মার্কসবাদের শক্তিটা এখানেই যে এটি তত্ত্ব ও প্রয়োগের একটি যথার্থ সমন্বয়কারী দর্শন : অঞ্জন মুখোপাধ্যায়

ভণিতা:- (দেবাশীষ দত্ত অনেকদিন ধরেই বলছেন, একটা লেখা দেবার জন্য। সত্যি কথা বলতে কি আমি এমন কিছু জানি বা বুঝি, যেটা সবাইকে জানাতে হবে, এরকমের কোনও ধারণাই আমার নেই, বরঞ্চ উল্টোটাই আছে। আর এই করোনা আবহে আমার মানসিক অবস্থা অনেকটা ঠিক এইরকম,”প্রচুর পড়ি, প্রচুরতর চিন্তা করি-এবং অতি অল্প লিখি। দেখাশোনা কমিয়ে কমিয়ে প্রায় শূন্যে নিয়ে এসেছি। রোজই আসন্ন মৃত্যুর চিন্তা করি এবং চেঁচিয়ে উঠি লাব্বায়কা, ইয়া রব্বী—লাব্বাইকা।” – সৈয়দ মুজতবা আলী (আবু সয়ীদ আইয়ুবকে লেখা চিঠি) ।
অবশেষে দেবাশীষ-দার তাড়নাতেই খানিকটা কলম ধরতে হল। কিন্তু অলসতা আমার মজ্জায়, তাই একটা পুরানো লেখাকেই চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছি। লেখাটিতে প্রচুর উদ্ধৃতি পওয়া যাবে, কারণ উদ্ধৃতি ছাড়া লেখা আমার আসে না। খানিকটা চর্বিত চর্বণ ও বলা যেতে পারে। আরও একটা কথা, প্রচুর গুরুচন্ডালী দোষ পাবেন লেখাটিতে।)

শাসক শ্রেণীর রঙবেরঙের জোড়াতালির গণতন্ত্র, ধ্বজাধারী সুশীলদের মেকি গণতন্ত্র, জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা সামন্ততন্ত্র, তথাকথিত মুক্ত-বিশ্ব-মুক্ত গণতন্ত্রের নামে বেনিয়া করপোরেট পুঁজিতন্ত্র এবং বেশুমার লগ্নীপুঁজি-র এই সমাজে বাঁচতে হলে লড়াই করে বাঁচতে হবে। এখানে বিকশিত হতে হলে, পাহাড় প্রমাণ বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বামপন্থীদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে গেলে সেই উঁচু করতে চাওয়া মাথায় নানা জটিল হিসেব ধারণ করতে হয়। আমরা এমনই এক জটিল সমাজে বসবাস করি, যেখানে প্রতিনিয়ত শ্রেণী সংগ্রামের আগুনে পুড়ে পুড়েই একমাত্র বামপন্থীরা নিজেদের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের বামপন্থার ইতিহাস বহু প্রাচীন। চার্বাক-দর্শন থেকে শুরু করে অধুনা গণতান্ত্রিক অবস্থা পর্যন্ত। সেই সব ইতিহাস, ঐতিহ্য মাথায় রেখেই বামপন্থীদের কাজ করতে হবে। কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো প্রকাশের ২৫ বছর পর কার্ল মার্কস ১৮৭২ সালে প্রকাশিত সংস্করণের মুখবন্ধে বলেছেন:
“……The practical application of the principles will depend, as the Manifesto states, everywhere and at all times, on the historical conditions… for that reason, no special stress is laid on the revolutionary measures proposed at the end of section two. That passage would, in many respects, be very differently worded today. In view of the gigantic strides of Modern Industry in the last twenty-five years, and of the accompanying improved and extended party organisation of the working class, in view of the practical experience gained, first in the February Revolution, and then, still more, in the Paris Commune, where the proletariat for the first time held political power for two whole months, this programme has in some details become antiquated. One thing especially was proved by the Commune, viz. that ‘the working class cannot simply lay hold of the ready-made State machinery, and wield it for its own purposes…”.

আমরা জানি কাজটি মোটেই সহজ সরল নয়। এর প্রতিটি বাঁকেই ওৎ পেতে আছে হাজারো সমস্যা, প্রশ্ন এবং বিভেদ-বাধার দেয়াল। এবং আমরা এও জানি ওই দুর্গম বিভেদের পাহাড় টপকানোর যে ব্রত আমাদের, তার প্রেরণা সর্বহারা শ্রেণীর মুক্তির আলোকবর্তিকা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। এটাই আমাদের পাথেয়। ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণী হচ্ছে এমন একমাত্র শ্রেণী যে তার মুক্তি সমগ্র মানবসমাজের মুক্তির ভিত্তিতেই শুধু সম্ভব এবং তার সামাজিক আধিপত্য কখনোই কোন নতুন শোষণ ব্যবস্থার জন্ম তো দেয়ই না বরং সমস্ত রকম শোষণের অবসান ঘটায় । আর তাই কোনওরকম অন্ধ বিশ্বাস বা বিভ্রান্তি ছাড়াই বস্তুগত ও বিজ্ঞান সম্মত ভিত্তিতে সামাজিক বাস্তবকে অনুধাবন করতে একমাত্র মার্কসবাদ-ই সক্ষম। তাই মার্ক্সবাদ। শুধু জ্ঞানের খাতিরে নয়, জানের দায়েও।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রয়োগের ইতিহাসে বার বার দেখা গেছে যখনই বাস্তব অনুশীলন গুরুতর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে তখনই তত্ত্ব চর্চা গভীরতর করা হয়েছে এবং তার মাধ্যমে মৌল তত্ত্বের পুনর্বিকাশ ঘটানো হয়েছে। দেখা গেছে নব-গঠিত সেই তত্ত্বের আলোকে সমস্যার সমাধানও হয়েছে। একটি নতুন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য মার্কসীয় তত্ত্বকে সময়োপযোগী করতে না পারলে শ্রেণী সংগ্রাম ব্যাহত হয় এবং পুঁজিবাদ মতাদর্শগত ও দার্শনিক আধিপত্য করতে শুরু করে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আজকের দিনে সমাজতন্ত্রের অনুশীলনে যে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় চলছে গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে এর তুলনা গত দেড়শ বছরের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে তত্ত্বের নিবিড় চর্চা কি অসামান্য গুরুত্ব নিয়ে আজ উপস্থিত হয়েছে। এই কাজে আমাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে কিছু আলোচনার সুত্রপাত ঘটানোর জন্য এই প্রয়াস। ফলিত সমাজতন্ত্রের এই সমূহ সঙ্কটের সময়ে মার্কসবাদ তিন দিক থেকে আক্রান্ত হয়েছে।

প্রথমতঃ আক্রান্ত হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া তাত্ত্বিক-দের দ্বারা। প্রায় প্রতিটি সমাজতান্ত্রিক দেশে পুঁজিবাদের আবির্ভাব এবং প্রতিটি দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির ক্ষয় এদের মধ্যে চরম আহ্লাদ সৃষ্টি করেছে। মার্কসবাদ যে আজকের যুগে অচল হয়ে গেছে সেটি চিৎকার করে ঘোষণা করার এমন চমৎকার বাস্তব পরিস্থিতি এর আগে কখনও আসে নি। এ পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে এরা হিংস্র ভাবে মার্কসীয় তত্ত্বকে আক্রমণ করেছে। ‘উত্তর-আধুনিকতা’ তাদের মার্কসবাদ বিরোধী অস্ত্র ভাণ্ডারে নতুন সংযোজন। স্বাভাবিক ভাবেই বুর্জোয়া তাত্ত্বিকদের এই অভিযানকে প্রতিহত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সারবত্তা এবং তার বিজয়ের অনিবার্যতাকে তুলে ধরা আজকের দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

দ্বিতীয়তঃ, তথাকথিত মার্কসবাদী শিবিরের মধ্যেই একটি দক্ষিণ পন্থী আক্রমণ চলছে মার্কসবাদের বিরুদ্ধে। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির পতন, অন্যদিকে বিজ্ঞান ও কারিগরির অসামান্য অগ্রগতির হাত ধরে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আপাতঃশক্তি সঞ্চয় বিহ্বল করে দিয়েছে ‘মার্কসবাদী’দের এক বড় অংশকে। তাত্ত্বিক ভাবে এরা মার্কসবাদকে নাকচ করছেন না। কিন্তু মনের অনেক গভীরে বিশ্বাস টলে গেছে। সমাজতন্ত্রের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে, আর এই সন্দিগ্ধ মন নিয়ে তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না শ্রেণী সংগ্রামের ঝঞ্ঝাবাত্যায় বুক পেতে দেওয়া। এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্বকে খাপ খাওয়ানোর জন্য তারা নতুন মোড়কে এক অতি পুরানো তত্ত্ব আমদানি করছে যার সার কথা হলো শ্রেণী সংগ্রাম এখন গৌণ স্থানে চলে গিয়েছে। মার্ক্সবাদীদের অপেক্ষা করতে হবে যতোদিন না উৎপাদন-শক্তির অবাধ বিকাশ পুঁজিবাদের মধ্যে নতুন ভাবে একটি আভ্যন্তরীণ সঙ্কট সৃষ্টি করে।

বামপন্থীরা এই বিপজ্জনক মতবাদের বিরুদ্ধে সর্ব শক্তি নিয়ে লড়াই করবে। যে ভাবে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও পশ্চাৎপদ দেশের মধ্যে, বিভিন্ন দেশের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে, ও একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ধন বৈষম্য তীব্র ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে শ্রেণী সংগ্রামের বস্তুগত ভিত্তি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। নব্বই-এর দশক জুড়ে পশ্চিমী দুনিয়া সহ সমগ্র পৃথিবী জুড়েই যে শ্রমিক আন্দোলনের এক নতুন জোয়ার আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা আগামী দিনের গভীরতর ও প্রশস্ততর শ্রেণী সংগ্রামের সূচনা। একথা ঠিক, বিষয়ীগত কারণে এবং যা ভাবা হত পুঁজিবাদের টিকে থাকার ক্ষমতা তার চেয়ে বেশী হওয়ার কারণে, শ্রেণী সংগ্রাম আপেক্ষিক ভাবে দুর্বল অবস্থাতে রয়েছে। আর ঠিক সেই কারণেই আমরা মনে করি প্রত্যক্ষ শ্রেণী সংগ্রামে বামপন্থীদের ভূমিকা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বদ্ধ দুয়ার উন্মোচিত করতে গেলে বামপন্থীদের যে নির্ধারক ভূমিকা আজ প্রয়োজন তাকে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ শ্রেণী সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করতে না পারলে তত্ত্বের কাজ পরিণত হবে আত্মতুষ্টিতে ভরপুর নেহাত বুদ্ধিজীবী-সুলভ চর্চায়। মার্ক্স ও এঙ্গেলেস তাদের জীবদ্দশাতেই দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে শ্রেণীসংগ্রামের নানান উত্থানপতনের মধ্যেও এটিকে সমস্ত তত্ত্ব ও কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে যেতে হয়। আশা করি বামপন্থীরা যত্নবান হবেন শ্রেণীসংগ্রামের এই প্রাধান্যকারী ভূমিকাটি-কে সতত ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে।

তৃতীয় আক্রমণটি আসছে একটি “বাম” সংকীর্ণতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে। এই মতের প্রবক্তারা মনে করেন সমস্ত বিশ্বে সমাজতন্ত্রের যে বিপর্যয় চলছে তা মার্কসবাদের কোন সঙ্কট সূচনা করে না, সূচনা করে মার্ক্সবাদীদের সঙ্কটকে। এ চিন্তা দাঁড়িয়ে আছে এক ভ্রান্ত যুক্তির (fallacy) উপরে। এ যুক্তি আমাদের মার্কসবাদ বিরোধী অবস্থানে ঠেলে দিতে বাধ্য। প্রথম কথা হচ্ছে মার্ক্সবাদীদের সঙ্কট আর মার্কসবাদের সঙ্কটকে কোন ভাবেই বিভাজিত করা সম্ভব নয়, কারণ মার্ক্সবাদীদের চিন্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মার্কসবাদ বিকশিত হয়; আর মার্ক্সবাদীদের চিন্তন-প্রক্রিয়ায় যদি সঙ্কট উপস্থিত হয় তবে তা অনিবার্য ভাবে মার্কসবাদের বিকাশের রুদ্ধতার মধ্যেই প্রতিফলিত হবে। আর সেটাই মার্কসবাদের সঙ্কট। দ্বিতীয়তঃ ‘মার্কসবাদ’ এমন এক দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞান যার মর্মকথাই হচ্ছে এর ‘বিকাশমানতা’। শ্রেণীসংগ্রামের নতুন নতুন পরিস্থিতি, নির্দিষ্ট একটি সমাজে ও তারই সঙ্গে গোটা বিশ্বে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তনগুলি যে নতুন সব সমস্যা উত্থাপিত করে সেগুলির সৃজনশীল সমাধানসুত্র হাজির করাই তো মার্ক্সীয় তত্ত্বের প্রাণ! তুলনামূলক ভাবে একটি দীর্ঘ সময় জুড়ে যদি এই অতি-প্রয়োজনীয় কাজটি করতে মার্ক্সবাদীরা ব্যর্থ হয়, তবে তা অবশ্যই মার্কসীয় তত্ত্বের বিকাশের রুদ্ধতাকেই প্রমাণিত করে। যে বিকাশমানতা এই তত্ত্বের সার কথা তার রুদ্ধতা যদি তত্ত্বের সঙ্কট না হয় তবে তত্ত্বের সঙ্কট আর কীভাবে হতে পারে? এই সত্যটি বুঝতে না পারার অর্থ হচ্ছে মার্কসবাদকে একটি অনড় অটল আপ্ত বাক্যে (dogma) পর্যবসিত করা, এবং গতিময়তাই যে এই তত্ত্বের নির্যাস তা উপলব্ধি না করা। এই প্রবণতাটি ভীষণ ভাবে বিপজ্জনক এই কারণে যে এটি অনেক বেশি প্রতারণা পূর্ণ। মার্কসবাদের জয় গান গাইতে গাইতেই মার্কসবাদের অন্তরাত্মাকে ধ্বংস করে এই মতবাদ। এই গোঁড়ামিবাদের (doctrinarism) বিরুদ্ধতা করাটাই বামপন্থীদের অন্যতম কর্তব্য। আমরা মনে করি বিগত কয়েক দশক ধরেই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যে বিপর্যয় চলছে তা স্পষ্টই নির্দেশ করছে যে এতকাল পর্যন্ত যে অনুশীলন হয়েছে তাতে বিশেষতঃ সমাজতান্ত্রিক গঠন কার্য, এবং তৎসম্পর্কিত অনেকগুলি সমস্যা সমাধান করা যায় নি! আজ যারাই আন্তরিক ভাবে সমাজতন্ত্রের পতাকাকে বয়ে নিয়ে যেতে চান তাঁদেরই প্রধান কাজ হবে সেই সমস্যার ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করা, তার সমাধানের সূত্র খুঁজে বের করা এবং সৃজনশীল ভাবে তার প্রয়োগে নামা। এ কাজের কোন বিকল্প নেই। একাজ না করে শ্রেণীসংগ্রামের কোন যোগ্য ভূমিকা পালন করা যাবে না, অগ্রণী চিন্তাকে সংহত করা যাবে না, সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জনগণ থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট কর্মিবাহিনীর মধ্যেও যে হতাশার পরিবেশ তৈরী হয়েছে তাকেও দূর করা যাবে না। সংকীর্নতাবাদীরা মনে করেন মার্কসীয় তত্ত্বের কোন সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে বলা মানে হচ্ছে এক ভাবে মার্কসবাদকে নাকচ করার প্রাথমিক পদক্ষেপ। যে ভাবে আজ মার্কসবাদের মৌলিক তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে তাতে এ ভয়ের একটা বাস্তব ভিত্তিও আছে। কিন্তু বিপদ হলো এ আশঙ্কা কাটাবার জন্য তাঁরা যে অন্ধপূজার পথ ধরেছেন তা মার্কসবাদী তত্ত্বের উপর বিপরীত দিক থেকে আর এক সর্বনাশা আঘাত। এটা বোঝা আজ অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছে যে মার্ক্সবাদী তত্ত্বের সঙ্কটকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে মার্ক্সবাদকে অস্বীকার করা বা ছোট করা তো নয়ই, বরঞ্চ মার্ক্সবাদকে রক্ষা করার সব চেয়ে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ।
এ কাজ তখনই সম্ভব যখন মার্কসীয় তত্ত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলি প্রকট হয়ে উঠেছে তাকে অতিক্রম করার এক কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত না হওয়া যায়। এ সংগ্রাম চালাতে গেলে এত দিনের অনুশীলনকে, তত্ত্ব ও প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই, সন্ধানী আলো ফেলে আবার দেখতে হবে, দুর্বল ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে, মীমাংসার সূত্র বার করতে হবে। সার্বিক সঙ্কটের সময় তত্ত্বের কাজ বেশি গুরুত্ব নিয়ে উপস্থিত হয়। তার সাথে প্রচেষ্টা থাকতে হবে ভারতীয় বিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল, ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতি, দেশের ও বিদেশের নানা ধরনের আন্দোলনের বিচার-বিশ্লেষণ করতে। ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকেই যে অভিশাপের মত দক্ষিণ ও বাম-বিচ্যুতি প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে একে আক্রান্ত করে রেখেছে তার মতাদর্শগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক উৎসগুলিকে খুঁজে বার করতে। চেষ্টা করবে ‘গণতান্ত্রিক-কেন্দ্রীকতা’র ধারণাটি নিয়ে নতুন ভাবে চর্চা করতে, কারণ আমরা মনে করি এই ধারণাটি-র অপ-প্রয়োগের ফলে বারে বারে চিন্তার স্বাস্থ্যকর সংঘর্ষ ব্যাহত হয়েছে। তার ফলে যে মননের প্রক্রিয়ায় ‘সত্য’ উদঘাটিত হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আজ যখন সঙ্কট মোচনের জন্য সর্বাত্মক তাত্ত্বিক সংগ্রাম প্রয়োজন তখন তাকে সঠিক পথে চালনা করার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করাটা অতি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। সে কারণে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা-র ধারণাকে কীভাবে সব চেয়ে কার্যকরী ভাবে আজ প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে ভাবনা জরুরী হয়ে উঠেছে।

বিশ্বসমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের পর সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের এই পর্বে বিপ্লবকামীদের মধ্যে যে নতুন নতুন চিন্তার উৎসারণ ঘটেছে, এবং নতুন পথ সন্ধানের যে আর্তি জেগেছে, এটি অবশ্যই শুভ লক্ষণ। শুধু চিন্তা চর্চা বা তত্ত্ব বিশ্লেষণই নয়, বিপ্লবের বাস্তব পথের উন্মোচনও পৃথিবীর এখানে-ওখানে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা বা নিকারাগুয়ার মতো দেশে জনগণ তো ব্যালটের মাধ্যমেই তাদের বিপ্লবী অভীপ্সার কথা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে এবং একমেরু বিশ্বের মোড়ল মার্কিন সম্রাজ্যবাদের মুখের উপর চপেটাঘাতই করে বসেছে বলা যায়। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অভ্যন্তরেও বিশ্বায়ন-বিরোধী জনগণের প্রচার- হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে। এসব দেখে শুনে আমাদের দেশের বিপ্লবকামীদের মধ্যেও নতুন উৎসাহ ও আশাবাদের আগুন জ্বলে উঠেছে। তবে, ভুললে চলবে না যে, উৎসাহ ও আশাবাদের আগুনে অনবরত উপযুক্ত ইন্ধনের জোগান দিতে না পারলে সে আগুন কিছুক্ষণ ধোঁয়া ছড়ায় এবং তারপরই নিভে যায়। তাই আজকের দিনে আমাদের ভাবনা-বৃত্তে যে-আগুনের ফুলকি দেখা দিয়েছে তাকে জ্বালিয়ে রাখতে হলেও অবশ্যই উপযুক্ত ইন্ধনের সন্ধান করতে হবে। সে-ইন্ধন পাওয়া যাবে আমাদেরই দেশে ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ভেতর মহলে। আমাদের পূর্বসূরি ও বিপ্লবকামীরা তাঁদের প্রয়াসে যে কেবল বিফলতাই অর্জন করেন নি, অনেক সাফল্যের সঞ্চয়ও যে তাঁরা আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সে কথা ভুলে যাওয়া হবে একান্তই আত্মঘাতী। আগেই বলেছি, বিগত শতকের চল্লিশের দশকের শেষে ও পঞ্চাশের দশকের গোড়ায়, এখানকার বামপন্থীরা অতি-বাম ভাবনা আক্রান্ত হয়ে ঐতিহ্য-বিরোধী কালাপাহাড়ী কর্মকান্ডে লিপ্ত হলেও, অচিরেই তা থেকে তাঁরা নিবৃত্তও হয়ে ছিলেন। নির্বিচার ঐতিহ্য-হননের বদলে সু বিচার ঐতিহ্যানুরাগকে যে তাঁরা ধারণ করতে পেরেছিলেন, সে ইতিহাস ভুলে গেলে তো চলবে না। হ্যাঁ, ঐতিহ্যের গ্রহণ-বর্জনের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেও সেই সিদ্ধান্তের আলোকে তাঁরা যে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস উদ্ধার ও গ্রহণীয় ঐতিহ্যকে সর্বজনগ্রাহ্যরূপে উপস্থাপন করতে পারেন নি, সে-কথাও মিথ্যা নয় । তাঁদের সেই অপূর্ণতা ও বিফলতাগুলোকে দূর করার দায়িত্বই বর্তেছে উত্তরসূরীদের ওপর। সে দায়িত্ব পালনের জন্য পূর্ব-সূরিদের সঠিক সিদ্ধান্ত ও সফলতাগুলোকে অবশ্যই অঙ্গীকার করে নিতে হবে। উনিশ শতকে রাম মোহন বা রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দ এবং বিশ-শতকে রবীন্দ্রনাথ বা গান্ধী বা এ রকম মনীষীবৃন্দ সমাজ প্রগতিতে কী অবদান রেখেছেন, অথবা আদৌ কোনো সদর্থক অবদান রেখেছেন কিনা,- এ-বিষয়ে এ-কালের বামপন্থীদের চিন্তা খুব একটা স্বচ্ছ নয় ।

“দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, সে চিণ্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয় তবেই দেশ প্রকাশিত। সুজলা সুফলা মলয়জশীতলা ভূমির কথা যতই উচ্চ কন্ঠে রটাব ততই জবাবদিহির দায় বাড়বে। প্রশ্ন উঠবে প্রাকৃতিক দান তো উপাদান মাত্র, তা নিয়ে মানবিক সম্পদ কতটা গড়ে তোলা হল। মানুষের হাতে দেশের জল যদি যায় শুকিয়ে, ফল যদি যায় মরে, মলয়জ যদি বিষিয়ে ওঠে মারী বীজে, শস্যের জমি যদি হয় বন্ধ্যা, তবে কাব্য কথায় দেশের লজ্জা চাপা পড়বে না। দেশ মাটিতে তৈরী নয়, দেশ মানুষে তৈরী।”— রবীন্দ্র রচনাবলী- অবতরণিকা পৃ ১.

আমরা সবাই বলে থাকি ভারতবর্ষের সামন্ত-পুঁজিবাদী অবস্থার কথা এবং এই ধরনের সমাজে পুরাতন ব্যবস্থা (অর্থাৎ সামন্ততন্ত্র) এবং পুঁজিবাদ এই দুইয়ের সহ অবস্থানের ফলে একদিকে যেমন ঝাঁ চকচকে অত্যাধুনিক পণ্য বিপনি-র এবং সুউচ্চ সুদর্শন আধুনিক অট্টালিকার পাশাপাশি দেখা যায় স্বজাতিতে বিবাহ না করার ফলে দম্পতির প্রাণ হরণের ঘটনাও। অর্থাৎ এক অদ্ভুত খিচুড়ি! কিছু কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই …

ভারতবর্ষে পুঁজিবাদ কিভাবে অগ্রসর হয়েছে সেই প্রসঙ্গে “ভারতে বৃটিশ শাসনের ভবিষ্যত ফলাফল” এই অংশে মার্ক্সের একটি মন্তব্য ছিল, “…এ উৎপাদন দাঁড়িয়ে আছে পুঁজির চুড়ান্ত প্রভুত্বের উপর। স্বাধীন শক্তি হিসাবে পুঁজির অস্তিত্বের জন্য পুঁজির কেন্দ্রীভবন অপরিহার্য্য। … – একদিকে মানব জাতির পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বময় যোগাযোগ, এবং সে যোগাযোগের উপায়, অন্যদিকে মানুষের উৎপাদনী শক্তির বিকাশ এবং প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের ওপর বৈজ্ঞানিক আধিপত্য রূপে বৈষয়িক উৎপাদনের রূপান্তর। …”। এখানে মার্ক্সের উপলব্ধি ছিল “… বুর্জোয়া যুগের ফলাফল বিশ্বের বাজার এবং আধুনিক উৎপাদনী শক্তিকে যখন এক মহান সামাজিক বিপ্লব আত্মস্থ করে নেবে এবং সর্বোচ্চ প্রগতিসম্পন্ন জাতিগুলির জনগণের সাধারন নিয়ন্ত্রণে সেগুলো টেনে আনবে, কেবল তখনই…” অর্থাৎ এক উন্নত সমাজের দিকে বিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়! একটি পিছিয়ে পড়া দেশে শুরু হয় এক অনগ্রসর পুঁজিবাদ থেকে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরীক্ষা। এর পরবর্তী সময়ে একটি তাত্ত্বিক বিতর্কের সূচনা হয় মূলত এই নিয়ে যে রাশিয়ার ভিলেজ কমিউনের উপর ভিত্তি করে সরাসরি (পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে না গিয়েও) সমাজতন্ত্র (“এক মহান সামাজিক বিপ্লব”) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কিনা। মার্ক্স তাঁর একটি চিঠিতে (in reply to Vera Zasulitch, first draft) যদিও এই উত্তরণ সমর্থন করেছিলেন কিন্তু ভিলেজ কমিউনের সম্পত্তি-র বণ্টনের বিষয়ে কিছু আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যেটা লেনিন তাঁর অনবদ্য লেখা “দি ডেভেলপমেন্ট অফ কাপিট্যালিসম ইন রাশিয়া ” লেখাতে। এখানে লেনিন মূলত “পুঁজিবাদের পূর্ণ বিকাশ ছাড়া সমাজতন্ত্র সম্ভব নয়” এই তত্ত্বের খণ্ডন করেন। সমাজ বিকাশের ইতিহাসে লেনিন মহান হিসাবে পরিগনিত হন এই কারণেই, এবং মার্ক্স এঙ্গেলসের পরেই তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। আসলে পুঁজিবাদ সামন্ত-তন্ত্রকে ধ্বংস করে এবং এই ধ্বংস করার মূলনীতি দুটি, প্রথমটি হচ্ছে কৃষি-শোষণ ব্যবস্থা-র ধ্বংস করে কৃষি ব্যবস্থাকে এক উন্নত পর্যায়ে উন্নীত করে যাতে কৃষি জমির মালিকরা এই পরিবর্তন মেনে নেয় কারণ এতে ওই ভূস্বামীরা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ওই ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে পুঁজি হিসাবে পরিণত করে অর্থাৎ জমিতে পুঁজির আধিপত্য বিস্তার করে। পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে এই পুঁজির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের আমরা উন্নত দেশ হিসাবেই চিহ্নিত করে থাকি। আর যে সমস্ত দেশে পুঁজির অধিকার সমাজের সমস্ত উৎপাদনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি (কারণ তখন পুঁজিবাদ অস্তগামী) তাদের আমরা উন্নয়নশীল দেশ বলে থাকি। এই উন্নয়নশীল দেশগুলিতেই বিশেষভাবে অনগ্রসর পুঁজিবাদ ও সামন্ততন্ত্র হাতে হাত মিলিয়ে সমাজ বিবর্তনের ধারাকে থমকে দেবার চেষ্টা চলছে। ভারতবর্ষ এরকম একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবেই পরিগনিত হয়, এবং সেই কারণেই বলা হয় প্রথমে জমি এবং জমির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে পুরাতন উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থায় নিয়ে এসে সেই উৎপাদনের উপকরণ গুলির উপর সামাজিক মালিকানা কায়েম করার নামই বিপ্লব।

এর সঙ্গে আছে বিশ্বায়নের প্রভাব। ধ্রুপদী মার্কসবাদী ব্যাখ্যায় শিল্প পুঁজিবাদের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী পর্বকে ‘আদি সঞ্চয়নের পর্ব (Primitive Accumulation of Capital) বলে বর্ণনা করা হয়। ‘এই পর্বে জমির পণ্যায়ন ও জমি ব্যক্তি মালিকানাধীনে চলে যাওয়া এবং জমি থেকে কৃষকের বলপূর্বক উচ্ছেদ; বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তির অধিকারের (সাধারন, যৌথ, রাষ্ট্রাধীন ইত্যাদি) ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তরণ; সাধারন অধিকারের অবদমন; শ্রম শক্তির পণ্যায়ন এবং বিকল্প (দেশীয়/সামূহিক) উৎপাদন ও উৎপাদিত সামগ্রী ভোগের উপর অবদমন; প্রাকৃতিক সম্পদ সহ অন্যান্য সম্পদের ঔপনিবেশিক, নয়া-ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী আত্মসাৎ-এর ঘটনা; অর্থকে বিনিময় ও করের মাধ্যম করে তোলা (বিশেষ করে জমির ক্ষেত্রে) – এই পরিঘটনাগুলি ঘটে চলে। দাস ব্যবসা, মহাজনি, জাতীয় ঋণ ব্যবস্থা হল আদি সঞ্চয়ের (radical) উপায় সমূহ’। এবং “রাষ্ট্র তার হিংসার একচেটিয়া অধিকার আর আইনের নানারকম সংজ্ঞা দিয়ে এই প্রক্রিয়াকে মদত দেওয়া ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে”, (পুঁজি, কার্ল মার্কস)। ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ৯০ দশকে পরিবর্তিত হয় মার্কিন শাসিত নয়া অর্থনীতি। এই অর্থনীতি বাজারের উদারীকরণ, সম্পদের বেসরকারীকরণ ও সংস্কৃতির বিশ্বায়নকে দুর্বল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দেয়। এই উদারীকরণ নীতি এমন কোনও সম্মানপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি যেখানে সকলেই সুখে থাকতে পারে। পরিবর্তে এই নীতি সামাজিক স্তরগুলির মধ্যে আগের থেকেও অনেক বেশি অসাম্যের জন্ম দিয়েছে। আদতে এই নয়া উদারনৈতিক মতবাদ হলো পুঁজিবাদের আদি সঞ্চয়নের পর্বে ফিরে যাওয়া। এর মূল কথা হল “— অধিকারচ্যুতি-র মাধ্যমে পুঁজির সঞ্চয় করা। দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অধিকারচ্যুতি ঘটানো হয়েছে। এক, সাধারন সম্পদের বেসরকারীকরণ (বিদ্যুৎ, জল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শক্তি ইত্যাদি)। দুই, কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস (structural adjustment) নীতির মাধ্যমে IMF, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা দ্বারা বাস্তবত বিশ্বের গরিব দেশগুলির পূনঃঔপনিবেশিকরন। বর্তমানের শিল্পীয় পুঁজির ক্রমবর্ধমান ফাটকা পুঁজিতে রূপান্তরেই এই লুন্ঠন প্রক্রিয়া আগের সবগুলি রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বিশ্বের পরিবেশগত সাধারন সম্পত্তি (জমি, বাতাস, জল) দ্রুত নিঃশেষিত করে ফেলা, স্বাভাবিক বাসস্থানের দ্রুত অবনমন ইত্যাদি, কৃষি উৎপাদন পূঁজিনিবিড় পদ্ধতিকে বাতিল করে এবং প্রকৃতির পাইকারী পণ্যায়ন ঘটে সবরকমভাবে। সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মেধাগত সৃজনশীলতার পণ্যায়নের বাঁধনে ঘটে চলে সার্বিক অধিকারচ্যুতি-র ঘটনা”। (নয়া সাম্রাজ্যবাদ। ডেভিড হারভে)।

The irony in India is that unlike Russia and China where the vanguard role was played by leaders who had succeeded in uniting the oppressed masses, the Indian vanguard parties are themselves fragmented into various communist parties. These divided communists cannot lead a united front of the oppressed. The upshot of the above description is that a necessity for forming a united front of the oppressed has to be felt by fragmented communists because it is only then that they can challenge the class power of the exploiters. People blames the rulers for following the policy of social “divide to rule”, while the issue is that fragmented communists cannot organise a revolution of any kind. This is the crux of the issue.

এটা যেমন একদিকে সত্য, তেমনই সত্য হচ্ছে এই শ্বাসরোধকারী অবস্থা থেকে মুক্তির আপ্রাণ প্রচেষ্টা। অনেক ঘটনা যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জন বিক্ষোভ থেকে, দিল্লীর ধর্ষণ থেকে সুদীপ্ত গুপ্তের হত্যা, বামেদের জাঠায় অভূতপূর্ব সাড়া, ভারত জুড়ে শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ (যা দুই দিন ব্যাপী এক সাধারণ ধর্মঘটের মাধ্যমে শাসককে তাঁদের দাবী মানতে বাধ্য করায়), কামদুনি-র মানুষের লড়াই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছে যে সঠিক নেতৃত্ব থাকলেই তাঁরা সাড়া দেন।

বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলির পর দেখা গেছে যে নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা কেবলমাত্র নিরঙ্কুশ একাধিপত্যই (যে কাজ একসময় বাম তথা সি.পি.আই (এম)-এর লোকেরাও করেছিলেন) কায়েম করে ক্ষান্ত থাকছেন না, নিপীড়িত কৃষক শ্রেণী এবং জমির উপরেও তাদের প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আমরা শুনেছি বেশ কিছু জায়গায় তারা প্রকাশ্যে প্রচার করছেন “বামফ্রন্টের আমলে যে ভূমি বণ্টন ব্যবস্থা হয়েছিল সেটা গ্রাম বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তাঁদের প্রথম চেষ্টা হবে ঐ গুরুতর অন্যায় কে ন্যায়-তে পরিণত করা, এবং সেটা একমাত্র সম্ভব যদি জমির আসল মালিককে জমি ফিরিয়ে দেওয়া।” প্রসঙ্গত উল্লেক্ষ্য যে এই নিরঙ্কুশ একাধিপত্যে-র ধারণা বেশ ব্যাপক আকারেই বামপন্থী নেতাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিল শ্রেণী-সম্পর্ক ও শ্রেণী-সংগ্রাম সম্বন্ধীয় ভ্রান্ত ধারণা। যার ফলে তাঁরা গ্রামীণ মধ্য ও উচ্চবিত্তেরই মানসিক ভাবনা-র দাসত্ব করতেন। ফলে গরিবদের শ্রেণী সচেতন স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে তাঁরা গরিবদের অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অধুনা এই গ্রামীণ মধ্য ও উচ্চবিত্তরাই তৃণমূলের পতাকার নীচে সমবেত হয়ে গরিবদের দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে কষ্টার্জিত অধিকার কেড়ে নিতে চাইছেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে লাগামহীন সন্ত্রাস থেকে শুরু করে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০০০, প্রায় ১০০০০ কেন্দ্রে বিরোধীদের এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে বসতে দেওয়া হয়নি, এমনকি গণনার সময়ও ব্যালটের বাক্স নিয়ে কারচুপি ইত্যাদি সত্ত্বেও যেখানেই মানুষ নির্ভয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন এবং যেখানেই বামপন্থীরা তাঁদের শ্রেণীসচতনতা দিয়ে লড়াই করতে সক্ষম হয়েছেন সেখানেই ফল দেখা গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেক্ষ্য যে বামপন্থীদের কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বি.জে.পি সবার সাথেই লড়তে হয়েছে। বর্তমানে আশু এবং একান্ত জরুরী কর্তব্য হল সমস্ত বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়ঙ্কর আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করা। বিশেষতঃ যখন সাধারন মানুষ সন্ত্রাস সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন।

একদিকে যখন প্রায় সমস্ত পৃথিবীতে নব-উদারবাদের বিরোধী আন্দোলন চলছে তখন দেশের সরকার আরো বেশি করে সংস্কারের পথে হাঁটছে। এই অবস্থায় বামপন্থীদের আশু কর্তব্য সারা ভারতব্যাপী এক সুবৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা যা আমাদের দেশে নব-উদারবাদকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে। সেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে সমস্ত ধারার আন্দোলনকে একটি খাতে মেলাতে হবে। ভারতের জনতা যদি সেই আন্দোলনে সামিল হন তবে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নব-উদারবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় এসে দাড়াবেনই। আমরা যদি ভারতে বসে ‘আরব বসন্ত’ ও ‘ওকুপাই ওয়াল ষ্ট্রীট’ আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে চাই তবে ভারতের বুকে বিশাল গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আজকে ভারতের বামপন্থীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রধান কর্তব্য। এর জন্য চাই ব্যাপক একটি বাম ও গণতান্ত্রিক মঞ্চ যার সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবে প্রকৃত বামপন্থীরা। প্রসঙ্গত বর্তমান কৃষক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা উল্লখনীয়।

“… এটা অনস্বীকার্য যে বর্তমান সময়ে অনেক শক্তিই বামপন্থীদের এই ‘গতানুগতিক অভ্যাসবাদ’ (যাকে ইংরাজীতে ‘empiricisation’ বলা হয় , বা আমাদের আরেকটি প্রতিবেদনে যাকে আমরা ‘হাতুড়ে-করণ’ আখ্যা দিয়েছি)–র দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এইসব ঝোঁককে বামপন্থীদের সজাগ ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যদি সমাজতন্ত্রের ধারণাকে বাস্তবায়িত করার প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তবে এই ‘গতানুগতিক অভ্যাসবাদ’-কে কাটিয়ে তুলতেই হবে। বামপন্থীরা কেবল আজকের জ্বলন্ত সমস্যাগুলির বিরুদ্ধেই আন্দোলন করলে হবে না, বুনিয়াদী শ্রেণী সংগ্রামকে মাথায় রেখেই সর্বহারার শ্রেণী-স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাদের জীবনের বাস্তব অবস্থার উন্নতি সাধনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা, ইত্যাদির জন্যও নিরলস আন্দোলন চালাতে হবে। এই সব সংগ্রাম বাম শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে, এবং বাম সরকার রক্ষার অছিলায় এই আন্দোলনকে আপাতত স্থিতিশীল রাখার ‘গতানুগতিক’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই বামেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাম সরকারগুলির পরিচালনার সাথে সাথেই পার্টিকে তার সর্বোচ্চ ক্ষমতানুযায়ী নতুন উপায় উদ্ভাবন করে শ্রেণীস্বার্থরক্ষার আন্দোলনও পরিচালনা করতে হবে। এর কোনকিছুই সহজ নয়, কিন্তু সমস্যার মোকাবিলা বামেদের-ই করতে হবে। কেরলের এল.ডি.এফ-র অভিজ্ঞতা থেকে যা আমি বুঝেছি তার ভিত্তিতে আমার বিশ্বাস, সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বামেদের তার সমাধান সম্ভব।

এমন একটি সময়ে যখন বহুসংখ্যক মানুষ সম্রাজ্যবাদের ধারণা পরিত্যাগ করেছে, যখন লগ্নিপুঁজির ‘ভাড়াটে প্রচারক’ থেকে শুরু করে অনেক পশ্চিমী মার্ক্সবাদী, চীনের ‘সরকারী’ মুখপাত্রেরা, এমনকি ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা পর্যন্ত ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বিকাশের উচ্চ হার দেখে চমকিত (যদিও তা দিয়ে কেবল মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই সুপুষ্টি ঘটেছে), তখন একমাত্র বামপন্থীরা এই সমাজতান্ত্রিক উত্তরণ প্রকল্পের ধারণার (যা লেনিন ও অন্যান্য মার্ক্সবাদী উত্তর সূরীদের চিন্তাদ্ভূত) প্রতি দৃঢ় আস্থা বজায় রেখেছে। যতোদিন এই ধারণা ও প্রকল্প অকাট্য থাকবে তত দিন বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিকতাও অক্ষুন্ন থাকবে। যদি কোনও ভাবে পার্টিতে চলতে থাকা ‘গতানুগতিক অভ্যাসবাদ’ বা ‘হাতুড়েকরন’-এর প্রক্রিয়াকে পার্টি রোধ করতে না পারে এবং বুর্জোয়া তত্ত্বের আধিপত্যের কাছে আত্ম-নিঃশেষ করে তবে অপর কোনও কমিউনিস্ট সংগঠন (যে কিনা তত্ত্বগত দিক থেকে বর্তমানুরূপ অবস্থান গ্রহণ করে) এগিয়ে এসে তার জায়গা দখল করবে। কিন্তু সংস্কারপন্থী শক্তিসমূহের কোনও মোর্চা তা সে যতই ভালো তত্ত্ব বা জনগণের প্রতি নিষ্ঠাবান দেখাক না কেন, বুনিয়াদী শ্রেণী সমূহের স্বার্থ-রক্ষক হিসাবে কমিউনিস্টদের জায়গা দখল করতে পারবে না। যদিও তাদের কিছু সাধারণ গণতান্ত্রিক ইস্যুগুলিতে একসঙ্গে কাজ করা যেতেই পারে”- (প্রভাত পট্টনায়ক – ই.পি.ডব্লু- ১৬ জুলাই ২০১১)
করোনা মহামারী স্পষ্ট করে দিয়েছে, পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন বিশ্বব্যাপী মানুষের কল্যাণের কথা কখনই চিন্তা করে না। করার কোনো প্রয়োজনও তারা বোধ করে না। ব্যক্তির স্বার্থ এবং শোষণ, নিপীড়ন ও লুণ্ঠনই হল এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য যত প্রকার কর্মকৌশল ও আবিষ্কার আছে, তারা সেদিকেই ধাবিত। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য-নিরাপত্তা, পানীয় জল ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা তারা যে দিতে পারে না, তা করোনা-ভাইরাস লাখ লাখ মানুষের প্রাণ সংহার করে প্রমাণ করে দিল।

অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব পারে সারা পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা করতে। কিউবার চিকিৎসকদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা এবং সমাজতান্ত্রিক কিউবা, ভিয়েতনাম আর উত্তর কোরিয়ায় করোনা রোগীর স্বল্পতাই প্রমাণ করে দিয়েছে, বিশ্বব্যবস্থায় সমাজতন্ত্রের দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই।

পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার ফলে পুঁজিবাদী বৃহৎ আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলোর বিজ্ঞানের বিপুল অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানবিক গুণাবলির কোনো উন্নতি হয়নি। সবকিছুর মতো মনুষ্যত্বও বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। মূলত শ্রম-শোষণই হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেমন দ্রততর অগ্রগতি ও উন্নতি হয়, তেমনি মানবিক মূল্যবোধকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। সব মানুষের সমান সুযোগ প্রদানসহ শ্রম-শোষণের কোনো ব্যবস্থাই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রশ্রয় দেয় না। কারণ সামাজিক মালিকানায় সব নাগরিকই রাষ্ট্রের মালিক।

“নতুন মহামারীর আশঙ্কা বন্ধ করতে চাইলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। কৃষকদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য এবং একটি শক্তিশালী পাবলিক সেক্টর পরিবেশের ধ্বংস ও রোগ সংক্রমণ কমাতে পারবে। ফসল ও ভান্ডারে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং কৌশলগতভাবে খামারে ও আঞ্চলিক ভাবে পুনঃ-অরণ্যকরণ ব্যবস্থা করতে হবে। খামার-পশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিত্তিতে অন-সাইট বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যায় ভিত্তিক উৎপাদনের সাথে ন্যায় ভিত্তিক বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। মূল্য ও ভোক্তা সমর্থন কর্মসূচির সাথে এগ্রো-ইকোলজিকাল উৎপাদনকে সমর্থন করতে হবে৷ আর অবশ্যই এসকল পরীক্ষাগুলোকে নব্য-উদারবাদী চাপ ও পুঁজি-নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রের শাসন থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্তত জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে এগ্রিব্যবসা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের এরকম উচ্চ পুঁজিকরণ অবশ্যই এমন সব চর্চা বাস্তবায়ন করে যা মানব জাতির জন্য ধ্বংস নিয়ে আসে ও এরকম মারাত্মক রোগ উন্মুক্ত করে। খাদ্য সিস্টেমগুলোর সামাজিকীকরণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে যাতে এরকম মারাত্মক মহামারীর সূচনাই না ঘটে। তার জন্য আমাদের যা করতে হবে তা হল খাদ্য উৎপাদনকে গ্রামীণ মহল্লার প্রয়োজনীয়তার সাথে আত্নীকরণ করা আর তার জন্য দরকার এগ্রো-ইকোলজিকাল চর্চা যা আমাদের পরিবেশ ও কৃষকদের রক্ষা করবে। আমাদের অর্থনীতি ও পরিবেশনীতির মধ্যেকার পার্থক্য ঘুচিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ বলাই যায় আমাদের এ পৃথিবী জয় করতে হবে”। – রব ওয়ালেস ইন ‘বিগ ফার্মস মেক বিগ ফ্লু’

[লেখক – প্রকৌশলী, একদা বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির কর্মী।]

Facebook Comments

2 thoughts on “মার্কসবাদের শক্তিটা এখানেই যে এটি তত্ত্ব ও প্রয়োগের একটি যথার্থ সমন্বয়কারী দর্শন : অঞ্জন মুখোপাধ্যায় Leave a comment

  1. আপনার লেখাটিতে আলোচনা, সূত্র, ও আপনার কথা পড়তে পড়তে আমার মানবেন্দ্র রায়ের ( ওরফে নরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের ) কথা মনে হল । উনিও আপনাদের মত ১৯২০-৪০ সালে বলে গেছেন। আপনার কথ্যে তার উল্লেখ পেলাম না বলেই জানালাম। আপনিও জেনে নিন। আমার ইমেলে আপনি যোগাযোগ করলে আমি তাঁর ব্যাপারে অল্প যা কিছু জানি তা আপনাকে জানাবো।

  2. এম এন রায় সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা নেই! সুত্রগুলি দিলে বাধিত হব! আমার ইমেইল anjanmukho@gmail.com

Leave a Reply