অর্ধেকের খোঁজে: নিজস্ব বুননে ভারতীয় নারীদের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ – অমৃতা সরকার
পঞ্চদশ কিস্তি
যুগনারী : অমৃতা প্রীতমের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ
অমৃতা প্রীতম ( ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ-২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ) প্রাক-ঔপনিবেশিক কাল ঔপনিবেশিক কাল ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতু। ইস্কুল শিক্ষিকা রাজ বিবি এবং সাহিত্য ও ভাষাকর্মী কর্তার সিং হিতকারীর একমাত্র সন্তান অমৃতা কৌর অধুনা পাকিস্তানের অন্তর্গত মান্ডি বাহাউদ্দিনে জন্মগ্রহন করেন। মা এগারো বছর বয়সে মারা গেলে অমৃতা বাবার সঙ্গে লাহোরে চলে আসে। দেশভাগের আগে অবধি লাহোরেই বাস করতেন অমৃতা। খুব অল্পবয়স থেকেই লেখালেখি করতেন এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় সতেরো বছর বয়সে, ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে। ঠিক আগের বছরই অমৃতা কৌর বিয়ে করেন প্রীতম সিংকে এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন অমৃতা প্রীতম। তাদের দুটি সন্তানও জন্মায়। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৬ অবধি অমৃতা ‘প্রগ্রেসিভ রাইটার্স মুভমেন্ট’-এর অংশ ছিলেন এবং এই সময়ে তার কবিতায় বাংলার তেতাল্লিশের মন্বন্তর , বিশ্বযুদ্ধের ফলে ভেঙে পড়া অর্থনীতি সবই বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে আরো বহু বহু মানুষের মতোই অমৃতা প্রীতমকেও নিজের মাটি ছেড়ে চলে আসতে হয় পরিবারসমতে। দিল্লীতে শুরু হয় বসবাস। এই সময় থেকেই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভিত্তিতে টুকরো হওয়া পাঞ্জাবের সাংস্কৃতিক যে অখণ্ড ‘পাঞ্জাবিয়ৎ’ , সেই সুর খুব সচেতন ভাবে কবিতায় ধরতে থাকেন অমৃতা। যে সুরের শুরু ‘ওয়ারিশ শাহের প্রতি’ কবিতাটি দিয়ে। দিল্লীতে এসে ভারতীয় বেতারের পাঞ্জাবি ভাষার বিভাগে কাজ শুরু করেন তিনি। এইসবের ভিতরেই অমৃতার জীবনে আসেন বিখ্যাত কবি ও গীতিকার সাহির লুধিয়ানভি । তাদের প্রেমের প্রভাব পড়ে অমৃতার পারিবারিক জীবনে এবং ১৯৬০-এ পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অমৃতা। সাহিরের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি ঘটে সাহিরের জীবনে সুধা মালহোত্রা এলে। জীবনের শেষ চল্লিশ বছর অমৃতা লিভ-ইন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ইমরোজের সঙ্গে।
ব্যক্তিগত জীবনে কোনো ‘সামাজিকতা’র তোয়াক্কা না করে নারী হিসেবে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া অমৃতার কবিতাও বেপরোয়া। গুটিয়ে থাকা, নারী হিসেবে নিজেদের ইচ্ছার স্পষ্ট উচ্চারণে ভয় পাওয়া ঔপনিবেশিক কালখণ্ডের কবিতাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে নতুন স্রোত আনেন অমৃতা। তাঁর কবিতায় ভারতীয় নারীর প্রাক-ঔপনিবেশিক ভারতীয় প্রত্যয় এবং ঔপনিবেশিক ইউরোপীয় মননের মিশেলে নয়া ভারতীয় নারীর জন্ম হচ্ছে। অমৃতা প্রীতম আধুনিক ভারতীয় নারীবাদের বীজতলা। অমৃতা প্রীতম সেই ভারতীয় নারীকে জন্ম দিচ্ছেন যে নিজের যৌনতাকে সোচ্চারে বলতে পারে, যে সমাজের ট্যাবুগুলোকে লাথি বিধিনিষেধ না মেনে ‘পৌরুষ’কে বিধ্বস্ত করতে পারে। অমৃতা প্রীতম পুরুষতান্ত্রিকতার পক্ষে কতটা অস্বস্তির ছিলেন তা বোঝায় নিচের ঘটনাটায়। খুশবন্ত সিং তার ‘স্বাভাবিক’ ‘পুরুষালি’ ধরণে একবার বলেছিলেন অমৃতা প্রীতমের জীবন ও কাজ এতটাই গুরুত্বহীন যে একটা রেভিনিউ স্ট্যাম্পের (পাঞ্জাবিতে ‘রসিদি টিকিট’) পিছনে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া যায়। এরপর অমৃতা সেরেফ একটা কাজই করেন। ‘কন্যা’, ‘স্ত্রী, ‘প্রেমিকা’, ‘মা’ সমস্ত ভূমিকা নস্যাৎ করা নিজের আত্মজীবনীটির নাম রাখেন ‘রসিদি টিকিট’।
নির্বাচিত কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে মূল পাঞ্জাবি এবং অনূদিত হিন্দি ও উর্দু থেকে।
নাস্তিক
আজ দুনিয়া বেচে
কিনেছি যন্ত্রণা
বলেছি নাস্তিকতা
বুনেছি স্বপ্নের থান
এক গজ কাপড় ছিঁড়ে
জামা বানিয়েছি গোটা জীবনের
আজ আমি আকাশের ঘড়া থেকে
মেঘের ঢাকনা খুলে দিয়ে
খেয়েছি এক ঢোঁক জোছনা
এই যে মূহুর্ত আমি
ধার নিয়েছি মৃত্যু থেকে
চুকাবো তার দাম গানে।
শহর
আমার শহর একটা লম্বা সওয়াল জবাবের মত
রাস্তা- অহেতুকি সাক্ষ্য প্রমাণ…
আর গলি এমন যেন একটা কথাকে কেউ এদিকে টানছে কেউ ওদিকে
প্রতিটি বাড়ি হাতের মুঠোর সমান
দেওয়াল বিরক্তিতে কিচকিচ
আর নালা মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে
এই চাপান উতর হয়তো সূর্য ওঠার সাথেই শুরু হয়েছিল
সূর্যকে দেখা ইস্তক চড়ছে পারা
প্রত্যেক দরজার মুখ থেকে
সাইকেল আর স্কুটারের চাকা
বেরোচ্ছে গুলির মত
আর ঘণ্টি হর্ন ঝাপ্টাচ্ছে এর ওর উপর
যে বাচ্চাই এ শহরে জন্মায়
কী কথায় এই তর্ক? জানতে চায়
ফের তার প্রশ্ন নিয়েও তরজা হয়
তর্কে শুরু হয়, তর্কে মিলায়…
শঙ্খ ঘণ্টার শ্বাস শুকিয়ে এলে
রাত নামে, ফের ঝরে পরে, চলে যায়
কিন্তু ঘুমের ঘোরেও শেষ হয় না তরজা
আমার শহর যেন একটা লম্বা সওয়াল জবাব …
আলাপ
চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম শান্ত, স্থির, আমি
সুমুখের সমুদ্রে শুধু ঝড় বইছিল …তারপর খোদাই জানে সমুদ্রের
কী খেয়াল হল
সে ঝড়ের পুঁটুলি বেঁধে ধরিয়ে দিল আমার হাতে
আর হেসে দাঁড়ালো একটু তফাতে
অবাক!
কিন্তু নিলাম মাথা পেতে
জানতাম এমন ঘটে
হাজার বছরে শুধু এক বার…
লক্ষ ভাবনা এলো
মাথায় ঝিলমিলিয়ে
দাঁড়িয়েই রইলাম
এ নিয়ে শহরে ফিরব কীভাবে?
আমার শহরের সব গলি এঁদো
আমার শহরের সব ছাত নিচু
আমার শহরের সব দেওয়াল করে কানাঘুষো
মনে হল যদি তোমার দেখা পাই কোথাও
তবে সমুদ্রের মত একে বুকের ভিতর রেখে
আমরা দুই তীর, হাসবো
আর নিচু ছাতের
আর এঁদো গলির
শহরে থেকে যেতে পারি…
কিন্তু সারাটা দুপুর কেটে গেল তোমায় খুঁজতে
এখন নিজের আগুন
নিজেই গিলছি
আমি একলা এপার
ওপার ভাঙলাম
দিন পড়ে এলে
সমুদ্রের তুফান
ফিরিয়ে দিলাম সমুদ্রে…
নেমে আসা রাতের সাথে দেখা মিলল তোমার
তুমিও উদাস, চুপ, শান্ত এবং অবিচল
আমিও উদাস, চুপ, শান্ত এবং অবিচল
শুধু দূরের সমুদ্রে ঝড়
একটি শহর
হাসপাতালের দরজার সামনে
অধিকার, সত্য, আস্থা, শ্রদ্ধা
না জানে কত কে অসুখে পড়েছে
একটা ভিড় জমে গেছে…
কে জানে কে দেবে দাওয়াই
কে জানে এই দাওয়াই কাজ করবেও কি না
আপাতত মনে হয়,
এদের দিন শেষ হয়ে গেছে…
২.
এই শহরে একটা ঠিকানায়
ঠিকানাহীনেরা থাকে
যেদিন মেলে না কোনো মজুরি
চিন্তায় থাকে
বুড়িয়ে যাওয়ার প্রথম রাত
তাদের কানে কানে বলে গেল
শহরে তাদের চুরি গেছে যুবক বয়স…
৩.
কাল রাতে ছিল যম ঠাণ্ডা
আজ সকালে সেবা সমিতি
রাস্তায় একটা লাশ পেয়েছে
নাম ঠিকানা জানা যায়নি
শশ্মানে আগুন দেওয়া হচ্ছে
লাশটার জন্য কাঁদার কেউ নেই
হয়তো কোনো ভিখারি মরেছে
বা মরে গেছে কোনো দর্শন ।
৪.
এক পুরুষের আলিঙ্গনে
একটি মেয়ে এমন চেঁচিয়ে উঠলো
যেন শরীর থেকে কিছু খসে পড়েছে
থানায় কেঁপে উঠলো অট্টহাসিতে
কফি শপেও কিছু হাসাহাসি
রাস্তায় জনাকয়েক হকার
বেচছে এক পয়সার খবর
খুবলে নিচ্ছে বাকি শরীরটুকু
৫.
কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়
একে অপরের সাথে দেখা করে মানুষ
উঁচু তারে হাসে, গান গায়
একে অপরের কাছে লুকোতে চায় নিজেদের মৃত্যুর খবর
তাবিজের মত শ্বেত পাথরের কবর
হাতে বেঁধে ঘুরে বেড়ায়
যত্নে রাখে নিজেদের লাশ
৬.
এই শহরের নাম দিল্লি
নাম যা কিছুই হতে পারে( নামে কি বা আসে যায়)
রোজ রাতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন
বর্তমানের ময়লা চাদর
অর্ধেকটা নীচে বিছায়
বাকী অর্ধেকে মুখ ঢেকে শোয়
খানিকক্ষণ ভাবে, খানিক জেগে থাকে
তারপর গিলে নেয় ঘুমের ওষুধ…
আমার ঠিকানা
আজ আমি মুছেছি নিজের বাড়ির নম্বর
গলির মাথায় লেখা গলির নাম সরিয়েছি
যদি সত্যিই আমাকে খুঁজে পেতে চাও
তাহলে প্রতি দেশের, প্রতি শহরের, প্রতি গলির দরজায় ঘা দিও
এ এক অভিশাপ, এ এক স্বস্তিও
যেখানেই ঝলকাবে স্বাধীন আত্মা
ধরে নেবে ওটাই আমার বাড়ি।
একটা চিঠি
আমি এক কোনে পড়ে থাকা একটা বই।
হয়তো সত্যি কথা বা জপমালা
বা কামসূত্রের একটা অধ্যায়,
বা কিছু আসন আর গুপ্ত রোগের টোটকা
কিন্তু মনে হয় এর কোনোটাই নয়।
(এর কোনোটা হলে নিশ্চয়ই পড়তো কেউ)
মনে হয় -বিপ্লবীদের সভা হয়েছিল
আর সভায় রাখা প্রস্তাবনাই আমি
তারপর পুলিশ এলো
পাস হল কিন্তু প্রয়োগ হল না
তদন্তের জন্য যত্ন করে রাখা ঐ কাগজটা আমি।
এখন কিছু পাখি আসে
ঠোঁটে নিয়ে আসে খড়কুটো
তারা সন্ততিদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করে
(সন্ততিদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কত মধুর)
কিন্তু যেকোনো তৎপরতার জন্যই পাখিদের আছে ডানা
প্রস্তাবনার কোনো ডানা থাকে না
(কিংবা তার থাকে না কোনও পরের প্রজন্ম)
এক টুকরো
আমার সেই সময়ের কথা মনে পড়ে
সূর্যের হাত ধরে এক টুকরো রোদ
অন্ধকারের মেলায়, হারিয়ে গেল ভিড়ে
ভাবি, ভয় আর শূণ্যতার এক আশ্চর্য সম্পর্ক
আমি ওদের কেউ নই
তবু কেমন হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার মত আমার হাত ধরে নিয়েছে
তোমার দেখা পাই না কখনো
ছোট্ট গরম শ্বাস হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে
শুধু হাত ধরে তার মন ভরে না, হাত ছাড়েও না তবু
অন্ধকার অপার
মেলার শোরগোলেও ছেয়ে আছে স্তব্ধতা
আর তোমার কথা মনে আসে যেন এক টুকরো রোদ…
অশ্বমেধ যজ্ঞ
চৈত্রের পূর্ণিমা
দুধ সাদা আমার প্রেমের অশ্ব
দেশ বিদেশে ছুটতে চললো
সারা শরীর তার সত্যের মত শুভ্র
শ্যামকর্ন তার, বিরহের রঙ।
সোনার কালিতে লেখা তার মাথায়
“এ দিগ্বিজয়ের ঘোড়া –
কেউ পারলে একে জিতে নাও”
যেমন নিয়ম এই যজ্ঞের
এ যেখানেই দাঁড়ালো আমি রচলাম গান
হোম করলাম কোথাও
যেই এলো জিততে, হেরে গেল।
কেটে গেছে জীবন
এ আমার কাছে ফিরে এসেছে অক্ষত,
কিন্তু কী আশ্চর্য-
না আছে পুণ্যের ইচ্ছা , না আছে ফলের লোভ
দুধ সাদা আমার প্রেমের ঘোড়া
মরে যাবে না…মারতে পারবে না…
এ থাক অক্ষত , পূর্ণ!
আমার অশ্বমেধ যজ্ঞ অপূর্ণ, থাক অপূর্ণ!
নতুন বছরের শুভেচ্ছা
যেন চিন্তার চিরুনি থেকে
একটা দাঁত খুলে গেছে
যেন ভাবনার কুর্তা
ছিঁড়ে গেছে
যেন আস্থার চোখে
পড়েছে বালি
ঘুম যেন হাতে
তুলেছে অঙ্গার
নতুন বছর এভাবেই এলো…
মনের জুমলার একটা
অক্ষর নিবে গেল
বিশ্বাসের কাগজে ছড়িয়ে
গেল কালি
যেন সময়ের বুক থেকে বেরিয়ে এলো
গভীর এক শ্বাস
মানুষের চোখ ভরে এলো
একফোঁটা জলে
নতুন বছর এলো কিছুটা এভাবে…
যেন ভালোবাসার জিভ থেকে
ছাল উঠে গেছে
ভেঙে গেছে সভ্যতার
হাতের চুড়ি
ইতিহাসের আংটি থেকে
খসে গেছে নীলা
যেন পৃথিবী আকাশের লেখা
একটা মন খারাপের চিঠি পড়ছে
নতুন বছর এলো কিছুটা এভাবেই…
হে সখা, হে অচেনা
হে সখা,হে অচেনা
সে বার তুমি এলে
সময় অবাক হয়ে
দাঁড়িয়ে রইলো আমার ঘরে
সন্ধ্যায় সূর্য ডুবতে গিয়েও
পারলো না
ডোবার নিয়তি যেন ভুললো সে…
তারপর কালের নিয়ম মনে পড়তেই
সময় ,থেমে থাকা মূহুর্তদের দেখে
লাফিয়ে পালালো খিড়কির পথে…
কেটে যাওয়া, থেমে থাকা মূহুর্তের ঘটনা-
এখন তোমাকেও বড় অবাক করে
আমাকেও বড় অবাক করে
সময়ও নিজের ভুল স্বীকারে রাজী নয়
এখন সূর্য রোজ ঠিক সময়ে ডোবে
আর অন্ধকার চেপে বসে আমার বুকের উপর
কিন্তু কেটে যাওয়া, থেমে থাকা মূহুর্তেরা সত্য –
এখন তুমি বা আমি মানি বা না মানি
সে কথা অন্য
কিন্তু সেদিন
যখন খিড়কির পথে পালাচ্ছিল সময়
তার হাঁটু ছড়ে রক্ত পড়েছিল
আমার জানালার নীচে আজও
জমাট সে রক্ত ।
খালি জায়গা
ছিল তো শুধু দুটোই রাজত্ব
একটা আমাদের বেদখল করলো
দ্বিতীয়টাকে আমরাই করলাম ত্যাগ।
খোলা আকাশের নীচে
কত দীর্ঘ সময়
ভিজে গেছি আমি শরীরের মোহে,
কত দীর্ঘ সময়
গলে গেছে সে শরীরের মোহে।
তারপর এত দিনের মোহ
বিষের মত গিলে
কাঁপা হাতে
সে ধরলো হাত!
চল! মূহুর্তদের মাথা গোঁজার
ছাত বানাই
ওই দেখ!একটু তফাতে -ওই সামনে ওদিকে
সত্যি আমার মিথ্যার মাঝে
একটুখানি খালি জায়গা পড়ে আছে।
নাগপঞ্চমী
আমার শরীর প্রাচীন বৃক্ষ
নাগের বংশ তোমার প্রেম
যারা যুগ যুগ ধরে গাছের
কোটরে বাস করে।
সাপের বাসাই গাছ টার সত্য
নইলে এই ডালপালা, ফুলপাতা-
দেহের বিস্তার ছাড়া আর কী
এই বিস্তারও তো ভালোবাসি
যদি হলদে দিন ঝরে যায়
সবুজ দিন কড়া নাড়ে
বুকের গাঢ় অন্ধকারেও
অনেক সময় জাগে ফুল।
গাছের ডালে শিশুরা
যখন দোলনায় দোলে
সেও এক সাজ গাছের
দেখো এই মাটির কল্যাণে-
গাছের যোনিতে আমি আগের চেয়ে দ্বিগুণ
বেড়ে উঠেছি
একটু সময়ে
চুরি করে দুধের ভাঁড়
বসেছি
তোমার শরীর অর্চনায়।
এ তোমার আমার দেহের পুণ্য
গাছের শরীরে সাপের বাস
দোহাই-অনেক বছর পর
আমার জীবনে এলো
নাগপঞ্চমীর দিন।
রাজনীতি
শুনেছি রাজনীতি একটা ক্লাসিক ফিল্ম
হিরোঃ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী
রোজ নিজের নাম বদলায়
হিরোইনঃ ক্ষমতার চেয়ার আসলে ওখানেই
এক্টট্রাঃ লোকসভা আর রাজ্যসভার মেম্বর
ফাইন্যান্সরঃ দিনমজুর,
কারিগর আর চাষি
(ফাইন্যান্স করে না,
করিয়ে নেওয়া হয়)
সংসদঃ ইনডোর শ্যুটিং এর স্থান
খবরের কাগজঃ আউটডোর শ্যুটিং এ কাজে আসে
এই ফিল্ম আমি দেখিনি
শুনেছি শুধু
কারণ সেন্সরের বক্তব্য-
নট ফর অ্যাডল্টস।
দাগ
কাঁচা দেওয়াল প্রেমের
লেপা পোঁছায় তকতকে
তবু এর গা থেকে
চাঙড় ভাঙলো রাতে
ঠিক যেন একটা ফাটল
দাগ ধরে গেল দেওয়ালে…
এই দাগ আজ রু রু করে
এই দাগ আজ ঠোঁট ফোলায়
এই দাগ আজ জেদ করে
এই দাগ কোনো কথা শোনে না
পিটপিট করে আমাকে দেখে
নিজের মায়ের মুখ চেনে
পিটপিট করে তোমায় দেখে
নিজের বাপের পিঠ চেনে
পিটপিট করে দুনিয়া দেখে
ঘুমনোর জন্য চায় দোলনা
ঝুনঝুনি চায়
চায় দুনিয়ার নিয়মের সাথে ছিনিমিনি খেলতে
মা! কিছু তো বলো আমায়
ঘুমপাড়ানি গান শোনাই দাগকে
বাবা! কিছু তো করো
দাগকে কোলে তুলে নি
মনের আঙিনায় রাত নামছে
এই দাগকে ঘুম পাড়াই কি করে!
মনের ছাতে সূর্য দেখা যায়
এই দাগকে আমি কোথায় লুকোই!
পরিচয়
দেখা হল তোমার সাথে
যেন কত জন্ম
ধুকপুকাল শিরায়
আমার শ্বাস মিললো তোমার শ্বাসে
আর মাথার ভিতরে সময় ওলোটপালট –
একটা গুহা ছিল
সেখানে আমি আর এক যোগী,
সে যখন বুকে টেনে
আমার শ্বাস ছুঁল
আল্লাহর কসম!
একই সুবাস তার ঠোঁটে পেয়েছি!
এ কী মায়া! এ কেমন লীলা!
হয়তো তুমিই ছিলে সে
অথবা সে-ই তুমি
সে এসেছে তোমার ভিতরে
আমি বসে আছি … আর ঐ সুবাস…
ভাবনা
ভারতের গলিতে ঘুরে মরা হাওয়া
নিভন্ত চুল্লির আগুন উসকায়
ধার করা অন্নের
এক গ্রাস মুখে তোলে
হাঁটুতে ভর দিয়ে
ফের উঠে দাঁড়ায়…
চিনের হলদে
শীতেল ফাটা ঠোঁটে
কান্না উপচায়
চিৎকার ওঠে
আর প্রতিটি গলায়
শুকনো আর্তি ছড়িয়ে,
ঝরে পড়ে ভিয়েতনামে
শ্মশান থেকে
একটা গন্ধ উঠে এসে
সাগর পারে বসে-
শ্মশানের ওয়ারিশ
বারুদের এই গন্ধ
ভেজায় মদের গন্ধে
ঠিক সেরকম,যেমন
শ্মশানের অন্য ওয়ারিশ
খিদের গন্ধকে
নিয়তির গন্ধে ভেজায়
মানুষের দুঃখের গন্ধকে-
ভেজায় ভাগ্যের গন্ধে ।
ইজরায়েলের নতুন মাটি
বা আরবের পুরানো বালি
যা রক্তে ভেজা
তার গন্ধ-
খামোখা শোকের মদে ডোবায়…
বুকের ভেতর ঘুরে মরা হাওয়া
এই সব গন্ধ শোঁকে আর ভাবে-
পৃথিবীর আঙিনা থেকে
জন্মের গন্ধ উঠবে কবে?
কোনো ইড়া -মাথার কোনো শিরা
কবে হবে গর্ভবতী?
গোলাপি মাংসের স্বপ্ন-
আজ শতাব্দীর জ্ঞান থেকে
চায় বীর্যের ফোঁটা…
আমি তোমায় সাথে দেখা করব আবার
আমি তোমার সাথে দেখা করব আবার
কোথায় কীভাবে জানি না
হয়তো তোমার কল্পনায়
তোমার প্রেরণা হয়ে
তোমার ক্যানভাসে
রহস্যময় রেখা হয়ে
তোমায় দেখবো চুপ করে
আমি তোমার সাথে দেখা করব আবার
কোথায় কীভাবে জানি না
বা সূর্যের রশ্মি হয়ে
তোমার রঙে মিশতে থাকবো
কিংবা রঙের আলিঙ্গনে
তোমার ক্যানভাসে ছড়িয়ে যাব
জানি না কখন কীভাবে
কিন্তু তোমার সাথে দেখা করবই
অথবা চশমা হব
যেমন ঝর্না থেকে ওড়ে জল
জলের বিন্দু হয়ে
তোমার শরীরে জড়াবো
শীতল অনুভূতি হয়ে
মিশে যাব তোমার বুকে
আর কিছু জানি না
কিন্তু এটুকু জানি
সময় যাই করুক
এই জন্ম আমার সাথেই চলবে
এই শরীর ফুরালে
সকলই ফুরায়।
কিন্তু স্মৃতির সুতো
মহাকালের মুহূর্তের মত
সেই মুহূর্ত কুড়োবো
গুটিয়ে নেব সুতো
আমি তোমার সাথে দেখা করব আবার
কোথায় কীভাবে জানি না
আমি তোমার সাথে দেখা করব আবার।
ওয়ারিশ শাহের প্রতি
আজ ওয়ারিশ শাহকে বলছি
কবর থেকে কথা বলো!
নতুন একটা পর্ব লেখো তোমার প্রেমের আখ্যানে।
পাঞ্জাবের এক মেয়ের কান্নায়
তোমার কলমে ঝরেছে কত না অশ্রু,
আজ লক্ষ মেয়ে কাঁদছে
ওয়ারিশ শাহ, তোমার বলছে তারা
ও দরদী,
পাঞ্জাবের দশা দেখো
চৌমাথায় লাশের পাহাড়
চিনাবে বইছে রক্ত…
কেউ পঞ্চনদীতে
মিশিয়েছে বিষ
ঐ জল সেচ করছে মাটিতে
উর্বর মাটি থেকে বের হচ্ছে বিষ
দেখো, কত দূর ছড়িয়ে গেছে বিষ
অত্যাচার কত না!
বনে জঙ্গলে বইতে থাকে
বিষেল হাওয়া
সেখানে বাঁশের বাঁশরি
যেন এক একটা সাপ…
মানুষের ঠোঁটে ছোবল
দিল সে সাপেরা
দেখতে দেখতে পাঞ্জাবের
পুরো শরীরে নীল কালশিটে
প্রতিটি গলা থেকে হারিয়েছে গান
প্রতিটি চরকায় ছিঁড়েছে সুতো
সখিদের ছাড়াছাড়ি হল
ভেঙ্গে গেল চরকার মজলিশ
মাঝিরা নোঙর ভাসিয়ে দিল, নৌকাও,
পাকুড় গাছ খসিয়ে দিল
সব ডাল, ডালে বাঁধা দোলনা
প্রেমের সুর তুলেছিল যে বাঁশি
কোথায় জানি হারিয়ে গেছে
রাঞ্ঝার সব ভাই ভুলে গেছে
বাজাতে বাঁশি…
রক্ত বৃষ্টি নামলো পৃথিবীতে,
ভিজে গেল কবর
ভালোবাসার শাহজাদীরা
বিলাপ করে ফেরে মাজার থেকে মাজারে…
সবাই আজ বন্দী
রূপ আর প্রেমচোরা
কোথায় খুঁজবো আমি
আরেক ওয়ারিশ শাহ
ওয়ারিশ শাহ! তোমায় বলছি
কবর থেকেই সাড়া দাও
আর লেখো নতুন একটা পর্ব প্রেমের আখ্যানে,
জুড়ে দাও নতুন পৃষ্ঠা।
আজ নয়
সব সময় ঠিক কাজটা করি আমি
কিন্তু আজ নয়।
সব সময় তাই করি যা লোকে বলে
কিন্তু আজ নয়-
না।
নীলচন্দর উপত্যকায়
যেখানে বয়স বাড়ে না কিছুর
বদলে যায় না কিছু
নিখুঁত
নিষ্কম্প
তপ্ত শিরায় বিদ্রোহী হয় লহু
আমি ঝড় দেখতে চাই
দৈত্য পাহাড়
দানব পাথর
আমি দেখতে চাই মেঘের
মাথা ফাটিয়ে দিয়ে
দেখতে চাই গভীর খাদ
পাপের খাদ যেমন
দেখতে চাই মেঘের থ্যাঁতলানো হাত পা
আমার ভালো লাগে না নিখাদ নীল আকাশ
সব সময় ঠিক কাজটা করি আমি
কিন্তু আজ নয়।
জানি সমাজের গলার আওয়াজ উঁচু
কিন্তু থলে আমার নগদে ভরা
ঐ আওয়াজ কিনতে পারি।
জানি ধর্ম হবে ক্রুদ্ধ
মাথা নোয়াবো কয়েক পল
এবং সে হবে সন্তুষ্ট।
জানি আত্মার ভিতর কেউ কাঁদবে
মন আমাকে বুঝ দেবে
আর আত্মাকে করাবে চুপ।
সব সময় ঠিক কাজটি করি
কিন্তু আজ নয়।
শোভা সিং
অন্ধকারের সমুদ্রে
জাল ফেলব আমি
কিছু মাছ ধরব
আর কিছু কিরণ
কিন্তু পুরো সূর্যটাই
পড়ে গেছে ধরা
সবটুকু ভার নিয়ে ডুবছে জাল
ডুবছে আমার হাত।
স্মৃতি
আজ সূর্যটা একটু ঘাবড়ে গিয়ে
আলোর জানালা খুলে দিল
বন্ধ করলো মেঘের খিড়কি
তারপর নেমে গেল অন্ধকারের সিঁড়ি বেয়ে
আকাশের ভুরুতে
কে জানে কেনো জমে আছে ঘাম
তারার বোতাম খুলে সে
ছেড়ে ফেলে চাঁদের কামিজ
মনের কোণটিতে বসে ছিলাম আমি
তোমার কথা মনে পড়লো এমন করে
যেন ভিজে কাঠ থেকে ওঠা
গাঢ় তেতো ধোঁয়া
সঙ্গে এলো হাজার কথা
যেমন করে শুকনো কাঠ
লাল আগুনে শ্বাস ফেলে
দুটি কাঠই নিভিয়েছি এখন
বছরগুলো ছড়িয়ে আছে কয়লার মত
নিভে গেছে কিছু, কিছু নিভেও নেভেনি
সময় কুড়োতে গেল ওদের
পুড়ে গেল আঙুলের ডগা
তোমার ভালোবাসার হাত ফসকে
ভেঙে গেছে জীবনের হাঁড়ি পাতিল
অতীতের অতিথি
খিদে পেটে উঠে গেল।
মজুরি
নীল আসমানের কোণে
রাত্রি মিলের সাইরেন বাজে
চাঁদের চিমনি থেকে
ধোঁয়া ওঠে গাঢ় সাদা
খোয়াবের মত চুলা আছে অনেক
প্রতিটা চুলায় আগুন ঢালতে ঢালতে
মজদুরি করে আমার প্রেম।
তোমার দেখা পাওয়া
যেন দিনমানের মজুরি
হাতে পাওয়ার সামিল
যে হাঁড়ি চড়ায়
রেঁধে বেড়ে খাইয়ে
সে উল্টে রাখে হাঁড়ি খান
পড়তি আঁচে হাত সেঁকে
গড়িয়ে নেয় বেলা দুইপহরে
খোদাকে বলে শুকরিয়া।
রাত্রি মিলের সাইরেন বাজে
চাঁদের চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোয় এই আশে
মজুরি যা পাব তাতে কাটবে আজ
কালকের কোনো টুকরো পড়ে নেই
কালকের জন্য কোনো টুকরো রাখা নেই।
আমি
আকাশ যবেই রাত
আর আলোর সম্পর্ক জোড়ে
শুভেচ্ছা জানায় তারার দল
আমি, যদি কখনো আমিও…
যে আমি তোমার কেউ নই
স্বপ্নের কপাল ছুঁয়েছে
রাতের ঠোঁট
ভাবনার পায়ে বাজছে নূপুর
সে রাত থেকে
আকাশে বিদ্যুতের রেখা
উপুড় করে মেঘ ।
দিশাহারা হাঁটে গল্পেরা আমার,
শুরুর খোঁজে, শেষের খোঁজে
তোমার মনের জানলা
যখন ঝনাৎ করে ওঠে
ভাবি, আমার প্রশ্নেরা
এত সাহস জোটায় কোথা থেকে!
হাতের পাতায় দাবি রাখে না
ভালোবাসার মেহেদী
সারা বছরের একটাই রঙ
আর তোমার শরীরের গন্ধও একটাই
আমি, যে তোমার কেউ নই।
সাক্ষাৎ
আমার শহরে যখন পা পড়লো তোমার
আকাশ ছড়িয়ে দিল
মুঠি মুঠি তারা
মনের মাঠে বসেছে মেলা
সে রাতে রেশমি পরীর দল
এলো ডানা ঝাপটে
যখন তোমার জন্য লিখছিলাম গান
কাগজে ফুটলো
জাফরানি আঁকিবুঁকি
মেহেদী ছোপানো সূর্য আজ,
আমাদের হাতের পাতায়
রাঙানো দুজনের নিয়তি।
উদ্দেশ্য
গানের নিশ্চয়তা ভেঙে দিয়েছে আজ কলম
প্রেম আমায় নিয়ে এলো এ কোন জায়গায়!
চোখ তুলে দেখো, বসে আছি সুমুখে তোমার
হাতে ফুটে আছে সময়ের কাঁটা, বের করে দাও
আঁধার ছাড়া কিছুই নেয়নি যে
সে প্রেম আজ আলো খুঁজে দিল
ওঠো, এক ঘটি জল দাও তোমার কলস থেকে
এ জলেই ধুয়ে নেব রাতের অঘটন।
খুশি
দূর কোথাও থেকে আওয়াজ শোনা যায়
যেন তোমার স্বর
গভীর শ্বাস নিলো কান
কেঁপে উঠলো কিশোরী জীবন
মুঠো ছেড়ে অমল আনন্দ
দু হাত মেলে
দৌড়য় খালি পা
বালিকার মত
প্রথম কাঁটা সংসারের
দ্বিতীয় লোকলজ্জার
তৃতীয় কাঁটাটি সম্পদের
বিপদের মত কাঁটা কত না!
পায়ের তলার কাঁটা বের করে
রক্ত মুছে পা টিপে টিপে
মাইলের পর মাইল হেঁটে
এক পা এগোয় সে
এক পা পিছোয়
বুদ্ধির নখ হেরে গেছে
কাঁটা না জানি কত গভীরে গেঁথেছে
ফুলে গেছে পুরো পা
বিষ ছড়িয়েছে এমন
মাটিতে বসে
অবাক আনন্দ
কেঁদে চলেছে।
দাবা
তোমার আছে ঘেন্নার সিগারেট
আমার কাছে সিগারেটের লাইটার
এসো, তোমার সিগারেট জ্বালিয়ে দি
একটা গভীর শ্বাস নাও
ধুনকি দেখো তারপর
আত্মা হবে ঝরঝরে
পা উঠবে নেচে
আর পুরো পৃথিবী
মনে হবে নস্যি।
তোমার বাপ ঠাকুরদা
পাগড়ি বদলাতেন
হুক্কা বদলাতেন
আংটি বদলাতেন
আমার বাপপিতামো
ঘাসের গাট্টি বদলাতো
আঁজলায় রক্ত বদলাতো
এসবই বন্ধুতার চিহ্ন।
আমরা বদলাবো ঠোঁটের মিথ্যা
ঠোঁট আমার, মিথ্যা তোমার
ঠোঁট তোমার, মিথ্যা আমার
বন্ধুতার এই নতুন নিয়ম
দেখার এই নতুন ধরন
প্রেম, কবিতা পুরোনো কথা
ঘেন্নার গানের নতুন শুরুয়াত এই।
দুঃখ কিসের পুরোনো বন্ধুতার
বিদায় করে দাও
বলো খোদা হাফেজ
হাতিয়ারটা রেখে দিও
সেই বন্ধুতার
সেই সময়ের
সুখ স্মৃতির মত
এবার আনন্দে
হাঁক দাও পড়শিকে
দুনিয়ার দাবা পেতে বসি
হাত তোমার
গুলি, গোলা, ঘুঁটি অচেনা
আর চাল আমার
অদ্ভুত খেলা এই দাবা
বন্ধু!
আর এটা খেলার নতুন নিয়ম।
একটা চিঠি
চাঁদ সূর্যের দুই দোয়াতে
কলম ডুবিয়ে
লিখতো পুরো পৃথিবী
পড়তো সকল জন
হুকুমদার বন্ধুরা
গুলি বন্দুক অ্যাটম
চালানোর আগে
এই চিঠি পড়ে নিও
ঘোড়সওয়ার বন্ধুরা,
গুলি, বন্দুক, অ্যাটম
বানানোর আগে
এই চিঠিটা পড়ে নিও
হরফ তারার
আর শব্দ আলোর
যদি পড়তে না পারো
কোনো প্রেমিক কবিকে বলো পড়ে দিতে
নিজের ভালোবাসার মানুষকে দিয়ে পড়িও
সব মায়েরই আছে নিজের ভাষা
বোসো কোনো মায়ের কাছে
চিঠিটা পড়িয়ে নিও কোনো মাকে দিয়ে।
তারপর দেখা কোরো
যেখানে শেষ হয় দেশের সীমানা
মাপজোপ কোরো
জ্ঞানের সীমানা
প্রেমের সীমানা
জানিও কিসের সীমানা ঠিক কতটা
চাঁদ সূর্যের দুই দোয়াতে কলম ডুবিয়ে
কলম তুলেছি হাতে
এই চিঠির জবাব দিও
দুনিয়ার সুখদুঃখ নিয়েও
লিখো দুকথা
তোমার নিজস্ব পৃথিবী
রয়েছে তোমার জবাবের অপেক্ষায়
ভীষণ দুশ্চিন্তা
করছে সে।
বন্ধুরা (১৭ ই ডিসেম্বর, ১৯৬৫)
রাতের অনুযোগ ছিল
দিন, যাবার পথে
আমার চৌকাঠ ডিঙিয়ে
চুরি করে নিলো একমুঠ তারা
দিনের অনুযোগ ছিল
রাত যাবার পথে
আমার চৌকাঠ ডিঙিয়ে
চুরি করে নিলো একমুঠ আলো
রাতের হাতে রূপোর বাটি
এক টুকরো মিছরি ঢেলে
রাত মুচকি হাসলো
দিনও উঠলো হেসে
তারা কিছু কম পড়েনি
আলোও ছিল ঝলমলে
ভেড়া চুরি
রাখাল চুরি
বন্ধুক চুরি
সৈনিক চুরি
এসব কেমন চুরি বন্ধু
কী বা এই অভিযোগ
রাজনীতির হাতে এ কিসের পেয়ালা!
দুনিয়ার আঙিনা সাজায় যে সুন্দর
চুরি করো তাকে
ভালোবাসার ধরন শেখায় যে,
সেই প্রেম চুরি করো।
বাঁচার তরিকা শেখায় যে
সেই বিদ্যা চুরি করো
মানুষের নিয়তি লেখে যে
সেই কলম চুরি করো
মনের চৌকাঠ পেরিয়ে
বাহুর কপাট খুলে
এই দৌলত চুরি করো
এই ঠোঁট রূপোর কৌটো
মিছরি গুলে দিয়ে এতে
রটিয়ে দাও মিথ্যে কলঙ্ক
এসবই আসল দৌলত
যদি একে চুরি করো, তবে মাফ সব চুরি
যদি দাও মিথ্যে কলঙ্ক
সে কলঙ্কই প্রিয়।
রাত্রি
আধা ওখানে,
আধা এখানে,
গ্যাস লাইটের আলোয়
কী জানি কোন ছাতের তলায়
এক এক ঢোঁকে
এক এক নোটের
এক এক রাতপরির মুখের
রূপ জড়ো করছিলে
তুমি হ্যাঁ, তু্মি, তুমি
আমার না জন্মানো বাচ্চার বাপ!
রাত্রি-
আধা ওখানে,
আধা এখানে,
প্রদীপের আলোয় বসে আমি
তোমার বাপঠাকুরদার বাড়িতে
জড়ো করছি
তোমার টলমল পায়ের আওয়াজ
কুর্তায় গলায় লেগে থাকা
মদের- লালার নোংরা দাগ,
ফাঁকা পকেটে, লাল চোখে
লেগে থাকা ন্যাংটো গালি!
আমি হ্যাঁ আমি, আমি
তোমার না-জন্মানো বাচ্চার মা।
কুমারী
তোমার বাসরে ঢুকেছি যখন
আমি এক নয়, দুজন মানুষ
একজনের বিয়ে হল
আরেকজন রয়ে গেল কুমারী।
তোমার ভোগের জন্য
খুন করতে হত ওই কুমারীকে
খুন করলাম, আমি।
এ’ধরনের খুন আইন সম্মত
শুধু খুনের লজ্জা বেআইনি
লজ্জার বিষ নিলাম গিলে।
তারপর ভোর এলো
হাতে দেখলাম রক্ত
ধুয়ে ফেললাম
যেমন করে ধুয়েছি শরীরে লেগে থাকা তোমার গন্ধ।
কিন্তু আয়নায় চেয়ে দেখি
দাঁড়িয়ে আছে সে
যাকে খুন করেছি গত রাতে
হে আল্লাহ!
বাসরের অন্ধকার কী খুব গাঢ় ছিল?
কাকে খুন করার ছিল, কাকে খুন করেছি?
Posted in: August 2021 - Serial, TRANSLATION
খুব জরুরি একটা কাজ করছেন এই ধারাবাহিকটার মাধ্যমে। লেখনীও ব্যতিক্রমী ও পাঠমননকে আরো পেতে লোভী করে। প্লীস লিখেই জান এইরকম করে।