অভিজ্ঞান সেনগুপ্ত-র কবিতা

বর্ষালিপি




১.


এই অপরাহ্নে  
বৃষ্টি মেখে মাঝে মধ্যে আমার ঘরে আসে সেই লোকটি
চোখে যার ছেঁড়া আলো, পকেটে আমের গন্ধ
আঙ্গুলের পারস্পরিকে বিস্মিত আহ্বান
সে একটা নৌকার গল্প বলে,
ভেসে যাওয়ার কথাগুলো, সাদা-কালো বর্ণহীন –
শুনতে শুনতে ঘুম আসে,
ভাতঘুম, গরম ধোঁয়া ওঠা চিতকৃত রমণ
                                                   চেছেমুছে
ভোর হয় অকালেই। পশ্চিমের জানলা খুলে দিলে
মেঘ আসে অলস নির্জনে …



২.


এক মেঘমেদুর বিকেলে বিরহী যক্ষ
আমার ঘরে এলো
বসল, না উড়ে এলো ভিতরে –
শুন্ডি ..
তালি দিতেই
ছাদ জুড়ে বেহিসেবী অস্থির
এপাশ থেকে ওপাশে
                           এঁকেবেঁকে
যেমন নদী আসে সমতলে
সেইসব ব্রাউনীয় গতিজাড্যে
প্রেম আসে দাম্পত্যে
মেঘ আসে দিগন্তে
কালো হয়, গাঢ় হয়, ঘন নিবিড়
এভাবেই ঝড় আসে, তারপর বৃষ্টি …

যক্ষ প্রণয় উদগ্রীব কিনা জানা যায় নি,
সে হয়তো অভ্যাস ভ্রমনিয়া
                            অভিযোজিত পাখিজন্ম
পার করে বাউদিয়া রাখাল,
মেঘের সঙ্গেই তার নাদান কলাপ
অনতিযাপন …
‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না
তার সঙ্গে নাই লেনাদেনা ..’

যক্ষ উড়াল দেয়।
সে মেঘকে আহ্বান করে,
একবিকেল অন্ধকার করে ওরা আসে
যক্ষ আগাল দেয়,
বান আসে
প্রাণ আসে
সমস্ত শরীর জুড়ে অভিমান নির্নিমেষ
মনখারাপের নিবিড় অলৌকিক
মেঘ আসে
বৃষ্টি হয়
জল ঝরে
    
তারপর সংবাদ আসে –
নগরে আজ উৎসব, সেথায় মেঘেদের আমন্ত্রণ, আর পাখিদেরও।



৩.


আজকাল মেঘ আসে গভীরে, রাত
তরল হলে
বৃষ্টিরা নিশি ডাকে;
হাত ধরাধরি করে বসত ব্যাকুল স্রোত
                                 আলো ছুঁড়ে দেয়
আমি লুকিয়ে আছি অলজ্জ হানাদার
আমার লীনতপ্ত পা, অভিযোজিত শ্রমসুখ
সামটে সুমটে নেওয়া আখর বাখর, জলজ
সহবাস খুঁটে নিয়ে
                     আরেকবার
                           ঈশ্বরের কাছে নতজানু হওয়া ..
আসমানি হুর ছুঁড়ে দেয় শুদ্ধ ধৈবত,
তৎক্ষণাৎ লুফে নিই নির্ভার অদিতি
এক
দুই
তিন
আশকারী মাঠজুড়ে বর্ষা মাখে স্তনের আগল
সূচিমুখে বীজধান গর্ভজল ভেঙে এলোকেশী
অভিশাপ চিত্রিত ত্রিভুজ পেরিয়ে
                              কে জানে কোথায়
                                           আউল বাউল
দেখি, পথপাশে ছড়িয়ে আছে যে পরশপাথর –

ইদানিং সোনায় বড় লোভ …


Facebook Comments

Leave a Reply