পেম―একটি প্রেম বিষয়ক ক্রিটিক : দীপঙ্কর লাল ঝা
ভাবছি। মানে এই যে শীতকাল চলে গেল– একটু ভেবে দেখবেন, সে কিন্তু আসার জন্যই চলে যায়। এক পাড়ে মানুষ চিৎকার করে বলে আমরা হারিয়ে ফেলেছি, বিশাল কিছু হারিয়ে ফেলেছি। সুতরাং, চিৎকার এই পাড়ে আসতে আসতে দম ভেঙে ফেলে―বেহুলা অথবা ঘোর এক রাতে এক রাজার দম বন্ধ হতেই পারে। তাই দেখুন না, পাড়ার অলিগলির ভেতরে কত মস্তান ওৎ পেতে থাকে। কিছু শুনবে বলে―কার প্রেমিকা কোন গাঁয়ে কোন ছেলের সাথে দেখা গিয়েছে। আদতে, কোনোকিছুই ছড়ায় না, তাকে ছড়ানো হয়। এই যে গুটিকয়েক―আমরা যারা একটু আধটু কবিতা বুঝি আর বুঝি রাজনীতি―তারা যেন বুঝতেই চাইছি না, যে, আমরা বলদ সরালাম না ষাঁড়। যেন বিপ্লব পাগলা ষাঁড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পাগল তো বানিয়েছি আমরাই। আমরা প্রেম করেছি এবং তার সাথে সাথে নিজেদের সিঁড়ি উপহার দিয়ে বলেছি, একটু উপরে উঠে দেখা যাক, যদি স্পষ্ট হয়–এক চোখ বন্ধ রেখে আমরা আরেক চোখ মেরেছি। সেজন্যই তো দেখতে পেলাম না। আর একটা মানুষ অনেকদিন ধরে দেখতে না পেরেই তো পাগল হয়। এবং তখন অন্ধকার গুঁতোনো শুরু হয়―আর তার ভেতরে অনন্তকাল ধরে ঘুরতে থাকে থালাবাসন। যেন মানুষের টনক নড়ে ওঠে ঠুনকো শব্দে আর ঠিক তখনই খিদে পায়। খিদা একা আসে না, সে সঙ্গে আনে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সাম্যবাদ। এক এক করে সব পাওয়া যায়―খিদে যে কে সেই বেকার নাপিতের মতো বিড়ি ফুঁকতে থাকে। মানুষ বলে―কথায় কথায়―শেষ বারের মতো। মানে, সোমবার থেকে রবিবার নিশ্চয়ই আলাদা আর শনিবার তো আরও আলাদা। কেন? আসলে তারা আলাদা শুধু মাছে। বাদবাকি সব জায়গায় এক। আমরা সোমবার যেভাবে মাছ ধুই, রোববার ঠিক একটু আলাদা করে। কি সুন্দর লজিক তাই না!? কিন্তু সবার শেষে শেষবার টা আর আসলো না। তার মানে শেষবারের মতো কিছুই আসে না। এটাই সব থেকে উৎকৃষ্ট সময় মানুষকে ফুল দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে পড়ার। তারপর কে দেখল না দেখল―এবং দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গেল―সেটাও উল্লেখ করা উচিত নয়। উল্লেখ করুন―ভাতের হাঁড়ির উপর ঢাকনা―সেটা উল্লেখ করুন। উল্লেখ করুন চাঁদ―খুঁজে দেখুন, এরা কেউ উল্লেখযোগ্য হল না। আমরা তাও প্রেম করি―প্রেম থেকে পেম হয়―এবং এভাবে বারবার বলতে বলতে মুখ থেকে লালা বেরিয়ে আসে―তাকে কোনোমতে গায়ে জমায় ঠোঁটে মুছে ছেড়ে চলে আসি তোমাদের।
ক’জন আর আজকাল বলে শৌচাগার। আমরা তো বলি পায়খানা। এবং বলি না ―করতে যাচ্ছি। বলি―ঘুরে আসি। এই যে ভাষার ব্যবহার―এই করতে করতেই কি শ্রেষ্ঠ হলাম। উপরেও ওঠালাম―মানে ঈশ্বর যাতে ঠিকঠাক থাকতে পারে নিজের মতো। আর নীচেও মানুষ যেন ঢ্যামনার মতো পা তুলে ঝুলে থাকতে পারে। মাঝখানে রইলাম কারা? কারা আমরা? দাঁড়ালে বসি, বসলে শুই―আবার অল্পস্বল্প নেশাও করি। আর মাতব্বরের মতো দাঁড়িয়ে থাকি―প্রেমিকার উইন্ডো সিট চাই―আবার বৃষ্টিও। আমরা নাকি তাও পেম করি। ছাতা―টাইটানের এনালগ ঘড়ি―নেইলপলিশ। বারবার। কখনও অর্ধেক―কখনও ফুল। ছেলেটা তাও আপেল চিবোতে চিবোতে চলে গেল হাইওয়ের উপর দিয়ে। কারো কথাই শুনল না। তাতে আর কিছু আসুক না আসুক, ভ্রান্তি আসে। এক দীর্ঘ ভ্রান্তি―যেন জলজ ও একই সাথে রাজনৈতিক।
যত কাছে প্রেম তত ভয়। শুয়ে থাকি পাশ ফিরে―আমার মতোই ছেলেটা দেয়ালে হাটে―ছায়ার ভেতর। দু আনা চার আনার দিন শেষ। এখনও যারা আমরা ৫০ টাকার বাজার করে ১০ টাকার ঝালমুড়ি কিনে ফিরি, এবং ফেরার আগে কোথাও একটা অন্ধকার গলিতে বসে ভাবি―রাজনীতি এক বিষাদ, এর কোনো ওষুধ নেই। এই পৃথিবীতে যত গল্প হয়েছে ততটাই রোগ বেড়েছে। এবং মানুষ সেখানে এক ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক।
আমাকে আকাশ থেকে ফেলা হল। আমি কি পেলাম? জোনাকি পেলাম আর পেলাম পেম। কিন্তু দুটোই করার মতো কিছু নয়। যেমন সরাও বারবার চুল―এত আদর পাও কোথায়? এত আদর্শ পাও কোথায়? কোন গ্রহ নয়, যে ঘুরছো বারো মাস। দুটোই করার মত কিছু নয়। লোকে পার্টিও করে―পটিও করে। উদ্দেশ্যে এক―শুধু টাইম এবং স্পেস অনুযায়ী আলাদা অবস্থান। দেখতে গেলে আমরা―তুমি ছাড়া―সবাই কিন্তু একটি জায়গায় ফিক্স। যেমন “ওরা জল নেয়” , “ওরা জঙ্গল সাফ করে”, “ওরা পেম করে”। সৃষ্টির এমনই রহস্য, যে আমরা কিছু না করেই সবাই একটা জায়গায় ফিক্সড। আমরা তাও মিছিলে যাই, অস্তিত্ববাদ আওড়াই আর বলি “আমরা কারা?” “এই আমরা কারা?” ―――এই তোরা আরো জোরে বল “আমরা কারা?”। আসলে জানেন না খুব জোরে হাওয়া হলে মশারাও টেলিপোর্ট করে―তাই বলে কি আমি বলেছি ফ্যান একটা টাইম মেশিন। না এরকম একটা বিশ্বাস তো থাকা চাই―যে মশা মারবই। আমরা তা না করে, পেম করলাম।