সৌমনা দাশগুপ্ত-র কবিতা
টাইমমেশিন
লোহুর ফায়ার শুরু, ফিনকি ছুটছে দিকে দিকে
ওই যে চড়ুইপাখি, তারে বসে দোল খায়
শিসের ভাষায় বলে, ভালো নেই ভালো নেই আমি
পাখিটিকে তুমি ভেবে বারান্দায় জল, শস্যদানা
জানলায় চুপচাপ আমি
আমার বেদনারেখা ছুঁয়ে আমের পল্লব
ঠেস দেয়, কথা বলে ঠারেঠোরে
রোদচশমার নীচে চোখ মটকায়
ছায়াকে ভেবেছি জল
সিঁদুরি আমটি দেখে ভেবে বসি দুধরাজ পাখি
সুতো থেকে ঝুলিয়েছি খেলনা উড়োজাহাজ
হাওয়া দিলে সে-ও নড়ে এপাশ-ওপাশ
ভেবেছ উড়ানে যাব; সকলেই এইসব ভাবেটাবে
আর দ্যাখে খাদের ভেতরে শুয়ে তাদেরও কেমন
গজিয়েছে ইস্পাতের ডানা, হালকা উসকে দেয় শখ
সায়ার গোপন খোপে লুকোনো বিনুনি, ইচ্ছেগুছি
পাক খুলি পাক মারি মধ্যেমধ্যে এলিয়ে দিই চুল
আমার কাঁকইভরা মেঘ, আমার মেঘের যত সুতো
পাখপাখালির মতো ছেড়ে দিই
তারা সব রাতের ছুটন্ত ট্রেন
আমিও লিখছি চিঠি, মনে মনে
পাঠিয়ে দিলাম এই ভিবজিওরের রং
যেভাবে পেছন শুঁকে নিজের কুকুরী বাছে
ভাদ্রের কুকুর, দেখায় লাল ও তীব্র
এক স্ক্রু-ড্রাইভার গেঁথে চক্রে শঙ্খ লাগে
হাসকি ভয়েস তার তৃপ্ত ও তরল গোঙানির
সঙ্গদোষে চাঁদকে এনেছে টেনে পেয়ালায়
চায়ের লিকারে ছবি, অহো নেশা
ডুবি আমি ডুবি
মরণ রে… ও মরণ… মরণ কোথায় গেলি…
বাড়িতে ভূতবন্ধন দিয়ে চলে গেল ওঝা
রুদ্রাক্ষের ঝাঁপি ছুঁয়ে বসে আছি
কারা যেন মাঝরাতে কোদাল চালায়
খুঁড়ে তলে স্মৃতিচাপা লাশ
বছর বছর ধরে ঝুলে আছে ক্যালেন্ডার
সময় রয়েছে স্থির, আমার মুঠোয় তার কাঁটা
লাটিমের মতো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি
যেন টাইমমেশিন। ছবি আসে ছবি যায়
হাড়ের বাসনা
একবার প্রকৃতিক হও। ছড়িয়ে দাও আকাশের দ্রোহ এই গুমঘরে। নীল ও হলুদে মিশে আরো একবার গাছ। পাতার বৈভব। বৈঠকি হাওয়া এসে ভাসাক এ-ফসলিয়া নাটমণ্ডপ। আমিও উজানে যাব, দু-চোখে সাপটে খাব মেঘমানুষের ডানা। নিভু আঁচ, সান্দ্র উনুনের থেকে কয়লার ওম, আমাদের শীতঘরে নামে হিম, নামে হাড়ের বাসনা। আর দ্যাখো দ্যাখো, ওই এক জিভ, সে-ও কেমন চেটে নিচ্ছে ঘাসের রঙিন।
আমাদের ফেলে আসা নদী, আমাদের স্রোতের শেকল এসে পা জড়ায়। এও কি স্বপ্ন কোনো, এও যেন কুহকের কথা। টান দিচ্ছে শ্বাসমূলে, টান দিচ্ছে কল্পমগজ ধরে…