণ মেলে না।।
২.
পৃথিবী বুঝি শেষ হ’য়ে আসে ঋষ্যাশ্রমে। একজন্মের
রামায়ণ আরেকজন্মের মহাভারত হয় বুঝি। বটবৃক্ষের
মার্গশীর্ষে দেখেছি কত কচুবন। কত ঊল্লা আর পিঁপড়ের
আয়োজন পিন্ধাহ করে কচ্ছপজীবন। আর সমস্ত
মণিচন্দ্রে বিদ্যমান তপফল। জপফল ছিঁড়ে কল্পতরুরে
হরো হরো মহাদেব। মহাদেবী কার্য্যাশ্রয়ে ক্যানো
জিজ্ঞাসেন না দুনিয়ার অন্তিমপর্ব তবু। তবু কাহার তনয়ে
পাটচাষ খুঁজেছিলো মানুষ কৃষকের অন্তরে
আর পরস্পরে পৃথিবীর কোনো জননী নেই। আপেল
গাছের আকাশের নীচে সাগরতীরের অশ্বমেধ। অশ্বমেধা
বড়ো ছত্রপলাশের যজ্ঞস্থান
এই সব স্থানে স্বর্গপুরী। মহাশয় পৃথিবী ঘুমিয়ে যাবে তো
দ্রাক্ষাক্ষেতে। কি আর ক’রিনু আমি কমনীয় রাজার চাঁদ
এবং সুন্দরী লিয়ে। গণ্ডূষের ভাষ দুনিয়ার রক্ষাপত্রের
শ্রীনিবাস। পাহাড়ের ঝকঝকে দৃশ্যে হংসদের রাজহাঁস
এতৎ সমস্ত গুণমণি-ক্রোধ আজি হ’তে ত্বরিত চিরদিন।
প্রমাণ করো সুধন্বা ছিদ্রচয়ে শুধু গোপনের পরমহাত
থাক। এই সমস্ত পৃথিবীর জোনাকিতে কেউ-ই পৃথিবীর
নয়। এই সমস্ত পৃথিবীর আণবিক স্পষ্টে তাকিয়ে
তাকিয়ে লোকের চক্ষুক্ষয়
কুটিল জটিল সব দলিল-দস্তাবেজ সেহেতু। মতলবটুকু
ধুস্তূর-কুসুমে কদাচন এবং ঈশ্বর বচন। যদি পূর্ব্বমঙ্গলে
সত্ত্বরজস্তমোগুণের যত্রতত্রের শিখরগুলি জানে ধরণীর
প্রত্যেকে নিঃসন্দেহে : তাহ’লে আগুনের টগবগানির
শেষ ধাক্কাধাক্কির নির্ব্বন্ধে পৃথিবী থাকবে টাঙানো।।
Facebook Comments
Posted in: August 2021, POETRY