প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা

আজ হলকর্ষণ, আজ বৃক্ষরোপণ



                    
আরশি-বহ্নি পদ্মিনী যেন — জানালার ওপারে বর্ষা, আহা!
খিলজির চোখের সামনে, চিত্রল সোনার হরিণ।
আমাকে গোবরাট ডিঙ্গোতে হবে, লক্ষণরেখা ছিঁড়ে সীতা হওয়ার মতোন
শরীরময় হিমেল আগুন ঢেলে বেপরোয়া প্রস্তুতি নিয়েছি
(একশো পার করেও পেট্রল দাবানল হতে পারেনি জেনেও)
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জুটিয়ে,জওহর-ব্রত পালনে তৎপর…তুমি      এগিয়ে আসছ
সিয়েরা লিঁও থেকে, ধু ধু হলুদ সাহারা,বালিয়াড়ি,বালুঝড় আর মরুদ্যানহীন
নিকম্মা কালাহারি এক শনাক্ত হয়েছে,ইতিমধ্যে—(তোমারই আমনে-সামনে)  
পুরোনো ফণী-আয়লা-ব্র্যাণ্ড আমফান,নখর বিঁধিয়ে দু-পাঁচ দশক পিছনে নিয়ে যাবে,
খুঁড়ে তুলবে পরিচিত ঝাঁঝ, রসের ফিনিক, তনুসুবাস, অগ্নিশ্বাস, শরীরে শরীর

স্মৃতি কাঁপে।শব্দেরা থিরথিরায় যেভাবে গ্রামোফোনে আলাপ-আভোগে-মীড়ে,মৃদুলবিস্তারে  
বৃষ্টিশব্দ—আকস্মিক             সাগ্রহে তুমি নীল আঁচল পেতে দিলে,
ঢেঁড়ি পিটিয়ে দাদুরি ডেকেছে খুব, সোঁদাগন্ধ ছড়িয়ে নোটিশও দিয়েছে বিস্তর,
পঞ্চায়েতও দিয়েছে নোটিশ : ক্ষেত্রপ্রস্তুত নাকি হলকর্ষণের!!! হে মাস-জুলাই—

জানালার ওপারে বর্ষা, আহা!সবেমাত্র দু-এক ফোঁটা,ব্যস! খিড়কি ধড়াম্‌।
সিঁড়িঘরে তালা, কুলুপ সিংদরোজায়! কতোটুক আঁধার ধরে রাখে কিউমুলোনিম্বাস?
তারও ঢের বেশি অন্ধকার ঢুকে পড়ল ঘরে—স্যাঁতসেঁতে জলছাপ, বন্ধ বোয়েমের চারপাশে  
কালো, বদসুরত ডেঁয়ো পিঁপড়ের সে যে কী হতাশ ঘুরঘুর, মাথাকোটা…  

আষাঢ়ের কথা নাহয় বাদই থাক!
আমি আবিষ্কার করেছিলাম মেঘজ্যাজ বাজে না অ-ঘ্রাণ টার্মিনাসে,সত্তুরে শ্রাবণে




দানিশিয়ান


                                  

স্মৃতিতে জল ধরে রাখবে বলে ঝুরোবালির উট এই ঘরে শ্রাবণ এনেছিল

ছ্যাঁকা লাগে। ও দানিশ, তোমার ধারণাগুলো যদি আগুনবিহীন হত!
দাহ্যতার অর্থ হত যদি সাদামাটা বৃষ্টিতে ভেজা …
                                      ট্রে ভরা ছাই
গাদাগুচ্ছের—সবার চোখের সামনে সাজিয়ে রেখেছিল এস-এল-আর তোমার:
পরিযায়ী প্রবসন, রোহিঙ্গা উদ্বাসন, গঙ্গাতীরে জ্বলছে হুতাশন—অবরুদ্ধ নিঃশ্বাসের    
কলসী উপুড় করো তবে, হে গঙ্গা, নেমে আসুক সমুদ্র-গভীরতা—ছড়ছড় শব্দে
নির্জনতা ভাঙ্গুক নিঃশব্দ এই শ্রাবণী-সৎকার…    

অনাবৃষ্টির দেশে—ট্রিপে যাবে নাকি এবার রৌদ্রদগ্ধতা—দিনকয়েকের অবকাশে
সফরে বের হবে, বালিচূড়োয়      কত্‌তো বামিয়ান রূপকথা, চিত্রবিচিত্র মর্মর-
পাথরে দেগেছিলে কামান!হাঃ, গুলিবৃষ্টি দিয়ে কি এখনও থামাতে চাও সত্য-অভিমান?  
ঘরে ঘরে এত্‌তো তুষাগ্নি— লুকোবে কি করে মুখাগ্নির দানিশ-প্রচ্ছদ ?

নিরালম্ব স্মৃতিধার্যতা পুষে রাখে নাকি কেবল শোকের দহনকথা !!?  

Facebook Comments

Leave a Reply