শোভন ভট্টাচার্য-র কবিতা
শ্রাবণ শীৎকার
শ্রাবণে শ্রাবণে শুনি শিকড়ের সঘন শীৎকার।
ধরণী অসংখ্য যোনিমুখে পান করে
আকাশের বীজ।
ঘাসে ঘাসে, শ্যাওলা, আগাছায়
সংসার সঘন হয় আরো প্রাণ পেয়ে।
আত্মায় টিনের চাল আজন্ম-উন্মুখ
যার, তার স্বপ্ন থাকে চিরশ্রাবণেরই পথ চেয়ে।
ঝরো স্মৃতি শৈশবের, ঝরো কৈশোরের দুঃখ-সুখ…
ঝরো সারারাত্রি মলহারের সুরে গান…
জীবনের জলসাঘরে যে-গান গাইলেন সলামত আলি খান।
ঝরো হে অঝোর, ঝরো
নাগরিক মানুষের রুক্ষমরু মেধার প্রান্তরে…
যাতে তার নরকেও ফুটতে পারে জীবনের ধারণা-অঙ্কুর।
কামিনী কদম বেলি যুঁইয়ের পাপড়িতে
ভরে যেন শান-বাঁধানো তার মর্মতল।
তারপর ফুটপাথের আকাশ পেরিয়ে
ভেসে চলো পার্শ্ববর্তী জেলার আকাশে—
দয়া করে যেন ভাসিও না;
আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হলে, জেনো প্রেমিকই ধর্ষক।
যখন দুধের শিশু ভাসতে থাকে অ্যালুমিনিয়ামের গামলায়
তোমারও কি ভেসে যায় না চোখ?
ভরা ভাদ্রের পদাবলী
ভরা বাদর, মাহ ভাদর মেঘলা দিন ঘুমকাতর
খিচুড়ি মনে বিজুরি চমকালো;
পুকুর ছোঁয়া বারান্দায় কী মলহার মূর্তি পায়
বাইরে আজ না বেরোনোই ভালো।
জলশরীরে জলনূপুর বেজেই চলে সারদুপুর
কলমি সেচি কচুর বনে ঢেউ;
একলা ঘাটে নেই বাসন নেই মেয়েলি সম্ভাষণ
বর্শি হাতে আসেনি আজ কেউ।
ডাঙায় নেচে ফিরছে মাছ লোভের টোপ মুক্ত আজ
যে জীবনের স্বাদ পেয়েছে তারা
বাঁধন হারা সেই জীবন ছাপিয়ে ঘেরা-দিঘির কোণ
প্লাবন-জলে ঘুরতে চলে পাড়া।
পানকৌড়ি ডুবসাঁতারে তাই না দেখে ঝাঁঝরি-পারে
সন্ত্রস্ত চুনোপুঁটির ঝাঁক;
যে পাঠায় পানকৌড়িটাকে কাকে সে মারে, বাঁচায় কাকে
এ রহস্য ডুবজলেই থাক।
ডাহুকী মা-র চারটি ছানা শাকের বনে জলবিছানা
কখন জানি কোথায় ভেসে যায় !
যে পাঠাচ্ছে ভাদ্রমেঘ তারও কি হয় না উদ্বেগ !
ওটুকু প্রাণ নাহলে কে বাঁচায় !
পড়ছে কারো মাথায় বাজ মরছে কত মানুষ, গাছ ;
ছোট্ট ঘুম, ছোট্ট কচুপাতা
আগলে রাখে মায়ের মতো; কীভাবে থাকে যে অক্ষত
ছোট্ট পাখিদের ছোট্ট মাথা !
Posted in: July 2021 - Cover Story, POETRY