শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতা

ভূষণ্ডি

অবিকল টুকরো টুকরো করা ছায়া স্তব্ধ
জানতে চাইছে মানচিত্রের মধ্যবিত্ত
শব্দের ভেতর হারিয়ে দিলাম সহস্র যোজন
ভাবি কাল এসে পাগল বলে ডেকে যায় নিয়তি
আঙ্গুল হাতের নখ, নখ হতে অন্যমন কতদূর?
এক অতিকথন প্র্যাকটিস করছি ভুশুণ্ডি বুকে
তেপান্তর আর হাট্টিমাটিম, পিঁপড়ে হয়ে যাও রণ-ক্লান্ত
অপত্য চোরাকারবার, ইন্দ্রিয় জাত
অন্তর্ভুক্ত পাপ নদী হয়ে ঝড়ে পড়ে মাঠে
পাকদণ্ডী তোমার পায়ের জন্ম দিয়ে যায়।
বেহেস্ত যদি থাকে তো এখানেই আছে, মগ্নতা
আরশির শিহরণে ভুলে যাচ্ছি আয়না ডাকনাম
চোখে উত্থিত ফুলবন নাড়া কাটা ভুশুণ্ডি
তেপান্তর এসে স্মৃতিমেদুর উত্তাপ বুনে যায়
মোহময় পেরেকে নতজানু রোজানা বাতাস
অতিকথন নামিয়ে ভোরের বাতাসে দস্তাবেজ, ডুব
ঝিনুকের উল্টে থাকায় চাঁদের নিস্তেজ
প্রবল নির্জন হয়ে আসা হৃদয়ে আলপথ প্রহর
রাতের মধ্যে তেপান্তর বোনা হয় যেন চূর্ণ মায়া
ক্ষিপ্ত তরল উপচে দিশেহারা নক্ষত্র জন্ম, জন্মাই
আমার রাত আমাকে চাষা বানিয়ে মুক্তি খোঁজে
পবিত্র অবলীলায় প্রজাপতির উড়ে যাওয়া অভিমুখ
টানটান ছাই বাষ্পে উৎসব ব্যতিক্রম পথ খোঁজে
শেষবার ডেকে নিয়ে যায় আলেয়া শিবির
তন্দ্রাচ্ছন্ন কর্কশ আড়াল জটিলতার ভেতর
ছায়া ক্রমশ রং বদলে উপমা পোড়ায়
তাপ আঁকড়ে উদ্ভ্রান্ত সন্ন্যাস পরিচ্ছদ
বিহ্বল হয়ে যায় মেলানকলিক জ্বলন্ত হোম
মধ্য মাঠ উঠে আসে প্রায়ান্ধকার, নক্ষত্র বীথি
রোদের কিছু অঙ্গীকার লিপি সমেত বিলক্ষণ
ভূষণ্ডির মাঠ যখন মাথায় প্রহার করছে
সে সময়ে ছোটবেলা মুহূর্তে আঁকা হয়ে যায়
স্বপ্নের ভিতরে পালাতে থাকি বরফের এজলাস
বিছানায় ড্রিবল করার ইচ্ছের রং মশাল কি নিষ্ঠুর!
শব্দের নিকোনো অপেক্ষা জমা করে উদ্বায়ী
আগাম জানিয়ে রাখা প্রলাপের পানাপুকুর
মাঠের মাঝে ডিম, বিভ্রমের অপত্য আত্মপরিচয়।

পয়ার

জরায়ু ছিঁড়ে চাঁদ উঠে আসে কৌশলে
চাঁদের প্রেক্ষাগৃহে দোটানা পুনরায় আড়াল
স্মৃতির গাঁথা আর উড্ডীন এক গাঁয়ের রমণী
সুতো ভর করে ভেসে যাচ্ছে সকরুণ
অভিষিক্ত জানালার অবগাহন ডেকে আনে রাতের মধ্যি
বারান্দায় লুকিয়ে রাখা সুগন্ধ আর আতশবাজি
না বোঝার নাম গাছেদের ঋণ, জলতল ও গ্রন্থনা
মেমোরিয়াল ও পুতুল নাচে উঠছে পয়ার
পয়মন্ত সহজ ঘ্রাণ, তিক্ত শ্বাস ও কারু চিহ্ন
দরজা খুলতেই একটা বিরাট রাত চেঁচিয়ে ওঠে
মধু গীতি শুনিয়ে ফিরিওয়ালা পোষ্যকে বলে বদল
তেলচিটে আঙুলে লেগে থাকা শিহরণ মন্ত্র
কাদামাটি আর অপমৃত্যুর পাশ আঁকড়ে সারা বেলা
উভয়ত ক্রুশবিদ্ধ ঝুলে যাওয়া মধ্যরাতের কোলাজ
সৈকত ছাড়িয়ে পাখিরা তীর তীরে গতিহীন উজ্জ্বল
সনাতনী বস্ত্রহীনা ঈশ্বরের জ্যোতি চিকন অস্ফুট
মাঘের পৃথিবীর বিশ্বের দরবারে আলেয়া পাত্র
মিনারে এসে দাঁড়িয়েছে চোখের অন্তিম পল্লব
এ ক্ষণ হয়ে যায় সহনীয় রোদের মেঠো পথ
এ ক্ষণ বাংলা ভাষায় খুঁজে পায় সংলাপ হীনতা
অন্তিম একটা কাব্য লেখা হতে থাকে সঞ্চারিত
দ্রবণের সীমাহীন সম্ভাবনা নিয়ে উড়ে যায় রাজহাঁস
ঝমাঝম বৃষ্টি নামলে ছাতাটা মেরি গো রাউন্ড
পাহাড়ে এসে চুমু খাই ঘুম মনাস্ট্রির শার্সিতে
ধোঁয়া দিয়ে আঁকি দীর্ঘ তোমার চুল
সহস্রাব্দ ধরে সমর্থনের নিবিরে রত্নমালা
যেন বা পরিযায়ী আলতা মাখা পায়ের প্রলাপ
শীতের ক্ষতে হাত রাখছি ঈশ্বরের রাতে
ভোরের লাশে অগুনতি গন্ধ ছিটিয়ে সুবাতাস
যৌথ চাদর দায়ভার বয়ে এনে উপাখ্যান গড়ে
উপমা ভুলে সোজা নামিয়ে রাখছি নির্বিকার
বিষাক্ত এক খালি হাত খোলসের নিবিড়ে
বয়স বাড়ছে না ছায়া পুঞ্জ কঠিন চোয়াল
ঝরে যাওয়া এক উল্কাপাত মৃত্যু শিবির
আলপনা আঁকি পাহাড়ের চৌকাঠে,
আলখাল্লা পড়া প্রতিটা উদাসীন পয়ার,
অপেক্ষার প্রান্ত পথে।

Facebook Comments

Leave a Reply