একরারনামা : ইশরাত তানিয়া

নামের সাথে সম্পর্ক কখনও জুড়ে যায়। সম্পর্ক নামের এমনই অছেদ্দ্য অংশ হয়ে ওঠে যে বলে না দিলে আলাদা করা যায় না। আশুখালা আর রাশুখালার বেলায়ও ‘খালা’ শব্দটি সম্পর্ক বোঝানোর চেয়ে বেশি তাদের নাম হয়ে উঠেছে।
অনেক দিন আগের সেই দু’বোন, আশুখালা রাশুখালা, কাদের খালা ছিল সেটা মানুষ বিস্মৃত হয়েছে। সম্পর্কটা লতায় পাতায় ঘুরে অনেকটা দূরের। কারো খালা বা মায়ের খালা কিংবা মায়ের মায়ের খালাও হতে পারে। তাদের চেহারা আলাদা করা যায় না। গলার স্বরেও ফারাক নেই কিন্তু সেই স্বর সহসা কেউ শুনতে পায় না। মুখে তাদের রা নেই। কারো সাথে দু’বোন কথা বলে না। তাই বলে বোবা ভেবে নেয়া ঠিক না। তেমন দরকার পড়লে মুখ দিয়ে শব্দ বেরোয়। এছাড়া শুধু নিজেদের সাথেই দু’বোনের যত কথা।
পূর্বপুরুষ সেই কোন দূর লালমাটির দেশ থেকে এসেছিল গরুর গাড়িতে। এক মুঠো মাটি এনেছিলো সাথে। চলার পথে সে মাটির রঙ মিলিয়ে দেখত একেক মুল্লুকের মাটির রঙের সাথে। যেখানে মাটির রঙ মিলবে সেখানেই বসতি গড়বে। কোনো এক গরমের সন্ধ্যা হয় হয় বিকেলে মাটির রঙ মিলে গেলে এখানে ঠাঁই গাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের বুজুর্গ। গোধূলির আলো যদি কোনো বিভ্রম সৃষ্টি করে না থাকে তাহলে বলা যায় নির্ধারিত আবাদভূমিতে তারা পৌঁছতে পেরেছিলো। তারপর পিতৃপুরুষের রক্ত আর ঘামের ফোঁটা শুষে কর্ষিত ভূমি ফসলী হলো। বহু বহু গ্রীষ্ম পেরিয়ে এই প্রত্যন্ত গ্রাম হলো মফস্বল শহর। ছনের ঘর টিনের হলো। শীতে কাঁচা রাস্তা ইটের হলো। কোনো এক বসন্তে মাটির বুকে রেলগাড়ির স্লীপার বসলো। পরের বছর ঘোর বর্ষারাতে মায়ের পেট থেকে দু’মিনিটের তফাতে আশুখালা রাশুখালা দুনিয়ার মাটিতে পড়লো।
ফুটফুটে জোছনার দুই ফুল। কিন্তু তারা কথা বলে না। বছর যায় কিন্তু বোল ফোটে না। সারাদিন একসাথে দুজন। আলাদা করা যায় না। ছোটবেলা থেকেই আশুখালা যেখানে রাশুখালা সেখানে। আর কারো সাথে তারা খেলে না। কাছাকাছি বয়সী চাচাতো ভাইবোন জালাল আর জেবা। আশুখালা রাশুখালা জালালের ধারে কাছে ঘেঁষে না। জেবার কাঠি লজেন্সের দিকে ফিরেও তাকায় না।
আব্বা-আম্মা ভাবল যমজ দু’বোনের মিলেমিশে থাকাই স্বাভাবিক। ঘরের মধ্যেই একদিন বোল ফোটে বোনদের। নিজেরা আধোবোলে কথা বলা শুরু করে নিজেদের সাথে। আব্বা-আম্মার সাথেও দু’বোন কথা বলে না। মন চাইলে বড়জোর কাপড়ের পুতুলের সাথে কথা বলে। তাদের কথা হয় কমই। হলেও সেটা এক দুই শব্দে। বেশিরভাগ সময়ই বাক্য শেষ হয় না। সেই অসম্পূর্ণ বাক্যে সর্বনাম থাকে না। আশুখালা বলে- ভাত। রাশুখালা বলে- কলতলায়। রাশুখালা বলে- আমের আচার। আশুখালা বলে- ঘোড়াড্ডিম। শব্দপ্রবাহের মধ্যে কেউ ভাত কলতলায় আমের আচার ঘোড়াড্ডিম শুনতে পেলেও এর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। আশুখালা আর রাশুখালার গোপন ভাষাও কেউ বোঝে না। মা কান পেতে থাকে কিন্তু কথার অর্থভেদ করতে পারে না। নিতান্ত প্রয়োজন হলে আশুখালা রাশুখালা একটা দু’টা শব্দ উচ্চারণ করে মায়ের সাথে। সেটাকে কথাবার্তা বলা যায় না।
যতই মানুষ থেকে দু’বোন দূরে সরে যায়, নিজেদের আরো কাছাকাছি আসে। আশুখালা রাশুখালা একজন আরেকজনের আয়নাছাপ হয়ে ওঠে। দুজন স্বভাবে শান্ত। বায়না ধরে না, বিরক্ত করে না। কখনও বাইরে গেলে দুজন একই সাথে হাঁটে, পাশাপাশি পা মিলিয়ে। ডান পা, বাঁ পা একই সাথে পড়ে। পা মেলাতে গিয়েই যেন বাইরের জগত দেখার সময় হয় না। প্রকৃতির রূপরঙ তাদের চোখ থেকে পিছলে যায়। ঘরের ভেতর আশুখালা রাশুখালা এক সাথে চক দিয়ে শ্লেটে অ লেখে। অ মোছে। একই সাথে মুড়ি মুখে দেয়। গুড় দাঁতে চেপে কামড় দেয়। একই ভাবে পানি খায়। ঢোক গেলে। একই ছন্দে শ্বাস নেয়। নিঃশ্বাস ছাড়ে। আশ্চর্য বোঝাপড়া তাদের। যেন আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে দুজনের মধ্যে কে আগে শ্বাস নেবে। রাশুখালার আগে শ্বাস নেয়ার কথা থাকলে আশুখালা কখনোই আগে শ্বাস টানে না। রাশুখালা শ্বাস নেয়ার পরই আশুখালা শ্বাস নেয়। এ যেন দু’বোনের খেলা। ঘুমের ঘোরে একই সাথে পাশ ফেরে আর দু’বোনের ডান গাল বেয়ে লালা গড়ায়।
আম্মা ভাবে দুই মেয়ের মধ্যে কী যেন আছে। আশুখালা আর রাশুখালা কখনো মন খারাপ করে না। আম্মা দু’বোনের চুলের জট ছাড়িয়ে দেয়। গোড়ায় আচমকা টান পড়লেও তাদের ব্যথা লাগে না। আশুখালা রাশুখালা কাঁদে না। কিছু বলেও না। মায়ের মনে কুডাক ডাকে। সুরা ইয়াসিনের প্রথম রুকু পর্যন্ত মুখস্ত পড়ে মেয়েদের বুকে ফুঁ দেয়।
এমন সময়… গল্পে যেমন লেখা হয় এখানে সেটা বলা গেলো না। কারণ এটা তো গল্প নয়। সত্যিই একদিন একই সময়ে আশুখালা রাশুখালার হাঁটু গড়িয়ে রক্তের সরু ধারা গড়িয়ে নামে। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দুজন তেমন অবাক হয় না। শরীরে কোথাও উঁচু কোথাও নিচুতেও কিছু আসে যায় না। মাঝে মাঝে শুধু দু’বোন গান গায়। কথায় সুর বসিয়ে নিজেরাই গান বানায়। সেও বড়জোর গুণগুণ। কখনও বিছানায় উপুড় হয়ে রেডিওর নব ঘুরিয়ে গান শোনে। কৌটা খুলে আঙুলের ডগায় তিব্বত স্নো নিয়ে গালে কপালে নাকের ডগায় ফোঁটা দেয়। তারপর তিন আঙুল দিয়ে মিশিয়ে দেয়। দু’বোন যুবতী হয় কিন্তু ছোটবেলার সেই খেলা বড়বেলাতেও ফুরায় না। একজন আরেকজনের ছায়া হয়ে ঘুরে ফেরে। দুজনের জগতে দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। চারপাশ থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এক আশ্চর্য জগতে দু’বোনের দিন কাটে। ক্রমশ নৈঃশব্দ্যের নিজস্ব পৃথিবীতে দু’বোন তলিয়ে যায়। দুজনের প্রভাব বলয়ের মাঝখানে কেউ ঢুকতে পারে না। এতটুকু বিচ্যুতি নেই সেখানে। গভীরতর গাণিতিক সূত্রে আটকে গেছে আশুখালা রাশুখালার জীবন। এর কোনো প্রতিসূত্র তাদের জানা নেই। তবু একদিন নিজেদের পেরিয়ে জালালকে দেখে দু’বোন।
সেদিন হাওয়া ছুটিয়ে মেঘ ডাকে। দুপুরেই চারদিকে অন্ধকার করে বড় বড় পানির ফোঁটা ঝরায়। মানকচুর পাতা মাথায় নিয়ে দৌড়ে ঘরের দাওয়ায় আসে জালাল। আশুখালা রাশুখালা তখন লবন আর মরিচের গুঁড়া মেশায়। বিছানায় বসে পা দুলিয়ে জামরুলে কামড় দেয়। কামড়ের জায়গায় লবন আর মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে জামরুল খায়। পানসে মিষ্টি রসে তাদের মুখ ভরে যায়। ধুপধাপ শব্দ শুনে দু’বোন ঘরের দরজার পাল্লা দু’টা ধরে দাঁড়ায়।
আশুখালা বলে- এই জালু, জামরুল খাবি? জালাল মুখ কুঁচকে বলে- এইসব আমি খাই না! রাশুখালা একটা জামরুল বাড়িয়ে দেয়- খা না! জালালের চুলে পানির ফোঁটা জোনাক হয়ে জ্বলে। দু’হাত দিয়ে সে প্রবল বেগে চুলের আলগা পানি ঝাড়ে। দু’টা হাতের পাতা ঘষে বলে- জ্যাঠা বাড়িতে নাই? দু’বোনের কেউই এ প্রশ্নের উত্তর দেয় না। দু’বোনের তলপেটে গুরুগুরু মেঘ ডাকে। জালালের খালি গা বেয়ে পানি নামে আর মেঘের অন্ধকার থেকে অশরীরী নাকি শরীরী শক্তি এসে ভর করে আশুখালা রাশুখালাকে। শিরশিরে অনুভবে কেঁপে ওঠে দু’বোন। বাদল মেঘের ভরদুপুরে হয়তো এমন হয়। এতে কোনো লজ্জা বা ভালোবাসার বোধ নেই। জালাল ঝুঁকে লুঙ্গি দিয়ে মুখ মোছে। এই অন্ধকার ঝুমবৃষ্টিতে সে আর কোথায় যাবে? দাওয়ায় দাঁড়িয়ে সে বৃষ্টি দেখে। আশুখালা রাশুখালা দরজার পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আর জালালকে দেখে।
বছরে দু’বার জেবা মধুমতি সিনেমা হলে ছবি দেখে। রোজার ঈদ আর বকরী ঈদে। বান্ধবীদের সাথে ইলিয়াস কাঞ্চন আর মৌসুমীর সিনেমা দেখে কেঁদে চোখ ফোলায়। রাশুখালারও সিনেমা দেখার ইচ্ছা জাগে। মনে মনে সে একলা হতে চায় কিন্তু আশুখালা আশেপাশে এলেই মানসিক সমন্বয় শুরু হয়। রাশুখালার যেন আশুখালার কাছ থেকে নিষ্কৃতি নেই। জেবা খলিফার কাছে গিয়ে ডিজাইনমাফিক ব্লাউজ বানিয়ে আনে। ব্লাউজের ভেতর থেকে চিঠি বের করে পড়ে। গান গায় নিচু স্বরে- এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু তুমি শুধু ভালোবাসা দিও… আশুখালারও চিঠি পেতে ইচ্ছে করে কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারে না রাশুখালাকে। তার ইচ্ছের বুদবুদ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আশুখালা টের পায় রাশুখালার অব্যাখ্যাত শক্তির নিয়ন্ত্রণে দুজনের জীবনে স্বাভাবিকতা নেই। তার মনে হয় রাশুখালার নিশ্ছিদ্র তেজস্বিতায় কেউ তাদের কাছে আসতে পারে না। আশুখালা ভাবে রাশুখালা মরে গেলে কী হবে? অস্ফুট স্বরে বলে- আমার ছায়াকে ছেড়ে আমি কি বেঁচে থাকব? রাশুখালাও বিড়বিড় করে- আমার ছায়াকে ফেলে আমি কি মরতে পারবো?
ছায়াহীনতা মানে আমোঘ মৃত্যু। তাই হয়তো আত্মার ছায়া থাকে না। নিজের ছায়া থেকে কি মুক্ত হওয়া যায়? আশুখালা উদ্বিগ্ন হয়। শুধু ঘুরঘুট্টি অন্ধকারেই নিজের ছায়া সরে যায়। রাশুখালার ভয় লাগে। জন্মের আগে থেকেই একজন আরেকজনের ভেতর এতোটা ব্যাপ্ত যে বিচ্ছিন্নতা অসম্ভব। দু’বোন ঐশ্বরিক চক্রের ফেরে আবর্তিত হতে হতে দুজনকে দায়ী করে। দু’বোন ভয় পায়। ভয় পেতেই থাকে দুজন দুজনকে। ভয় ততটাই অখণ্ড হয়ে ওঠে যতটা তাদের অবিচ্ছিন্নতা। এই ভয় অনিশ্চয়তার।
গাছগুলো ঝেঁপে এবার জামরুল হয়েছে। তাদের সবুজাভ শরীরের মুখটুকুতে লালের আভা। আশুখালা রাশুখালা পুকুর পাড়ে আসে জামরুল পাড়তে। আব্বা এক বিঘত সমান লম্বা নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ঘষেন। থুতু ফেলে এগিয়ে আসতেই দু’বোন দাঁড়িয়ে যায়। তাদের মিসওয়াকের ফজিলত শোনান আব্বা- মিসওয়াকে আল্লাহর রজামন্দি হাসিল হয়। বুঝলি নি? স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে, আত্মা পবিত্র হয়, মুখের সৌন্দর্য বাড়ে। শয়তান অসন্তুষ্ট হয়। এসব শুনে আশুখালা রাশুখালার কোনো আলাদা অনুভব হয় না। ঘাটলার পাশে জালাল উপুড় হয়ে করাত দিয়ে কাঠ কাটে। ঝুরঝুর করে কাঠের গুঁড়া ঝরে ঘাসের ওপর। পাশে কয়েক টুকরা কাঠ পড়ে আছে। আশুখালা রাশুখালা জালালের কাঠ চেরাই দেখে। জালালের কপালে একটি একটি করে ফুটে ওঠা ঘামের বিন্দু দেখে। আব্বা বলেন- নিয়মিত মিসওয়াককারীর মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হবে, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হবে। পবিত্র হয়ে সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। আব্বা চোখ ফেরালে দু’বোন জোড় কদমে হেঁটে জামরুল গাছের আড়ালে হারিয়ে যায়।
কোঁচড় ভরা জামরুল নিয়ে আশুখালা রাশুখালা ঘরে ফেরে। সেদিন দু’বোন জামরুল খায় না। গায়ের ওপর আলগা করে শাড়ি মেলে আলোগোছে শুয়ে থাকে। তাদের নরম হয়ে আসা তাঁতের শাড়ির নিচে পুরুষ্ট কিশমিশের মতো স্তনবৃন্তের আভাস। দুজনের চোখ কড়িকাঠে। জালালের গা থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের নোনা গন্ধের কথা ভাবে দু’বোন। সমুদ্রের গন্ধ কেমন তারা জানে না। তবু মনে হয় সমুদ্রের গন্ধ এমনই। জালালের ঘামের গন্ধ মুছে দিয়ে লাকড়িপোড়া ভারি গন্ধের বাতাস বয়ে যায়। দু’বোন কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শোনে আর দুজনের লেপ্টে থাকা সম্পর্কে হাঁসফাঁশ করে। অবিচ্ছেদ্যতায় বুঝতে পারে না তাদের মুক্ত সত্তাটি কেমন। শরীরে আলাদা হয়েও মনবন্দী। অবিচ্ছিন্নতার নিরুপায়তা আর বিচ্ছিন্নতার ইচ্ছে এমন দু’টা বিপরীত টানাপোড়েনে দু’বোন বিষণ্ণ হয়। ভয় থেকে ঘৃণা জন্মায়। আশঙ্কা আর ঘৃণার পৌনঃপুনিকতায় দিনগুলো দীর্ঘ হয়ে যায়। রাতগুলো অসহ্য হয়ে যায় বৈরিতায়। আশুখালা রাশুখালার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। দুজনের মুখে নীলাভ ছায়া পড়ে অথচ কেউ কাউকে একাকী হতে দেয় না। দিতে পারে না।
মেঘলা দিনের জলীয় আবহাওয়ায় বৃষ্টি নেই। ভ্যাপসা গরম বাড়ে। রাশুখালার উথালপাথাল জ্বর ওঠে। রক্তিমাভ হয়ে ওঠে কপাল। মা পানিপট্টি দেয়। আগুনের কুণ্ডলীতে এক কোষ পানির মতো রাশুখালার কপাল সেই শীতলতা শুষে নেয়। আশুখালা চুল ধুয়ে দেয়। রাশুখালার লম্বা চুল বেয়ে অঝোরধারা নেমে যায়। তবু তাপ নামে না। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকে রাশুখালা- আসমান ভাইঙ্গা বিষ্টি… দুনিয়া পুইড়া যায়… এতো আন্ধার ক্যান, আম্মা? ক্যামনে রে আইলারে নাও… আমারে নিয়া যাও… এমন ভরসন্ধ্যায় কী এক অশুভ ইঙ্গিতে আম্মার বুক গুমরে ওঠে- তওবা! তওবা! আব্বা নিরুচ্চারে দরুদ পড়েন। আশুখালা কিছু বলে না। নির্লিপ্ততায় রাশুখালার চুলে পানি ঢালতেই থাকে।
সকাল থেকে রাশুখালার বুকে ব্যথা। এই ব্যথা বায়ুবাহিত না জলবাহিত সেটা কেউ বোঝে না। হয়তো ভাবনার প্রতিচ্ছায়া অবশ্যম্ভাবী নিয়তি হয়ে আসে। সত্য হয়ে যায় যা কিছু গভীর অভিলাষ ইচ্ছাবাহিত ব্যথা ঢুকে পড়ে রাশুখালার বুকের অন্ধকারেসেখানে আরও অন্ধকার হয়ে জমাট বাঁধে। ব্যথাবেদনায় নীল হয়ে যায় রাশুখালা। আশুখালার কোলে মাথা রেখে তার ঘুম পায়। হাজার বছরের ঘুম উজিয়ে চোখ জড়িয়ে আসে। জাগতিক বোঝাপড়া থেমে যাবার আগে রাশুখালার চোখ তরল হয়ে যায়। মুদে আসা পাতা বেয়ে এক ফোঁটা ছলকে ওঠে। আশুখালা আর রাশুখালা বিশ্বাস করেছিল একজনের চলে যাওয়াতেই আরেকজনের জীবনের আশ্বাস। এই মৃত্যুর কোনো পূর্বলেখ ছিল না। হয়তো ইচ্ছামৃত্যু রাশুখালার। এমনও হতে পারে মৃত্যুর গোপন লটারিতে তার নাম উঠেছিলো।
বৃষ্টি শেষে রোদ তখন আরো নরম ও নিস্তাপ। জানলা খুলে দেয় আশুখালা। অদৃশ্য চুক্তিপত্র হাতে জীবনের দিকে তাকিয়ে থাকে।

Facebook Comments

Leave a Reply