ইন্দ্রজিৎ নন্দী-র কবিতা
তাহাদের কথা
১.
মেঘ বেচে সংসার চলে তাহাদের,
খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বালতি আর কুচোফাঁদি
জাল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে…
ফেরে একঝুড়ি মেঘ চকবাজারে বেচে,
সপ্তাহের সবগুলো দিন কেনাবেচা হয়না
যেদিন হয়, হয় মরিয়ামের মত ব্রহ্মকমল
একসময় সব মেঘ বিক্রি হয়ে আসে, সব ঋতু
শুধু বিক্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে বৃক্ষসকল
২.
তাহাদের বাড়ির পাশে একফসলি জমি,
মাঝখান দিয়ে আলপথ বেঁকে গেছে –
আলপথ গিয়ে মিশেছে ছোটরাস্তায়,
ছোটরাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে ফেরে কীর্তনের দল
ঝাঁঝ, কাঁসর, খোল, করতাল কোমড় বেঁধে
তাহাদের বাড়িতে থামলে অরন্ধন উৎসব হয়
একথালা মেঘবাতাসা সাজানো হয় স্টিলপ্লেটে
৩.
তাহাদের কুমির ডাঙ্গা খেলার জন্য
ডাঙ্গা বা জল কোনটাই নেই , যা আছে
তা হল অসহিষ্ণু কাদা,
পিচ্ছিল রংয়ের একটা বিকেল, যেখানে
সাইকেল কাটিয়ে নিয়ে যেতে যেতে
পিছনের চাকা বসে যায়, ছাপ পড়ে সরীসৃপের মত অবিকল
তাহাদের বাড়ির পাশে নালা
নালায় বয়ে যায় সম্পর্ক কিংবা সম্পর্কের মতো কলোজল
৪.
খুব দূরে গঞ্জে একটা মেলা বসেছে
নোয়াই গ্রামের মেলা। পাঁচটাকা, দশটাকার
বিকিকিনি চলেছে কতকাল। এই ধরো
দুটাকার সেফটিপিন আর দশ টাকার হাতা খুন্তি
তাহাদের মেয়ে -বৌরা এখানে আসে
কিনে নেয় খুচরো আনন্দ- রান্নাবাটিবিকেল,
তারপর ফেরে সন্ধ্যাপাত্র হাতে
খুব কাছে একটা সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে
অন্ধকার তাড়ায় মেঘতফাতে..
৫.
ওদের দেখা হয় ডালিম গাছের নিচে
যখন, পাতার গা বেয়ে নামে আসমানী রঙের রোদ
বৃষ্টিসৌগন্ধে পেকে ওঠে ডালিমের ফল
ডালিম তো সন্তানী ওদের,
তুলে নেবার অভাবে আলগা হয়ে গেছে কতকাল
Facebook Comments