তাপস কুমার দাস-এর কবিতা

বিভূতি এক্সপ্রেস

সেই শেষ হাত নাড়া?

সেই শেষ হাত নাড়া।
জানালায় কালো কাঁচ। একদিকে দেখা যায় শুধু
একদিকে যাওয়া যায়, গভীর রাতের দিকে,
বুকে পোকা ঢুকে গেলে। কর্কট একদলা। একদা চিবুকে
শুকতারা হেসে যেতো, পক্ষকাল হলো ভুসো জমে গেছে।
মধু ও দুধের ধারা জ্বেলে খাক করে দিতে, ডান বুকে
অযুত কর্কট হুহু করে বেড়ে গেছে, তেড়ে গেছে বগলের দিকে, গ্রন্থি
ফুলে ঢোল, খলখল করে হেসে ছোট বড়ো মাংসের ঢেলা
মাথা ঠোকাঠুকি করে। যন্ত্রে এসেছে মানচিত্রের মতো মেলা
বিকৃত কোষের গঠন হইহই করে ভেসে গেছে অন্ধিসন্ধি
খুঁজে – রক্তমাংস চর্বি এক করে মহাভোজ হবে! ধকধক করে
তীব্র কলরোল আছড়ে আছড়ে পড়ে রোগ-সন্ধানী যন্ত্রের ঘাড়ে
নিয়তি তাহলে আঁকা হয়ে গেছে এক্স-রে’র প্লেটে? ধীরে ধীরে
এসি টু ‘টায়ার কোচ তাই রামবাগ ছেড়ে
বড়ো কোনো শহরের দিকে এইবার চলে যাবে।
ও’টি র জোরালো আলো, তার নিচে বুক পেতে দিলে
যদি মরে কাঁকড়ার দল, আরো কটা দিন হাতে পাওয়া – সেই ভেবে
আশায় আশায় সেতারের ঝালার মতো রেলের চাকার আওয়াজ বেড়ে চলে
রামবাগ বমরোলি হয়ে, রান্নাঘর, কিচেন গার্ডেন দূরে ফেলে চলে যাবে।
আবার কখনো যদি ছোটোখাটো এইসব চাওয়া পাওয়া – হে ঈশ্বর! দীন করতল মেলে
আমরণ শুষে নেবে ভোরের অদ্ভুত আলো। পিছনে যা ফেলে গেলো, ভিজে চোখ তুলে
তার দিকে চেয়ে – জানালায় কালো কাঁচ – একদিকে দেখা যায় শুধু –
সেই শেষ হাত নাড়া?

সেই শেষ হাত নাড়া।

মেনোপজ

আলো মরে আসছে l
ফাটা সানকি, কানাভাঙ্গা থালা, টোলখাওয়া বাটি
যা পারো কিছু একটা নিয়ে বসে যাও –
যা খানিক খুদকুঁড়ো বাঁচিয়ে রাখা আজও
মালসা কেঁকে তুলে এনে সাজিয়ে দি
নিজেরই পিন্ডের মতো অথবা গর্ভপাতের ভ্রুণ – খেয়ে নাও,
আলো কমে আসছে, এরপর অন্ধকার হয়ে গেলে
বিদুরের ক্ষুদ কবন্ধের হাসির মতো ব্যাঙ্গ মনে হবে
বসে যাও, যেটুকু হবিষ্যান্ন এখনো রয়েছে …
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
আমার আলো ফুরিয়ে আসছে –

Facebook Comments

Leave a Reply