কৌশিক সেন-র কবিতা

ডাকিনী

সেতু ভেঙে গেলে পিশাচসিদ্ধা হয়ে ওঠে নদীটিও। তীরে তীরে ভেসে ওঠে কবন্ধ মৃতদেহ, ঘাটে ঘাটে টুকরো শঙ্খের হাহাকার। ফেরীতে পারাপার হয় গভীর অসুখ।

সেতু ভেঙে গেলে বুকের গহনে শুকিয়ে যায় দ্রাক্ষালতাও। সন্ধের আকাশে ক্ষয়ে যায় একাকী শুকতারা। শেষ ফেরীর যাত্রীরা হারিয়ে যায় মাঝ নদী পেরলেই।

সেতু ভেঙে গেলে ধুম জ্বর আসে মধ্যরাতে। জলপটি শুকিয়ে যায় পলকেই। নৌকার ছাউনিতে কুপিটা নিভে যায়, অকারণেই!

সেতু ভেঙে গেলে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে প্রবাহ। ভাটিয়ালী ভুলে গিয়ে মাঝির শরীরে তখন আধিভৌতিক বিকার। রাক্ষসী নদীটি তখন অট্টহাসিতে ফেটে পরে…

বিবর্তন

সবুজ হয়ে যাওয়া নারীরা কোনোদিন পুরুষমুখি হবেনা আর। পাতকুয়োর পাড়ে যোনি ধুয়ে মিশে যাবে আলপথের দিগন্তে। ধানক্ষেতের ভেতর তখন ফড়িঙের মুখে মুখে পুংকেশরের চাষ, বাতাসে বীর্য-গন্ধ লেগে থাকে। ডিপ টিউবওয়েল থেকে ভলকে ওঠে মৃত ভ্রূণ, বদ রক্ত। সবুজ নারীরা তখন কোলে কাঁখে বাচ্চা নিয়ে চলে গেছে দূরের নগরে। চটকলের ধোঁয়ায় গা ধুইয়ে নিচ্ছে পেট মোছা ছেলেটার। ধানক্ষেতের বাতাসে ওদের গা পাক দেয় খুব!

মন্বন্তর

তৃষ্ণার কোনো নিজস্ব গন্ধ নেই
শুধু একটু একটু করে শুষে নেয়
আশপাশের পানাপুকুরের স্বপ্ন,
শালুকফুলের সুবাস…

তারপর একদিন সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে গিলে ফেলে
আস্ত একটা পদ্ম দিঘী,
একঝাঁক রাজহাঁস আর
জল ভরতে আসা দুপুরবালিকা সমেত…

নির্ণায়ক

অবশেষে আশঙ্কা সত্যি হলে পর
নিমগ্ন জাহ্নবী রাখি করতলে।
আয়ুরেখার তরঙ্গে স্থাপন করি
পুণ্যপ্রবাহিণী। অবশেষে মৃতসঞ্জীবনী
এনে স্থাপন করি আহত আঙুলে।
তর্জনীর দিকনির্দেশে বয়ে চলে
স্রোত। অবশেষে প্রাপ্তিঘর ভিজে উঠলে
ধুয়ে রাখি ভাগ্যরেখা। নদীর প্রশাখায়
ঢেলে দিই অনন্ত সমৃদ্ধি। অবশেষে…

Facebook Comments

Leave a Reply