অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-এর কবিতা

বর্ষাবিলাস

এক

হাওয়ামোরগের ডানা থেকে
জলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল আবহাওয়া সংবাদে।
একটা পুড়ে যাওয়া গাছ
একটা রোগাভোগা দুপুর
একটা স্তব্ধ হয়ে থাকা খাতার পাতা
আঁকিবুঁকির মধ্যে নামিয়ে আনছিল যে ফাঁকা জলপাত্র,
তার গা থেকে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে নামছে
অথচ শুকনো কলসির অন্ধকারে মা-হারা বেড়ালছানা
মরে গেল দেওয়ালে মাথা ঠুকে।
তার তেষ্টার কথা না জেনেই
মেঘসমারোহ ছড়িয়ে পড়ল পাড়ায় পাড়ায়।
একমনে নদী উপচে যাওয়ার গল্প লিখছিল শহুরে কাপ্তান।
ইতিমধ্যে ফেটে যাওয়া খুলির ভিতর
বর্ষামঙ্গল, ময়ূর আর বনস্থলীর মোচ্ছব
ক্যামেরালোভন দৃশ্যাবলী টুকে নিয়েছে।
জমানো শস্যদানা নিয়ে অপেক্ষায় বসে
থাকা মুঠোর ওপর
ততক্ষণে আরো প্রকট ঘোলাজল, ধমনীর মত অবিকল।
মাথা থেকে পা অবধি তেষ্টা আর ভেজা উনুনের ছাইগাদায় ব্যর্থ ফুঁ…
মৌসুমী বাতাসের লাবণ্যে জড়োসড়ো লুকিয়ে থাকতে থাকতে
ছেঁড়া ছাতা উড়িয়ে দিচ্ছিল তখন পাহাড়তলির দিকেই।

দুই

স্বীকারোক্তির ভিতর যতবার নামিয়ে দিচ্ছি মই, অতল খাদের নীচ থেকে প্রতিবার উঠে আসছে কাঁটাঝোপ। রক্তাক্ত পায়ের ছাপ মুছে নিতে কোল পেতে বসে আছি— আগামী জন্ম পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়া রাস্তার পাশে। সে এক চিরবর্ষার পুঞ্জীভুত দেশ। বৃষ্টির মুখাবরণে গোপনীয়তা নেই, আছে অশ্রুপতনের অবারিত স্বেচ্ছামেঘ।
মাটি থেকে ভেজা ভেজা বকুলের ভাপ ওঠে পুরনো স্মৃতির। দালান উঠোন ছাদ যেন গলে গলে পড়ে যায়।আকাশ অথবা মাঠ কে যে কার সমর্পণে অবগাহন করতে চেয়েছিল, আর প্রকৃতি পর্যায়ের ভিতর মিশে গেছিল সম্পূর্ণ গীতবিতান— আমি খুঁজিনি কখনো।
অথচ গান গাইতে ভুলে যাচ্ছিলাম। স্বর হারিয়ে চেপে ধরছিলাম নিজের কন্ঠনালি।
ঘুমের ভিতর বাজ পড়ার শব্দে চমকে উঠে দেখি হা হা একটা মাঠ, কাঙালের মত হাত পেতে। উঁচু প্রাচীর ঘেরা মস্ত সাদা বাড়িটার গায়ে লেখা “সেফহোম”
আকাশ থেকে উল্লম্বভাবে নেমে আসছিল একটানা কান্নাজল যাকে লক্ষ্য করে—
কী আশ্চর্য, সেই বাড়িটায়
আসলে কোন ছাদ নেই মেঘ নেই ছায়া নেই এমনকি বৃষ্টিও নেই!

Facebook Comments

Leave a Reply