জুয়েল মাজহার-এর কবিতা

 ডায়েরির উল্টো পৃষ্ঠায়

একটা ডুবোজাহাজ শত্রুর নজর এড়িয়ে ধীরে
ডুব দিল সাগরের অতল গভীরে
নাবিকেরা অবসন্ন। তাদের ঘুমের প্রয়োজন
জলের অলস দোলা, নৈ:শব্দ্যের নিজস্ব গুঞ্জন আর রঙিন
মাছেদের আনাগোনার ভেতর ঘুমে-ভারী, নিকষ আকুয়া-রাত
ধীরে ধীরে গিলে নিল টাইটানিয়াম-মোড়কে ঢাকা ধাতব তিমিটিকে;

প্রখর গ্রীষ্ম-জানালার ওপাশে তুমিও ঘুমাতে গেলে বিবসনা
রক্তে অল্প মধুমেহ, রক্তে অল্প রতিক্ষুধা নিয়ে

অপর গোলার্ধে, ধরো, ডায়েরির অপর পৃষ্ঠায়
শ্বেত-হিম রাত্রির ভেতরে জ্বলছে তাপহীন প্রকাণ্ড জড়ুল

বহুবার মনে-উঁকি-দেওয়া ড্রিমবল যেন
যেন আকাশে পেরেক দিয়ে গাঁথা;
নড়ছে না একটিবারও;
রাত্রির তৃতীয় প্রহর অব্দি লটকে আছে
মূর্তির গ্রীবার মতন স্থির হ’য়ে আছে
কেউ একে লাথি মেরে মেরে না সরালে
নর্স দেবতার হিমজমাট অণ্ডের মতো
মেরুবৃত্তটির উপরে কেয়ামত অব্দি থেকে যাবে এভাবেই
মনে হলো, থাক তবে
বরফমণ্ডিত আর শান্ত-অনড় হয়ে থাক
মেরু সাগরের পার্মা ফ্রস্ট ভেদ করে এরইমধ্যে উঁকি দিল
একটা শক্ত মিশকালো কোনিং টাওয়ার
ঘুমের ভেতর কেবলই বরফের চাঙড় ভাঙছে
সারা গায়ে লেপ্টে যাচ্ছে শাদা শাদা রেণু ও পরাগ
আর শুধু অবিরাম উৎক্ষেপ, আক্ষেপ
অবিরাম আহ্ আহ্ আহ্
অবিরাম অব্যয়, অব্যয়!
এই প্রান্তে গ্রীষ্মবগল থেকে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র ঝাঁজালো ঘ্রাণ
সে-আরকে মত্ত হ’য়ে সলোম ঈশ্বরী তুমি শুরু করলে নাচ
হঠাৎ তোমার নাচ ঘুরে গেল কাগজের অপর পৃষ্ঠায়
মেরুরাত্রির ভেতরে এক সমুত্থিত মাংসের বুরুজ আঁকা হলো
তাতে তুমি আন্দোলিত, শীৎকৃত, বিদ্ধ আর তীব্র সমাসীন

ক্ষুধা

১.

খাবার সাজিয়ে রেখে পাচকেরা ডাকতে এসেছে;

এমন সময় দেখি, দাঁত নেই
আগুনে সমস্ত মুখ পোড়া।

২.

একদিন পর ফের সব ঠিকঠাক
ক্ষুধা নিয়ে ঘুরছি রাস্তায়;

সে-মুহূর্তে আকাশে উদিত হলো
কোমল উজ্জ্বল এক রামধনু-রুটি

খাবো বলে লাফ দেবো
অতর্কিতে বাঘ এসে চোয়ালে বিঁধিয়ে নিলো তাকে

Facebook Comments

Posted in: June 2021, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply