নিয়াজ আজিজ দ্বীপ-এর কবিতা

কফিনে শহর

এই নিঃসঙ্গ শহরে— বৃষ্টি আসে বেদনার পিরামিডের প্রতিকোণে;
মেঘগুলো কফিন ধরে আত্মায় ভেসে বেড়ায়—নীল বৃত্তের বিন্দু কোথাও আকাশে ফুল ফোটায়।

লালহরিণ চোখে —
শব’দেহের নীরব বরফঘরে ;পাখির নীড়ে পালকে ফুটে মশা’দের ডিম-বদ্ধজলাশয়ে ভ্রূণ বেরিয়ে আসে জীবন্ত অসুখের ব্যথায়।

কবরে ঘেরা সীমানার উৎসবের নতুন প্রাচীর ঘিরে ঘাসের শক্তবেড়া—
ধেয়ে আসে আগুনের চাবুক হৃদয়ের প্রতিঘাতে সময়ের লালা চাটে রোগা কুকুর।

প্রতি রাতে অশরীরীর চেতনায়;বাস্তবতার কুড়াল কোপাই শাণিত মগজের শেকড়ে।

প্রশস্ত আকাশের ডানা ছেড়ে আমরা ধরে আছি জানালার গ্রিল ;দূরে আছি তবুও—
বেঁচে আছি আমাদের অজান্তে মৃত্যু’কে নিয়ে।

যেনো জন্মই মৃত্যুর একমাত্র উপায়;
উড়ে যাচ্ছে ডানা মেলে চিল বাতাসে ভর দিয়ে আত্মার সংবেদনায়।

মহাবিশ্ব থেকে খসে পরা কোন উজ্জলপাথর পৃথিবীর প্রাচীরে আঘাত হবার আগেই নিভে গেল সূর্যের হৃদপিণ্ড তখন—
আমরা অন্ধ হয়ে’ও মহাবিশ্বকে দেখে ফেলি কল্পনার অন্তরে —স্বপ্নদুয়ার খুলে।

কোন তেজস্ক্রিয় স্বপ্ন আমাদের যুদ্ধের ময়দানে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিষ্ক্রিয় ভালোবাসা ;
ভাইরাস লড়ছে ময়দানে ;মানুষ বন্দী হচ্ছে ঘরে ;

যেনো তারা নিজেদের ঘরের বাহুডোরে তৈরি করেছে নিজেদেরই চিড়িয়াখানা;
নিজেদেরই দেখছে হাততালি দিচ্ছে এবং একে অপরকে উপহাস করে বাদাম ছুড়ে মারছে|

শব্দের শোক

আমি শব্দ আঁকি—
সুন্দর একটা মসৃণ শব্দ।একদম সাদা ক্যানভাস সংক্ষিপ্ত আলোয়।

কেউ শব্দ করে।কেউ শব্দ লিখে।কেউ শব্দ বানায়।কেউ শব্দ বলে।

আমি শব্দ আঁকি—
লাইনের পর লাইন রেখা আর রেখা টানে অনুপাত।

আমার বাবা দেশের চাষা।চাষবাস তার শিল্প।তবে প্রকৃত দামে তিনি শুধু—
চাষা বলে অনেক শব্দ পতন হতো তার।

যেমন;
ধানের শব্দ
খড়ের শব্দ
দামের শব্দ
ঘামের শব্দ।

আমার মা তিনি মস্তলেখক।কিছু না আঁকলেও সন্তানদের না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার শব্দছবিটা বিছিয়ে রাখতেন দুয়ারে। বাবা দুয়ারে পা’রেখে শব্দটা অনুভব করে নিতেন।

মাঝে মাঝে শহর থেকে বাসায় বড় মামা আসলে আমাকে আদর করে
টাকা দিয়ে শব্দ বানিয়ে দিতেন।

আমি সেই শব্দ নিয়ে খেলা করতাম
উড়ে যেতাম আরো শব্দ ধরার ইচ্ছায়
একসময় শব্দটা ভেঙ্গে যেতো।

বাবা একদিন হঠাৎ একশব্দ তুলে শহরে গেলেন
দূরে বহু দূরে শব্দের সমান দূরে
ফিরে আসেনি।

আমি মাঝে মাঝেই সেই শব্দটা মাটিতে

আঁকবো বলে

আমাদের দূরত্বের মাঝের শব্দটা খুঁজি।

Facebook Comments

Leave a Reply