বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
জোলো হাওয়ার দিনলিপি
এই যে ভেজা ভেজা হাওয়ারা আসে
এরা কোথার থেকে আসে?
এদেরকে যেন কেউ অতি দূর সমুদ্রের পারে
প্রত্যন্ত গুহা গহ্বরে
কালো জলে চুবিয়ে চুবিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে
মাথা না মুছিয়ে
চুল না আঁচড়িয়ে
যে যাহ, তোরা পাঠশালে যা
এর অমনি পালে পালে একে অন্যের হাত ধরে ছুটে আসছে
এদের মা নেই
মা এর স্মৃতি, স্মৃতি কাতরতা
এদের গায়ে লেগে আছে
তাই এরা বঙ্গহৃদয়ে
সব্বাইকে সব্বাইকার কথা
মনে পড়িয়ে দিচ্ছে
এমন হাওয়ায় বড় ক্ষুধার কথা মনে হয়
যেমন কেউ কেউ বিভাজিকার তদ্রূপ প্রয়োগ শিখিয়াছিল
কীরূপ প্রয়োগ?
ক্ষুধা সেই করুণ হইলে
তুমি নিজেকে হাঁড়িতে চড়া এক গুবগুবে খিচুড়ি মনে করিবে
এইরূপ
তুমি নিজেকে ঘুম না আসা তার এক উপচার মনে করিবে
এইরূপ
এইরূপ মনে করা হইতেই ঘরকন্নার সূত্রপাত
তুমি রাঁধিবে
তাকে কাঠকুটা আনিতে বলিবে
সে কাঠকুটা কাটিবে
তাহার মাংসপেশী ঝলকাইবে
তুমি কি জানি কেমন আগাম হাসিবে
অমনি মেঘ করিয়া আসিবে
অমনি উপত্যকার সব ফুল দুলিয়া দুলিয়া
সেই ইস্কুলে আসা মা-হারা হাওয়া ভাইদের কথা শুনিবে
তারপর তাহাদের ইশকুল
তাহাদের বৃষ্টি দিদিমণির ঝারি নকশা আঁচল
তোমাদের কুঁড়াঘরের জল পড়া
তাহার বেদনা বিধুরতা
তোমার কোল পাতা
কোলে শুয়ে চোখ থেকে গড়ানো বিন্দুটি
কানের কাছে তোমার অর্থহীন সান্ত্বনা
বেদোচ্চারণের মতো সনাতন
প্রাচীন
অদীক্ষিত, তবু সেই এক
সেই মৃদু গুঞ্জরিত কণ্ঠস্বর
এইভাবেই রূপকথাদের সূত্রপাত
বৃষ্টির সুইমিংপুল
টুপটাপ টুপটাপ বৃষ্টির সুইমিংপুল
ও মন বলো না তুমি খারাপ হয়েছ মন ? তবে
চলো দিই ঝাঁপ খুব একান্তে বাতচিত হবে
সে গিয়েছে খুব দূরে?
বলছে না?
ভাসিয়েছে এ কূল ও কূল?
যেই চিৎসাঁতারে জলের মধ্যে পাতি কান
আর কিছু শুনি না তো বৃষ্টির ঝির ঝির চোখে
মেঘ তুমি ইথারের ট্রাঙ্ককলে বলে দেবে ওকে ?
আজ খুব খামোকাই জমে যায় খুব অভিমান
সাঁতরাই সাঁতরাই চুপি চুপি হাতড়াই স্মৃতি
দেখা যদি পেতে হয় টিকিট কাটতে হবে জানি
কিন্তু কি করে হবে? সময়ের বড় টানাটানি
যদি কোনো জন্মের থেকে থাকে কোনও সুকৃতি
তবে এসো প্রেম তুমি তবে এসো মেঘ হয়ে আজ
কি জানি কি পর্দায় শুধবুধ ঢেকে দেয়
একেকটা দিন আসে কিছুতে হয় না কোনো কাজ
Posted in: July 2021 - Cover Story, POETRY