ইন্দ্রনীল ঘোষের কবিতা

হাই হিলে হিয়া

নিজেরই মাংসের মধ্যে মাংসের পোকা হয়ে আছি

সনাতন পাখি-বোধ
অনেকটা ভোর
পরিযায়ী রঙ ও তামাশা—
আমার এই সামান্য স্পন্দন
এই খর্বাকায় আলো
কাঁপাকাঁপা শ্যামাপদ বেঁচে আছে
অল্পস্বল্প কাজলির মা
তাদের বেঁচে থাকার জাদুদণ্ড
তাদের চিৎকার — অ্যাবরা কা ড্যাবরা, গিলি গিলি চ্চোঁ
আর সাথে সাথেই সমস্ত পা উড়ে যাওয়া সমস্ত মানুষ
খোঁড়া মানুষের পা উড়ছে প্যারাসুটে
এমন দৃশ্যে আমি জড়িয়ে ধরি ডাইরেক্টার
ওহ ডাইরেক্টার, একটা রোল দাও
নুন ও হলুদ জিরে মেখে ব’সে আছি
স্বাদ লেগে ব’সে আছি
ওহ স্তিমিত
তোমার স্টিম ঝ’রে যায়
        ঝ’রে যায়—
ওহ স্তিমিত
একটা সিটি মারো,
সিদ্ধ হয়ে উঠুক মাংস…

খবরে প্রকাশ, কিছু শ্রমিক মারা গেছে।
পরীরা তো যায়ই…

অতলান্ত তাদের ছড়িয়ে থাকা রুটির ছবি —
দেখে, মানুষ সারাদিন খুব কেঁদেছিল
মানুষ, একদিন খুব ভেবেছিল
        কীভাবে গুহার গায়ে কীভাবে ছেনির দাগে
        টিঁকে থাকবে তার এই ভাষা…
রোদের পর রোদ পেরিয়েও অক্ষত সেই নুর
ওহ স্তিমিত
কেন মরতে মরতে কিছু ডেডবডি হেগে দিয়ে যায়!

কেন যায়! কেন ফেরে!
কেন সমুদ্র-জালিকা জুড়ে লবণ ঘনায় মানুষে!
সেই গাঢ়তম গভীরে
        জ্বর নামতে থাকে…
তার নেমে আসায় ভাতের ছায়া-লিপি
তারা ফুটছে খিদেটির গায়ে…
খালি দেখে এক জীবনের মধ্যে ঢুকে পড়ি আমরা
সাফ করি, গান করি
পাকস্থলী খুঁড়ে খুঁড়ে ভাতের ইতিহাস বার ক’রি…
এই পৃথিবীতেই একটা আঙুল খুঁজে পেয়েছিলাম আমি
এই পৃথিবীতেই আমি কবিতা লিখেছিলাম
ইন্দ্রনীলে কবিতা নেই আর
নাদান আলোর ফাঁক দিয়ে
        পাখিরা গড়িয়ে পড়ে শুধু…
এখন, এই মুহূর্তের গায়ে থুতু দাও প্রিয়া
শ্লেষ্মায় বাড়তে থাকা জীবাণুর মতো
        শরীরে জুতোর শব্দ নামে
নেমে আসে, হাই হিলে হিয়া…

শেষ বেঁচে থাকার ছবি এখনও স্মৃতিতে —
সদ্য এক পাহাড় পেরোনোর পর, জল খেতে দাঁড়িয়েছিলেন ভিক্ষু
        সামনে টিউবয়েল
বুদ্ধ সংক্রামিত সেই পূর্ণিমার ছেঁড়া পাতা…
আলো দাঁত বসাচ্ছে প্রাণে —
এক জুতোর শব্দ আঁকড়ে আমি ভাষা শিখছি
        শরীরে দাঁতের দাগ-
                 দাগে তরল স্বাদের আভা
যেন সক্কাল সক্কাল গ্রাম থেকে ফোন এসেছিল দিদার
যেন এই বছর বাড়ির গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে…
বেঁচে থাকতে থাকতে আমি শুনছি
পৃথিবীতে ফোন বাজছে খুব
        ছুটির সাইরেন বাজছে
নিজেরই শ্বাসবায়ু কাঁধে ব’য়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ …

ঘড়িতে নার্ভের শব্দ
                একটানা

এক নোনা লাগা মানুষের ভিতর
মোম জ্বলছে
মাংস থেকে ঝ’রে পড়ছে স্নেহ —
গলা মিয়নো প্রাণ ঝরছে ক্রমশ…
ওহ স্তিমিত
        আমরা কিছুই বুঝিনি কোনোদিন
সূর্যাস্তের বীজ থেকে যতটুকু রঙের স্পন্দন
ততটাই ছবি
যে ছবিতে,
        স্বাদ নিতে গিয়ে জিভের চাপে
        ছেলেটা গুঁড়ো ক’রে ফেলেছে দিকবলয়
যে ছবিতে,
        সমস্ত ফসল সব পচে যাচ্ছে
        ফলনে পাখির ডাক লেগে আছে অনিমিখ

আবার পাখির কথা এলো
ঘুড়ি কিম্বা মার্বেল গুলির কথাও আসতে পারত
কিম্বা পতাকা ম্যানিয়াক সেই মানুষটার কথা
        নিজের পোড়া ছেলের চামড়া থেকে
        যে ভারতবর্ষ খুঁটতে থাকে —
জল হলে ধুয়ে যায় অল্পস্বল্প কাজলির মা
কাঁপা কাঁপা শ্যামাপদয় বিদ্যুত আসে
রোজ এত মাংসের মধ্যে দিয়ে তুমি হেঁটে যাও হিয়া!
মাংসে গেঁথে যাচ্ছে তোমার হাই হিল
বৃষ্টি নামছে
হিলের মাটি চাটতে চাটতে পেট ভরি আমরা
খাই ফেলি গায়ে মাখি কত যে ভ্রমণ
এই একমাত্র পুষ্টি আমাদের
নিঃশ্বাসে গেয়ে চলি একটাই ধর্মগান —
                 হাই হিলে হিয়া
                 হাই হিলে হিয়া

Facebook Comments

Leave a Reply